সোমবার, ১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

আঁধারে দীপ জ্বেলে যাই...১৯




ফুল হয়ে ফুটবো মোরা, পাখী হয়ে গাইবো দুচোখ জোড়া স্বপ্ন, সুন্দর পৃথিবী গড়বো বলবো মোরা সত্য কথন, করবো মোরা দুঃখীর যতন জ্ঞানের আলোয় আলোকিত মানুষ হবো মোরা হবো একে অন্যের তরে আয়না প্রত্যেকে আমরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে হবো সোচ্চার, সইবো না নীরবে কারো অত্যাচার মুঠো মুঠো ছড়াবো মোরা ভালোবাসার সুবাস প্রতিটি পরিবার হবে একতাবদ্ধ শান্তির নিবাস

কবিতা
পড়া শেষ করে জিহাদের দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে জাওয়াদ বলল, মাশাআল্লাহ। তোমার প্রতিটা শব্দ শান্তির সুবাস ছড়ানো। অসাধারণ হয়েছে তোমার কবিতা বাবা। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তাওফীক দিন শব্দরা যাতে শুধু তোমার ভাবনাতেই বন্দী হয়ে না থাকে। যেন কর্মেও রূপান্তরিত করতে পারো তোমরা। অন্তত একটি প্রাণের শুষ্ক মাটিতেও যেন ফুল হয়ে ফুটতে পারো তোমরা। একজন মানুষকে হলেও যেন দিতে পারো সুন্দর জীবনের সন্ধান।

জিহাদ
, জিশান, জারিফ তিনজনই বলল, আমীন। ইনশাআল্লাহ পাপা আমরা অন্তত একটি মনকে হলেও সুন্দর পৃথিবীতে নিয়ে যাবো।

তিনজকেই
আদর করে দিয়ে জাওয়াদ বলল, এবার তাহলে আমরা জিশানের কবিতা শুনি। জিশান কি লিখেছো পড়ে শোনাও আমাদেরকে।

জিশান
সব দাঁত বের করে বলল, জিশান ফাটাফাটি কবিতা লিখেছে পাপা। আচ্ছা শোনো বলছি।কবিতা লেখার দায়িত্ব পেয়ে, জিশান ব্যস্ত ভাবনা নিয়ে। অনেকদিন হয়নি নতুন আবিষ্কার, মনে মনে নিজেকে করছে তিরষ্কার। কি করে পাপাকে করা যায় হয়রানি, মাকে নিয়েও হয়নি লেখা কোন কাহিনী। বাবাকে জানাতে হবে বাড়ির হাল হাকিকত, আদীব্বার কাছে জমা আছে অঢেল মোহাব্বত। ভাইয়া এক মনে লিখে যাচ্ছে কবিতা, জারিফের চোখে মুখে গভীর চিন্তাশীলতা। ভাগ্যিস নাবিহা নেই এখানে, নয়তো জোরছে দিতো কান দুটা টেনে। এখনই বলবে পাপা এটা কি লিখেছো দুষ্টু ছেলে, জিশানের জবাব এটাকে আনন্দময় কবিতা বলে।

স্বশব্দে
হেসে ফেললো জাওয়াদ। হাসিতে যোগ দিলো জিহাদ আর জারিফও। জিশানও হাসতে হাসতে বলল, এবার বলো ফাটাফাটি কবিতা হয়েছে কিনা জিশানের কবিতা?

জাওয়াদ
হাসতে হাসতে বলল, মাশাআল্লাহ জিশানের কবিতার তো সবসময়ই অ্যাওয়ার্ড পাওয়ার মত হয় সবসময়।

হেসে
ফেললো সবাই আবারো একসাথে। জিহাদ হাসতে হাসতে বলল, পাপা আগে নাকি পারিবারিক অ্যাওয়ার্ড সিস্টেম ছিল আমাদের আনন্দবাড়িতে?সত্যিই?

জাওয়াদ
হাসি মুখে বলল, হ্যা সত্যিই। তোমরা তো জানোই আমাদের আনন্দবাড়ির সবচেয়ে মজার মানুষদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন, তোমাদের মানা ভাই। অদ্ভুত সব কর্মকাণ্ড কথাবার্তা দিয়ে ছোট মামা সবসময়ই বাড়িকে মাতিয়ে রাখেন। বেশি কথা বলার জন্য সবার কাছে কম বেশি ধমক, ঝাড়িও খেতেই থাকেন। কিন্তু এইসব ক্ষেত্রে ছোট মামা পরাজয়ে ডরে না বীর নীতি মেনে চলেন। ছোটমামার অতি উর্বর মস্তিক থেকেই বেড়িয়েছিলফ্যামিলি অ্যাওয়ার্ডএর আইডিয়া। মামার যুক্তি ছিল, সিনেমা-নাটকে শুধু অভিনয় করার জন্য যদি মানুষকে অ্যাওয়ার্ড দিয়ে সম্মানিত করা যায়। তাহলে পরিবারের পিছনে যে মানুষগুলো অক্লান্ত পরিশ্রম, যারা নানা কর্মকান্ড করে আনন্দময় করে রাখে পরিবারকে, যাদের ত্যাগের উপর রচিত হয় পরিবারের ভিত। তাদেরকে কেন একটু প্রেরণা দেয়ার উদ্দেশ্য অ্যাওয়ার্ড দিয়ে সম্মানিত করা যাবে না? বাবা, পাপার খুবই পছন্দ হয়েছিল মামার আইডিয়াটা। ব্যাস শুরু হয়ে গিয়েছিল আমাদের ফ্যামিলি অ্যাওয়ার্ড। বেষ্ট বাবা, বেষ্ট মা, বেষ্ট ছেলে, বেষ্ট মেয়ে, বেষ্ট ভাইয়া, বেষ্ট বোন, বেষ্ট পুত্রবধূ, বেষ্ট মেয়ের জামাই, বেষ্ট বন্ধু ইত্যাদি পারিবারিক সব বন্ধনের। মামা পরিবারের কয়েকজন সদস্যকে নিজের দলে টেনে নিয়েছিল। তাদের সাথে নিয়ে সারাবছর কাজ করতো এর পেছনে। আমাদের বাড়িতে যেহেতু শুধুমাত্র বেডরুমগুলো ছাড়া আর সব জায়গাতেই চব্বিশ ঘন্টা সিসি ক্যামেরা লাগানো। রেকর্ডও মামাকে বেশ সাহায্য করতো এই কাজে। অবশ্য সাহায্যকারী হিসেবে অবশ্য বাবা, পাপা আর বাপীও সাথে থাকতেন। নাইনটি ফাইভে শুরু করেছিল এটা দুহাজার এক পর্যন্ত চলেছে। এরপর নানান কারণে বন্ধ হয়ে গিয়েছে আমাদের ফ্যামেলি অ্যাওয়ার্ড।

জিশান
হেসে বলল, অনেক মজা হতো চাই না পাপা?

হুম
, আলহামদুলিল্লাহ। অনেক মহা হতো। প্রতি কুরবানীর ঈদের পরদিন রাতে অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হতো। অ্যাওয়ার্ড প্রদান করার সাথে সাথে কেন সিলেক্ট করা হয়েছে সেটা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হতো। বাকিরা এতে অনেক উৎসাহ প্রেরণা পেতো। তবে উপহার কিন্তু সবার জন্যই থাকতো। যারা অ্যাওয়ার্ড পায়নি তাদের জন্যও। এবং একই উপহার থাকতো সবার জন্য। এটা জাস্ট একটা আনন্দময় ইভেন্টের মতো ছিল আমাদের জন্য। পরিবারের সবাই মিলে একে অন্যের উত্তম গুণাবলীকে অ্যাপ্রিশিয়েট করা যাকে বলে। যারা একটু পিছিয়ে আছে তাদের উৎসাহ, অনুপ্রেরণা দেয়া।

পাপা
আমরা আবারো শুরু করতে পারি না ফ্যামেলি অ্যাওয়ার্ড? চোখ বড় বড় করে প্রশ্ন করলো জারিফ

জারিফকে
কোলে টেনে নিয়ে জাওয়াদ বলল, অবশ্যই করতে পারি ইনশাআল্লাহ। ঠিকআছে আমরা নেক্সড পারিবারিক বৈঠকে এটা নিয়ে আলোচনা করবো। এখন জারিফ সোনার লেখা কবিতা শুনি আমরা চলো।

জারিফ
বিশাল হাসি দিয়ে ডায়েরী খুলে বলল, আচ্ছা কবিতা শোনো।হবো মোরা সুন্দর জীবনের রাহবার, ছুটে চলবো অবিচল গতিতে দুর্বার। সম্মুখের সকল বাঁধা দৃপ্ত পদে যাব পেরিয়ে, প্রবৃত্তির সকল কুমন্ত্রণাকে দেব মোরা হারিয়ে। লড়বো মোরা একসাথে মুক্তির সন্ধানে, হাতে রেখে হাত ছুটে চলবো জান্নাতের পানে

জাওয়াদের
কন্ঠে কন্ঠ মিলিয়ে জিহাদ আর জিশানও বলে উঠলো, মাশাআল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ। অসাধারণ, অসাধারণ।

জারিফ
আনন্দ উচ্ছ্বাস মাখা কন্ঠে বলল, মা মতো করে লিখেছি আমি। মা মতো হয়েছে পাপা?

জারিফকে
আদর করে জাওয়াদ বলল, হুম, মাশাআল্লাহ একদম মা মতই হয়েছে তোমার কবিতা। তোমাদের তিনজনের জন্যই অনেক অনেক দোয়া।

জারিফ
হেসে বলল, তাহলে চলো এখন সুইমিং করতে যাই আমরা। তুমি বলেছিলে আমরা একটা করে নতুন কবিতা লিখে শোনালে তুমি মা কাছ থেকে পারমিশন এনে দেবে নদীতে সুইমিং করার।

জাওয়াদ
হেসে বলল, হুম, সেটা তো বলেছিলাম। কিন্তু কেমন হয় বলো তো যদি আগামীকাল দুপুরে আমরা নদীতে সুইমিং করতে যাই? তাহলে অনেক সময় থাকতে পারবো।

পাপা
এটা কিন্তু চিটিং হয়ে যাচ্ছে। ফুটবল খেলে আমরা কত নোংরা হয়ে গিয়েছি দেখেছো? মা কাছে গেলেই মা চিৎকার করে বলবে, ইয়াক, নোংরা বাচ্চারা সব আমার কাছ থেকে একশো হাত দূরে যাক। তুমি কি এটাই চাও? আমরা আমাদের মায়ের কাছ থেকে দূরে থাকি? না চাইলে সুইমিং করার পারমিশন এনে দাও। খুবই সিরিয়াস কন্ঠে কথাগুলো বললো জিশান।

জাওয়াদ
হেসে বলল, ঠিকআছে তাহলে তোমাদের মধ্যে তুলনামূলক একটু কম নোংরা যে সে দৌড়ে গিয়ে মাকে বলো, আমরা পাপার সাথে সুইমিংয়ে যাচ্ছি। যদি মা ওকে বলে তাহলে এক্ষুণি যাব আমরা ইনশাআল্লাহ। জিহাদ তুমি যাও। তোমার মা পারমিশন দিলে বাবা আর আদীব্বাকেও সাথে নিয়ে এসো।

ওকে
পাপা বলেই জিহাদ ছুট লাগালো। দুহাতে জিশান আর জারিফের নাক টেনে দিয়ে জাওয়াদ বলল, আপনারা দুইজন আরো কিছুক্ষণ ফুটবল খেলা করে আরেকটু নোংরা হয়ে আসেন। আমি ততক্ষণে আপানাদের এক আংকেলের সাথে কিছু কথা বলি।

কোন
আংকেলের সাথে?

তোমাদের
যুবাইর আংকেলের ছোট ভাই মারুফের সাথে।

জিশান
হেসে বলল, পাপা আমরাও সাথে থাকি। ভবিষ্যতে তো আমাদেরকেও বিভিন্ন জনকে উপদেশ পরামর্শ দিতে হবে ইনশাআল্লাহ। এখন থেকেই শিখে রাখি। ভাইয়ার কথা শুনে উজ্জ্বল হয়ে উঠলো জারিফের চেহারাও।

জাওয়াদ
হেসে বলল, উপদেশ সম্পর্কে ইমাম মুযানী (রহঃ) কি বলেছেন জানো?

কি
বলেছেন পাপা? জিশান আর জারিফ দুজনই একসাথে প্রশ্ন করলো।

ইমাম
মুযানী (রহঃ) বলেন, আমি ইমাম শাফেঈ (রহঃ)-কে বলতে শুনেছি তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি তার ভাইকে গোপনে উপদেশ দিল, সে তাকে নছীহত করল এবং সৌন্দর্যমন্ডিত করল। আর যে প্রকাশ্যে উপদেশ দিল, সে তাকে লজ্জিত করল তার সাথে খেয়ানত করল

জিশান
বলল, হ্যা এই কথাটা নানাভাই একদিন বলেছিলেন। আমি ভুলে গিয়েছিলাম। মুহিত মামা একটা দুষ্টু কাজ করেছিল কলেজে। জুয়াইরিয়া ফুপ্পি বাড়িতে এসে সবার সামনে মুহিত মামাকে সেই কথা বলেছিল। তখন নানাভাই জুয়াইরিয়া ফুপ্পিকে ডেকে এই কথাটা বুঝিয়ে বলেছিলেন। আমি আর ভাইয়া তখন বাগানের আরেক পাশে ছিলাম। তাই শুনে ফেলেছিলাম।

জাওয়াদ
হেসে বলল, এবং আমাকে এসে বলেছিলেন। সেজন্যই তো জিজ্ঞেস করেছি প্রশ্নটা। আপনি না জানলে তো পাপা বুঝিয়ে বলতাম, প্রশ্ন করতাম না।

জিশান
হেসে বলল, হ্যা তাই তো। সরি পাপা। ঠিকআছে তুমি কথা বলো আংকেলের সাথে। চলো জারিফ আমরা দুজন খেলা করি। লাফিয়ে উঠে ভাইয়ের হাত ধরলো জারিফ। এরপর দুজন ছুট লাগালো।

ফোন
করে আগেই মারুফকে পার্কে আসতে বলে দিয়েছিল জাওয়াদ। মারুফ এসে পৌঁছানোর পর সালাম কুশলাদী বিনিময় সেরে নিয়ে জাওয়াদ বলল, যুবাইর আমাকে বলেছে তোমার সমস্যার কথা। তারপরও তোমার সমস্যার কথা তোমার মুখ থেকেই শুনতে চাই আরেকবার।

মারুফ
বলল, আলহামদুলিল্লাহ আমি ছোটবেলা থেকে খুব ভালো স্টুডেন্ট ছিলাম ভাইজান। প্রচন্ড ভালোবাসি পড়াশোনা করতে। আর মেডিকেলে পড়াটা আমার একদম ছোটবেলার স্বপ্ন ছিল। মেডিকেলে ভর্তির পর সবসময়ই খুব ভালো রেজাল্ট করেছি। কিন্তু যখন থার্ড ইয়ারে ছিলাম তখন একটা এক্সিডেন্ট হয় আমার। এরপর প্রায় দুই বছর লেখাপড়া বন্ধ রাখতে হয়েছিল। এরমধ্যে আমার ফ্রেন্ডরা সবাই মেডিকেল কমপ্লিট করে ফেললো। শুধু আমিই পিছিয়ে রইলাম ওদের থেকে। দুই বছর পর আবারো ক্লাসে যাওয়া শুরু করলাম। কিন্তু কিছুতেই আর আগের সেই ভালো লাগা, আগ্রহ ফিরে পাচ্ছি না পড়াশোনার প্রতি। যারফলে, রেজাল্ট খারাপ হচ্ছে খুব। ফেল পর্যন্ত করছি। আমি আসলে মেডিকেল কমপ্লিট করতে চাই। পরিবারের সবাইও এমনটাই চায়। কিন্তু পড়াশোনায় কোন আগ্রহ তৈরি করতে পারছি না মনে। সবকিছু মিলিয়ে কেমন যেন নৈরাশ্য ঘিরে ধরেছে আমাকে। আগ্রহ পাচ্ছি না কোন কিছুতেই, ভালো লাগে না। এর প্রভাব আমার দৈনন্দিন জীবন এর অন্যান্য কাজে তো পড়ছেই। এমনকি আমার সাধারণ ইবাদত গুলোও ঠিক মতো করতে পারছি না। মনোযোগের খুব ঘাটতি সবকিছুতেই।

অনাগ্রহের
পেছনে মূল কারণ হিসেবে তোমার দায়ী মনে কয়েছে কোন বিষয়গুলোকে?

ঠিক
বুঝতে পারছি না ভাইজান। তবে ফ্রেন্ডরা অনেক এগিয়ে গিয়েছে এই চিন্তাটা খুব ব্যথিত করে।

জাওয়াদ
হেসে বলল, হুম, একসাথে পথ চলতে শুরু করার পর কেউ বেশ খানিকটা এগিয়ে গেলে মনে প্রভাব তৈরি হওয়াটা স্বাভাবিক। মন তখন সহযাত্রীর এগিয়ে চলার কিংবা নিজের পিছিয়ে পড়ার কারণটাতে ফোকাসড না করে, সবাই তাকে ছাড়িয়ে গিয়েছে এই ব্যথায় নিমগ্ন হয়ে যায়। এমন একটি কারণই যথেষ্ট মনোজগতকে আঁধারে ঢেকে দেবার জন্য। আর অন্ধকাআচ্ছন্ন মন যেদিকেই তাকায় ঝাঁপসাই দেখতে পায়। আসলে মনের মাঝে ইচ্ছের দৃঢ় আলো না থাকলে, সামনে এগিয়ে চলার চেষ্টা করাটা বেশ কঠিন।

কিন্তু
আমি এই অবস্থা থেকে বের হতে চাই ভাইজান। আপনি আমাকে বলে দিন কি করতে হবে আমাকে।

সর্বপ্রথমে
নিজেকে মানুষের প্রভাব মুক্ত করতে হবে। বন্ধুদের এগিয়ে যাবার পেছনে যেমন কারণ ছিল, তোমার পিছিয়ে পড়াটাও তেমন অকারণ ছিল না। নিজের কোন দোষে বা ভুলের কারণেও তুমি পিছিয়ে পড়োনি। তোমার এক্সিডেন্ট হয়েছিল তাই পিছিয়ে পড়তে বাধ্য হয়েছিল। তোমার কাছে তাই লজ্জিত হবার কিংবা হতাশ হয়ে যাবার কোন অপশন নেই। আল্লাহর ইচ্ছেতেই তোমার চলার পথে একটা বাঁধা এসেছিল। এই বাঁধাটাকে শুধু খুশি মনে মেনে নিতে হবে তোমাকে। যেই মূহুর্তে তুমি খুশি মনে জীবনের এই বাঁধাটাকে মেনে নিতে পারবে। সেই মূহুর্তেই বাঁধাকে জয় করার শক্তি ফিরে পাবে তোমার মন। মানুষ ব্যর্থ হয় সফলতার উপকরণের অভাবে নয়। বরং আবারো যদি ব্যর্থ হয় এই শঙ্কার কারণে পুনঃপুনঃ চেষ্টা করার অভাবে। ব্যর্থতার ফলে তৈরি হতাশার কারণে। কিন্তু তোমার পিছিয়ে পড়াটা মোটেই কোন ব্যর্থতা ছিল না। আল্লাহর তরফ থেকে একটা পরীক্ষা ছিল তোমার জন্য। তুমি হয়তো ভাবছো বাঁধাটাই সব সমস্যার মূলে। অথচ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কিন্তু কুরআনে বলেই দিয়েছেন, “এমন অনেক জিনিস রয়েছে যা তোমাদের কাছে পছন্দনীয়, কিন্তু তাতে রয়েছে ক্ষতি! আবার, এমন অনেক জিনিস রয়েছে যা তোমরা অপছন্দ করো , অথচ তা তোমাদের জন্য ভালো! আসলে আল্লাহই জানেন, তোমরা জানো না!” তাই জীবনে আসা ছোট-বড় সব দুর্ঘটনার মাঝেই কল্যাণ অনুসন্ধান করে দেখা উচিত। এক্সিডেন্টের ফলে তোমার পড়াশোনা হয়তো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু খুঁজলে দেখবে যে অনেক প্রাপ্তিও হয়তো জীবনে যোগ হয়েছে। সেটা আপনজনদের ভালোবাসা কেয়ারের রূপেও হতে পারে। খুঁজে দেখেছো কখনো নিজের প্রাপ্তিগুলোকে?

জ্বি
না ভাইজান। এভাবে তো ভাবিনি কখনো।

এখন
ভেবে দেখো। জীবনে এগিয়ে যাবার পথে আমাদের একটা অনেক বড় সমস্যা কি জানো? আমরা পরিবর্তনকে মেনে নিতে পারিনা সহজে। অথচ মানুষের জীবনের সবচেয়ে স্বাভাবিক জিনিসগুলোর একটি হচ্ছে, পরিবর্তনশীলতা। ফ্রেন্ডরা এগিয়ে গিয়েছে ভেবে অস্বস্তিতে ভুগলে বড়জোর যা হবে, তুমি আরেকটু করে পিছিয়ে পড়বে প্রতি মূহুর্তে। তাই তোমার চলার পথের মানদণ্ড তোমার ফ্রেন্ডদেরকে বানিয়ো না। ওদের কেউ কি তোমার কথা ভেবে নিজের পথ চলা থামিয়ে রেখেছিল? কিংবা কেউ কি তোমার পথ প্রদর্শক ছিল?

জ্বি
না

তাহলে
ওদেরকে ঘিরে কেন তোমাদের চিন্তাকে আবর্তিত হতে দেবে? তারচেয়ে তুমি তোমার দিকে মনোযোগ দেবার চেষ্টা করো। আগের সেই ভালো লাগা, আগ্রহ জাগিয়ে তোমার চেষ্টা করো। তুমি নিশ্চয়ই তোমার ফ্রেন্ডদের কারণে মেডিকেলে পড়তে চাওনি? চেয়েছিলে কারণ এটা তোমার স্বপ্ন ছিল। স্বপ্ন পুরণের পথে ওদেরকে সাথী হিসেবে পেয়েছিল। মনের সেই স্বপ্নটাকে খুঁজে বের করে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করো। স্বপ্নটা ফিরে পেলে ইচ্ছে, আগ্রহ, ভালো লাগা সব ফিরে আসবে ইনশাআল্লাহ। তখন চলার পথে নতুন সাথীও পেয়ে যাবে।

আমি
চেষ্টা করছি ভাইজান। কিন্তু পারছি না আগের মতো হতে।

আগের
মতো হতে চাওয়াটাও কিন্তু ভুল। জীবন তো আগের জায়গাতে স্থির নেই। তুমি বর্তমানকে মেনে নিয়ে, এই অবস্থার সাথে নিজেকে মানিয়ে নাও। আরেকটা কথা হচ্ছে, মানুষ যখন আঁধারকে ভয় পায় তখন কিন্তু বাতি জ্বালালেই ভয় কেটে যায় না বেশির ভাগ সময়ই। কারণ ভয়ের বাস মনের ভেতর। ভয় থেকে মুক্তি পাবার জন্য ভয়ের সাথে লড়তে হয়। ঠিক তেমনি ভালো লাগা-মন্দ লাগার বাসও মনের ভেতরেই। মন যখন আগে থেকেই তৈরি থাকে খারাপ লাগার জন্য। তখন ফুটন্ত ফুল দেখলেও বিষিয়ে ওঠে। একই ভাবে মন তার ভালো লাগার দায়ে আবদ্ধ থেকে মন্দ কিছুকেও মেনে নেয় অবলীলায়। সঠিক পথে চলতে গেলে তাই নিজ মনের ভালো লাগা মন্দ লাগার সাথে লড়াই অবশ্যম্ভাবী। আগ্রহ পাচ্ছি না, ভালো লাগে না এই কথাগুলো যত বললে, যত ভাববে তত বেশি করে অনাগ্রহের ধোঁয়াশা ঘিরে ধরবে তোমার মনকে। তাই নিজের করণীয় নির্ধারণ করে সেইমত চলার চেষ্টা করো। দেখবে ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসতে পারবে এই অবস্থা থেকে ইনশাআল্লাহ।

জ্বি
ভাইজান আমি চেষ্টা করে দেখবো ইনশাআল্লাহ।

জাওয়াদ
হেসে বলল, চেষ্টা না আগে কি করবে সেই সিদ্ধান্ত নাও দৃঢ় ভাবে। এরপর চেষ্টা শুরু করো। যথাযথ সিদ্ধান্ত নিতে পারা সেটা বাস্তবায়নের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। আর ইবাদতে অমনযোগীতার ব্যাপারে এখানে আসার পর অনেকেই বলেছে। যদিও সবার কারণ অবশ্য ভিন্ন ভিন্ন। তারপরও ঈশার নামাজের পর এই বিষয়টা নিয়ে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ।

মারুফ
হাসি মুখে বলল, জ্বি ভাইজান। আমি কি তাহলে এখন চলে যাবো।

ইনশাআল্লাহ
মসজিদে দেখা হবে। মারুফকে বিদায় দিয়ে জাওয়াদ উঠে জিশান আর জারিফ খেলাধূলা করে আরো কতটুকু নোংরা হয়েছে সেটা দেখার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন