সোমবার, ১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

আঁধারে দীপ জ্বেলে যাই...২



শপিং শেষ করে সবাই মিলে রেস্টুরেন্টে ঢুকলো বাপীর দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে নূহা বলল, বলো কি অর্ডার করবো তোমার জন্য?

নূহার
প্রশ্নের জবাব না দিয়ে আফজাল সাহেব বিরক্ত কন্ঠে বললেন, তোর খালামণি কি কাজটা ঠিক করছে? তার কি উচিত ছিল না আমাদের সাথে এই টেবিলে বসা?

শপিং
সেন্টারে পরিচিত কয়েকজন ভদ্রমহিলার সন্ধান পেয়েছিলেন মিসেস নুসরাত। এরপর থেকে আফজাল সাহেব আর নূহার অস্তিত্ব ভুলে গিয়ে তাদের সাথেই গল্পগুজবে মেতে আছেন। রেস্টুরেন্টে ঢুকেও তাদের সাথেই অন্য টেবিলে বসেছেন। আম্মির এমন আচরণে বাপী যে প্রচন্ড বিরক্তি হচ্ছেন সেটা অনেকক্ষণ ধরেই বুঝতে পারছিল নূহা। কিন্তু আম্মিকে কিছু বলতে গেলে উল্টো ধমক খেতে হবে। তারচেয়ে বাপীর বিরক্তি দূর করার চেষ্টা করাই সহজ উত্তম। হাসি মুখে বলল, উচিত-অনুচিতের সীমানাটা দুই দেশের বর্ডারের মতো হলে মন্দ হতো না, তাই না বাপী? তাহলে মানুষ সীমানায় পৌঁছে অন্তত করণীয়-বর্জনীয় ব্যাপারে একবার হলেও সতর্ক হতো।

তুই
কি এখন উচিত-অনুচিত নিয়ে লেকচার শোনাবি নাকি?

নূহা
হেসে বলল, উহু, এখন আমি তোমাকে আইসক্রিম কেক খাওয়াবো। আমি আজ চকলেট ফ্লেবার খাবো। তুমি কি নেবে বলো?

আফজাল
সাহেব হেসে বললেন, তুই যেহেতু আমার পছন্দের ফ্লেবার খাচ্ছিস। আমার জন্য তাহলে তোর পছন্দের ফ্লেবার অর্ডার কর। মাঝে মাঝে টেস্ট চেঞ্জ করা ভালো

অর্ডার
দেবার পর নূহা বলল, তোমাকে কিন্তু এখনো বিরক্ত দেখাচ্ছে বাপী। তুমি তো জানোই আম্মি একটু এমনই।

কারো
স্বভাব সম্পর্কে জানা থাকলেই কি তার সব ভুল আচরণ চুপচাপ মেনে নিতে হবে? তাহলে তো দেখা যাচ্ছে জানাটাই যত সমস্যার মূল কারণ। আচ্ছা বাদ দে তোর খালামণির কথা। আত্মজা, জুয়াইরিয়া ওদের জন্য ট্রেনিং সেন্টারের কাজ কতদূর এগিয়েছে সেটা বল।

নূহা
হেসে বলল, আলহামদুলিল্লাহ কাজ প্রায় শেষ। আগামী সপ্তাহ থেকেই ক্লাস শুরু করবো আমরা ইনশাআল্লাহ।

টোট্যাল
স্টুডেন্ট কয়জন তোদের।

পঁয়ত্রিশ
জন। এরমধ্যে উনিশ জন মেয়ে। মেয়েদের জন্য ক্লাসে ব্যবস্থা আমার বাসার নীচের ফ্ল্যাটে করা হয়েছে। তা না হলে আমার জন্য কষ্ট হয়ে যেতো সময় বের করাটা। ছেলেদের ব্যাপারে ঠিক বলতে পারছি না। আদী ভাইয়ার কাছ থেকে জেনে নিও। একটা মজার তথ্য শুনবে?

কি
?

নূহা
হাসতে হাসতে বলল, ওদের কুরআন মেমোরাইজের ক্লাসের দায়িত্ব রাহাকে দিয়েছি। একথা শুনেই বিরাট এক চিৎকার দিয়েছিল রাহা।

আফজাল
সাহেব হেসে বললেন, এত মেধাবী একটা মেয়ে। অথচ অলসতা করেই জীবনটা পার করে দিচ্ছে। সারাদিন শুধু ঘুম আর গল্পগুজব। আমার মতে ওকে বেশি বেশি কাজ দেয়া উচিত। চাপের উপর রাখলে ফাঁক ফোঁকর দিয়ে বেরিয়ে যাবার সুযোগ পাবে না।

আমিও
এই উদ্দেশ্যেই রাহাকে এই দায়িত্বটা দিয়েছি। এবং চাচ্ছি আমাদের বোনদের সবাইকেই টুকটাক কোন না কোন দায়িত্ব দিতে। এতে ওদের ভেতরেও আবার নিজেকে গড়া, নিজের অ্যাকশন-রিঅ্যাকশন যাচাই-বাছাইয়ের প্রবণতাটা ফিরে আসবে। পাশাপাশি আমিও সুযোগ পাবো নিয়মিত পরিবারের কারো না কারো টাচে থাকার। যেহেতু মেয়েদের ক্লাসটা আমার বিল্ডিংয়েই।

আফজাল
সাহেব হেসে বললেন, খুব এক্সাইটিং লাগছে তোকে!

আলহামদুলিল্লাহ।
সত্যিই আমার নিজের ভিতরেও জাগরণ টের পাচ্ছি বাপী। আজকাল সারাক্ষণই আমার ট্রেনিং পিরিয়ডের কথা মনে পড়ে। সেই সময়ের আনন্দাচ্ছ্বাসের কথা শব্দে প্রকাশ করা একদমই অসম্ভব। অবশ্য নানান ধরণের কন্ডিশন দেখে কিছুটা ঘাবড়েও গিয়েছিলাম। প্রথম যেদিন ভাইয়াদের সেন্টারে ঢুকেছিলাম সর্ব প্রথমেই দেখতে পেয়েছিলাম, সময়ের গুরুত্ব বড় বড় করে লিখে টাঙ্গিয়ে দেয়া হয়েছে নোটিশ বোর্ডে। ট্রেনিংয়ের মূল উদ্দেশ্যেই ছিল একটি ভারসাম্যে পূর্ণ জীবন গঠন। অর্থাৎ, জ্ঞানার্জনের মাধ্যেমে নিজের ভেতর সুপ্ত থাকা আত্মিক মানবিক গুণাবলীর বিকাশ সাধন, মেধা প্রতিভার সমন্বয়ে নিজেদেরকে যোগ্য দক্ষ করে গড়ে তোলা এবং নিজ নিজ প্রফেশনের দ্বারা ইসলামের জন্য কাজ করা। একদিক করতে গিয়ে যাতে আরেকদিক এলোমেলো হয়ে না যায় সে ব্যাপারেও পূর্ণ সতর্ক সচেতন থাকা। আর সময়ের যথাযথ সঠিক ব্যবহার ছাড়া এমন ভারসাম্যপূর্ণ জীবন গঠন করা অসম্ভব। তাছাড়া জীবনটা তো মূলত জন্ম থেকে মৃত্যু এর মধ্যবর্তী সময়েরই নাম। তাই আমাদের প্রথম পাঠই ছিল সময়কে নিয়েই। সময়কে সুন্দর ভাবে যথাযথ ব্যবহারের অনেক পয়েন্টের মধ্যে আমার কাছে সবচেয়ে আকর্ষনীয় লেগেছিল যে পয়েন্টটা সেটা হচ্ছে, “মনের হক আদায় করা আমাদের জীবন জুড়ে মনের প্রভাব নতুন করে বলার কিছুই নেই। মনটা যেন আমাদের নিজের হয়েও নিজের না। সকল কাজ ঠিকমতো করার জন্য মনকে ভালো রাখাটা তাই অতীব জরুরী। যদিও মনের খুশি ব্যক্তির মন মননের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু মনকে খুশি রাখতে ব্যক্তিকে করতে হয় ব্যাপক পরিশ্রম। কনসেপ্টটা একদমই নতুন ছিল আমার কাছে।

আর
এখন তুই নিজেই মন বিশেষজ্ঞ। হাসি মুখে বললেন আফজাল সাহেব।

নূহাও
হেসে বলল, আলহামদুলিল্লাহ। আমি মেয়েদের জন্য সবকিছুর আয়োজন হুবহু সেভাবেই করেছি, যেভাবে আমি ফেস করেছিলাম। যেমন, প্রথমদিনই বসে যেতে হয়েছিল পরীক্ষার হলে। লিখতে হয়েছিল জীবনের লক্ষ্য উদ্দেশ্য। কারণ জীবনের লক্ষ্য উদ্দেশ্যে সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা না থাকলে ব্যক্তি কখনোই অবিচল, অক্লান্ত পথিকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারে না। আর জন্ম থেকে মৃত্যু তো বলতে গেলে একটা সফরই প্রত্যেকটি মানুষের জন্যই। আরো লিখতে হয়েছিল একজন মুসলিম হিসেবে আমার দায়িত্ব কর্তব্য কি কি এবং আমি কি কতটা পালন করতে আগ্রহী। নিজের দোষ-গুণের পাশাপাশি জ্ঞানার্জনের পথে প্রতিবন্ধকতা গুলোও তুলে ধরতে হয়েছিল। অর্থাৎ, কোন কোন বিষয় বা জিনিস লক্ষ্য চ্যূত করে। কুরআন হাদীসের বেসিক জ্ঞান আছে কিনা সেটা বোঝার জন্য ছিল এক হাজার নৈবৃত্তিক প্রশ্ন। আলহামদুলিল্লাহ ৯৯৯ টি উত্তর সঠিক হয়েছিল আমার। যে প্রশ্নটির উত্তর পারিনি সেটি ছিল, “কোন নবীর পিতা ছিলেন না আমি উত্তর খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত হয়ে প্রায় কেঁদেই ফেলেছিলাম। অনেক হেসেছিলেন ভাইয়ারা সেদিন আমাকে নিয়ে। বুঝিয়ে বলেছিলেন, অনেক সময় আসলে এমন হয়। জানা একটা বিষয়ও শুধুমাত্র বেখেয়ালের কারণে আমরা ভুল করি বা ভুলে যাই। তাই জ্ঞাআনার্জনের জন্য খেয়াল করাটা, মনোযোগী হওয়াটা ভীষণ জরুরি। সিলেবাস দেয়া হয়েছিল প্রথমদিনই আমাদেরকে। কুরআন, কুরআনের তাফসীর, সিয়াহ সিত্তার হাদীস গ্রন্থ সমূহ, সীরাত, আসহাবে রাসূলের জীবনী, বিখ্যাত মুসলিম মনিষীদের জীবনী, ইসলামের ইতিহাস এবং পাশাপাশি যে যেই সাবজেক্টের স্টুডেন্ট সেই বিষয়। এছাড়া জেনারেল নলেজের জন্য সপ্তাহে একদিন আলাদা ক্লাস। পড়া ছিল আমার মোটামুটি সিলেবাসের সবকিছুই। তাই খুব বেশি ঘাবড়ে যাইনি। বরং উৎসুক আগ্রহী ছিলাম অর্জিত জ্ঞানকে কিভাবে জীবনে প্রয়োগ করতে হবে সেটা শেখার জন্য। কতবার বলেছি এই একই কথা। তুমি আবার বিরক্ত হচ্ছো নাতো?

একদমই
না। বরং মনের বিরক্তি ভাব কেটে যেতে শুরু করেছে তোর কথা শুনে। থেমে গেলি কেন? বল আমি আনন্দিত মনে শুনছি তোর কথা।

নূহা
হেসে বলল, ট্রেনিং সেন্টারে যেয়েই প্রথম পরিচিত হয়েছিলাম জ্ঞানার্জনের মাধ্যম সমূহের সাথে। জেনেছিলাম একজন মানুষের জীবন ততক্ষণ পর্যন্ত সফলতার সন্ধান পায় না, যতক্ষণ পর্যন্ত না সেটি জ্ঞান বৃক্ষের ছত্রছায়ায় আশ্রয় পায়। আল্লাহ তায়ালা দুনিয়াময় জ্ঞান যেমন ছড়িয়ে দিয়েছেন। তেমনি আমরা যাতে যথাযথ সেই জ্ঞান অর্জন করতে পারি কিছু মাধ্যমও দান করেছেন। সেই প্রতিটি মাধ্যমেরই স্ব স্ব এবং নির্দিষ্ট কর্ম পরিধি আছে। প্রত্যেকটি মাধ্যম নিজ-নিজ কর্মপরিধি পর্যন্ত কাজ করে। এবং তাদের দ্বারা উপকৃত হওয়া যায়। কিন্তু কোন মাধ্যমই নিজ কর্ম পরিধির বাইরে কিছু করতে পারে না। তার দ্বারা উপকৃত হবারও সুযোগ থাকে না। জ্ঞানার্জনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম আমাদের পঞ্চ ইন্দ্রিয়। অর্থাৎ, দৃষ্টি, শ্রবণ, ঘ্রাণ, স্বাদ, স্পর্শ। চোখে দেখে চারপাশের অনেক কিছু সম্পর্কে আমরা জ্ঞানার্জন করতে পারি। মানুষের জীবনাচরিতে, প্রকৃতিতে অসংখ্য শিক্ষা লুকায়িত। দৃষ্টিশক্তির দ্বারা যা উন্মোচন অর্জন করা সম্ভব। শ্রবণশক্তির দ্বারাও আমরা জ্ঞানার্জন করি। কথায় বলে, চোখ-কান খোলা রাখলে বাতাসের বয়ে চলা থেকেও পাওয়া যায় পূর্বাভাস। ঘ্রাণশক্তিও আছে নিজস্ব কর্মপরিধি। আশেপাশের অপরিচ্ছনতার আগাম সতর্ক সংকেত পৌছে যায় ঘ্রাণশক্তির বদৌলতে। তেমনি উপভোগ করা যায় জীবনের সুবাসিত প্রান্তর। স্বাদের কারণেই আমরা উপলব্ধি করতে পারি ভিন্নতাকে। স্পর্শও দিয়ে যায় অনেক কিছুর আভাস। কিন্তু এই পাঁচটি মাধ্যমই একটি নির্দিষ্ট কর্মপরিধির বাইরে কাজ করতে অক্ষম। যেমন, চোখের দ্বারা কখনোই শোনা সম্ভব নয়। তেমনি কানের দ্বারা অসম্ভব স্বাদ গ্রহণ। জ্ঞানার্জনের এই মাধ্যমগুলো তাই স্ব স্ব গন্ডিতে আবদ্ধ।

হুমম
, আর জ্ঞানার্জনের দ্বিতীয় মাধ্যম হচ্ছে, বিবেক।

নূহা
হেসে বলল, হ্যা। নির্দিষ্ট একটি পর্যায়ে গিয়ে নাক, কান, চোখ, জিহ্বা, হাত কার্যক্ষমতা হারায়। যখন কোন বস্তু সরাসরি প্রত্যক্ষ দর্শনের আওতায় আসে না। তখন প্রয়োজন হয় অনুধাবন, উপলব্ধি অনুভবের। এই কাজের জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে জ্ঞানার্জনের অপর একটি মাধ্যম দান করেছেন। সেটি হচ্ছে, “বিবেক যেখানে গিয়ে পঞ্চইন্দ্রিয় কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে, সেখান থেকে বিবেক সক্রিয় হয়ে ওঠে। কিন্তু পঞ্চইন্দ্রিয়ের কর্মপরিধি যেমন অসীম নয় এবং একটি সীমায় গিয়ে থমকে দাঁড়িয়ে যেতে হয়। ঠিক তেমনি বিবেকের কর্মপরিধিও অসীম নয়। বিবেকও একটি নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত মানুষকে জ্ঞানার্জনে সহায়তা করে এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেয়। নিজের সীমার বাইরে বিবেক অনুধাবন ক্ষমতা হারায় বলেই আধ্যাত্মিক জগতের অনেককিছুই আমাদের কাছে থেকে অধরা, রহস্যাবৃত্ত। এই যেমন, ঘটমান সবকিছুর মধ্যেই নিহিত আছে কল্যাণ। নিজ অভিজ্ঞতায়, অন্যের অভিজ্ঞতায় বার বার এটা প্রমাণিত হলেও মন স্থির থাকতে পারে না এই বিশ্বাসের উপর। দুলতে থাকে মন নানান ভাবনায় দোলনায় চড়ে।

হুম
! আমাকে ইনভাইড করছিস তো তোদের প্রথম ক্লাসের দিন?

নূহা
হেসে বলল, অডিও রেকর্ড দেয়া যেতে পারে বড়জোর তোমাকে।

আফজাল
সাহেব হেসে বললেন, আলহামদুলিল্লাহ সেটা পেলেই অনেক। কি নিয়ে আলোচনা হবে সেদিন?

নূহা
বলল, এটা নিয়েই একটু দ্বিধা-দ্বন্দ্বে আছি। তবে আমাদের প্রথমদিনের প্রথম ক্লাস ছিল দাওয়াহ উপরে। আমাদেরকে খুব সুন্দর করে বুঝিয়ে বলা হয়েছিল, ‘দাওয়াহসকল মুসলিমদের উপর অত্যাবশ্যকীয় দায়িত্ব সমূহের মধ্যে একটি। যে দায়িত্ব পালন থেকে কোন মুসলিম বিরত থাকতে পারে না। যারা দাওয়াতী কাজ করেন তারা অন্যকে যেমন সৎ কাজের আদেশ অসৎ কাজের নিষেধ এবং কল্যাণের পথে ডাকেন। তেমনি এই দাওয়াতী কাজ তাকেও প্রতিকূল পরিস্থিতিতে টিকে থাকতে সহায়তা করে, মনে শক্তি যোগায়। আমরা যদি রাসূল () এর মক্কী জীবনের দিকে দৃষ্টিপাত করি তাহলে দেখতে পাই যে, রাসূল () ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয়প্রাপ্ত সাহাবীগনের মূল কাজই ছিল দাওয়াহ। অন্যদের কাছে ইসলামের শান্তির আহ্বান পৌঁছে দেয়া, নিজ নিজ সাধ্যানুযায়ী ইসলামের পথে ত্যাগ কুরবানী দেয়া এবং শত অত্যাচার, নির্যাতন সহ্য করেও আল্লাহর রাহে অবিচল চলাই ছিল তাদের জীবনধারা। তবে দাওয়াহ উপরে আলোচনা শুরু করার আগে আমাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল শিক্ষার লক্ষ্য উদ্দেশ্যে সম্পর্কে সবার ব্যক্তিগত চিন্তা-ভাবনা অভিমত।

কি
বলেছিলি তুই?

নূহা
হেসে বলল, আমি কি বলেছিলাম সেটা তো বলবো না। তবে নুসাইবা ভাবী বলেছিলেন, জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষা-দীক্ষায় অনগ্রসর বলেই মুসলিম জাতিদের আজ এত দুর্ভোগ-দুর্গতি। শ্রেষ্ঠ জাতি হবার পরেও সারা বিশ্বে আমরা অবহেলিত-নিন্দিত। তাই প্রকৃত শিক্ষা মৌলিক জ্ঞানের আলোকে আলোকিত হওয়া প্রতিটি মুসলিমের জন্য সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ন। তাইয়্যেবা বলেছিল, একজন আদর্শ মুসলিম হিসেবে নিজের দায়িত্ব-কর্তব্য যথাযথ পালন করার লক্ষ্যে নিজেকে গড়ে তোলাই শিক্ষার মূল লক্ষ্য উদ্দেশ্য। আফরীন খুব বিনয়ের সাথে নুসাইবা ভাবীর ধারণাকে ঘিরে বলেছিল, আমার মনেহয় না যে, জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষা-দীক্ষায় অনগ্রসর বলেই মুসলিম জাতিদের আজ এত দুর্ভোগ-দুর্গতি। বরং মনেহয় মুসলিমদের চরিত্রের মূল বৈশিষ্ট্য সমূহকে চরিত্রে ধারণ করতে পারলে বর্তমানে মুসলিমরা যতটুকু অগ্রসর জ্ঞান-বিজ্ঞানে, সেটার দ্বারাই শ্রেষ্ঠ জাতি হিসেবে নিজেদেরকে ফোকাস করতে পারতো। সুবহা ভাবী আফরীনকে সমর্থন করে বলেছিল, আসলেই আধুনিক জ্ঞান- বিজ্ঞানের এমন কোন একটি শাখাও নেই যা নিয়ে মুসলিমরা পড়াশোনা করছে না। সংখ্যায় পশ্চিমাদের তুলনায় কম হতে পারে কিন্তু জ্ঞান-বিজ্ঞানের সমস্ত শাখাতেই মুসলিমদের বিচরণ রয়েছে। তারপরও মুসলিমরা অবহেলিত এর মূল কারণ মুসলিম হয়েও জীবনের সকল অঙ্গনে মুসলিমরা ইসলামের মৌলিক বিধি-নিষেধ সমূহ মেনে চলার ব্যাপারে উদাসীন। যেই জীবন দর্শনের কারণে মুসলিমদের মাথায় শ্রেষ্ঠ জাতির তাজ পড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। সেই জীবন দর্শন থেকে ছিটকে পড়ার কারণেই মুসলিমদের আজ এত দূর্ভোগ-দুর্গতি। শিক্ষার লক্ষ্য উদ্দেশ্যেকে ঘিরে খুব চমৎকার একটা আলোচনা হয়েছিল সেদিন। মোট ত্রিশজন স্টুডেন্ট ছিলাম আমরা। সবাই নিজ নিজ ধারণা শেয়ার করেছিল, বিনয়ের সাথে অন্যের ধারণার বিপক্ষে ভিন্ন মতও পোষণ করেছিল অনেকেই। সবশেষে আমাদের যিনি টিচার ছিলেন তিনি তার অভিমত জানিয়েছিলেন আমাদের সবাইকে।

কে
ছিল সেদিন টিচার?

নূহা
হেসে বলল, এটাও বলবো না। তবে উনি বলেছিলেন, ইসলাম হচ্ছে ইনসাফের ধর্ম। ইসলামের লক্ষ্য গোটা দুনিয়া জুড়ে ইনসাফ কায়েম করা। সকল জুলুম-অত্যাচার-অন্যায়-অনিয়মের বিরুদ্ধে অবিচল অবিরত সংগ্রাম করাই মুসলিমদের জীবনধারা। এই দায়িত্ব পালনের জন্য নিজেদেরকে যোগ্য দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলা এবং কর্ম সম্পাদনের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে দুনিয়া আখিরাতে কল্যাণ প্রতিষ্ঠা করাই হচ্ছে ইসলামে শিক্ষার মূল লক্ষ্য উদ্দেশ্যে। এতদিন তোমরা শিক্ষা অর্জন করেছো ঠিকই কিন্তু তোমাদের কাছে মূল লক্ষ্যটা ছিল অস্পষ্ট। কিন্তু এখন তোমরা জানো কেন তোমাদেরকে জ্ঞানার্জন করতে হবে। সুতরাং, জীবনকে ঘিরে সমস্ত উদাসীনতাকে ছুটি দিয়ে এখন তোমাদেরকে অভীষ্ট লক্ষ্যকে ছুঁয়ে দেবার সংকল্পে জ্ঞানার্জনে ফোকাস করতে হবে। এতদিন তোমরা নিজেদের করণীয় সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতে না। আলহামদুলিল্লাহ আজ জানতে পেরেছো। আর জানার সার্থকতা লুকায়িত মানার মধ্যে। সুতরাং, আজ এই মূহুর্ত থেকে তোমাদের জীবনের মিশন হচ্ছে, একজন আদর্শ মুসলিমাহ হিসেবে নিজেদেরকে গড়ে তোলা

আফজাল
সাহেব হেসে বলল, তুই পরিচয় না বললে কি হবে? যদি প্রশ্ন করা হয়, মানুষ তোমার নাম কি? জবাব আসবে, শব্দ বলে দেবে পরিচয়। নাকি বলিশ?

নূহা
হাসতে হাসতে বলল, আলহামদুলিল্লাহ। যে আমাদের কেক আইসক্রিম এসে গিয়েছে। তুমি শুরু করো আমি তোমার বৌয়ের টেবিলকে ঘিরে একটা পাক দিয়ে আসি। এতে যদি নুসরাত বেগমের সুমতি হয়।

আফজাল
সাহেব হেসে ফেললেন। নূহাও হাসতে হাসতে উঠে গেলো

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন