সোমবার, ১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

আঁধারে দীপ জ্বেলে যাই...১১


সারা পথ যতটা আনন্দ নিয়ে রিহ্যাব সেন্টারে পৌঁছানোর প্রহর গুনছিল সেন্টারের মেইন গেটের কাছে গাড়ি থেমে নামার সাথে সাথেই কয়েক গুণ বেশি নিরানন্দ ঘিরে ধরলো নূহার মনকে সবাই ভেতরে ঢুকে যাবার পরও চুপ করে বাইরেই দাঁড়িয়ে রইলো টের পাচ্ছিলো অনুভূতি হঠাৎ করেই কেমন যেন ভোঁতা হয়ে গিয়েছে মনের ভেতর ঠিক কেমন ঝড় উঠেছে সেটাও ঠিক বুঝে উঠতে পারছিল না শুধু নিস্পলক তাকিয়ে দেখছিল চারপাশের সবকিছু ধীরে ধীরে ওয়েলকাম বোর্ডের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো নূহা রিহ্যাব সেন্টারের উদ্বোধনের দিন বিশাল একটা হোয়াইট বোর্ড লাগিয়ে দিয়েছিল জাওয়াদ সবাইকে নিজ নিজ অনুভূতি লেখার জন্য সবার প্রথমেস্বাগতম ভালোবাসার ভুবনেবাক্যটা বড় বড় করে লিখেছিলেন আজাদ সাহেব এরপর পরিবারের সবাই এক এক করে ভালোবাসাকে ঘিরে নিজেদের ভাবনাগুলো লিখেছিলভালোবাসা মানে ভাবাবেগ নয় ক্ষয়! ভালোবাসা মানে চিন্তার মিল নিশ্চয়! ভালোবাসা মানে নয় অভিযোগ, সংশয়! ভালোবাসা মানে প্রতিকূলতায় আশ্রয়! ভালোবাসা মানে দুষ্টু মিষ্টি খুনসুটি! ভালোবাসা মানে তপ্ত খরায় বৃষ্টি! ভালোবাসা মানে আশ্বাস, নির্ভরতা! ভালোবাসা মানে শুষ্ক প্রাণে সজীবতা! ভালোবাসা মানে নয় ক্ষণিকের তীব্রতা! ভালোবাসা মানে উভয়ের কল্যাণকামীতা! ভালোবাসা মানে নয় সর্বদা চলা নির্ভুল! ভালোবাসা দুরুত্বেও একাকার নদীর দুই কূল! ভালোবাসা মানে নিশ্চুপে করে যাওয়া ত্যাগ! ভালোবাসা মানে বিবেকের কাঠগড়ায় আবেগ! ভালোবাসা মানে শান্তির সন্ধানে চলা উন্মুখ!ভালোবাসা মানে কারো হাসিতে খুঁজে নেয়া সুখ! ভালোবাসা মানে নিয়তির লিখনে প্রশান্ত মন!ভালোবাসা মানে রব্বের সন্তুষ্টির তরে জীবন! ভালোবাসা মানে অগুনতি অফুরন্ত দুষ্টুমি! ভালোবাসা মানে একই বৃন্তে তুমি আর আমি!ভালোবাসা মানে আনন্দ্রাশ্রুর মুহুমুহু ঢেউ! ভালোবাসা মানে দূরে থেকেও পাশে থাকা কেউ! ভালোবাসা মানে সবচেয়ে প্রিয় পরিবারের খুশি! ভালোবাসা মানে আপনজনদের শুভকামনায় দিবানিশি! ভালোবাসা মানে আনন্দবাড়ির কিচিরমিচির!ভালোবাসা মানে আত্মার বন্ধন সুনিবিড়!” সবার ভাবনাগুলোকে একসাথ করে জাওয়াদ এই ওয়েলকাম বোর্ডটি তৈরি করেছিল পরম মমতায় পাথরে খোঁদাই করা ভালোবাসাময় শব্দগুলোর উপর হাত বুলিয়ে নিলো নূহা ঠিক যেই মূহুর্তে খুলে যেতে শুরু করলো স্মৃতির বন্ধ কপাট, কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে বেশ চমকে উঠলো নূহা

সুবহা
হেসে বলল, কি রে এমন চমকে উঠলি কেন? কোন জগতে ছিলি এতক্ষণ?

নূহা
মুখে হাসি টেনে বলল, চারপাশের সবকিছু একদম অন্যরকম লাগছে ভাবী। আগে অনেক কিছুই এমন ছিল না।
কত বছর পর এসেছিস মনেআছে?

হুম
, মনেআছে। পনেরো বছর পর। যখন রিহ্যাব সেন্টারটা তৈরি করা হচ্ছিলো তখন এসেছিলাম আমি। প্রায় ছয়মাস এখানেই ছিলাম। এরপর আর কখনোই এখানে আসা হয়নি। আমাদের কটেজটা ডান দিকের পার্কটার ওপাশেই ছিল। এখনো কি আছে ভাবী সেই কটেজটা?

নূহার
মাথায় হাত বুলিয়ে সুবহা বলল, না থেকে কি পারে? জাওয়াদ যক্ষের ধনের মতো যে কয়েকটা জিনিস আগলে রেখেছে তারমধ্যে এখানে কাটানো তোদের প্রতিটি জিনিসও আছে। কটেজের সবকিছু হুবহু আগের মতোই আছে। ঠিক যেভাবে তুই সাজিয়েছিলি। মাসে একবার অবশ্যই এখানে আসে জাওয়াদ। কখনো বাচ্চাদের নিয়ে, কখনো বা একাই। এখনই যাবি কটেজে?
না পরে যাবো। আগে দেখা করি সবার সাথে। মুনা তো এখানেই জব করে তাই না?

সুবহা
হেসে বলল, হ্যা। আমাদের সবচেয়ে সিনসিয়ার সাইকো থেরাপিস্টদের একজন মুনা। বিশেষ করে টিনএজদের কেসগুলো এত চমৎকার ভাবে ডিল করে। সত্যিই প্রশংনীয়। নিজে ভুক্তোভুগি তো। তাই অন্যদেরকে বুঝতে যেমন পারে, বোঝাতেও পারে।

নূহা
হেসে বলল, আলহামদুলিল্লাহ। এটা অবশ্য ঠিক। মনের কোনে এক খন্ড কষ্ট থাকলে। অন্যের কষ্টগুলোকে ফিল করাটা খুব সহজ হয়ে যায়। যাইহোক, চলো ভেতরে যাই।

তুই
যা। আমার একটু কাজ আছে বাইরে। আমি ওটা সেরে আসছি

সুবহা
ভাবীকে বিদায় জানিয়ে রিহ্যাভ সেন্টারের ভেতরে ঢুকলো নূহা। বিশাল এড়িয়া নিয়ে নয়নাভিরাম করে গড়ে তোলা হয়েছে সেন্টারটি। নানান ধরণের ফুল পাতাবাহারের বাগানের পাশাপাশি তৈরি করা হয়েছে কৃত্রিম বনাঞ্চল, পাহাড়, ঝর্ণা। এপাশে বিশাল নীলাভ জলরাশিতে টইটুম্বুর লেক। লেকের পাড় জুড়ে সবুজ ঘাসের মাদুর। দেখলেই ইচ্ছে করে দুপা ছড়িয়ে বসে যেতে। মোটকথা, মনকে প্রশান্তিতে ভরে তোলার আপ্রাণ চেষ্টা করা হয়েছে। অশান্ত মন নিয়েই এখানে সবাই ছুটে আসে। শান্ত-স্বিগ্ধ পরিবেশ কিছুটা হলেও মনকে প্রভাবিত করে। দূর থেকে দেখতে পেলো ষোল-সতেরো বছত বয়সী একটি মেয়ে হাত নেড়ে নেড়ে কিছু বলছে আর অঝর কান্না করছে। মুনা পরম মমতায় মেয়েটাকে বোঝানোর চেষ্টা করছে। ইচ্ছে করেই কিছুটা আড়ালে সরে দাঁড়ালো নূহা। এই মূহুর্তে কারো সাথেই কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। একা একা ঘুরে দেখতে চায় একটি স্বপ্নের বাস্তবায়নকে। জাওয়াদের সবচেয়ে আরাধ্য স্বপ্নগুলোর একটি ছিল এই রিহ্যাভ সেন্টারটি গড়ে তোলা। যেখানে আঁধারে ঢেকে যাওয়া মনগুলোতে দীপ জ্বালানোর স্বপ্ন দেখতো জাওয়াদ। মনের ভাঙা সাঁকোগুলোকে নতুন করে জোড়া লাগানোর আশা লালন করতো। তারপর একদিন সেই মনগুলোকে সাথে নিয়ে নতুন এক পৃথিবীর গড়ে তুলবে এই ব্যাপারে দৃঢ় প্রত্যয়ী ছিল। জাওয়াদের প্রতিটা স্বপ্নকে নিজের স্বপ্ন করে নিয়েছিল নূহা। তাই মনে প্রাণে আঁকড়ে ধরেছিল এই স্বপ্নটিকেও। যখন রিহ্যাভ সেন্টারটি তৈরির কাজ চলছিল। জাওয়াদ চাচ্ছিলো সর্বক্ষণ এখানে থাকতে। সবার সাথে মিলে কাজে অংশগ্রহণ করতে। নূহাকে সাথে নিয়ে তাই চলে এসেছিল এখানে। জাওয়াদের সাথে জীবনের অনন্য সুন্দর ছয়টি মাস এখানেই কেটেছিল। রাহাতের সাথে বিয়ের পর সেই সব কিছু থেকে দূরে থাকতে চেষ্টা করেছে নূহা। যা মনকে দুর্বল করে তোলে। তাই হৃদয়ের খুব কাছের এই জায়গাটিতেও এত বছর আসা হয়ে ওঠেনি।

নূহা
তুমি এখানে? আদী সেই কখন থেকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন তোমাকে। বলতে বলতে নূহার দিকে এগিয়ে এলো তাইয়্যেবা।

নূহা
হেসে বলল, ঘুরে দেখছিলাম চারপাশটা। বাচ্চারা সব কোথায় বলতে পারবে?

ওরা
চারজনই বাবা আর মামণিকে সাথে নিয়ে ভাইজানের কটেজে চলে গিয়েছে। আমি ওখান থেকেই এলাম। খেলা করছে বাগানে মনে আছে তো আধঘন্টা পরেই কিন্তু মিটিং আমাদের?

হুম
, মনে আছে। তুমি যাও আদী ভাইয়াকে বলো টেনশন না করতে। আমি দশ-পনেরো মিনিটের মধ্যেই আসছি ইনশাআল্লাহ
মন খারাপ লাগছে?

নূহা
হেসে বলল, এটা এমন একটা জায়গা যেখানে এলে স্পষ্ট দেখা যায় দুনিয়াতে মানুষ কত সমস্যা, কত বেদনা, কত কষ্টের মাঝে দিনযাপন করছে। এমন জায়গায় এসে নিজের জন্য মন খারাপ করার কথা চিন্তা করতেও খুব বিবেকে বাঁধে। আমি সাইকোলজি নিয়ে পড়ার সিদ্ধান্ত কেন নিয়েছিলাম জানো?

তাইয়্যেবা
হেসে বলল, ভালো লাগার কারণে নিশ্চয়ই। আসলে এই ব্যাপারে কখনোই কিছু বলোনি তুমি।

নূহা
হেসে বলল, জাওয়াদের এক্সিডেন্টের পর মেডিকেলে না পড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আমি। কিন্তু এরপর যখন মনে হয়েছিল আমি মেডিকেলে পড়বো এটা জাওয়াদের ইচ্ছে ছিল। তখন আমি আবারো মেডিকেলে ক্লাস শুরু করেছিলাম। ইন্টার্নশীপের প্রথমদিন খুব আনন্দিত মনেই হসপিটালে ঢুকেছিলাম। কিন্তু ঢোকা মাত্রই সমস্ত আনন্দ উবে গিয়েছিল। একটি মেয়ের চিৎকারে হসপিটালের বাতাস ভারি হয়ে উঠেছিল। কারণ এক্সিডেন্টে মেয়েটির হাজবেন্ড মারা গিয়েছিল সেদিন। দৃশ্য, কান্না আমার মনেও প্রচন্ড এক ঝড় তুলে দিয়েছিল। যদিও এর অনেক আগেই জাওয়াদ ফিরে এসেছিলেন। কিন্তু জাওয়াদ চলে যাবার পরের সেই সব মূহুর্ত কখনোই মুছে যাবার মতো, ভুলে যাবার মতো ছিল না। ছুটে বেরিয়ে গিয়েছিলাম হসপিটাল থেকে। এরপর ইন্টার্নী আর করা হয়নি আমার। প্রচন্ড এক ভয় চেপে বসেছিল মনের ভেতর। মনে হচ্ছিলো হসপিটালে গেলে ঐসব দৃশ্য রোজ রোজ দেখতে হবে আমাকে। যা সহ্য করার ক্ষমতা আমার নেই। সবাই অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেছিল আমাকে। এমনকি জাওয়াদ পর্যন্ত। কিন্তু অসহনীয় এক ভয়ের অনুভূতি চেপে বসে গিয়েছিল আমার মনের মধ্যে। এর তিন-চার মাস পর রাহাতের অনেক অনুরোধের কারনে মনের অমূলক ভয় দূর করার উদ্দেশ্যে বাধ্য হয়েই বড়মামার কাছে কাউন্সিলিংয়ের জন্য যাওয়া শুরু করেছিলাম। প্রায়ই দিনই মামা আমাকে বিভিন্ন ক্লায়েন্টের কেস ফাইল পড়ে শোনাতেন। মাঝে মাঝে মামা যখন ক্লায়েন্টদের সাথে কথা বলতেন আমাকেও সাথে রাখতেন। সময়টাতে আমি প্রথম উপলব্ধি করেছিলাম দুনিয়াতে মানুষ কত বিচিত্র সব সমস্যাতে ভুগছে। একেকজন মানুষের হাসিমুখের আড়ালে লুকিয়ে আছে কত অজানা কষ্ট। আবার কিছু মানুষ এতটাই অসহায় যাদেরকে সাপোর্ট দেবার মতও কেউ নেই। দেখেছিলাম ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয়কে কেন্দ্র করে কিভাবে ধ্বসে পড়ে সম্পর্কের ইমারত। টুপ করে কিভাবে অতলে ডুবে কারো প্রতি কারো যায় ভরসা, ভেঙে চুরচুর করে দেয় একজন আরেকজনের বিশ্বাস। জীবনের প্রথমবার সত্যিকার অর্থে নিজের ব্লেসিংগুলোকে মনের আকাশে জ্বলজ্বল করে ফুটে উঠতে দেখেছিলাম। নিজের সৌভাগ্যের মাত্রা দেখে অঝরে কেঁদেছিলাম আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে। ক্ষমাপ্রার্থনা করেছিলাম বিগত জীবনের প্রতিটি না শুকরি, প্রতিটি অসন্তোষের জন্য। অনেক বছর পর অন্তরের দহন জ্বালা টের পাচ্ছিলাম না। তার বদলে কৃতজ্ঞচিত্ত বান্দাহর হবার প্রশান্তি অনুভব করেছিলাম। এবং সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, যে কারণে আমার মনের রুদ্ধ বাতায়ন উন্মুক্ত হয়েছে। বহুদিন পর আমি আস্বাদন করতে পেরেছি নরম আলো মিষ্টি বাতাসের সুবাস। আমার চারপাশের সমস্যাগ্রস্ত মানুষগুলোকে সেই কারণের সন্ধান দেবার চেষ্টা করবো। ওদেরকে বোঝাবো যে, ‘দুঃখ-বেদনায় রুদ্ধ করো না মনের দ্বার, আড়ালে কোথাও দাঁড়িয়ে আছে সুখানন্দের সম্ভার। বন্ধ করলে দুয়ার দেখবে তাদের কেমন করে, তোমার স্বপ্ন পূরণের ডালি ব্যর্থ হয়ে যাবে ফিরে

তাইয়্যেবা
নূহাকে ধরে সিক্ত কন্ঠে বলল, এই মেয়ে তুমি সবসময় এমন ভাবে কথা বলো কেন। না চাইতেও চোখ ভিজে ওঠে।

নূহা
হেসে বলল, জানো তাইয়্যেবা জীবনের শত অপূর্ণতার ভিড়েও কিছু কিছু সত্যিকার সুখী মানুষ আছেন! তেমনি টইটুম্বুর পূর্ণতার আতিশায্যে সুখের মুখোশধারী মানুষও রয়েছেন অসংখ্য! কন্টকাকীর্ণ পথে ক্ষত-বিক্ষত পদ যুগলেও ঠোঁটের কোণে হাসি মাখিয়ে অক্লান্ত হেঁটে চলেন কিছু মানুষ! ছোট্ট একটা স্পীড ব্রেকারে হুমড়ি খেয়ে আশার পঙ্গুত্ব বরন করে আহাজারিতে নিমগ্ন হয় এমন মানুষের সংখ্যাও নেহায়েৎ কম নয়! প্রিয়জনের দেয়া আঘাতের ঘূর্ণিপাকে জীবনের সমস্ত সাধ-আহ্লাদ বিসর্জন দেয় কিছু মানুষ! আবার আপনজনদের অন্তরকে জ্বালিয়ে সেই উত্তাপেই নিজেকে উষ্ণ করে কিছু স্বার্থবাদী মানুষ! পৈশাচিকতার উন্মাদনায় অন্যেকে শুষে খেয়ে নিজের পিপাসা মেটায় নির্দয় কিছু মানুষ! আর কিছু মানুষ ঘোর আঁধারে নিমজ্জিত থেকেও নিজেকে ক্ষয় করে অন্যেকে করে আলোকিত! কিছু হাশিল করার লক্ষ্যে জীবন যুদ্ধে মুক্ত তরবারি হাতে ঝাঁপিয়ে পড়তে কুন্ঠিত হন না কিছু মানুষ! আত্মত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হয়ে স্বইচ্ছায় সর্বংসহার তাজ মাথায় তুলে নেন অবলীলায় কিছু কিছু মানুষ! গত কয়েক বছরে এমন আরো কত রঙ-রূপ যে দেখলাম মানুষের। তবে কি জানো?

কি
?

জীবনে
আসা হাজারো রঙ, লাখো রূপ, সহস্র মুখ মুখোশের ভিড়ে, দুএকজন মানুষ দৃষ্টিসীমায় উন্মোচন করে সত্যিকার মনুষ্যত্বের আলোকোজ্জ্বল নকশা! এমন মানুষগুলোতে হারাতে ভয় হয়! খুব বেশি ভয়! অন্তঃরাত্মা শিহরিত হয়ে থরো থরো কাঁপন তুলে সে ভয় ছড়িয়ে পড়ে সমস্ত অস্তিত্ব জুড়ে। এমন মানুষেরা সর্বদা যে পাশেই থাকেন এমনটা কিন্তু নয়। তবে মনকে ছুঁয়ে থাকেন সর্বক্ষণ। অন্তরালেই থাকে যাদের বসবাস! তবুও চারিদিকে ছড়িয়ে যান সুবাস! শুধুই অনুভবে অস্তিত্ব, ঠিক যেন অদৃশ্য বাতাস! আটপৌরে সংজ্ঞার অনেক উপরে,ভাবনার পরিধিকে ছাড়িয়ে, চিন্তার জগতকে যায় নাড়িয়ে, থেকে যান তারা সর্বদা স্পর্শের বাইরেই। নিজ কর্তব্য কর্ম নিয়ে আকন্ঠ থাকেন ব্যস্ত। জ্ঞানাহরণে তারা বিমুগ্ধ ন্যস্ত! মনটা তাদের উদারতায় প্রশস্ত। আর অভিব্যক্তি স্বিগ্ধ চির বিশ্বস্ত! এখানে আসার পর থেকেই এমন কিছু মানুষের অস্তিত্ব টের পাচ্ছি চারপাশে। তাই আরো কিছুটা ক্ষণ এখানেই ঘুরে বেড়াতে চাচ্ছি। বাতাসে ভেসে বেড়ানো তাদের সৌরভ টেনে নিয়ে মনটাকে আকাশের মতো সীমাহীন করে তোলার স্পৃহা জাগাতে চাইছি নতুন করে।

তাইয়্যেবা
বলল, আমারো খুব ইচ্ছে জাগে এমন মানুষ হবার। প্লীজ আমাকে তোমার সাথী করে নাও।

নূহা
হেসে বলল, চলো পেছনের দিকে যাই। আগে ঐদিকে একদম খোলা জায়গা ছিল। নানান ধরণের ঘাসফুলের রাজ্য। এখন কি অবস্থা চলো দেখো।

তাইয়্যেবা
নূহার হাত ধরে হেসে বলল, হ্যা চলো যাই

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন