সোমবার, ১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

আঁধারে দীপ জ্বেলে যাই...১



তুমি যদি আরো কিছুক্ষণ এমন পেন্ডুলামের মতো দুলতে থাকো নির্ঘাৎ আমি হিপনোটাইজ হয়ে যাব

কথাটা
শুনে ঘুরে স্ত্রীর দিকে তাকালেন আফজাল সাহেব। বেশ অনেকক্ষণ ধরেই অস্থির ভাবে পায়চারী করছিলেন তিনি। মনে মনে প্রচন্ড বিরক্ত ছিলেন তারউপর কিছুক্ষণ পর পরই মিসেস নুসরাত এটা সেটা মন্তব্য ছুঁড়ে দিচ্ছিলেন। যারফলে বিরক্তি তিক্ততার পর্যায়ে চলে গিয়েছিল। এই মূহুর্তে বেশ রাগ অনুভব করলেন। পর মূহুর্তে ঘড়ির দিকে চোখ পড়তেই সেই রাগে পাল লেগে গেলো।

আফজাল
যে রেগে গিয়েছেন সেটা খুব ভালো মতোই বুঝতে পারছিলেন মিসেস নুসরাত। বুঝতে পারা মাত্রই দুষ্টুমি তার মনের মধ্যে এই ডাল থেকে সেই ডালে লাফিয়ে বেড়াতে শুরু করলো। হাতের কাছে করার মতো আর কোন কিছুই না পেলে। খুব যত্ন করে আফজাল সাহেবকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে রাগানোর কাজটা করেন তিনি। এরপর তারচেয়েও সোহাগের সাথে সেই রাগে তালপাখার বাতাস দেন। রাগ ঘুড়ির মতো ফুড়ফুড় করে তখন আকাশ পানে ছুট লাগায়। লাটাই ঘোরানোতে মিসেস নুসরাত খুবই অভিজ্ঞ মানুষ। যতক্ষণ ইচ্ছে কখনো সুতোয় ঢিল দিয়ে, কখনো রাশ টেনে ধরে মনের আনন্দে আফজাল সাহেবকে উড়িয়ে বেড়ান। এখনো বেশ আয়েশ করে লাটাই হাতে তুলে নিতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু সামনের দিকে দৃষ্টি পড়তেই তার সকল আশায় গুঁড়েবালি ঝরতে দেখতে পেলেন।

অপরদিকে
সামনের দিকে তাকাতেই আফজাল সাহেবের উত্তপ্ত মেজাজকে ঝুপঝাপ এক পশলা বৃষ্টি এসে ভিজিয়ে দিয়ে গেলো। কিছু কিছু মানুষের উপরে কখনোই রাগ করে থাকা যায় না। তারা কারণে-অকারণে ভুল করে, পেরেশানি দেয়, হয়রানি করে। তাদেরকে শাস্তি দেবার জন্য মন প্রতিজ্ঞাবদ্ধও হয়। কিন্তু যখনই তারা হাসি মুখে সামনে এসে দাঁড়ায়, মন হাঁসের মতো সমস্ত রাগ-বিরক্তি ঝেড়ে ফেলে তাদেরকে বুকে টেনে নেয়। গাড়ির জানালা দিয়ে মাথা বের করে হাসি মুখে নূহাকে হাত নাড়তে দেখেও তেমনি আফজাল সাহেবের বেমালুম ভুলে গেলেন নূহাকে বলার জন্য মনে মনে ঠিক করে রাখা সমস্ত কঠিন কথাগুলো। এমনকি নূহা যে নির্ধারিত সময়ের চল্লিশ মিনিট পর এসেছে আচরণ দ্বারা সেটার প্রকাশ করতেও চেষ্টা করলেন না। তিনিও আনন্দিত ভঙ্গীতে হাত নাড়তে নাড়তে স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে বললেন, বসে আছো কেন নুসরাত? নূহা এসে গিয়েছে চলো যাই।

মিসেস
নুসরাত উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, এখন আমার ফুলবাগানে যাওয়ার মুডও নেই। সেখানে ভাঙাচোরা, জং ধরা জিনিসপত্র দেখতে যাওয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না। তুমি আর তোমার ভাতিজীই যাও। ঘুণে খাওয়া, মাকড়সার জাল ঘেরা জিনিস দেখে ওয়াও, ওয়াও করো যেয়ে।

বিস্ময়
ভরা চোখে স্ত্রীর গমন পথের দিকে তাকিয়ে রইলেন আফজাল সাহেব। একদমই ইচ্ছে ছিল না স্ত্রীকে সাথে নিয়ে এন্টিক শপে যাবার। কারণ গত দুইবারের অভিজ্ঞতা থেকে বুঝেছেন তিনি শখ করে যে জিনিসেই হাত দেবেন মিসেস নুসরাত নাক মুখ কুঁচকে বলবেন, এই জিনিস তুমি টাকা দিয়ে কিনবে? তোমার রুচি খারাপ সেটা ছোটবেলা থেকেই জানি। কিন্তু খারাপের মাত্রা যে এত বেশি সেটা আজই প্রথম জানলাম। ছিঃ আমার ঘিনঘিন লাগছে। ওয়াশরুম কোন দিকে সেলসম্যানের কাছ থেকে জেনে রাখো। তোমার পছন্দ দেখে যে কোন সময় বমি করার জন্য ছুট লাগাতে হতে পারে। এবং যতক্ষণ শপে থাকবে এই ধরণের কথাবার্তা বলতেই থাকবে ননস্টপ। বাধ্য হয়ে কোনকিছু না কিনেই গত দুবার ফিরে এসেছিলেন। গতরাতে নূহা ফোন করে যখন জানিয়েছিল ওর পরিচিত একজন নিজের এন্টিক শপ বিক্রি করে দেবে তাই সেল লাগিয়েছে। তখনই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন আজ দেখতে যাবেন। এবং সাথে গেলেই পদে পদে বাঁধার সৃষ্টি করবে তাই স্ত্রীকে সাথে নেবেন না এই সিদ্ধান্তও নিয়েছিলেন। নূহা যাতে না বলে কোথায় যাচ্ছে তারা সেই ব্যাপারেও সতর্ক করে দিয়েছিলেন নূহাকে। কিন্তু কিভাবে যেন ঠিকই টের পেয়ে গেলেন নুসরাত। তিনি যখন রেডি হচ্ছিলেন তখন রুমে ঢুকে হাসি মুখে মিসেস নুসরাত বললেন, আমি রেডি। চলো ড্যাব ড্যাবে চোখে মানুষের ব্যবহার করা, ফেলা দেয়া জিনিসপত্র দেখে আসি। মুখে কিছু না বললেও মনে মনে অসহায়ত্বের দীর্ঘশ্বাস গোপন করেছিলেন আফজাল সাহেব। এন্টিক জিনিসের প্রতি তার বিশেষ ভালো লাগা আছে জানা থাকার পরও সেই জিনিসকে ঘিরে স্ত্রীর এমন তুচ্ছ তাচ্ছিল্যতা বেশ ব্যথিত করে। তিনি জানেন ব্যথা দেবার উদ্দেশ্যে নুসরাত এসব বলেন না তাকে বরং দুষ্টুমি করেন। তেমনি এটাতেও নিশ্চিত তিনি যে ব্যথিত হন সেটা নুসরাত বুঝতে পারেন। যেহেতু বুঝতে পারে উচিত ছিল এসব কথা আর না বলা। কিন্তু জেনে বুঝেও আরো বেশি বেশি করে বলে। বুঝে আসে না যাকে ভালোবাসে তাকে যন্ত্রণা দিয়ে কিভাবে কেউ সুখ পেতে পারে কোন মানুষ?

দুঃখ
ভরা মন নিয়ে জাওয়াদকে একদিন এই প্রশ্নটা করেছিলেন। জাওয়াদ হাসি মুখে জবাবে দিয়েছিল, তোমার ভালোবাসার সংজ্ঞার সাথে আম্মির আচরণ অমিল কখনোই ভালোবাসার ঘাটতির প্রমাণ দেয় না। কারণ ভিন্ন দুজন মানুষের ভালোবাসার সংজ্ঞা ভিন্ন হতেই পারে। ব্যাপারটা আসলে মালটা আর অরেঞ্জের মতো। এই যেমন ধরো, অরেঞ্জ খেলেই আমার এসিডিটির সমস্যা হয়। কিন্তু মালটাতে কোন সমস্যা হয় না। নূহার ব্যাপারটা আবার উল্টো। নূহা অরেঞ্জ খেতে পারে কিন্তু মালটা খেলেই ওর এসিডিটির সমস্যা হয়। তো আমরা যখন একসাথে ছিলাম জ্যুস করার জন্য অরেঞ্জ আর মালটা দুটোই কিনতাম। যার যেটাতে সমস্যা সেটা এড়িয়ে চলতাম। কখনোই নিজের সুবিধাকে অন্যের অসুবিধার কারণ হতে দিতাম না। ঠিক তেমনি তোমার এন্টিক জিনিস পছন্দ, আম্মির অপছন্দ। তোমার স্বভাবে পছন্দ জাহির করা নেই। কিন্তু আম্মি আবার নিজের অপছন্দ জাহির না করে থাকতে পারে না। আম্মি যেমন তোমার কম কথা বলা স্বভাব মেনে নিয়েছেন। তুমি তেমন আম্মির বেশি কথা বলার স্বভাবটা মেনে নিলেই তো হয়ে যাচ্ছে। এটা নিয়ে এত অস্থির হবার তো কিছু দেখছি না। আফজাল সাহেব আর কিছু বলেননি জাওয়াদকে। বাড়ির ছেলেমেয়েগুলোকে কিছু বলতে যাওয়াও বিপদ। এরা কখনোই সাপোর্টে কথা বলবে না। সবসময় অপর পক্ষের হয়ে ওকালতি করবে। এসব ভাবতে ভাবতে গাড়ির কাছে পৌঁছে গেলেন। নূহা সালাম দিলে জবাব দিয়ে বললেন, ওপাশে যা। আমাকে ড্রাইভিংয়ে বসতে দে।

নূহা
বলল, কেন? তোমাকে কেন ড্রাইভিং দেবো? আমার জায়গায় ভাইয়ারা কেউ থাকলে কি তুমি এই কথা বলতে? তাহলে আমাকে কেন বললে? আমি মেয়ে বলে?

আফজাল
সাহেব অবাক কন্ঠে বলল, উকিলের মতো জেরা করছিস কেন?

তুমি
ছেলে-মেয়েতে বিভেদকারী পিতার মতো কথা বললে কেন?

আচ্ছা
যা হয়েছে। একটা কিছু পেলেই প্যাঁচাতে শুরু করিস। বলতে বলতে নূহার পাশে গিয়ে বসলেন।

নূহা
হেসে বলল, আম্মিও যাবে নাকি আমাদের সাথে?

না
বলতে গিয়ে সামনের দিকে চোখ পড়তেই থেমে গেলেন আফজাল সাহেব। ছুটতে ছুটতে গাড়ির দিকেই আসছিলেন মিসেস নুসরাত আসছেন। মুখে কিছু না বলে ছোট্ট একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চুপচাপ দরজা খুলে গিয়ে পেছনের গিয়ে সীটে বসলেন।

নূহার
পাশে বসে হাঁপাতে হাঁপাতে মিসেস নুসরাত বললেন, তোদের সাথে যাবার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে ছিল না আমার। কিন্তু আমি না গেলে তোর বাপী সস্তা পেয়ে বস্তা ভরে পঁচা, গলা জিনিস কিনে নিয়ে আসবে। আমার ধারণা ঠিক কিনা বল?

নূহা
হেসে বলল, হতেও পারে। সস্তা পেলে বস্তা ভরার প্রবণতা মানুষের আছে। তবে শুধু এইজন্য তোমার না গেলেও চলতো। আমি তো যাচ্ছিই বাপীর সাথে।

তুই
? তোর নিজের নাই কোন ঠিক ঠিকানা। অন্যের দিকে খেয়াল রাখবি কিভাবে? এক কোণায় দাঁড়িয়ে তুই ভাবের সাগরে ডুব দিবি। আর সুযোগে তোর বাপী সর্বনাশ যা করার করে ফেলবে। তোদেরকে দুজনকে একা ছাড়ার তাই প্রশ্নই আসে না। এখন এসব কথা বাদ। আগে তুই কৈফিয়ত দে চল্লিশ মিনিট আমাদেরকে কেন গেটের সামনে বসিয়ে রাখলি? দেরি হবে সেটা ফোন করে জানাসনি কেন? আবার চুপ করে আসিস কেন?

আরো
কিছুক্ষণ চুপ থেকে নূহা বলল, তোমাদের রাইমার কথা মনে আছে? একসময় খুব আসতো আমাদের বাড়িতে।

পেছন
থেকে আফজাল সাহেব বললেন, তোর সাথে যে কলেজে পড়তো?

হ্যা।
কিন্তু ওর বাবা মারা যাবার পর পড়াশোনা কন্টিনিউ করতে পারেনি বেশিদিন। ভীষণ আমুদে আর সারাক্ষণ ছটফট বকবক করা স্বভাবের একটি মেয়ে ছিল রাইমা। অফ পিরিয়ডে আমি সাধারণত কখনোই ক্লাস থেকে বের হতাম না। কোন কারণে যেদিন রাইমাও ক্লাস থেকে বের না হতো অফ পিরিয়ডে। আমার পড়ার বারটা বেজে যেত ওর বকবক শুনতে শুনতে। সেই বকবকের নাইনিটি ফাইভ পার্সেন্ট থাকতো বিয়ে, হাজবেন্ড সংসার নিয়ে ওর স্বাপ্নিক কথন। প্রায় দশ বছর পর মাস খানেক আগে হঠাৎ করেই একদিন দেখা হয়ে গিয়েছিল ওর সাথে। কথায় কথায় খুলে বললো ওর জীবনের দুঃসহ কষ্টের অধ্যায়। মা খুব ভালো পাত্র দেখে বিয়ে দিলেও সুখী হতে পারেনি নানা কারণে। এক ছেলে মেয়ে নিয়ে স্বামীকে ছাড়া একাই জীবন পথে চলছে এখন। একটা সুপার মার্কেটে সেলস গার্লের কাজ করে বহু কষ্টে দুই সন্তানকে লালন-পালন করছে।

স্বামীর
সাথে কি ডিভোর্স হয়ে গিয়েছে? প্রশ্ন করলেন মিসেস নুসরাত

নূহা
জবাব দিলো, ঠিক জানি না। স্বামীর ব্যাপারে নিজ থেকে বলেনি তেমন কিছুই। তাই আমিও জিজ্ঞেস করিনি। এরপর গত দুই সপ্তাহ আগে বাচ্চাদের জন্য খেলনা কিনতে গিয়েছিলাম। ঐদিনও পথে রাইমার সাথে দেখা হয়ে গিয়েছিল। ওকে নিয়েই কিড শপে ঢুকেছিলাম। খেলনা কিনতে গেলে মহা সমস্যার পড়ে যাই আমি। ইচ্ছে করে বাচ্চাদের পছন্দের সব খেলনা কিনে ফেলি ওর জন্য। কিন্তু ওদের কল্ল্যাণের চিন্তা থেকেই সংযত করি নিজেকে। সন্তানকে দুনিয়ার সব আনন্দ একসাথ করে দিয়ে দেবার ইচ্ছে মনেহয় কম আর বেশি সব মায়েদের মনেই কাজ করে। রাইমাও ঘুরে ঘুরে খেলনা দেখছিল। একটি কালার বক্স নিয়ে হাসিমুখে বললো, ওর মেয়ে ছবি আঁকতে খুব পছন্দ করে। এরপর ছেলের জন্য একটা বল নিলো। বাচ্চারা উপহার পেয়ে কতটা খুশি হবে সেটা রাইমার কন্ঠের আবেগ থেকে উপলব্ধি করা মোটেই কঠিন কিছু ছিল না। আজ যখন এখানে আসছিলাম পথে আবারো দেখা হলো রাইমার সাথে। কথায় কথায় বললো, সেদিন তুমি যদি বাচ্চাদের খেলনা গুলো উপহার না দিতে। যদি আমাকে নিজ টাকা দিয়ে কিনতে হতো তাহলে এই মাসে আর ট্রেনের টিকিট কেনা সম্ভব হতো না আমার। ওর কথাটা শুনে ভীষণ অবাক হয়েছিলাম আমি। অনেক গুলো ভাবনা একসাথে দোলা দিয়ে গিয়েছিল মনে। এত কাছ থেকে মনেহয় এই প্রথম দেখলাম সন্তানকে খুশি করার জন্য সামান্য কিছু টাকা খরচ করতেও একজন মাকে কত হিসাব-নিকাশ করতে হয়। সন্তানের জন্য মায়ের ত্যাগের কোন সীমা পরিসীমা নেই জানি। তারপরও ট্রেনের টিকিট না কাটলে কাজে যেতে সমস্যা হবে জেনেও রাইমা ওর সন্তানদেরকে উপহার দিয়ে আনন্দিত করতে চাওয়াটা আমাকে নাড়া দিয়েছিল। আমি নিজেও যেহেতু একজন মা তাই জানি সন্তানের খুশির জন্য এমন হাজারো কষ্ট হাসি মুখে আলিঙ্গন করার জন্য সদা প্রস্তুত থাকেন মায়েরা। নিজের কষ্টটা এখানে খুবই গৌণ। মূখ্য সন্তানের খুশি, সন্তানের আনন্দ। সন্তানকে সেই খুশি আনন্দ দিতে গিয়ে যত কষ্ট, বেদনা কিংবা ত্যাগ স্বীকার করতে হোক না কেন মায়ের মনে সেজন্য কোন দ্বিধা-দ্বন্দ্ব বা অনুতাপ থাকে না। থাকে প্রাপ্তির অকৃত্রিম পরিতৃপ্তি। কারণ মায়েরা তার সন্তানদেরকে নিজের থেকে আলাদা ভাবেন না। সন্তানরা মায়ের নিজের অংশ। তাই সন্তানের খুশির মধ্যেই মা নিজের সুখ খুঁজে নেন। তাই ত্যাগেও তারা আনন্দ পান। কষ্ট সয়েও প্রশান্তির হাসি হাসতে পারেন। যাইহোক, রাইমার বাসা এখান থেকে কাছেই। ওর বাসায় গিয়েছিলাম তাই আসতে দেরি হয়ে গিয়েছে আমার।

বেশ
অনেকক্ষণ চুপ থেকে মিসেস নুসরাত বললেন, শুনেই মায়া লাগছে মেয়েটার জন্য। সাথে করে নিয়ে আসতি আমাদের বাড়িতে।

বাড়ির
ঠিকানা আর রাহার ফোন নাম্বার দিয়ে এসেছি রাইমাকে।

নূহার
কাঁধে হাত রেখে আদর মাখা কন্ঠে মিসেস নুসরাত বললেন, মন খারাপ লাগছে অনেক?

না
আম্মি। বার বার শুধু মনেহচ্ছে, জীবনকে ঘিরে কত শত অভিযোগ লুকিয়ে আছে আমাদের মনে। সেইসব অভিযোগের হিসাব রাখতে যেয়ে প্রাপ্তিগুলোকে গণনা করতেই ভুলে যাই। জীবনের অপ্রাপ্তিগুলোর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি আমরা। যারফলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সুখগুলো দেখেও যেন দেখতে পাই না। অথচ ইচ্ছে করলেই জীবন থেকে খুঁজে নেয়া যায় অসংখ্য সুখময় মুহুর্ত। নিজের অবস্থান থেকে একটুখানি নীচের দিকে তাকালেই কৃতজ্ঞতায় আঁখিদ্বয় সিক্ত হয়ে ওঠে। সমস্যা হচ্ছে, জীবনকে আমরা যেভাবে পেতে চাই ঠিক সেভাবে মেলে না। আর এটাই জীবনের সবচেয়ে বড় যাতনা। যদিও প্রাপ্তির খাতা কখনোই থাকে না শূন্য। কোন না কোন ভাবে হয়েই যায় পূর্ণ। কিন্তু যেহেতু যেভাবে চাই সেভাবে পূর্ণ হয়না সবসময়। তাই আমরা নিজেদের পরীক্ষাকে সবচেয়ে জটিল-কঠিন ভাবতে শুরু করি। অথচ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা যে অবস্থানটা দিয়েছেন আমাদেরকে এটাই তো যথেষ্ট সন্তোষ ভরা অন্তরে কৃতজ্ঞতা আদায়ের জন্য। কোন কারণে যদি অবস্থানটা বদলে যেতো তাহলে কি হতো? নিজের অবস্থানে তৃপ্ত থাকার জন্য মনেহয় এই উপলব্ধিটুকুই যথেষ্ট। এত বেশি মায়া লাগছিল রাইমার বাচ্চা দুটাকে দেখে। আমি ওদের জন্য চকলেটস নিয়ে গিয়েছিলাম। সামান্য কয়েক প্যাকেট চকলেট পেয়ে এত খুশি হয়েছিল বাচ্চা দুটো। না চাইতেও আমার চোখ ভিজে উঠেছিল।

অনেকক্ষণ
চুপচাপ বসে রইলো তিনজনই। এরপর আফজাল সাহেব বললেন, এন্টিক শপে গিয়ে কাজ নেই। চল মা তারচেয়ে কোন কিড শপে যাই। রাইমার বাচ্চাদের জন্য বেশি করে চকলেটস আর খেলনা কিনে ওদেরকে একটা সারপ্রাইজ দিয়ে আসি।
নূহা হেসে বলল, তোমার আইডিয়া তো ফাটাফাটি। কিন্তু এমনটা করলে রাইমা হয়তো ভাবতে পারে আমরা ওকে করুণা করছি। মানবীয় আবেগগুলোর অবস্থান একদম গা ঘেঁষা। বিদ্যমান সূক্ষ্ম পার্থক্য নির্ণয় করতে না পারলে সম্পর্কের মিষ্টতা হ্রাস পেতে শুরু করে।

আফজাল
সাহেব বললেন, হ্যা তোর কথাটাও ঠিক। কিন্তু ভালো কাজ করার ইচ্ছে হবার সাথে সাথেই করে ফেলা উচিত। দেরি করলেই আবার ইবলিশ তার জাদু দেখানো শুরু করে দেবে।

হেসে
ফেললেন মিসেস নুসরাত। নূহাও হেসে বলল, আচ্ছা তাহলে চলো কিড শপেই যাই। আজ ওদের জন্য গিফটস কিনে রাখি। দুচার দিন পরে রাইমাকে ওর বাচ্চাদের সহ বেড়াতে আসতে বলবো। তখন বাচ্চাদেরকে দিয়ে দেব ইনশাআল্লাহ।
আফজাল সাহেব হাসি মুখে বলল, ভেরি গুড আইডিয়া। কিন্তু গাড়ি থামালি ক্যান?

নূহা
গাড়ি থেকে নেমে পেছনের দরজা খুলে বলল, তুমি না ড্রাইভিং চেয়েছিলে? যাও ড্রাইভ করতে করতে তুমি আর আম্মি বাকবাকুম করো। আমি পেছনে বসে মনের আনন্দে শুনবো তোমাদের গুটুর গুটুর।

স্বশব্দে
হেসে ফেললেন আফজাল সাহেব। তারপর হাসতে হাসতেই ড্রাইভিং সিটে গিয়ে বললেন

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন