সোমবার, ১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

আঁধারে দীপ জ্বেলে যাই...৬



উন্মুখ হয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকা পাপা আর দুই ভাইয়ের উপর আরেকবার চোখ ঘুরিয়ে নিয়ে হাসি মুখে নাবিহা বলল, আচ্ছা আর যন্ত্রণা দেবো না তোমাদেরকে এখন বলেই দেই সেই মজার ঘটনাটা না আমি বলবো না পাপা তুমি বলো

জাওয়াদ
বলল, আমি? আমি কিভাবে বলবো? তুমি তো আমাকেও বলোনি কি সেই ঘটনা!

নাবিহা
হেসে বলল, ওহো পাপা যে ঘটনাটা।

কোন
ঘটনাটা? নাবিহা তুমি কেন দুষ্টুমি করে আমাদের তিনজনকে যন্ত্রণা দিচ্ছো বলো তো?

নাবিহা
হাসতে হাসতে বলল, আচ্ছা আর যন্ত্রণা দেবো না।

জিশান
বিরক্ত কন্ঠে বলল, যন্ত্রণা দেবে না এই কথাটা তো গত বিশ মিনিট ধরে বলছো।

সেটা
তো পাপা আর তোমরা দুইজন মামণির কথা জানার জন্য কতটা অস্থির হও বোঝার জন্য। পরীক্ষা নিতে হবে না আগে তোমরা কতটা ভালোবাসো আমার মামণিকে।

জাওয়াদ
হেসে বলল, এখন কি পরীক্ষা নেয়া শেষ হয়েছে?

হুম
, হয়েছে। তবে আমি শুধু মনে করিয়ে দেবো ঘটনাটা। এরপর তুমি আমাদেরকে শোনাবে। মামণির বয়স তখন সাড়ে চার বছর ছিল। একদিন তুমি ঘুমিয়ে ছিলে। মামণি খেলা করার জন্য তোমাকে ডাকছিল কিন্তু তুমি না উঠে ঘুমের ভাণ ধরে শুয়ে ছিলে। তখন মামণি তুমি মারা গিয়েছো ভেবে, আমার ভাইয়া তো মলেই গেলো। বলে চিৎকার করে কান্না শুরু জুড়ে দিয়েছিল।
জাওয়াদ, জিহাদ, জিশান তিনজনই হেসে ফেললো। নাবিহাও হাসতে হাসতে বলল, পাপা এখন নিশ্চয়ই মনে পড়েছে কোন ঘটনা? এবার তাহলে তুমি বলো আমাদেরকে।

জিহাদ
হেসে বলল, হ্যা পাপা আমরা তোমার মুখে শুনতে চাই।

জাওয়াদ
হেসে বলল, ঠিকআছে শান্ত হয়ে বোস তোমরা। এরপর বলছি। সাথে সাথেই তিনজন গোল হয়ে, গালে হাত দিয়ে, বড় বড় চোখ করে রোমাঞ্চকর গল্প শোনার ভঙ্গীতে বসে গেলো। জাওয়াদ হাসি মুখে বলল, আমি ছুটিতে যখনই দেশে যেতাম তোমাদের মামণি সারাক্ষণ আমার পেছন পেছন ঘুরতো আর কথা বলতো। এত কথা বলতো, এত কথা বলতো যে ভাবলে এখনো মাথা ধরে যায়। প্রতিটি বিষয়েই এক সেট করে প্রশ্ন তৈরি থাকতো ওর কাছে। এটা কেন, সেটা কেন, এভাবে কেন হলো, ওভাবে হলে কি হতো ইত্যাদি ইত্যাদি। সেদিন আমার ভীষণ মাথা ব্যথা করছিল। মাত্রই শুয়েছিলাম আর তোমাদের মামণি রূপকথার বই নিয়ে হাজির হয়েছিল তাকে পড়ে শোনানোর জন্য। তাই ঘুমের ভাণ ধরে ছিলাম। কিছুক্ষণ ডাকার পরও যখন আমি সাড়াশব্দ করলাম না, একটুও নড়লাম না, কিছুটা চিন্তায় পড়ে গিয়েছিল। কারণ এর কিছুদিন আগেই আমাদের দূর সম্পর্কের এক মামা ঘুমের মধ্যেই হার্টফেল করে মারা গিয়েছিলেন। সেই কথা তোমাদের মামণির জানা ছিল। তাই প্রথমেই আমার বুকে হাত দিয়ে হার্টবিট চেক করার চেষ্টা করলো। এর কিছুক্ষণ পর বুকে কান লাগিয়ে শোনার চেষ্টা করলো। কিন্তু কিছুই যখন টের পেলো না ভেবে নিলো আমি মারা গিয়েছি।

কিন্তু
মা টের পেলো না কেন? হাসতে হাসতে প্রশ্ন করলো জিশান।

কারণ
আমার বুকের ডান দিকে হার্ট খুঁজছিল তোমাদের মা। ওর কান্ড দেখে আমি ভীষণ মজা পাচ্ছিলাম। তাই যখন নাকের কাছে হাত এনে নিঃশ্বাস চলছে কিনা দেখতে গিয়েছিল, আমি শ্বাস বন্ধ করে রেখেছিলাম। তখন পুরোপুরি নিশ্চিন্ত হয়ে গেলো যে সত্যিই আমি মারা গিয়েছি। ব্যাস, সাথে সাথে চিৎকার করে কান্না জুড়ে দিলো। আমার ভাইয়াটা তো মলেই গেলো। আমিও এখন মলে দাবো। নূহার চিৎকার শুনে মূহুর্তেই বাড়ির যে যেখানে ছিল ছুটে এলো। সবাই ঘাবড়ে যাবে তাই আমি হাসতে হাসতে উঠে বসলাম। আমাকে জীবন্ত প্রথমে তোমাদের মামণী চোখ বড় বড় করে বিস্ময় ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল কিছুক্ষণ। এরপর বিরাট হাসি দিয়ে বলেছিল, হায় আল্লাহ আমার ভাইয়া তো বেঁচে আছে।

জিহাদ
, জিশান, নাবিহা হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়লো একদম। হাসতে হাসতেই জিহাদ প্রশ্ন করলো, মা অতো ছোটবেলা থেকেই হায় আল্লাহ বলতো?

জাওয়াদ
হেসে বলল, আরো অনেক ছোটবেলা থেকে বলতো। তোমাদের নুসরাত দাদুমণির কথায় কথায় হায় আল্লাহ বলার অভ্যাস ছিল আগে। সামান্য কিছু হলেই আম্মি, হায় আল্লাহ বলতেন। আম্মির মুখ থেকে শুনতে শুনতে আড়াই বছর বয়সেই হায় আল্লাহ বলা শিখে নিয়েছিল তোমাদের মা। এরপর আম্মির অভ্যাস বদলে গেলেও, এত বছরেও তোমাদের মা অভ্যাস বহাল তবিয়তেই রয়ে গিয়েছে। কিছু হলেই, হায় আল্লাহ।

জিশান
সব দাঁত বের করে বলল, মার ছোটবেলার সব কথা তোমার এমন হুবহু মনে আছে কিভাবে? তুমি সত্যি মাকে অনেক বেশি ভালোবাসো তাই না পাপা?

জাওয়াদ
হেসে বলল, জিশান নটি বয়। নো নটি কোয়েশ্চেন। অনেক গল্প হয়েছে, অনেক হাসি-মজা হয়েছে। এখন তিনজনই ঘুমোতে যাও।

নাবিহা
বলল, আরেকটু থাকি না পাপা প্লিজ! আগামীকাল তো স্কুল নেই আমাদের। ভালো কথা, পাপা আগামীকাল সকালে কিন্তু আমরা মামণির বাসায় যাবো। তুমি আমাদেরকে পৌঁছে দেবে সকালে। কিন্তু বিকেলে আনতে যাবে না।
কেন?

কারণ
আমরা আগামীকাল নয় পরশু বিকেলে আসবো। হাসি মুখে বললো জিহাদ।

জাওয়াদ
দুঃখী দুঃখী কন্ঠে বলল, হায় আল্লাহ কি নিষ্ঠুর একেকটা বাচ্চা। আচ্ছা কিভাবে থাকো তোমরা আমাকে ছেড়ে বলো তো?

তুমি
যেভাবে আমাদেরকে ছেড়ে সারাদিন হসপিটালে থাকো, ঠিক সেভাবেই থাকি। কোমরে হাত দিয়ে মাথা ঝাঁকিয়ে জবাব দিলো নাবিহা।

জাওয়াদ
হেসে বলল, আরে হসপিটালে থাকা, মানুষের সেবা করা তো আমার ডিউটি।

জিহাদ
বলল, ঠিক তেমনি মা কাছে থাকা, মা সেবা করাটাও আমাদের ডিউটি। জিশান আর নাবিহা ভাইয়ের কথার সাথে সম্মতি সূচক মাথা ঝাঁকিয়ে ইয়েস বললো।

জাওয়াদ
হেসে বলল, তাহলে চলো আজ তাহলে একটা সিদ্ধান্ত হয়ে যাক। যার যার ডিউটি পালনের ক্ষেত্রে আমরা কখনোই একে অন্যের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ, অনুযোগ, রাগ-অভিমান করবো না কখনোই। বরং আমরা সবাই সবাইকে সাহায্য করবো যথাযথ একে অন্যের ডিউটি পালন করার ব্যাপারে। এবং প্রয়োজনে একে অন্যেকে সাহায্যও করবো। যদি কখনো দেখি আমাদের মধ্যে কেউ তার নিজের ডিউটি পালনে গড়িমসি করছে কিংবা ভুলে গিয়েছে। আমরা তখন তাকে সেকথা স্মরণ করিয়ে দেবো। বুঝিয়ে বলার দরকার হলে বুঝিয়ে বলবো। কখনো যদি একটু আধটু জোর খাঁটাতে হয়, পিছপা হবো না। আইডিয়াটা কেমন?
জিশান হেসে বলল, মাশাআল্লাহ ফাটাফাটি আইডিয়া পাপা। ডান। জিহাদ আর নাবিহাও হেসে ডান বললো।

জাওয়াদ
হেসে বলল, ঠিকআছে তাহলে এই মূহুর্ত থেকেই শুরু হয়ে যাক আমাদের কার্যক্রম। এই মূহুর্তে তোমাদের ডিউটি মনেহয় মাকে ফোন করে খোঁজখবর নেয়া। যাও দেখো মা কেমন আছে, মন ভালো আছে কিনা। ভালো না থাকলে তিনজন মিলে মন ভালো করে দাও। ঠিকআছে? ওকে পাপা, বলে তিনজনই মাকে ফোন করার জন্য ছুট লাগালো। জাওয়াদ হাসি মুখে বারান্দায় এসে দাঁড়ালো।

নিজের
রুমের জানালায় দাঁড়িয়ে ছিলেন খাদিজা বেগম। জাওয়াদকে বারান্দায় এসে দাঁড়াতে দেখে বেরিয়ে এলেন রুম থেকে। পাশে এসে দাঁড়িয়ে কাঁধে হাত রাখলে জাওয়াদ হাসি মুখে সালাম দিলো। সালামের জবাব দিয়ে খাদিজা বেগম বললেন, মন খারাপ? জাওয়াদ হাসলো কিন্তু কিছু বললো না। মুখে হাসি টেনে খাদিজা বেগম বললেন, কোথায় যেন শুনেছিলাম, “মা এমন একটা ব্যাংক যেখানে আমরা আমাদের সমস্ত দুঃখ, কষ্ট, ব্যথা-বেদনা, হতাশা-নিরাশা, চিন্তা-ভাবনাকে ডিপোজিট করতে পারি।

জাওয়াদ
হেসে বলল, আলহামদুলিল্লাহ। আমিও কোথায় যেন পড়েছিলাম, “দ্য বেষ্ট কনভারসেশন্স উইথ মাদারস টেক প্লেস ইন সাইলেন্ট, হোয়েন অনলি দ্য হার্ট স্পিকস

জাওয়াদকে
মেরে খাদিজা বেগম হেসে বলল, তোর মতো ফাজিলের সাথে কথায় কে পারবে?

জাওয়াদ
হেসে বলল, ইউ নো মা দেয়ার নাথিং লাইক অ্য মাদার হাগ! মায়ের স্পর্শে এমন এক জাদু আছে যা পৃথিবীর সমস্ত ম্লানতাকে মূহুর্তেই দূর করে দিতে পারে। তুমি আমার কাছে কিছুক্ষণ থাকলেই আমার মুড একদম চনমনে হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।

কিছুক্ষণ
চুপ থেকে খাদিজা বেগম বললেন, সুরাইয়ার কাছে শুনেছি জিশানের ব্যাপারটা। নূহার বেখেয়ালি স্বভাব সম্পর্কে তো আমাদের সবার চেয়ে বেশি জানিস তুই।

সেজন্যই
তো এত বেশি মন খারাপ লাগছে মা। আমার চেয়ে বেশি তো কেউ জানে না নূহার সম্পর্কে। তারপরও কেন ওভার রিঅ্যাক্ট করলাম? তাছাড়া শুধু নূহার সাথেই নয়। আমি বাবার সাথেও রুড বিহেব করেছি। সেজন্যই আরো বেশি খারাপ লাগছে।

কখনো
কখনো হয়ে যায় এমন। খুব ছোট্ট কারণেও মানুষ ওভার রিঅ্যাক্ট করে ফেলে। না চাইতেও কষ্ট দিয়ে ফেলে প্রিয়জনদের। আজাদ ভাই বুঝবেন ইনশাআল্লাহ। তুই অকারণে টেনশন করিস না। আর বেশি কষ্ট হলে কিছুক্ষণ গিয়ে গল্প করে আয়। জেগেই আছে এখনো সুরাইয়া আর আজাদ ভাই। নাকি নূহার সাথে কথা বলবি?

জাওয়াদ
হেসে বলল, না নূহার সাথে কথা বলবো না। এখন কথা বলতে গেলেই নূহা কান্না জুড়ে দেবে। পরে কখনো সময় করে কথা বলে নেবো এই ব্যাপারে। আর বাবার সাথেও এখন কথা বলতে চাইছি না। আগামীকাল ফজরের পর কথা বলবো ইনশাআল্লাহ। তুমি বাড়ির কি অবস্থা সেটা বলো শুনি। কেমন কাটছে সবার দিনকাল?

দম্পতিদের
চিড়িয়াখানাতে যেরকম কাটার কথা তেমনই কাটছে। প্রতিদিনই কারো না কারো মান-অভিমান লেগেই থাকে। ইয়াং জেনারেশন এই ভালো তো এই মন্দ। বাচ্চাগুলোই সবচেয়ে ভালো আছে।

জাওয়াদ
হেসে বলল, আলহামদুলিল্লাহ সবাই তো তাহলে নিজ নিজ স্থানে ঠিকই আছে। তোমার কন্ঠে তাহলে এত বিরক্তি কেন?
সবাই নিজ নিজ স্থানে ঠিক আছে? কিভাবে ঠিক আছে শুনি? কত সামান্য কারণে একে অন্যের উপর রাগ, অভিমান করে যদি জানতি তাহলে আমার চেয়ে একশো গুণ বেশি বিরক্ত শোনাতো তোর কন্ঠস্বর। কত কিছুর ট্রেনিং দিচ্ছিস সবাইকে। আমার একটা আইডিয়া শোন। কিভাবে ঝগড়াঝাঁটি, মান-অভিমান করতে হয়, তার একটা ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা কর। তোর আর নূহার চিৎকার-চেঁচামেচি গুলোও কত মজা লাগতো। একদিন তোদের সাড়াশব্দ না পেলে অস্থির হয়ে যেতাম এখনো ঝগড়া লাগছে না কেন ভেবে। আর এই ছেলেমেয়েগুলো কোন সাড়া শব্দ পাওয়া যায় না ঠিকই। কিন্তু একেকটার ভোঁতা চেহারা দেখলে বুঝতে আর বাকি থাকে না কিছুই।

জাওয়াদ
হেসে বলল, তোমার আইডিয়াটা ফাটাফাটি। আজকাল আমিও ফিল করছি, অনেককিছু শেখানো হয়েছে আমাদের ছোট ভাইবোনদেরকে। কিন্তু জীবনের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাটাই দেয়া হয়নি ওদেরকে পরিপূর্ণ ভাবে। এটা ঠিক যে, ভালোবাসা মানুষের স্বভাবজাত আবেগ। ভালোবাসতে তাই কাউকে শেখাতে হয় না। কিন্তু ভালোবাসাকে ভালোবাসতে শেখাতে হয়। যে শিক্ষাটা ওদেরকে যথাযথ দেয়া হয়নি।

খাদিজা
বেগম হেসে বলল, ভালোবাসাকে ভালোবাসা?

হুম
! আমার কি মনেহয় জানো মা? যখন কারো ভালো লাগা গুলোকেও ভালোবাসতে ইচ্ছে করে সেটাই ভালোবাসা। ভালোবাসা একটা রিজন। সেই রিজন যেই রিজন তোমাকে বাধ্য করবে একজন মানুষকে সুখী করতে। সেই মানুষটির জীবনের ছোট ছোট খুশি গুলোকে আপন করে নিতে। ভালোবাসতে সেই মানুষটি জীবনের সাথে জড়িয়ে থাকা ভালো লাগা গুলোকে। এই ভাবনা আমার মনে প্রথম দোলা দিয়েছিল একটি হাদীস পড়ার সময়

কোন
হাদীস?

হযরত
খাদীজা (রাঃ)এর ওফাতের পর তাঁর বোন হালা একবার রাসূলে কারীম (সাঃ)এর সাথে সাক্ষাৎ করতে আসলেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর কণ্ঠস্বর শুনেই বলে উঠলেন 'হালা এসেছো'? রাসূলুল্লাহ (সাঃ)এর মানসপটে তখন খাদীজার স্মৃতি ভেসে উঠেছিল। আয়িশা (রাঃ) বলে ফেললেন, 'আপনি একজন বৃদ্ধার কথা মনে করছেন যিনি মারা গেছেন। আল্লাহ্‌র তাঁর চেয়ে অনেক উত্তম স্ত্রী আপনাকে দান করেছেন।' জবাবে রাসূল (সাঃ) বললেনঃ 'কক্ষনো না। মানুষ যখন আমাকে মিথ্যে বলে উড়িয়ে দিতে চেয়েছে, সে তখন আমাকে সত্য বলে মেনে নিয়েছে। সবাই যখন কাফির ছিল, তখন সে মুসলমান। কেউ যখন আমার সাহায্যে এগিয়ে আসেনি, তখন সে আমাকে সাহায্য করেছে। তাঁর গর্ভেই আমার সন্তান হয়েছে।' এই স্বীকারোক্তি থেকে স্পষ্ট প্রমাণিত হয় রাসূল(সাঃ)তাঁর প্রিয়তমা স্ত্রী খাদীজা (রাঃ) স্মৃতি তাঁর মৃত্যুর পরও ভুলে যাননি। তাঁর মৃত্যুর পর বাড়িতে যখনই কোন পশু জবেহ হতো, তিনি খোঁজ করে তাঁর বান্ধবীদের ঘরে ঘরে মাংস পাঠিয়ে দিতেন। হযরত আয়িশা বলেন, যদিও আমি খাদীজা (রাঃ)কে দেখিনি, তবুও তাঁর প্রতি আমার ঈর্ষা হতো। অন্য কারো ক্ষেত্রে এমনটি হতো না। কারণ, নবী কারীম (সাঃ) সবসময় তাঁর কথা স্মরণ করতেন। রাসূল (সাঃ) বলতেনঃআল্লাহ্‌ আমার অন্তরে তাঁর ভালোবাসা সৃষ্টি করে দিয়েছেন বিয়ে, দাম্পত্য এই ব্যাপারগুলো বুঝতে শেখার পর যখন এই হাদীস পড়েছিলাম। স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসার বন্ধনকে আমি নতুন করে আবিষ্কার করেছিলাম। ভালোবাসার ক্ষমতা, পরিধি, ব্যাপকতা নতুন ভাবে উপলব্ধি করেছিলাম। কেউ যখন আমাদের জীবনের সাথে জুড়ে যায়। জীবনের সাথে একাকার হয়ে যাবার অসংখ্য কারণও সে সাথে করে নিয়ে আসে। রাসূল(সাঃ) এর খাদীজা (রাঃ) বান্ধবীদের বাড়িতে মাংস পাঠানোর ঘটনাটা পড়ার পর মনে হয়েছিল, এভাবেই কারো প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের বাহানা খোঁজা উচিত। বিয়ের পর আমি তাই সেই প্রতিটা জিনিসকে ঘিরে আমার ভালো লাগা প্রকাশ করার চেষ্টা করেছি যেসবকে ঘিরে নূহার মনে ভালো লাগা কাজ করতো। আমি ভালোবাসতাম সেই প্রতিটি মানুষকে যাদেরকে নূহা ভালোবাসতো। এমন অনেক মানুষ ছিল যাদেরকে আমি শুধুমাত্র নূহার মুখে শোনার কারণে চিনতাম, তবুও আমি তাদেরকে গুরুত্ব দিতাম। কারণ তাদেরকে নূহা পছন্দ করতো। কারো প্রতি ভালোবাসা তো এমনই হওয়া উচিত তাই না মা? বাহানা খুঁজে খুঁজে বের করা এবং আরো একবার করে ভালোবাসা জানান দেয়া।

জাওয়াদের
কথা শুনতে শুনতে চোখ ভিজে উঠেছিল খাদিজা বেগমের। অশ্রু সিক্ত চোখে হেসে বললেন, এজন্যই তো বললাম ভালোবাসা শেখানোর ট্রেনিং সেন্টার খুলতে। আদীকে বলতে হবে তোর মন স্ক্যান করে সিলেবাস তৈরি করতে স্টুডেন্টদের জন্য।

হাত
বাড়িয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে হাসতে হাসতে জাওয়াদ বলল, কিন্তু আমি তো সত্যিকার ভালোবাসা রাসূল (সঃ)এর কাছ থেকে শিখেছি। মানুষ আসলে বেশির ভাগ সময়ই কুরআন-হাদীস গড়গড় করে পড়ে যায়। অনুভব করার চেষ্টা করে না। অনুভব করার চেষ্টা করলে এক এক করে খুলে যেতে বাধ্য মনের সমস্ত অজ্ঞতা সংকীর্ণতার রুদ্ধ বাতায়ন।

হ্যা
, একদম ঠিক বলেছিস।

আলহামদুলিল্লাহ।
এখন চলো তোমাকে রুমে দিয়ে আসি। আজ বাড়িতে ফিরে এখনো পাপার সাথে দেখা করা হয়নি। এই সুযোগে পাপার সাথেও কিছুক্ষণ গল্প করে আসবো।

খাজিদা
বেগম হেসে বললেন, হ্যা চল

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন