বাগানের এক কোনে
নূহাকে বসে থাকতে দেখে মুখে হাসি ফুটে উঠেও আবার মিলিয়ে গেলো রাহাতের। কখন নূহা
নিজের মাঝে আছে, কখন নেই বারো
বছরের অভিজ্ঞতায় এইটুকু অন্তত দেখেই বুঝে নিয়ে পারে। এই মূহুর্তেও নূহার চেহারায়
ছড়িয়ে থাকা আত্মমগ্নতা দেখেই ওর মনের ভেতর চলা ঝড়কে আঁচ করতে পারছে। কতটা স্পেশাল
নূহার জন্য এই জায়গাটা অজানা নয় রাহাতের। কিন্তু এই জায়গাটা যে রাহাতের জন্যও খুব
স্পেশাল সেটা কখনোই বলা হয়নি। বলা হয়নি যে ছয় মাস নূহা এখানে ছিল, সেও এখানেই ছিল। রাহাতের হঠাৎ মনেহলো কিছুই বলা হয়নি নূহাকে তার সম্পর্কে।
বিয়ের পরের যে সময়টাতে স্বামী-স্ত্রী পরস্পরকে জানার চেষ্টা করে। নূহা তখন কোন
কিছু জানার, বোঝার কন্ডিশনেই
ছিল না। অনেকটা সময় পেরিয়ে যাবার পর যখন নূহা স্বাভাবিক হয়েছিল, তাদের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল বাচ্চাদেরকে কেন্দ্র করে। এরপর থেকে এখনো পর্যন্ত
তাদের সবকিছু বাচ্চাদেরকে ঘিরেই আবর্তিত। এটা ঠিক জীবনের কোথাও দুঃখ-বেদনা খুঁজে
পায় না রাহাত। চারিদিকেই ছড়ানো ছিটানো সুখের মেলা। সুখের আধিক্যে একটাই অসুখ তার, শূন্যতা। সব থাকতেও কিছুই নেই এমন একটা শূন্যতা প্রায়ই হাহাকার তুলে যায়
রাহাতের মনে। বিশেষ করে যখন পাশে থেকে, ছুঁয়ে থেকেও
মনেহয় তার স্পর্শের অনেক বাইরের কেউ নূহা। এতটাই দূরের যে এক যুগের চেষ্টাও পারেনি নূহার পাশাপাশি গিয়ে দাঁড়াতে। তারপরও পাশে গিয়ে
দাঁড়ানোর ইচ্ছেটা এখনো ততটাই সজীব রাহাতের মনে,
যতটা প্রথম দিন
ছিল। এই মূহুর্তে নূহার কাছে যাবে কি যাবে না কিছুক্ষণ দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভোগার পর
যাবার সিদ্ধান্ত নিলো। এগিয়ে গিয়ে পাশে দাঁড়াতেই নূহা সালাম দিলো। সালামের জবাব
দিয়ে বসতে বসতে হাসি মুখে রাহাত বলল, দূর থেকে দেখে
আমি তো ভেবেছিলাম অনেক সাধনা করে তোমাকে জাগাতে হবে। কিন্তু তুমি তো দেখছি জেগেই
আছো।
নূহা হেসে বলল, খোঁচাখুঁচি তো খুব ভালোই শিখেছেন আজকাল।
কি করবো বলো
খোঁচাখুঁচি যে আমার বৌ খুব পছন্দ করে। তাই কাঁটার কাছে গিয়ে বলেছিলাম, হে বন্ধু কাঁটা আমাকে মিষ্টি করে খোঁচা মারা শিখিয়ে দাও। যাতে যখনই কোন
বিষণ্ণতা আমার প্রিয়াকে ছুঁতে আসবে, তাকে খুঁচিয়ে
বিদায় করে দিতে পারি।
রাহাতকে মেরে
হাসতে হাসতে নূহা বলল, এতো খারাপ হচ্ছো
কেন দিন দিন? অসহ্য টাইপ
কথাবার্তা বলো শুধু।
রাহাত হেসে বলল, অসহ্য টাইপ কথাবার্তাও আমার বৌয়ের খুব পছন্দ। অসহ্য টাইপ কথাবার্তার কাছে
আমার আর্জি কি ছিল সেটা একটু পরে বলছি। এই মূহুর্তে গুরুত্বপূর্ণ কথা হচ্ছে, আমি অভিমান করে আছি তোমার উপর।
অভিমান? কিন্তু অভিমান কেন? আজ আমি উদ্ভট
কিছু করেছি বলে তো মনে পড়ছে না।
এই যে তুমি
সারাদিনে একবারও আমার সাথে দেখা করতে এলে না!
নূহা হেসে বলল, ও আচ্ছা এই কথা। আসিনি কারণ আমার জানাই ছিল না তুমি এখানে এসেছো। বিকেলের
দিকে ভাইয়াকে একবার দেখেছিলাম বাচ্চাদের সাথে। কিন্তু তুমিও যে এসেছো সেটা
কিছুক্ষণ আগে নাবিহা বললো।
রাহাত হেসে বলল, তাহলে তো সঠিক তথ্য না জেনে অকারণ অভিমান করা হয়ে গিয়েছে।
সঠিক তথ্য না
জানাটাই অভিমানের মূল কারণ সমূহের একটি। আরেকটি কারণ হচ্ছে, কারণ জানতে না চাওয়ার চেষ্টা করা। আসলে কি জানেন জনাব?
প্লিজ জানিয়ে দিন
অধমকে।
নূহা হাসি মুখে
বলল, ঘটনার আড়ালেও
থেকে যায় বহু ঘটনা, বুঝতে চেষ্টা না
করাটাই মনে জাগায় যাতনা। মেঘে মেঘে ঢেকে যায়
মনের আকাশ, অকারণেই চিন্তা
করে নেতিবাচকতার প্রকাশ। এড়াতে চাইলে অন্তরের এমন হুতাশন, ভাবনাকে করতে হবে বুদ্ধিবৃত্তিক শাসন। বোঝাতে হবে ওরে মন করো না তুমি ভুল, কাঁটার আঘাতে নয়তো সুবাস হারাবে ফুল।
রাহাত হেসে বলল, মাশাআল্লাহ। এই মূহুর্তেই জানতে চাইছি এই সব ছন্দ কি আগে থেকেই বোনা থাকে
নাকি তাৎক্ষণিক বোনা হয়।
নূহা হেসে বলল, ফসল লাগালে, নিয়মিত যত্ন করলে
এবং সর্বোপরী আল্লাহর রহমত থাকলে ফলনকে কেউ রুখতে পারে না। বুঝেছেন জনাব?
উহু, আমি এত ভালো স্টুডেন্ট না। হিন্টসে কাজ হয় না। ব্যাখ্যা অত্যাবশ্যক আমার
বুঝতে পারার জন্য।
নূহা হেসে বলল, ওয়ার্ড পাওয়ার বলে একটা জিনিস আছে। মানে হচ্ছে, শব্দ ক্ষমতা। এটা তো নিশ্চয়ই জানো, শব্দের আছে প্রাণ, শব্দ ছড়ায় ঘ্রাণ! শব্দ জাগায় আশা, শব্দ মনের
পরিভাষা! শব্দে সুপ্ত বৈভব, শব্দে গড়া যায়
বিপ্লব! শব্দে মিশ্রিত শক্তি, শব্দে লুকায়িত
মুক্তি! শব্দের ক্ষমতা আসলে নতুন করে বলার কিছুই নেই। কিন্তু শব্দের এই ক্ষমতা
প্রয়োগের জন্য সবচেয়ে জরুরি শব্দ ভান্ডার। কারো শব্দ ভান্ডার যত বেশি সমৃদ্ধ হয়, তার শব্দের ক্ষমতা তত বেশি। ছোটবেলা থেকেই আমি অনেক পড়াশোনা করতাম। কিন্তু
শুধু অনেক পড়লেই কিন্তু শব্দ ভান্ডার সমৃদ্ধ হয় না। এরজন্য আলাদা মনোযোগ ও যত্নের
প্রয়োজন হয়। ভাইয়ার সাথে আমার একটা ভার্চুয়াল সম্পর্ক ছিল সেটা তো জানোই। ছোটবেলায় আমি নিজের কথা, পরিবারের কথা, চারপাশের ঘটমান সবকিছু ভাইয়াকে লিখে মেইলে পাঠাতাম প্রতিদিন। তখন থেকেই উনি
বলতেন, তোমাকে তোমার
শব্দ ক্ষমতা বাড়াতে হবে। এরপর থেকে ভাইয়া প্রতিদিন আমাকে একটি করে শব্দছক পাঠাতেন।
সেটার পাশাপাশি প্রতিদিন যে পড়াশোনা করতাম তারমধ্যে থেকে নতুন শব্দ কি শিখেছি
সেগুলো আলাদা করে নোট করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। এছাড়াও প্রতিদিন ডিকশনারি থেকে দশটা
করে নতুন শব্দ শিখতেই হবে সেই অর্ডার দিয়েছিলেন। আরেকটা কাজ করতেন প্রায়ই। এক লাইন
লিখে বলতেন এর পরের লাইন আমাকে লিখতে। কখনো বা উনি একটা বাক্য লিখে বলতেন যে, এই বাক্যটাকেই তুমি ভিন্ন ভাবে লিখো। এমন ভাবে যাতে শব্দ চেঞ্জ হবে কিন্তু
অর্থ একই থাকবে। এক কথায় শব্দের অ্যানাগ্রাম যেটাকে বলে। আবার কখনো কিছু একটা এঁকে
পাঠিয়ে বলতেন, এটা নিয়ে গদ্য না
পদ্য কিছু একটা লিখে দাও। কখনো প্রকৃতির বর্ণনা লিখতে বলতেন। বাড়িতে সবার সাথে
চর্চা করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। এভাবেই ধীরে ধীরে আমার শব্দ ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
আলহামদুলিল্লাহ এখন চাইলেই পারি যে কোন মূহুর্ত বা অবস্থাকে শব্দের ফ্রেমে বন্দী
করে ফেলতে।
রাহাত হেসে বলল, আলহামদুলিল্লাহ। তোমার জীবনে ভাইজানের অবদান যতই শুনি ততই মুগ্ধ হই। এবং
আরো একবার করে নিশ্চিত হই যে, ভাইজানকে ছাড়া
তুমি কখনোই তুমি হতে পারতে না। অবশ্য ভাইজানকে ছাড়া আমিও হয়তো কখনোই আমি হতে
পারতাম না। জগতের নানান দীনতায় আমার আমি চিরতরে হারিয়ে যেতাম দুনিয়াবী
গোলকধাঁধাতে।
সেটা কিভাবে? এটা ঠিক আমার জীবনে ভাইয়ার অবদান অনস্বীকার্য। কিন্তু তুমি তো উত্তম মানুষ
ছিলে বলেই উনার সংস্পর্শে আসতে পেরেছিলে। মানুষ বাছাইয়ের ব্যাপারে উনি খুব বেশি
সাবধানী। এমন কাউকেই উনার পরিবার কিংবা সংগঠনের সদস্য করেন না। যারা সুন্দর মনের
অধিকারী হয়। এজন্যই কিন্তু আমাদের পরিবারের সবাই সেই প্রতিটা মানুষকেই নিঃসঙ্কোচে
আপন করে নেই। যারা ভাইয়ার হাত ধরে আমাদের আনন্দবাড়িতে প্রবেশ করে।
মনে আছে নূহা বেশ
কিছুদিন আগে একটা প্রসঙ্গে তুমিই বলেছিলে, ভালো এবং মন্দ
উভয় গুণাবলীই মানুষের মনে সুপ্ত অবস্থায় থাকে। কিছু মানুষের সংস্পর্শে পেখম মেলে
দেয় মনের সুন্দরতম সত্ত্বা। আর কিছু মানুষ পথ করে দেন সেই সুন্দরকে বাইরে বেরিয়ে
এসে জগতময় ছড়িয়ে পড়ার’। আমার জীবনে তেমন
মানুষ রূপে ভাইজান এসেছিলেন। নিজ মনের সুন্দরতম সত্ত্বাকে খুঁজে পেয়েছিলাম
ভাইজানের সংস্পর্শেই। ভাইজানের দেখানো পথে চলেই আমি নিজেকে উত্তম মানুষ হিসেবে গড়ে
তুলতে পেরেছিলাম। আলহামদুলিল্লাহ ভাইজানই আমার রাহবার ছিলেন, আছেন সুন্দর জীবনের পথে চলার। আমি অনেক বড় একটা ভুল করেছিলাম। সেই ভুলের
সময় যদি ভাইজান আমার পাশে এসে না দাঁড়াতেন। তাহলে হয়তো অসংখ্য মানুষের মতো আমিও
ভেসে যেতাম ভুলের স্রোতে।
কি ভুল করেছিলে? বলা যাবে আমাকে?
কিছুক্ষণ চুপ
থেকে রাহাত বলল, ফ্র্যান্স থেকে
যখন এখানে ভাইজানের কাছে এসেছিলাম। পুরো বদলে গিয়েছিল আমার জীবন। পার্ট টাইম চাকরী, স্টাডি কন্টিনিউ করা, থাকা-খাওয়া
সবকিছুর ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন ভাইজান আমাকে। অবশ্য শুধু আমাকেই না। আমার মতো আরো
অনেক মানুষকেও। সবকিছু ঠিকঠাক মতোই চলছিল। ভাইজানও নিয়মিত খোঁজ খবর নিতো আমাদের সবার। সমস্যাটা বেঁধেছিল বিয়ের উদ্দেশ্যে
ভাইজান যখন দেশে গিয়েছিলেন। তোমার এক্সিডেন্ট,
এরপর বিয়ে, সুস্থ হয়ে ওঠা সবকিছু মিলিয়ে প্রায় বছর খানেক যোগাযোগ হয়নি ভাইজানের সাথে
আমার। ঐ সময়ই ভুলটা করেছিলাম। আমার দূর সম্পর্কের তিনজন আত্মীয়ের পরামর্শে ওদের
সাথে ব্যবসা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। সমস্ত ডকুমেন্টস যখন আমার নামে করেছিল ওদের
দুরভিসন্ধি বুঝতে পারিনি আমি। এরপর তো আমাকে ধোঁকা দিয়ে বোকা বানিয়ে ব্যাংকের
পঁয়ত্রিশ হাজার ইউরোর ঋণ আমার কাঁধে তুলে দিয়ে ওরা গোপনে এই দেশ ছেড়েই চলে
গিয়েছিল। পুলিশ এসে আমাকেই ধরলো যেহেতু সমস্ত ডকুমেন্টসে আমার নাম। পরিচিত যত মানুষ
ছিল সবার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু কেউই এগিয়ে আসেনি সাহায্য করার
জন্য। পুলিশ কেসে জড়াতে সবাই ভয় পায়। পুরোপুরিই হতাশ হয়ে গিয়েছিলাম। এরপর এক ফেন্ড
পরামর্শ দিলো ভাইজানের সাথে যোগাযোগ করার জন্য। আমার প্রথমেই মনে পড়েছিল ভাইজানের
কথা। লজ্জার কারণে যোগাযোগ করার সাহস করতে পারিনি। কিন্তু শেষ মেষ আর কোন উপায় না
দেখে ভাইজানকে ফোন করে খুলে বললাম সব। ভাইজান তখন ওরেগানোতে ছিলেন। উনি আসতে
পারেননি কিন্তু ঘন্টা খানেক পরেই হুমায়ূন ভাইয়াকে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। এরপর উকিল ঠিক
করা থেকে নিয়ে শুরু করে ব্যাংকের টাকা পরিশোধ করা,
কেস ডিসমিস
সবকিছু নির্বিঘ্নেই হয়ে গিয়েছিল। যদিও কিভাবে এত টাকা পরিশোধ করবো এই দুশ্চিন্তায়
স্বস্থি পেতাম না আমি। ভাইজানের কাছে যখন মনের এই অস্থিরতার কথা খুলে বলেছিলাম।
হেসে বলেছিলেন, ঋণ তো তোমাকে শোধ
করতেই হবে। এটার কোন মাফ নেই। এক কাজ করো আজ থেকে তুমি আমাদের সংগঠনের ভাইদের
মধ্যে যাদের হিফজ করার ইচ্ছে আছে। তাদের জন্য একটা ক্লাসের ব্যবস্থা করো। এছাড়া
আমাদের লাইব্রেরীর দায়িত্ব আজ থেকে তোমার। এই দুটো কাজের জন্য প্রতিমাসে তোমার এক
হাজার ইউরো সেলারি ধরা হলো। অর্থাৎ, আগামী পঁয়ত্রিশ
মাসে তোমার কাছে আমার পাওনা ঋণ শোধ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
নূহা হেসে বলল, আলহামদুলিল্লাহ। ভাইয়ার মানুষকে সাহায্য করার স্টাইলটাই অন্যরকম। ছোটবেলা
থেকেই দেখে আসছি, শুনে আসছি।
কিন্তু এখনো মুগ্ধ করে। প্রায়ই প্রশ্ন জাগে মনে,
একজন মানুষ কতটা ভালো হলে অন্য কাউকে ভালো রাখার ব্যাপারে এতটা উদার ও শৈল্পিক হতে
পারে?
আলহামদুলিল্লাহ
আমিও ভেবে পাইনা ভাইজান কেমন করে গড়লেন নিজেকে এমন করে? কিন্তু ঐদিন আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম আমাকেও এমন মানুষ হতে হবে। অন্যের তরে
নিঃস্বার্থ পরোপকারী। কিভাবে ভাইজানের আন্তরিক ভালোবাসার প্রতিদান কিছুটা হলেও
দিতে পারবো সেই পথ অনুসন্ধান করতাম শুধু। সেই পথ অনুসন্ধান করতে করতেই এখানে এসে
হাজির হয়েছিলাম আমি তোমাদের পিছু পিছু?
আমাদের পিছু পিছু
মানে? অবাক কন্ঠে
প্রশ্ন করলো নূহা।
রাহাত হেসে বলল, যখন রিহ্যাভ সেন্টারের কাজ চলছিল তখন আমিও এখানেই ছিলাম। প্রায় দিন বিকেলেই
তুমি যে মজার মজার নাস্তা পাঠাতে আমাদের জন্য। আমি অন্য সবার সাথে গপগপ করে খেতাম
আর তাদের কন্ঠে কন্ঠ মিলিয়ে বলতাম, বিয়ে পর বৌকে
ভাবীজানের কাছে রান্নার ট্রেনিং করাতে হবে।
নূহা নাক মুখ
কুঁচকে বলল, ছিঃ কি সব
কথাবার্তা শুরু করেছে। তুমি টপিক চেঞ্জ করবে নাকি আমি এখান থেকে চলে যাবো?
রাহাত হাসতে
হাসতে বলল, কিন্তু আমার যে
আরো অনেক কথা বলার ছিল তোমাকে।
আমি এখন এসব কথা
শুনতে পারবো না।
আচ্ছা তাহলে পরে
কখনো বলবো ইনশাআল্লাহ। তুমি কথা বলো এখন। আমি শুনি। মুনার সাথে কথা হয়েছে?
হুম, এমনিতে কথা হয়েছে। কিন্তু আমি যে ওর বিয়ের ব্যাপারে কথা বলার জন্য এসেছি
সেই ব্যাপারে এখনো কিছু বলিনি। মুনার আম্মু খুব করে অনুরোধ করার কারণেই যে আমি
এখানে এসেছে এই তথ্যটা অবশ্য জানাতেও চাই না। আমি আগে ওর বর্তমান মানসিক অবস্থাটা
বোঝার চেষ্টা করতে চাই। এরপর বিয়ের কথা বলবো ইনশাআল্লাহ।
ভাইজানের সাথে
কথা বলে নিয়েছো তো?
উনি কথা শুনতে
চাইলে না বলবো। বলতে গেলেই রেগে যাবেন। তারচেয়ে উনি দূরেই থাক এই ব্যাপারটা থেকে।
তাছাড়া বাবা, পাপা, বাপী তো আছেনই।
ভাইজান এত অপছন্দ
করেন শুনে আমিও কেন জানি মুনাকে ঠিক পছন্দ করতে পারি না। মুনা কি খুব বাড়াবাড়ি
কিছু করেছিল?
নূহা হেসে বলল, জানি না। তবে আমিও কাউকে এতটা অপছন্দ করতে দেখিনি কখনোই উনাকে। তবে অতীতে
যা হবার হয়েছে। মুনা এখন নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছে,
বদলে ফেলেছে।
আমাদের পক্ষে যতটা সম্ভব ওকে সাহায্য করা উচিত। সেই উদ্দেশ্যেই আমি এখানে এসেছি।
সেটা ঠিকআছে। তবে
ভাইজান বিরক্ত হবেন এমন কিছু করা থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করো।
উফফ, ভাইজান ভাইজান বন্ধ করো তো। তারচেয়ে গিয়ে দেখো তোমার ভাইজানের কন্যার কি
হয়েছে। সে আধঘন্টা আগে আমার জন্য নাস্তা আনতে গিয়েছিল। এরপর আর কোন দেখা নেই।
রাহাত উঠে
দাঁড়িয়ে নূহাকে ধরে টেনে উঠিয়ে বলল, আপনিও সাথে চলেন।
আরেকটা কথা কন্যা যে আমারো সেটা যেন খেয়াল থাকে সবসময়। আমার কলিজা নাবিহা বুঝেছেন? আপনার ঐ কটপট পটপট উকিল ছোট পুত্রের চেয়ে হাজার গুণ বেশি প্রিয়। নূহা হেসে
ফেললে, রাহাতও হেসে
ফেললো। হাসি মুখেই দুজন কটেজের ভেতর ঢুকলো। কিচেনে উঁকি দিয়ে নাবিহাকে না দেখে
রাহাত কন্যার সন্ধানে চলে গেলেও নূহা দাঁড়িয়েই রইলো কিচেনের দরজার সামনে কিছুক্ষণ।
এরপর ভেতরে ঢুকলো। বদলে যাওয়া জীবনের ভিড়ে কিছু কিছু জায়গা এখনো হুবহু আগের মতোই
রয়ে গিয়েছে। যেখানে এলে না চাইতেও মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় অতীত ও বর্তমান। জীবনের
সুন্দর মূহুর্তগুলোর স্পেশালিটি মনেহয়, ঐ প্রহরগুলো যত
পুরোনই হয়ে যাক না কেন! জীবন অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে যত সামনেই এগিয়ে যাক না কেন!
সুন্দর মূহুর্তরা বইয়ের পাতার ভাঁজে পুরনো কোন ফুলের পাঁপড়িই মতোই, মনের ভাঁজে ভাঁজে জানান দিয়ে যায় নিজেদের অস্তিত্ব। অলস অড্ডা, খুনসুটি, দুষ্টু-মিষ্টি
কথোপকথনে শব্দের সাথে শব্দ মিলে অজান্তেই হৃদয় আঙিনায় গড়ে ওঠে কাব্যের ছোট্ট ছোট্ট
কুটির। কিছুটা সময় পরেই জীবনের এন্টিক কালেকশনে নিজের জায়গা করে নেয় তারা। বেড়ে
যায় তাদের মূল্য কয়েক গুণ। তাই খুব বেশি সচতেন ছিলেন জাওয়াদ বয়ে চলা প্রতিটি
মূহুর্ততে নিজের অস্তিত্ব জানান দেবার ব্যাপারে। বার বার ব্যর্থ হয় নূহা নিজেকে
সেইসব মূহুর্তের স্পর্শের বাইরে রাখতে।
@
চায়ের পানি
চাপিয়ে জাওয়াদ কি করছে দেখার জন্য রান্নাঘরের দরজার ফাঁকে চোখ রেখে তাকাতেই অপর
পাশে জ্বলজ্বলে দুটা চোখ দেখে চমকে উঠে চিৎকার করে উঠলো নূহা। হাসতে হাসতে তখন
ভেতরে দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলো জাওয়াদ।
নূহা কপট রাগের
স্বরে বলল, তুমি দরজার ফাঁকা
দিয়ে তাকিয়ে কি দেখছিলে?
জাওয়াদ নূহাকে
ধরে হাসতে হাসতে বলল, তুমি ফাঁক ফোঁকর
দিয়ে আমাকে দেখে কি আনন্দ পাও সেটা বোঝার চেষ্টা করছিলাম।
লজ্জার লালিমা
ছড়িয়ে পড়লো নূহার সারা চেহারাতে। জাওয়াদকে ঠেলে সরিয়ে বলল, যাও এখান থেকে নয়তো কিন্তু চা বানিয়ে দেব না।
ঠিকআছে চলে
যাচ্ছি কিন্তু তুমি চায়ের পানি আরো বেশি করে দাও। আগামীকাল সারাদিন আমার বাইরে
যাবার কোন ইচ্ছে নেই ইনশাআল্লাহ। সুতরাং আজ আমাদের গল্পে গল্পে রাত্রি যাপন। আমি
বাগানে যাচ্ছি তুমি এসো।
ফ্ল্যাক্স ভর্তি
করে চা নিয়ে বাগানে এসে নূহা দেখলো জাওয়াদ নিবিষ্ট মনে আকাশ দেখছে। আকাশের দিকে তাকিয়ে নূহারও মনেও ভালো লাগা ছড়িয়ে পড়লো। পূর্ণিমা নয় আজকে
কিন্তু একদম ঝকঝকে
আকাশের বুকে বসেছে সহস্র তারার মেলা। পাপা একসময় খুব চমৎকার নজরুল গীতি গাইতেন। জাওয়াদের কথা শুনে আকাশ থেকে দৃষ্টি নামিয়ে আনলো নূহা। পাশে
বসে বলল, তাই? তাহলে তো পাপার কাছে আবদার করতে হবে গান শোনার।
মোর প্রিয়া হবে
এসো রাণী! দেবো খোঁপায় তারার ফুল! এই গানটি শুনেছো কখনো?
এসব গান তো চলতে
পথে বিভিন্ন ভাবে শোনা হয়েই যায় কেউ না শুনতে চাইলেও।
হাসলো জাওয়াদ।
জানতো এমন কিছুই বলবে নূহা। বেশ ভালো রকমেরই সাহিত্য বৈরাগী স্বভাবের মেয়ে। প্রচুর পড়ে কিন্তু গল্প, উপন্যাস, কবিতার বই খুব কমই পড়তে দেখেছে নূহাকে। কেন পড়ে না জানতে চাইলে জবাব দেয়, প্রয়োজনীয় বিষয়
পড়েই তো শেষ করতে পারি না। ঐসব পড়বো কখন? জাওয়াদ একদিন
বোঝাতে চেষ্টা করেছিল জীবনে সাহিত্যের প্রয়োজনীয়তাটা কোথায়। জবাবে নূহা বলেছিল, তুমি যেভাবে ভাবছো আমি ঠিক সেভাবে ভাবছি না। যেহেতু এটা শরীয়তের কোন বিষয় না, সেহেতু এই
ব্যাপারে তুমি আমাকে বাধ্য করতে পারো না। ছোটবেলা থেকেই নিজের পছন্দের ব্যাপারে
খুব বেশি দৃঢ় নূহা। আবার কোন ব্যাপারে নিজে যেটা বুঝেছে তো বুঝেছেই। এছাড়াও ভয়াবহ
রকমের তার্কিক ও যুক্তিবাদী স্বভাবও বিদ্যমান নূহার মধ্যে। কেউ একটা কিছু বলবে আর সাথে সাথে সেটা মেনে নেবে এটা কখনোই আশা করা যায় না নূহার কাছে। সে যাচাই বাছাই করে দেখবে। অতঃপর মনঃপুত হলেই সেটা মেনে নেবে। নিজের বুঝ থেকে
নূহাকে নড়ানোর, ওর যুক্তি-তর্ক থামানোর একমাত্র পন্থা হচ্ছে শরীয়ত। এজন্যই মুনার কথাটা ঠিক
কিভাবে শুরু করবে বুঝতে পারছিল না জাওয়াদ। স্বামী-স্ত্রী হয়েছে বলেই যে কোন কথা
সুন্দর ভাবে উপস্থাপনের
চেষ্টা না করে যাচ্ছে তাই ভাবে বলে ফেলা যাবে এই নীতির ঘোর বিরোধী জাওয়াদ। সুন্দর
ভাবে উপস্থাপন অনেক কঠিন ও নেতিবাচক কথাকেও মেনে নিতে, বুঝে উঠতে বেশ সহায়কের ভূমিকা পালন করে। তাই সম্পর্ক যাই হোক না কেন নাজুক
কিছু বলার সময় উপস্থাপনটা খুব জরুরি। সেজন্যই সে ইচ্ছে করেই বাবার নজরুল গীতির
প্রসঙ্গটা তুলেছে। এক কথায় দুই কথায় অনেকটা সময় ধরে নূহাকে নিজেদের ছোটবেলার মজার
মজার ঘটনাগুলো বললো। একসময় কথাকে টেনে নিয়ে গেলো পরিবারের দিকে। হাসি মুখে বলল, ছোটবেলায় যখন গ্রামে ছিলাম আমাদের বাড়িতে নতুন কেউ এলেই প্রশ্ন করতো, বাড়িতে বৈঠকখানা, খাবার ঘর দু’টা করে কেন? বাড়িতে ঢোকার ও
বেরোনোর সদর দরজাই বা দুটা কেন?
নূহা হেসে বলল, তোমরা যখন ছোট ছিলে তখনো সবকিছু দুইটা করে ছিল?
জাওয়াদ হেসে বলল, আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন কি শরীয়তের বিধান আরেক রকম ছিল?
নূহা হেসে বলল, তাই তো! সুপার সিলি কোয়েশ্চেন হয়ে গিয়েছে।
হুম, তা হয়েছে। আসলে যাতে বাড়ির নন মাহরাম পুরুষ ও মহিলাদেরকে অকারণে একে অপরের সামনে আসতে না হয় সেজন্য বাবা-মা মিলে এমন ব্যবস্থা করেছিলেন। এবং বাড়ির
সবাই সেটা খুশি মনেই মেনে নিয়েছিলেন। আমরা কখনোই দেখিনি বাড়ির নারী-পুরুষ সব
সদস্যদেরকে একসাথে বসে হাসি মজা করতে। কিন্তু পারিবারিক বৈঠক, পরিবারে কোন সমস্যা দেখা দিলে আবার সবাই মিলেই সিদ্ধান্ত নিতেন। অর্থাৎ,অপ্রয়োজনীয় সাক্ষাৎ এড়িয়ে চলতেন সবাই।
আলহামদুলিল্লাহ
এমনটা তো আমরা এখনো করি। আমাদের বাড়ির এই সিস্টেমটা আমরা খুব পছন্দ। তাছাড়া শরীয়তও
তো আমাদেরকে এই কথাই বলে যে, প্রয়োজনে পর্দা
রক্ষা করে নারী-পুরুষ একে অন্যের সামনে যেতে পারে।
হ্যা। ছোটবেলায়
আরেকটি কথা মনেহলেও খুব মজা লাগে আমার। অনুমতি না নিয়ে নিজের শোবার ঘরেও ঢুকতে
পারতেন না আমাদের বাড়ির পুরুষেরা। কারণ খালামণির ঘরে মা, মার ঘরে চাচীরা কেউ থাকাটা মোটেই অস্বাভাবিক ছিল না যেহেতু যৌথ পরিবার ছিল
আমাদের। জ্ঞান হবার পর থেকে এটা দেখতে দেখতে বড় হবার কারণে আমরাও এটা বুঝে
গিয়েছিলাম। তাই যখনই বাবা, চাচ্চুরা কেউ
বাইরে থেকে আসতেন আমরা চিৎকার করে সেই খবর অন্দর মহলে পৌছে দিতাম। একদিন বাবার
সাথে বাজারে গিয়েছিলাম। পথে মার এক বান্ধবীর সাথে দেখা হলো। সেই খালামণি আমার সাথে
অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে কথা বললেন। বাবা বাজার করাতে ব্যস্ত ছিলেন তখন। খালামণি চলে
যাবার পর বাবা আমার কাছে জানতে চাইলেন, ভদ্রমহিলা কে? আমি বেশ অবাক হয়ে বলেছিলাম, বাবা ইনি তো মার
ছোটবেলার বান্ধবী। তুমি চেনো না উনাকে? বাবা হেসে জবাব
দিয়েছিলেন, কি করে চিনবো
বাবা। তোমার মা তো কোনদিনও আমাকে তার বান্ধবীদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়নি। আমাদের
বাড়ির দম্পতিদের ভেতর আরো কিছু নিয়মনীতি ছিল। যেমন,
স্ত্রীরা কখনোই
তাদের পরিচিত অন্যকোন নারীর গুণগান গাইতো না স্বামীর কাছে। স্বামীরাও নিজেদের
স্ত্রীকে সর্বদা আড়াল করে রাখতে সচেষ্ট থাকতেন অন্যান্য পুরুষদের কাছ থেকে। কারণ
স্বামী-স্ত্রীকে একে অন্যের পোশাক বলা হয়েছে। এবং দুজনের উচিত শারীরিক ও মানসিক
উভয় অবস্থাতেই একে অপরের পোশাক হওয়া।
কিছুক্ষণ নীরব
থেকে নূহা বলল, আমার দ্বারা কি
এমন কোন ভুল হয়ে গিয়েছে? গত কয়েকদিনে আমি
পরিচিত বেশ কয়েকজন উত্তম গুণাবলী নিয়ে কথা বলেছি তোমার সাথে।
জাওয়াদ হেসে বলল, কারো উত্তম গুণাবলী নিয়ে কথা বলতে আসলে তেমন কোন সমস্যা নেই। একজন শত সমস্যার মাঝেও মিথ্যা বলেন না,
শত কষ্টেও
ধৈর্য্যহারা হন না, খুব ভালো একজন মা
বা বাবা, শরীয়তের বিধান
সমূহের ব্যাপারে খুব সতর্ক। কারো সম্পর্কে এমন আলোচনা করতেই পারি আমরা দুজন। আমি
তো মনেকরি করা উচিত এমন আলোচনা। কেননা এতে নিজেকে আরো উন্নত করার প্রেরণা পাওয়া
যায়। কিন্তু দেখতে খুব সুন্দর, কথা বলার স্টাইল
দেখলে শুধু তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে, খুবই বুদ্ধিমতি, যে কোন মাহফিলের প্রাণ। ইত্যাদি কথা বলার তো কোন প্রয়োজন নেই। কারণ কারো শারীরিক
সৌন্দর্য যেমন মনে আকর্ষণ তৈরি করে, মানসিকও
সৌন্দর্যও করে। তাই কোন মেয়ের কখনোই উচিত না তার স্বামীর মানসিক সৌন্দর্যের কথা
অন্য কোন মেয়েকে এমনভাবে বলা যাতে তার মনে আকর্ষণ তৈরি বা ভালো লাগা জন্মে যেতে
পারে। একই নিয়ম ছেলেদের
ক্ষেত্রেও। কাউকেই তার স্ত্রীর সম্পর্কে কৌতুহলী করে তোলা উচিত না। নূহা আমরা একেঅন্যের পোশাক। আর এটি আমার কথা নয়। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার
কথা। সুতরাং, সর্বাবস্থায়
আমাদের দুজনকে শারীরিক ও মানসিকভাবে একে অপরকে ঢেকে রাখতে হবে দুনিয়ার সমস্ত
ম্লানতা ভরা দৃষ্টি থেকে।
আমি বুঝতে
পেরেছি। ইনশাআল্লাহ এখন থেকে আমি এই ব্যাপারে আরো বেশি সতর্ক থাকতে চেষ্টা করবো।
জাওয়াদ নূহার হাত
দুটিকে টেনে নিজের মুঠোর ভেতর জড়িয়ে নিলো। একটু ক্ষণ চুপ থেকে বলল, খুব কাছ থেকে বেশ কয়েকটি সুখের সংসার ভেঙে যেতে দেখেছি শুধুমাত্র জীবনে
তৃতীয় কারো আগমনের কারণে। প্রতিটা ঘটনা, দুর্ঘনটা
আমাদেরকে কিছু না কিছু অভিজ্ঞতা দিয়েই যায়। দু’তিন জন ফ্রেন্ডের
সুখের সংসার ভেঙে যেতে দেখে আমার মনেহয়েছে, হাজবেন্ড ওয়াইফ
যদি একে অন্যের কাছে অনেস্ট থাকে তাহলে থার্ড পারসন কোন প্রভাবই ফেলতে পারে না
তাদের জীবনে। স্বামী-স্ত্রীর মজবুত বন্ধন ভেঙে কেউ আসলে প্রবেশ করতে পারে না তাদের
ভিতরে। মূলত বাঁধনটা দুর্বল থাকে বলেই কেউ ঢোকার সুযোগ পায়। তাই আমি আর তুমি মিলে
যদি সংঘবদ্ধ থাকি তাহলে ইনশাআল্লাহ কারো সাধ্য নেই আমাদের জীবনে কোন প্রভাব ফেলার।
দ্বিধা ও সংশয়ে
ভরা কেমন যেন একটা ভীতিকর অনুভূতি ঘিরে ধরলো নূহাকে। কিছুটা বিস্ময় নিয়ে তাকালো
জাওয়াদের দিকে। জাওয়াদ হঠাৎ এসব কথা বলছে কেন তাকে?
শুধুই কি আগে
থেকে সাবধান করার জন্য নাকি তাদের জীবনে কেউ প্রবেশ করার চেষ্টা করছে?! ভাবনাকে এখানেই জোড় করে থামিয়ে দেবার চেষ্টা করলো নূহা। এমন কিছু ভাবতেই যে
কাঁপন ধরে যাচ্ছে মনে!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন