মঙ্গলবার, ২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

খুঁজে ফিরি সত্যের আঙিনা...১৭



মামণি, খালামণিদের খোঁজে ঘরের ভেতর ঢুকতেই মেঘে ঢাকা চেহারা নিয়ে মামাতো ভাই ইফতিকে সোফায় বসে থাকতে দেখলো নূহা। এগিয়ে গিয়ে পাশে দাঁড়িয়ে হাসি মুখে সালাম দিয়ে বলল, সুপ্রভাত মিল্কি ব্রো। রাতে ঝগড়াঝাঁটি কেমন হলো?

সালামের জবাব দিয়ে ইফতি বলল, রাতে ঝগড়াঝাঁটি হয়েছে কে বললো?

নূহা হেসে বলল, আমাদের আনন্দবাড়ির সংবাদদাতা গ্রুপের অন্যতম সদস্যদের মধ্যে একজন হচ্ছেন তোমার বড় কন্যা। এবং আজকের প্রভাতি নিউজ তোমার কন্যাজ্বি ইতিমধ্যেই পাঠ করে ফেলেছেন।

এইসব তোর প্রভাব। তোর সাথে থেকে থেকেই বাড়ির বাচ্চাগুলো অতি দুষ্টু হচ্ছে। তোর কাছ থেকে আমার তিন বাচ্চাকে দূরে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।

আচ্ছা ব্যবস্থা কোরো। কিন্তু ঝগড়াঝাঁটি হলে বাচ্চারা যাতে বুঝতে না পারে সেই ব্যাপারেও কিছু করার উদ্যোগ নাও। স্বামী-স্ত্রীর মনোমালিন্যের প্রভাব কখনোই বাচ্চাদের উপর পড়তে দিতে নেই। এরআগেও অনেকবার তোমাকে আর সানজিদাকে এই বিষয়ে বোঝানো হয়েছে। কিন্তু তোমরা আমলেই নাও না বিষয়টা।

আমরা তো ঝগড়াঝাঁটি করি না সাধারণত। মনোমালিন্য যা হবার তাতো বাচ্চাদের নিয়েই হয়। ওরা তাই টের পেয়েই যায়। সমস্যা হচ্ছে, বাচ্চাদের ব্যাপারে সব সিদ্ধান্ত সানজিদা একা নিতে চায়। আমি কিছু বললে মানতেই চায় না। এটা কেমন কথা বল? বাচ্চারা কি ওর একার?

নূহা হেসে বলল, আমরা যখন ক্লাস সিক্সে পড়তাম বাবা একবার আমাদের জন্য নতুন একটা রুল সেট করলেন। যেটা আমাদের কারো কাছেই যুক্তিসঙ্গত মনে হয়নি। আমরা সবাই তাই এক জোট হয়ে বাবার বিরোধিতা করেছিলাম। ঐ সময় মামণি ছুটে এসে বাবার পাশে দাঁড়ালেন। এবং বাবার রুলের পেছনে এমন সব চমৎকার যুক্তি প্রদর্শন করলেন যে, আমরা সবাই চুপ হয়ে যাতে বাধ্য হলাম। বাবার কথা মেনে নিয়ে সবাই নিজ নিজ কাজে চলে গেলাম। কিছুক্ষণ পর আমি চা নিয়ে বাবা-মামণির রুমের দরজায় গিয়ে দাঁড়াতেই শুনতে পেলাম মামণি বাবাকে বোঝাচ্ছেন আমাদের উপর সেট করা নতুন রুলটা কেন যুক্তিসঙ্গত নয়। খুবই অবাক হয়েছিলাম তখন। মনে প্রশ্ন জেগেছিল মামণির যদি অপছন্দই হয়ে থাকে তাহলে আমাদেরকে কিছুক্ষণ আগে সুন্দর যুক্তি প্রদর্শন করে রুলটা মেনে নিতে বাধ্য করলেন কেন? আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আমার মনের প্রশ্নের জবাবের ব্যবস্থা তখনই করে দিয়েছিলেন। মামণি বাবাকে উদ্দেশ্যে করে বললেন, আমি তোমাকে সাপোর্ট করেছিলাম কারণ আমি চাইনি বাচ্চারা তোমাকে ভুল প্রমাণিত করুক। এতে তোমার সিদ্ধান্তের ব্যাপারে ওদের ভরসা একটু হলেও কমে যেত। একবার তোমার সিদ্ধান্তের উপরে নিজের মত জাহির করতে পারলে, বার বার এমনটা করার সাহস পেয়ে যেত। আর আমি যদি ঐসময় ওদেরকে সাপোর্ট করতাম। তাহলে সেটা বিদ্রোহের আগুনে ঘিয়ের কাজ করতো। এবং পরবর্তীতে কিছু হলেই তোমার নালিশ নিয়ে আমার কাছে হাজির হতো। এই সুযোগ আমি ওদেরকে দিতে চাইনি বলেই তোমার সাপোর্টে কথা বলেছি, তোমার কথা ওদেরকে মেনে নিতে বাধ্য করেছি। কারণ বাচ্চাদের কোন ব্যাপারে আমাদের মধ্যে যতই মতের অমিল থাক না কেন, বাচ্চাদের সামনে আমাদেরকে সর্বদা একজোট থাকতে হবে। মতের অমিল নিয়ে আমরা ব্যক্তিগত ভাবে দুইজন যুক্তিতর্ক করবো, ঝগড়া করবো, দরকার হলে কথা বলা বন্ধ করে দেবো। কিন্তু বাচ্চাদেরকে কখনোই বুঝতে দেয়া যাবে না যে, ওদের ব্যাপারে আমাদের মধ্যে বিরোধ আছে। বিরোধ আমরা দুজন বদ্ধ কক্ষে বসে মিটমাট করে ওদের সামনে আমরা তাল-লয়-ছন্দের সংমিশ্রণে সুমধুর সঙ্গীতের মতো ধ্বনিত হবো। বাবা তখন হেসে বললেন, ইনশাআল্লাহ। ঠিকআছে আজ বিকেলে আমরা বাচ্চাদের নিয়ে আবারো বসবো। এবং ওদেরকে বলবো, আমরা দুইজন অনেক চিন্তাভাবনা করে দেখলাম যে, এই রুলটা এখন তোমাদের ফলো না করলেও চলবে। তাই এটা স্থগিত করা হলো।

ইফতি হেসে বলল, সন্তান লালন পালনে ফুপি আর ফুপাজানের সত্যিই কোন তুলনা হয়না।

নূহাও হেসে বলল, হুম, আলহামদুলিল্লাহ। জানো ভাইয়া সেদিন আমি হাজবেন্ড-ওয়াইফ রিলেশন সম্পর্কে নতুন একটা জিনিস অনুধাবন করেছিলাম। হাজবেন্ড-ওয়াইফ শুধু যে একে অপরকেই সম্মান করে চলবে তাই নয়। অন্য সবার কাছেও তাদের বন্ধনকে মজবুত ও সম্মানিত করে উপস্থাপন করবে। অনেকটা এমন ঘটনাই ঘটেছিল বাপী আর রুপা আম্মির সাথে। রুপা আম্মি ভয়াবহ রকমের শুচিবায়ুগ্রস্থা ছিলেন সেটা তো তোমার জানাই আছে। একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে স্লিপিং স্যুট পড়েই নীচে নেমে গিয়েছিলাম আমি। আম্মি চিৎকার করতে লাগলেন উনার পুরো ড্রয়িংরুম নাকি বাসি করে দিয়েছি। হুঙ্কার ছেড়ে বললেন, নোংরা মেয়ে এক্ষুণি আবার বাড়ি থেকে বের হয়ে যা তুই। এই মূহুর্তে, এই মূহুর্তে, এই মূহুর্তে জপতে জপতে প্রেশার উঠিয়ে ফেললেন একদম। আম্মির এসব কান্ড আমার জন্য বিরাট বিনোদন ছিল সেই সময়। মাঝে মাঝে ইচ্ছে করেই এমন কিছু করতাম যাতে আম্মি অস্থির হয়ে যেতেন। সেদিনও যে ইচ্ছে করেই ঘুমের ড্রেস চেঞ্জ না করে নিচে নেমেছিলাম সেটা বুঝতে পেরে বাপী খুবই বিরক্ত কন্ঠে বললেন, তুই আর আসবি না আমার বাড়িতে বুঝেছিস। আমার বৌকে যন্ত্রণা দিয়ে মজা পায় এমন মেয়ের কোন দরকার নেই আমার। দূর হয়ে যা আমার বাড়ি থেকে। আমি হাসতে হাসতে প্রশ্ন করেছিলাম, তুমি কিভাবে সহ্য করো বাপী আম্মিকে? রাগ হয়না কখনো? বাপী জবাবে বললেন, ফালতু প্রশ্ন করিস কেন? এটাও এক ধরণের রোগ। ইচ্ছে করে তো কেউ রোগী সাজে না। তাহলে রাগ করবো কেন? আসলে তোর আম্মির এই রোগের জন্য আমিই দায়ী বুঝলি মা? জানিস তো আর্মিতে ছিলাম। নিয়মানুবর্তিতা, অনুশাসন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ইত্যাদি ব্যাপারে খুব বেশি কঠোর ছিলাম। আমার খুশির জন্য তোর আম্মি গোছানো জিনিসও আবার গোছাতো, পরিষ্কার জিনিস আবার পরিষ্কার করতো। এভাবেই ধীরে ধীরে এই রোগটা ওর মনে বাসা বেঁধেছে বলেই আমার মনেহয়। আমিই দায়ীই তোর আম্মির এই অবস্থার জন্য। তাই তোর যত ইচ্ছে দুষ্টুমি আমার সাথে কর। বেচারিকে যন্ত্রণা করিস না। এত দরদ ছিল সেদিন বাপীর কন্ঠে, ভালো লাগায় সিক্ত হয়ে গিয়েছিল আমার অন্তর। আম্মি নিজ মুখেই বলতেন বাপী খুব বিরক্ত উনার শুচিবায়ু স্বভাবের জন্য। প্রায়ই রাগ করেন এটা নিয়ে আম্মির সাথে। অথচ আমি যখন জিজ্ঞেস করলাম তখন আম্মির বিরুদ্ধে কিছু তো বললেনই না বাপী, উল্টো নিজেকেই দোষী সাব্যস্ত করলেন। আরেকটা শিক্ষা অর্জিত হয়েছিল সেদিন। হাজবেন্ড-ওয়াইফ একে অন্যেকে এমন ভাবে আগলে রাখে, ঢেকে রাখে যাতে বাইরের কোন বিরূপ ছাপ না পরতে পারে তাদের উপর। তারা একে অন্যের বিরুদ্ধে যত ইচ্ছে অভিযোগ করবে কিন্তু অন্য কাউকে কখনোই সুযোগ দেবে না পার্টনারের বিরুদ্ধে কিছু বলার। কেউ বলতে চাইলেও উল্টো পার্টনারকেই সাপোর্ট করবে।

বেশ লাজুক কন্ঠে ইফতি বলল, রাগ হলে সত্যিই আমি সানজিদাকে সাপোর্ট করতে পারি না। উল্টো ওর দোষগুলো অজান্তেই বলে ফেলি কেন জানি না। এই বদভ্যাস থেকে মুক্তি পাবার কোন উপায় জানা থাকলে বলে দে তো আপু আমাকে।

একটুক্ষণ চুপ থেকে নূহা হাসি মুখে বলল, বিয়ের কয়েক মাস পর গ্রামে গিয়েছিলাম আমরা। বৈশাখ মাস ছিল তখন। একদিন দুপুরে চারপাশ আঁধার করে কালবৈশাখীর ঝড় শুরু হলো। কিন্তু খুব জরুরী একটা কাজে তোমাদের ভাইজানকে শহরে যেতে হয়েছিল ঐ সময়ই। বাইরে বেরোনোর সময় যখন উনাকে রেইনকোট এগিয়ে দিয়েছিলাম।দুষ্টুমি মাখা কন্ঠে বলেছিলেন, এই জগত জুড়ে সর্বক্ষণই বয় অদৃশ্য কালবৈশাখীর ঝড়, তুমি সর্বদা রেইনকোট হাতে থাকবে তো হে মোর সহচর?! আমার জবাবে অপেক্ষা না করেই হাসি মুখে বলেছিলেন, বুঝলে বালিকা সারাক্ষণ নেতিবাচকতার বর্ষণ হতেই থাকে চারপাশ থেকে। হাজবেন্ড-ওয়াইফকে তাই সর্বদাই একে অন্যের আশ্রয় হবার ইচ্ছেটাকে দৃঢ় রাখতে হয়। এমন অঝর শ্রাবণে রেইনকোট যেমন হতে হয়, অবস্থা ও অবস্থানের পরিবর্তনে কখনো আবার শ্রাবণ হয়েই ঝরতে হয় ধূধূ মরুভূমির বুকে। জীবনসাথীই যখন মেনটরের ভূমিকা পালন করেন, তখন জীবনযাপনই শুধু নয়, জীবনকে উপভোগ করাটাও খুব সহজ হয়ে যায়। আলহামদুলিল্লাহ আমি জীবনসাথী রূপে আমার মেনটরকেই পেয়েছিলাম। জীবনে একজন বিশ্বাসযোগ্য, নির্ভরযোগ্য মেনটরের প্রয়োজনীয়তা ছোটবেলাতেই বুঝেছিলাম। কিন্তু বিয়ের পর বুঝেছিলাম হাজবেন্ড-ওয়াইফ যখন পরস্পরের মেনটরের ভূমিকাও পালন করে, তখন দাম্পত্য জীবনটা কতটা নির্ঝঞ্ঝাট ও স্বাচ্ছন্দময় হয়ে ওঠে। দাম্পত্যে আগত প্রতিটা সমস্যা তখন দুই সদস্য বিশিষ্ট গোলটেবিল বৈঠকের আলোচনার সাবজেক্টে পরিণত হয়। এবং সঠিক চাপে যেমন কয়লার খন্ড হীরক খন্ডে রূপান্তরিত হয়। ঠিক তেমন হাজবেন্ড-ওয়াইফের সমঝদারী ও ভালোবাসার সংমিশ্রণে সমস্যা পরিণত হয় সম্ভাবনাতে। বুঝেছেন মিল্কি ব্রো?

আলহামদুলিল্লাহ আমি তো বুঝেছি। এখন কষ্ট করে যদি সানজিদাকেও একটু বুঝিয়ে বলতি অনেক উপকার হতো।

ঠিকআছে আপনাকে উপকৃত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে ইনশাআল্লাহ। তবে এর বদলে আমারও একটা জিনিস চাওয়ার আছে।

এটা তো আমার সৌভাগ্য বলতে হবে। বয়সে ছোট হয়েও তুই সবসময়ই দেয়ার কাতারের মানুষ আমার জন্য। তোকে কিছু দিতে পারলে খুব বেশি আনন্দিত হবো। বল কি চাস?

মাদার গ্রুপের সন্ধান চাই। চার মহিলা কোথায় লুকিয়েছে সেটা কি জানো? জানা থাকলে আমাকে বলে দাও। উনাদের সাথে গসিপে অংশগ্রহণ করার জন্য অস্থির হয়ে আছি আমি।

ইফতি হেসে বলল, পেছনের বাগানের দিকে যেতে দেখেছিলাম দশ-পনেরো মিনিট আগে।

নূহা হেসে বলল, আচ্ছা তাহলে যেয়ে দেখি ওখানে আছে কিনা। তুমিও এখানে বসে না থেকে রুমে যাও। সানজিদার সাথে কথা বলো। যাবার আগে আরেকটা কথা শুনে যাও।

হ্যা বল।

অনেক বছর আগে একজন আমাকে বলেছিলেন, প্রয়োজনে আমরা রোজ অসংখ্য বার লড়াই করবো। দরকার হলে কারণ খুঁজে খুঁজে বের করে অকারণে লড়াই করবো। কিন্তু কখনোই একে অন্যেকে ভুল কিংবা নিজেকে সঠিক প্রমাণের জন্য হবে না আমাদের লড়াই। আমরা লড়াই করবো আমাদের সম্পর্কের বন্ধনকে আরো মজবুত এবং সুন্দর থেকে সুন্দরতর করে তোলার উদ্দেশ্যে। ক্লিয়ার?

ইফতি হেসে বলল, অল ক্লিয়ার আপুজান। এখনই যাচ্ছি আমি।

ভাইকে তার বেডরুমের দিকে রওনা করিয়ে মাদার গ্রুপের সন্ধানে পেছনের বাগানে রওনা দিলো নূহা। মনের আনন্দে গল্প করার জন্য মাদার গ্রুপের সদস্যারা সবসময়ই নিরিবিলি জায়গা খোঁজেন। কিন্তু পেছনের বাগানে কাউকে দেখতে না পেয়ে ফিরে আসতে গিয়ে বাচ্চাদের হাসির শব্দ শুনতে পেয়ে দাঁড়িয়ে গেলো। খানিকটা এগিয়ে গিয়ে উঁকি দিতেই দেখতে পেলো নাবিহা দোলনাতে বসে আছে আর পেছনে থেকে জিহাদ, জিশান, জারিফ দোল দিচ্ছে বোনকে। একই সাথে ঠোঁটের কোণে হাসি আর আঁখিদ্বয় আনন্দাশ্রুতে সিক্ত হয়ে উঠলো নূহার। একবার ভাবলো বাচ্চাদের কাছে গিয়ে ওদের আনন্দে শরিক হতে। পরমূহুর্তেই আবার মনেহলো জীবনের কিছু প্রাপ্তি দূর থেকেই বেশি মনোহর। তাই আরো কিছুক্ষণ আনন্দাশ্রু সিক্ত চোখে সন্তানদের ভালোবাসাময় বন্ধন অবলোকন করার পর বাসার ভেতরে যাবার উদ্দেশ্যে ঘুরে দাঁড়াতেই খানিকটা দূরে জাওয়াদকে দাঁড়ানো দেখে আরেকবার থমকে দাঁড়ালো।

নূহাকে অপ্রস্তুত হতে দেখে জাওয়াদ বলল, সরি আমার জানা ছিল না তুমি এখানে। আমি চলে যাচ্ছি।

সমস্যা নেই থার্ড পারসন হিসেবে আমিও আছি তোমাদের মাঝে। মিসেস নুসরাতকে দেখে এবং উনার কথা শুনে হাসি ফুটে উঠলো জাওয়াদ, নূহা দুজনের মুখেই। এগিয়ে এসে দুজনের মাঝখানে দাঁড়িয়ে মিসেস নুসরাত বললেন, চল ওখানে বসে গল্প করি সবাই মিলে।

তোমরা কথা বলো। আমি দেখি বড় মামার রান্নার কি অবস্থা। কথা শেষ করে কারো জবাবের অপেক্ষা না করেই জাওয়াদ ঘুরে হাঁটতে শুরু করলো। সেদিকে তাকিয়ে মিসেস নুসরাত বিশাল লম্বা করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।

নূহা বিরক্ত কন্ঠে বলল, চল ওখানে বসে গল্প করি সবাই মিলে। এমন একটা প্রস্তাব তুমি কিভাবে দিলে?

প্রস্তাব গৃহীত হবে না নিশ্চিত ছিলাম তাই দিয়েছি। শোন আমি তোদেরকে তোদের চাইতেও বেশি চিনি। তাই আমার সাথে আম্মাগিরি দেখাস না। দুনিয়াতে ভারসাম্য বলেও তো একটা জিনিস আছে। নাকি নেই?

বুঝিনি তোমার কথা। কিসের ভারসাম্য?

ঐ যে গোবরেও পদ্মফুল ফোটে কখনো। আবার বিদ্বানের ঘরেও মূর্খের জন্ম হয়। তেমন সবসময়ই বাবা-মা সমঝদার আর সন্তানরা অবুঝ হয়না। কখনো কখনো বাবা-মা হন অবুঝ আর সন্তানরা হয় বিরাট সমঝদার। এইখানে সেই কেস। তোরা অনুভূতিহীন রোবট, তাই আমরা অতি আবেগপ্রবণ মানুষ। অল ক্লিয়ার নাকি আরো কিছু বলতে হবে?

নূহা হেসে বলল, তোমার কথা তো সার্ফ এক্সেলের চেয়েও শক্তিশালী স্পট ডিটেকটিভ। লুকিয়ে থাকা দাগও নিষ্ঠার সাথে খুঁজে বের করে পরিষ্কার করে দেয়। অল ক্লিয়ার না হয়ে উপায় আছে?
আর কিছু না বলে এগিয়ে গিয়ে ছাওনীর নিচে বসলেন মিসেস নুসরাত। নূহার গিয়ে পাশে বসলো। কেটে গেলো বেশ কিছুটা ক্ষণ নীরবতাতেই। একসময় মিসেস নুসরাত হাসি মুখে বললেন, তোর মেয়ে তো একেবারে মায়ের গুণে গুণান্বিতা। নিজে রাজরাণী সেজে বসে ভাইদের দোলনা দোলক বানিয়ে ফেলেছে। মায়ের দেখানো পথে চলে ভাইদের জীবন ভাঁজা ভাঁজা না করে দিলেই হলো।

নূহা হেসে বলল, তোমার মনে আছে খালামণি জন্মের পর আমি কিছুতেই নাবিহা, জিহাদ আর জিশানকে দেখতে রাজী হচ্ছিলাম না। কারণ আমরা প্রমিস করেছিলাম আমাদের ভালোবাসার জীবন্ত প্রতিচ্ছবিদের প্রথমবার দুজন মিলে একসাথে দেখবো। ওদেরকে একটু একটু করে বড় করা, গড়ে তোলা, হাঁটতে শেখানো, কথা বলানো সবকিছু আমরা দুজন মিলেমিশে করার প্ল্যান নিয়েছিলাম। কত শত প্ল্যান ছিল সন্তানদেরকে ঘিরে আমাদের দুজনের। সেই সমস্ত প্ল্যান আমার সামনে এসে দাঁড়িয়েছিল ঐ মূহুর্তে। এবং আমি নিশ্চিত ছিলাম আমার একার পক্ষে কোনদিন সেসব প্ল্যান বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। আমি বুঝতে পারছিলাম আমাদের সন্তানরা কোনদিন তেমন ভাবে বড় হবে না যেমনটা আমরা স্বপ্ন দেখেছিলাম। প্রচণ্ড ভয়, নেতিবাচক আশংকা, স্বপ্নভঙ্গ সবকিছু মিলিয়ে আমি সাহসই করতে পারছিলাম না ওদের তিনজনকে দেখার। ভেতর থেকে কে যেন শুধু বলছিল, ওদেরকে তুমি ভালোবাসার প্রতিমূর্তি করে গড়তে পারবে না। ওদেরকে শুদ্ধ-শুভ্র আলোকিত মানুষের কাতারে নিয়ে দাঁড় করাতে পারবে না। তোমরা সবাই ছিলে আমার পাশে, আমাদের সন্তানদের পাশে। কিন্তু অসহায়ত্বের ঘেরাটোপ থেকে কিছুতেই বের হতে পারছিলাম না। ঐ প্রথম আমি আল্লাহর কাছে আকুল হয়ে কান্না করতে করতে বলেছিলাম, 'যদি আমাদের সন্তানদের ভাগ্যে বাবা কিংবা মা যে কোন একজনের আদর-ভালোবাসা লিখা ছিল। তাহলে সেটা ওদের পাপার হলো না কেন? আপনি তো সর্বজ্ঞানী। আপনি তো জানেন ভালো মা হবার যোগ্যতাই আমার নেই। সেখানে বাবা-মা উভয়টা দায়িত্ব আমি কোনদিন পালন করতে পারবো না। কিন্তু উনি একাই যথেষ্ট ছিলেন ওদেরকে বাবা-মা সহ পুরো দুনিয়ার সমস্ত ভালোবাসাকে আস্বাদন করানোর জন্য। আমি নিজেই তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ। যেদিন আমি উনার ভালোবাসার ক্ষমতাকে উপলব্ধি করতে পেরেছিলাম, দুনিয়ার বাকি সবার ভালোবাসা ফিকে হয়ে গিয়েছিল আমার কাছে। যখন আমি উনার সাথে থাকতাম কারো কোন অভাব টের পেতাম না। কিন্তু যখন উনি দূরে থাকতেন, সবাই মিলেও সেই অভাব পূরণ করতে ব্যর্থ হতো। একথা আমি যেমন জানি আপনিও তো জানেন, ওমন করে ভালোবাসার ক্ষমতা আমার নেই। আমি না থাকলে তাই কিছুই হতো না। উনি ঠিক ঠিক সামলে নিতেন আমাদের সন্তানদেরকে। ঠিক সেভাবেই গড়ে তুলতেন ওদেরকে যেভাবে বিকোশিত করতে হয় চারাগাছ থেকে পুষ্পদের'

নূহার কন্ঠের আবেগ আর চোখ থেকে ঝরে পড়া অশ্রুধারা মিসেস নুসরাতকেও দুর্বল করে দিলো। হাত বাড়িয়ে নূহাকে বুকে টেনে নিয়ে চোখ মুছিয়ে দিয়ে বললেন, তুই বেছে বেছে আমাকেই কেন সবসময় শোনাস এসব কথা বল তো? এসব কথা বলিশ নাতো মা। খুব বেশি কষ্ট হয় শুনতে।

নূহা হেসে বলল, আমার মন সমুদ্রে যখন ঝড় ওঠে তুমি হাজির হয়ে যাও বিনা দাওয়াতের মেহমানের মত। তাই দোষ আমার না বরং তোমার। এখন তাই আমার মন যা পাকাচ্ছে তাই খেতে হবে তোমাকে। নো অপশন।

আচ্ছা বল তোর যা ইচ্ছে।

জানো খালামণি আদী ভাইয়ার কোলে যেদিন আমি প্রথম জিহাদকে দেখেছিলাম ইচ্ছে করছিল ছিনিয়ে নিয়ে আসি। কারণ অন্য কারো ছায়া আমার সন্তানদের উপর পড়তে দিতে মন সায় দিচ্ছিলো না কিছুতেই। আট মাস আদী ভাইয়াই ওদের বাবা-মা উভয়ের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। আমি নিজে তো কিছু করতামই না। উল্টো শুধু দোষ আর ঘাটতি খুঁজতাম আদী ভাইয়ার সবকিছু থেকে। তাই আদী ভাইয়ার ভালোবাসা, ত্যাগ কোনকিছুকেই সেভাবে করে মূল্যায়ন করতে পারিনি। আদী ভাইয়া কতটা উত্তম ছিলেন আমার সন্তানদের জন্য সেটা টের পেয়েছিলাম রাহাত আসার পর। বেচারা রাহাতের অবস্থা ছিল জেনে শুনে বিষ পান করার মতই।

মিসেস নুসরাত হেসে ফেললে নূহাও হাসতে হাসতে বলল, রাহাতের ইচ্ছে, চেষ্টা ও আন্তরিকতায় কোন কমতি ছিল না। কিন্তু আমাদের আনন্দবাড়ির হরেক রঙের মানুষের ভিড়ে হাবুডুবু খাচ্ছিলো প্রতিনিয়ত। নিজেই বাচ্চা ছিল রাহাত। সন্তান লালন-পালন কিভাবে করবে? রাহাতের হিমশিম অবস্থা দেখে আমার প্রতি রাগ থাকার স্বর্ত্বেও আদী ভাইয়া এগিয়ে এসেছিলেন আবারো। ধীরে ধীরে রাহাতকে বাবা হতে শিখিয়েছেন। ভালো স্টুডেন্ট ছিল তাই শিখে নিয়েছিল দ্রুতই সবকিছু।

কিন্তু পরীক্ষক যেহেতু তুই ছিলি পাশ করতে পারেনি তখন বেচারা।

নূহা হেসে বলল, খালামণি খুব উত্তম কিছুতে অভ্যস্ত কারো পক্ষে এমনটাই কি স্বাভাবিক ছিল না? আমি এমন একজন মানুষের সাথে থেকে অভ্যস্ত ছিলাম যিনি এক কথায় অলরাউন্ডার ছিলেন। জীবন নামক নাট্যশালার প্রতিটা সিনে ওয়ান টেকেই পারফেক্ট পারফর্মেন্স দেয়া যার প্যাশন ছিল। আদী ভাইয়া অনেকটাই উনার মতন ছিলেন। তাও আমি মেনে নিতে পারিনি। সেখানে রাহাতের খাতায় তো জিরোও ছিল না আমার কাছে দেবার মতো। সবকিছু মিলিয়ে জীবনের প্রতি আমার সমস্ত চাওয়া-পাওয়া শেষ হয়ে গিয়েছিল। সময়ের স্রোতে নিজেকে তাই ভাসিয়ে দিয়েছিলাম একেবারে। সময় যখন রাহাতের কাছে যাবার দাবী নিয়ে সামনে এসে দাঁড়িয়েছিল। বাঁধা দেবার চেষ্টা করিনি। ভাসিয়ে নিয়ে যেতে দিয়েছি তখনো আমাকে।

ঐ সময় আমারও তোকে দেখে এটাই মনেহতো। কোন কিছুতেই তোর কিছু এসে যায় না। কি হচ্ছে, কিভাবে হচ্ছে, কেন হচ্ছে জানার কোন ইচ্ছেই কাজ করতো না তোর ভেতর। ভেসে যাচ্ছিলি অনেকটা অচেতন ভাবেই।

হুম! আমি হয়তো ওভাবে ভাসতেই থাকতাম যদি উনি ফিরে না আসতেন। উনাকে দেখার পর প্রথম তিন-চারদিন আমি প্রচণ্ড আপসেট ছিলাম এটা ঠিক। কিন্তু এরপর অদ্ভুত এক প্রশান্তিতে কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে গিয়েছিল অন্তর। সমস্ত ভীতি, অসহায়ত্ব কোথায় যেন মিলিয়ে গিয়েছিল। মনে হয়েছিল, সবকিছু এখন পারফেক্ট। রাহাতকে প্রথমবারের মতো কাছের কেউ মনে হয়েছিল। দুইমাসে প্রথমবার আমি আমার ভেতরে থাকা জারিফকে অনুভব করার চেষ্টা করেছিলাম। প্রথমবার আমার ইচ্ছে করছিল জিহাদ, জিশান, নাবিহার পেছন পেছন বাড়িময় ছুটে বেড়াতে। ছুটে গিয়ে বাবাদের সবার জন্য নিজ হাতে চা বানিয়েছিলাম বহুদিন পর। আর উনার কাছে গিয়ে চির অভ্যাস অনুযায়ী আবদার, অধিকার আর আহ্লাদের সুরে বলেছিলাম, দেখো না সবকিছু কেমন যেন এলোমেলো হয়ে গিয়েছে আমাদের আনন্দবাড়ির। তুমি কি আবার সবকিছু আগের মত করে দেবে? করে দাও না প্লিজ। এমন দেখতে আর ইচ্ছে করছে না। আসলে ঐ সময়ও আমি ঘোরের মধ্যেই ছিলাম। উনি কি অবস্থার ভেতর দিয়ে যাচ্ছেন সেটা আমার আউট অব মাইন্ড ছিল। আমার শুধু মনেহচ্ছিলো, সবকিছু এখন ঠিক হয়ে যাবে। আমার সন্তানরা ঠিক সেভাবেই বড় হবে যেমন আমি স্বপ্ন দেখেছিলাম, পরিকল্পনা নিয়েছিলাম। আমাদের বাড়ির পরিবেশ আবারো ঠিক হয়ে যাবে। আনন্দবাড়ির বাতাসে আবারো অক্সিজেন হিসেবে আনন্দ আর ভালোবাসা ভেসে বেড়াবে। আবারো কারণে অকারণে ছন্দ-কাব্য-গল্পের জলসা বসবে আনন্দবাড়ির আঙিনায়। দুই বছর পর আমি ডায়েরি নিয়ে বসেছিলাম। বাঁধ ভাঙা বন্যার মতো ভেসে আসছিল শব্দরা ছন্দে ছন্দে। আমি আমার ভাবনাদের শব্দের ফ্রেমে বাঁধতে বাঁধতে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলাম সেদিন। শান্তি-স্বস্থির এমন অনুভূতি অনুভব করতেই যেন ভুলে গিয়েছিলাম আমি। কিন্তু উনি ফিরে আসা মাত্র আমার রঙহীন আকাশ জুড়ে আবারো বসেছিল সাতরঙের মেলা।

তোর মনের অবস্থা যদি এমনই ছিল। তাহলে কেন ভাঙনের পথকেই বেছে নিয়েছিলি?

নূহা হেসে বলল, ভাঙন তো আমাদের নিয়তি ছিল খালামণি। নিয়তিকে তো মেনে নিতেই হবে। তুমি নিশ্চয়ই জানো চাঁদের নিজস্ব কোন আলো নেই। চাঁদ সূর্যের আলোতে আলোকিত। ঠিক তেমনি আমারো নিজের কোন আলো ছিল না। আমি উনার আলোতে আলোকিত ছিলাম। তাই উনি যখন আমার জীবন থেকে হারিয়ে গিয়েছিলেন আঁধারে ঢাকা পরে গিয়েছিল আমার মন, ভুবন। নিজ কর্তব্য কর্মের জ্ঞান থেকেও আমি বিস্মৃত হয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু উনি ফিরে আসা মাত্রই আমি আমার আলোও ফিরে পেয়েছিলাম। যে আলোতে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম নিজের ভুলগুলোকে। আরেকটি ভুল সিদ্ধান্ত নেবার কোন সুযোগ তাই আমার ছিল না। তাছাড়া এখনো পর্যন্ত আমার আর রাহাতের কমন ইন্টারেস্ট উনিই। উনাকে ভিত্তি করেই আমাদের জীবন একসাথে জুড়েছিল। এবং উনার প্রতি রাহাতের মনের অকৃত্রিম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসাই আমাকে বাঁধা দিয়েছিল রাহাতকে কষ্ট দিতে। আমি চাইনি কোনদিন কেউ এই কথা বলার সুযোগ পাক যে, ভাইজান সারাক্ষণ সবাইকে উদারতা ও মহত্ম্যের শিক্ষা দেন। অথচ ফিরে এসে উনি রাহাতের সাথে অবিচার করেছেন। ছোটবেলা থেকে তোমরা আমাদেরকে মানুষের হক আদায়ের ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করে চলতে শিখিয়েছিলে। আমি তাই রাহাতের হক আদায়ের ব্যাপারে পূর্ণ সচেতন হয়ে উঠেছিলাম তখন। এবং সাথে সাথে নিজের অতীত ভুলগুলোকেও শুধরে নেবার চেষ্টা করেছি। আমি খুশি মনে আমার নিয়তি মেনে নিয়েছিলাম কারণ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আমার দুআ কবুল করে নিয়েছিলেন। আমি দিনরাত আল্লাহর কাছে আমার সন্তানদের জন্য ওদের পাপাকে ফিরে চাইতাম। আমি জানতাম না উনি বেঁচে আছেন। কিন্তু আমার দোয়ারা আকুল হয়ে আল্লাহর দরবারে শুধু উনাকেই চাইতো। কিন্তু নিজের জন্য না। আমি জিহাদ, জিশান আর নাবিহার জন্য উনাকে ফিরে পেতে চাইতাম। কারণ ওদের উপর আর কারো ছায়া পরতে দিতে আমি নারাজ ছিলাম। কিছুতেই মানতে পারতাম না উনি ছাড়া অন্য কেউ ওদেরকে প্রকৃত অর্থে পিতার আদর-ভালোবাসা-শিক্ষা দিতে পারবে। তাই উনি যখন সত্যি সত্যিই আমার সামনে এসে দাঁড়িয়েছিলেন। আমার জীবনের সমস্ত অপূর্ণতা মূহুর্তে দূর হয়ে গিয়েছিল। আলহামদুলিল্লাহ এরপর থেকে এখনো পর্যন্ত কোনদিন আর নিজেকে অপূর্ণ মনেহয়নি। কারণ উনি কোথাও না কোথাও আছেন আমার সূর্য হয়ে। আমাকে আলোকিত করার জন্য। ব্যাস আর কিছুই চাওয়ার নেই আমার দুনিয়ার এই জীবনে এই মূহুর্ত পর্যন্ত। জীবনে কি চেয়েছিলাম আর কি পেয়েছি এই হিসাবের গোলকধাঁধায় ঘুরপাক খাওয়া তখনই ছেড়ে দিয়েছিলাম। আর এখন তো শুধু নিজের দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করে যেতে চাই নিষ্ঠার সাথে। আমাকে ঘিরে আবর্তিত বন্ধনগুলোর হক আদায়ে যাতে কোন ঘাটতি না হয় আমার দ্বারা আপাতত এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

তোর মন আজ অন্যরকম কোন অনুভূতির দোলায় দুলছে সেটা বুঝতে পারছি। তবে সেই অনুভূতিটা কি সেটা বুঝতে পারছি না।


নূহা হেসে বলল, আমাদের লিটল লিটল টুইংকেল স্টারগুলোকে যখন এমন একসাথে ঝিকমিক করতে দেখি। তখন প্রাপ্তির সাগরে ভাসতে শুরু করে মন, আলহামদুলিল্লাহ। আকুল করে আমি আমার রব্বের কাছে এটাই তো চেয়েছিলাম। আমাদের সন্তানরা সত্যিকার অর্থে ভালোবাসতে শিখবে এবং একে অপরকে জড়িয়ে রাখবে অকৃত্রিম ভালোবাসার বাঁধনে। জগতময় ওরা মুঠো মুঠো ভালোবাসা ছড়াবে। ঘৃণার ইতিহাসের বুকে ওরা নতুন করে ভালোবাসার ইতিহাস লিখবে। ওরা আলো হয়ে জ্বলবে আকাশের বুকে। আলো নিয়ে উড়বে জোনাকির রূপে। ওরা সুন্দর এক পৃথিবী গড়ে তুলবে শরীয়তের আলোকে। স্বপ্ন যখন সত্যি হবার সম্ভাবনার ঝলক দেখিয়ে যায়। তখন মন কি ভালো না হয়ে পারে বলো? তাই আমার মন আজ খুব ভালো আলহামদুলিল্লাহ। এখন সেই ভালো লাগাতে সুতো বেঁধে উড়িয়ে দিতে চাই সুবিশাল ঐ আকাশে। আর সেজন্য আমাকে আমার স্টারদের কাছে যেতে হবে। তুমি চাইলে আসতে পারো সাথে। চাইলে এখানে বসেও আমাদের উড়াউড়ি দেখতে পারো। আবার চাইলে তোমার স্টারদের সন্ধানেও যেতে পারো। চয়েজ ইজ ইওরস। কথা শেষ করেই নূহা ছুট লাগালো তার স্টারদের পানে......

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন