মঙ্গলবার, ২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

খুঁজে ফিরি সত্যের আঙিনা...২১



অসহায় ভঙ্গিতে সামনে বসে থাকা তিন ভাইয়ের উপর চোখ বুলিয়ে হাসি চাপতে বেশ কষ্টই হলো জাওয়াদের। নাস্তার পর ইফতি, ইমাদ, নাভীন তিনজনই যখন কথা বলতে চাচ্ছিলো। বুঝতে কষ্ট হয়নি নিজ নিজ দাম্পত্য জীবন নিয়েই কথা বলতে চাইছে সবাই। আলাদা আলাদা না বসে তাই তিনজনকে নিয়ে একসাথেই টেরেসে এসে বসেছে। একসাথে বসে আলোচনার করার সুযোগে একজনের অভিজ্ঞতা থেকে অন্যজন নিজের জন্য শিক্ষা তুলে নিয়ে পারে বেশ সহজেই। এক এক করে তিনজনই নিজ জীবনকে ঘিরে আবর্তিত সম্পর্কের বন্ধনগুলোকে ঘিরে নিজেদের ছোট ছোট অভিযোগ গুলো খুলে বললো। খুব মনোযোগ দিয়ে সবার কথা শোনার পর নিজের অভিমত আগে গভীর দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ ছোট তিন ভাইকে পর্যবেক্ষণ করে নিলো জাওয়াদ। এরপর বলল, নিজ নিজ স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসাতে বিন্দুমাত্র ঘাটতি নেই তোমাদের কারো। স্ত্রীকে সুখী করার, নিজে সুখে থাকার ইচ্ছার প্রচন্ডতাও যথেষ্ট তোমাদের। তারপরও কেন ভারসাম্য রেখে চলতে ব্যর্থ হচ্ছো বার বার সেটা নিয়ে কি কখনো চিন্তাভাবনা করেছো?

ইফতি বলল, ভারসাম্য তো উভয় পক্ষের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফলে ঠিক থাকে ভাইজান। স্ত্রী যদি তার দায়িত্বে গাফলতি করে ভারসাম্য ঠিক থাকবে কি করে?

জাওয়াদ বলল, তোমার এই ধারণা ঠিক নয় ইফতি। দাম্পত্য জীবনে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের ফিফটি ফিফটি অবদান খুবই রেয়ার একটা বিষয়। অধিকাংশ সংসারই সফলতার মুখ দেখে এবং সাফাল্যের পথে চলতে থাকে একজনের অধিক অবদানের কারণে। তাছাড়া দাঁড়িপাল্লা দিয়ে তো অবদান সমান সমান আছে কিনা সেটা মাপা সম্ভব নয় সবসময় সর্বক্ষেত্রে। তাই করণীয় হচ্ছে, সংসারে সুখ ও শান্তির জন্য নিজ সাধ্যনুযায়ী কাজ করে যাওয়া। কে বেশি কাজ করছে, কে কম করছে সেটা হিসাব করারও কোন সুযোগ নেই। আবার উভয়ের ক্ষমতা, যোগ্যতা তো একরকম নয়। তাই উভয়ের কাছ থেকে একই রকম পার্ফমেন্স আশা করা যাবে না।

নাভীন বলল, ভাইজান আপনি কিভাবে সর্বাবস্থায় ভারসাম্য রেখে চলতেন? কিছু হলেই আমাদের বৌয়েরা আপনার কথা বলে। তাই আপনার অভিজ্ঞতা জানতে চাই আমরা।

জাওয়াদ হেসে বলল, আলহামদুলিল্লাহ। আমি নিজেও মাঝে মাঝে এই প্রশ্নটা করি নিজেকে। এবং বার বার একটাই জবাব খুঁজে পাই। আমি হয়তো কখনোই হাজবেন্ড হিসেবে এমনটা হতে পারতাম না। যদি না নূহা আমার জীবনে না আসতো। আইমিন, আমাদের বিয়েটা না হতো।

ইফতি হেসে বলল, সেটা কিভাবে ভাইজান?

আমি নিশ্চিত নূহার জায়গার অন্য কাউকে বিয়ে করলে কখনোই হাজবেন্ড হিসেবে সব ক্ষেত্রে, সর্বাবস্থায় এতটা সাপোর্টিভ হতে পারতাম না আমি। কিংবা এখন যে পথে আমি হাসি মুখে হাঁটছি। নূহা ছাড়া অন্য কারো জন্য মনেহয় না এই সফরটা পাড়ি দিতাম। আমি মনেহয় তোমাদেরকে ঠিক বোঝাতে পারছি না।

খানিকটা বিস্ময় মেশানো স্বরে ইমাদ বলল, সত্যিই আমরা বুঝতে পারছি না ভাইজান।

কিছুক্ষণ চুপ থেকে হাসি মুখে জাওয়াদ বলল, সবসময়ই আমার জীবনের প্রথম প্রায়োরিটি আমাদের পরিবার ছিল। একটি আদর্শ পরিবার গঠনে শরীয়তে যে নকশা এঁকে দেয়া আছে। আমি হুবহু সেটা ফলো করতে চেষ্টা করেছি সবসময়। কিন্তু যেহেতু ব্যস্ততা ছিল প্রচন্ড রকমের। তাই নিয়ম সেট করে দেয়া পর্যন্তই ছিল আমার বেশির ভাগ পদক্ষেপ। পাশে দাঁড়িয়ে, হাত ধরে পরিবারের সদস্যদের সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবার সময় কখনোই আমার ছিল না। আসলে এই প্রয়োজনীয়তা টাই অনুভব করিনি কখনো। এই অনুভূতিটা নূহা আমার মধ্যে প্রথম জাগিয়েছিল। পরিবারের সদস্যদের সাথে আমার যে বিশাল দুরুত্ব ছিল। সেটা নূহা শুধু আমাকে দেখিয়েই দেয়নি। সাথে সাথে সেই দুরুত্ব কম করার ব্যাপারে পরামর্শ দিয়ে যেমন সাহায্য করেছে। তেমনি আমার হয়ে অনেক কাজ করেও দিয়েছে। নূহা ছোটবেলা থেকেই আমার সবচেয়ে বেশি আদরের ছিল। একদম ছোটবেলা থেকেই নূহার মধ্যে সেই গুণ গুলো ছিল। যা আমি প্রতিটা মানুষের মধ্যে দেখতে পছন্দ করতাম, এখনো করি। জ্ঞানার্জনের প্রবল আগ্রহ, পরিবারের খুশিকে সবার উপরে রাখা, নিজের আগে অন্যের কথা ভাবা। ইত্যাদি। আমার সবসময়ই ইচ্ছে ছিল আর্লি ম্যারেজের। কিন্তু সবকিছু মিলিয়ে যেমন লাইফ পার্টনার চাইতাম তেমন কাউকে খুঁজে পাচ্ছিলাম না। অবশ্য আমার সেই সমস্ত কন্ডিশনের কথা চিন্তা করলে নিজেরই এখন হাসি পায়।

আমরা কি দুএকটা উদাহরণ শুনতে পারি? হাসি মুখে প্রশ্ন করলো ইমাদ।

জাওয়াদ হাসতে হাসতে বলল, অবশ্যই শুনতে পারো। আমি বিয়ের জন্য এক কথায় অলরাউন্ডার মেয়ে খুঁজতাম। যে আমাকে বুঝবে, আমার পরিবারের প্রতিটি সদস্যকে বুঝবে এবং আমার মত করেই ভালোবাসবে। আবার আমার ব্যস্ততা বুঝবে, কোন কিছু নিয়ে অভিযোগ করবে না। মেয়েরি নেতিবাচক স্বভাব বিবর্তিত হবে। আইমিন, কথায় কথায় রাগ করবে না, কারণে-অকারণে ইস্যু তৈরি করে অশান্তির জন্ম দেবে না। জ্ঞানার্জনের তীব্র আগ্রহ থাকবে যার মধ্যে। এবং সর্বোপরী শরীয়তের আলোকে আলোকিত হবে। এছাড়াও আরো অনেক কিছু ছিল। এখন যখন এসব কথা ভাবতে যাই মনেহয়, নূহা আমার জীবনে ঐভাবে না এলে আমার হয়তো কখনো বিয়েই কথা হতো না। কারণ অপ্রয়োজনীয় সব শর্তের বেড়াজালে নিজেকে আবদ্ধ করে রেখেছিলাম। কিন্তু আমার সামনে যখন নূহা এসে দাঁড়িয়েছিল। অটোম্যাটিক সমস্ত কন্ডিশন কোথায় যেন মিলিয়ে গিয়েছিল মন থেকে। যেহেতু গভীর এক বন্ধনে অলরেডি আবদ্ধ ছিলাম আমরা। তাই সম্মুখের বাকি সব বাঁধা এমনিতেই দূর হয়ে গিয়েছিল।

ফ্যামিলি থেকে কোন বাঁধা আসেনি তাই না ভাইজান? প্রশ্ন করলো ইফতি।

না ফ্যামিলি থেকে বাঁধা আসেনি। বাঁধা বলতে আমি আসলে বলতে চাচ্ছি, নূহার আর আমার এইজ ডিফারেন্স। এবং আমার যে সমস্ত এক্সপেক্টটেশন ছিল লাইফ পার্টনারকে ঘিরে। নূহা এত ছোট ছিল যে কোন ভাবেই মেলানো সম্ভব ছিল না সেইসব কিছুর সাথে। কিন্তু সব কন্ডিশন ভুলে গিয়েছিলাম আমি। সেসব ভাবনা অবচেতন মন থেকে চেতন মনে উঠে আসার চেষ্টা করলেও এড়িয়ে যেতাম। বিয়ের সিদ্ধান্ত নেবার পর থেকে নিয়ে বিয়ের পর পাঁচ মাস পর্যন্ত আমার ধারণা ছিল নূহার বয়স কম হলেও ভীষণ সিরিয়াস টাইপের মেয়ে। ভীষণ খুশি ছিলাম আমি নূহার স্বভাবের মধ্যে শান্ত, স্বিগ্ধ, গাম্ভির্যতা দেখতে পেয়ে। বিয়ের আগে নূহার সাথে আমার কথাবার্তা যতটুকুই হয়েছিল কিছুটা ফোনে এবং বাকি সবটা মেইলের মাধ্যমে হয়েছিল। যেহেতু প্রচুর পড়াশোনা করতো নূহা। ওর চিন্তা ভাবনা ভীষণ রকম শক্তিশালী ছিল। আমার মনে নূহার প্রতিচ্ছবিটা তাই খুব পাওয়ার ফুল ছিল। আমাদের বিয়ের আগে যে এক্সিডেন্টটা করেছিল নূহা। সুস্থ হয়ে সেটার প্রভাব থেকে পুরোপুরি বের হতে পাঁচ মাসের মতো লেগে গিয়েছিল ওর। এই পাঁচ মাস খুবই সমঝদার, অতি শান্ত, অতি বাধ্য একটা মেয়ে হিসেবেই পেয়েছিলাম ওকে। এরপর নূহা রিয়েল নূহাতে রূপান্তরিত হয়ে গিয়েছিল।

ইমাদ, ইফতি, নাভীন হেসে ফেললে। জাওয়াদও হেসে বলল, আমি বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যেতাম ওর কর্মকান্ড দেখে, কথাবার্তা শুনে। সারাটা ক্ষণ ফান নিয়ে ব্যস্ত থাকতো। ফান অনেকটা অক্সিজেনের মতো ছিল নূহার কাছে। এক মূহুর্ত ফান ছাড়া থাকতে পারতো না। আমরা যখন একাকী থাকতাম নাম ধরেই ডাকতো আমাকে। কিন্তু পরিবারের কারো সামনে এক লাইন কথা বলার সময় পাঁচবার ভাইয়া ডাকতো। বাইরে কোথাও গেলেও ভাইয়া ভাইয়া করতো সবার সামনেই। খুব শখ করে হয়ত ওর জন্য একটা গিফট কিনে আনতাম। কিছুক্ষণ পরই হয়তো দেখতে পেতাম সেটা তাসমিয়া পড়ে ঘুরছে। এককথায়, ওর কোনকিছুই আমার বোধগম্য হতো না ঐ সময়টাতে। আমি রুমের কোনকিছু এলোমেলো, অগোছালো দেখতে পারিনা। কিন্তু নূহার অভ্যাস ছিল বইখাতা পুরো রুমে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখার। জামাকাপড় গুছিয়ে রাখা তো দূরের কথা, ভাঁজ পর্যন্ত করতো না। সব গোল করে প্যাঁচিয়ে ঢুকিয়ে রাখতো। নিজের আলমারি জ্যাম করে আমারটাতেও একই কান্ড করতো। একদিন খানিকটা বিরক্ত হয়েছিলাম। ব্যাস, নিজের সবকিছু নিয়ে আমার রুম থেকে ওর রুমে চলে গিয়েছিল। আমাকেই তখন যেয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হয়েছিল। একে তো নূহা কষ্ট পাবে এমনটা চাইতাম না। তারউপর মাদার গ্রুপ আর ফাদার গ্রুপে সওয়াল-জবাব সেশনের ভয় তো ছিলই। সবকিছু মিলিয়ে আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ় অবস্থায় দন্ডায়মান ছিলাম। আমার সামনে তখন একটাই পথ ছিল। নূহা যেমন ওকে সেভাবেই মেনে নেয়া। তাই নিজের সমস্ত অপছন্দ ভুলে গিয়ে নিজেকে নূহার রঙে রাঙিয়ে নিয়েছিলাম। বিরক্ত না হয়ে ওর ফান গুলো বোঝার চেষ্টা করতে শুরু করলাম। ধীরে ধীরে একটা সময় উপভোগ করতেও শুরু করেছিলাম। এবং খুব দ্রুতই আমিও ওর মতো ফানী ক্যারেকটারে পরিণত হয়েছিলাম। আমি কখনোই এতটা হাসিখুশি ছিলাম না। ফান জিনিসটা আমার স্বভাব বিবর্জিত ছিল ধরতে গেলে। কিন্তু যেদিন থেকে আমি নূহার সাথে কথা বলতে শুরু করেছিলাম। সেদিন থেকেই নিজের তৈরি কঠিন বাস্তবতার বোরিং জগত থেকে একটু একটু করে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছিলাম। নানান কারণে জীবনে আমাকে অনেক জটিলতা, অনেক সমস্যা ফেস করতে হয়েছিল। যারফলে, খানিকটা যান্ত্রিকতা ঢুকে পড়েছিল মনের ভেতর। নূহার ফান চিমটার মতো আমার মনের ভেতর থেকে সমস্ত যান্ত্রিক অনুভূতি টেনে টেনে বাইরে বের করে ফেলে দিয়ে, সেসব জায়গাতে রাশি রাশি আনন্দময়তা ভরে দিয়েছিল। আমি বদলে যেতে শুরু করেছিলাম একটু একটু করে।

ইফতি হেসে বলল, আমরাও তখন টের পেয়েছিলাম আমাদের ভাইজান যে বদলে যাচ্ছেন। আমি তোমাকে এত বেশি ভয় পেতাম ছোটবেলায়, তুমি যখন দেশে আসতে সারাদিন নিজের রুমে বসে থাকতাম। বড় হবার পরেও এই ভয়টা অব্যহত ছিল। আগের সেই ভাইজানের সাথে এভাবে বসে গল্প করার কথা চিন্তাই করতে পারি না আমি।

নিজেকে ঘিরে তৈরি করা কাঠিন্যের বলয় থেকে যখন বেড়িয়ে আসতে শুরু করেছিলাম। তখন আমিও তোমাদের সাথে আমার এই বিশাল দুরুত্বটাকে উপলব্ধি করতে শুরু করেছিলাম। এবং তোমাদের সাথে অপ্রয়োজনীয় দুরুত্ব, মনের অকারণ ভীতি দূর করার ব্যাপারে সচেষ্ট হয়েছিলাম। আসলে এই ভুলটা অনেকেরই হয়। আপনজনদের কল্ল্যাণকামীতার লক্ষ্য ছুটতে ছুটতে, কখন যে সেই আপনজনদের কাছের থেকে দূরের কেউ হয়ে যায় টেরই পায়না। এমন একটা সময় গিয়ে বুঝতে পারে তখন দুরুত্ব কমানোটা অনেক জটিল হয়ে দাঁড়ায়। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আমার প্রতি খুব বেশি মেহেরবান বলেই হয়তো সম্পর্কের বন্ধনগুলো হাত থেকে ছুটে যাবার আগেই আমার মধ্যে উপলব্ধি জাগ্রত হবার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। যাইহোক, এসব কথা তোমাদের সাথে শেয়ার করার কারণ একটাই। সেটা হচ্ছে, স্ত্রীদেরকে জীবনসঙ্গিনী, অর্ধাঙ্গিনী, সবচেয়ে আপন ইত্যাদি অনেক কিছু মুখে বললেও, অন্তরের গহীন থেকে সবসময় হয়তো এমনটা ফিল করি না আমরা। নূহার সাথে বিয়ে না হলে আমিও হয়তো এই জিনিসটা এভাবে ফিল করতাম না। নূহার জন্য আমার স্যাক্রিফাইস সীমাহীন ছিল। নূহাকে ভালো রাখার ব্যাপারে আমি সর্বদা সজাগ, সচেতন থাকতাম। কারণ ওয়াইফ হবার আগেও নূহা আমার সবচেয়ে আদরের কেউ ছিল। নূহাকে কষ্ট দেয়া থেকে বিরত থাকার আপ্রাণ চেষ্টা করতাম। কারণ ওর কষ্ট আমাকে ওর চেয়েও বেশি ব্যথিত করতো। আবার এই চিন্তাও কাজ করতো। যদি বাবা-মামণি জানতে পারেন আমি নূহাকে কষ্ট দিয়েছি। খুব বেশি ব্যথিত হবেন। আমি নিজের আগে নূহার সুখ-স্বাচ্ছন্দের চিন্তা করেছি। ক্লাস থেকে ফিরে নূহার রান্না করতে কষ্ট হবে ভেবে আমি ডিউটি থেকে এসে রান্না করেছি। নূহার পড়াশোনায় যাতে কোন ক্ষতি হতে না পারে সেজন্য ঘরের সমস্ত কাজ দুজন মিলে করেছি। এমন জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আমি জীবনসাথীর ভূমিকা পালন করার ব্যাপারে সতর্ক থেকেছি। আমার আর নূহার সম্পর্কটা আসলে শুধু স্বামী-স্ত্রীর ছিল না কখনোই। তবে নূহা আর আমার বিয়ে হবার কারণে দাম্পত্য জীবন, স্বামী-স্ত্রীর বন্ধন, সংসার জীবনে পরিবারের ভূমিকা ইত্যাদি ক্ষেত্রে আমার চিন্তার দিগন্ত প্রসারিত হয়েছিল অনেকখানিক। আমি যেভাবে নূহার খেয়াল রাখতাম। চাইতাম আমার আশেপাশের সবাইও এমনি করে নিজ নিজ স্ত্রীর খেয়াল রাখুক। আমার সারাক্ষণ মনেহতো নূহার জন্য তো আমি এইসব কিছু করবোই। নূহাকে তো আমি সমস্ত দুঃখ-কষ্ট-ব্যথা-বেদনা থেকে আড়াল করে রাখবোই। পরিবার ও পরিবারের বাইরে সবাই যাতে নূহাকে ভালোবাসে, ওর কদর করে সেই খেয়াল তো আমাকেই রাখতে হবে। ওর ভুলগুলো, দোষগুলোকে যাতে কেউ ইস্যু বানাতে না পারে। সেই ব্যবস্থাও তো আমাকেই করতে হবে। ওকে ঢেকে রাখার দায়িত্ব তো আমারই। হ্যা, এটা ঠিক যে নূহার প্রতি আমার এমন ভাবনার পেছনে আমাদের অতীত বন্ধনের অবদানই বেশি ছিল। কিন্তু স্বামী-স্ত্রীর বন্ধন তো প্রকৃত পক্ষে এমনটাই হওয়া উচিত। তাই না?

ইফতি হেসে বলল, এইসব কিছু এমন ভাবে উপলব্ধি করার জন্য নূহার সাথে তোমার বিয়েটা আসলেই অনেক জরুরি ছিল। তা না হলে আমরা এমন আনন্দময় দাম্পত্য জীবনের চিত্রটি কোথায় পেতাম?

জাওয়াদ হেসে বলল, আলহামদুলিল্লাহ। মাঝে মাঝে আমারো এমনটাই মনেহয়। যাইহোক, তোমাদের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করি করো। তোমাদের তিনজনেরই মূল সমস্যা হচ্ছে নিজ নিজ স্ত্রীকে ঘিরে তোমাদের এক্সপেক্টেশন। তোমরা যেভাবে চাইছো ওরা সেভাবে চলছে না। আবার ওরা যেভাবে চাইছে তোমরা সেভাবে চলছো না। যারফলে, মনোমালিন্য হচ্ছে উভয়ের মধ্যে। আমি যেদিন বুঝতে পেরেছিলাম সমস্ত রিলেশনে তিক্ততা সৃষ্টির অন্যতম প্রধান কারণ এক্সপেকটেশন। সেদিন থেকে অন্যদের প্রতি নিজের এক্সপেকটেশনের রাশ টেনে ধরেছিলাম। কোন মানুষের পক্ষেই আসলে অন্যের সমস্ত এক্সপেকটেশন পূরণ করা সম্ভব নয়। কারণ সব মানুষের ন্যাচার মূলত এক রকম হলেও, প্রত্যেকের নিজ নিজ অভ্যাস-বদভ্যাস তাদেরকে একে অন্যের থেকে আলাদা করে। আর মানুষের অভ্যাস-বদভ্যাস নির্ভর করে তার লাইফ স্টাইলের উপর। যেহেতু প্রতিটি মানুষের সফর আলাদা, তাদের চলার পথও আলাদা। আবার সবার উপরেই তার নিজ নিজ পথের প্রভাব পরবে এটাই স্বাভাবিক। তাই অন্য কেউ যদি তার চলার পথের ক্যানভাসে আমাকে আঁকে সেই ছবি যেমন ঠিক হবে না। তেমনি আমার চলার পথের ম্যাপ অনুযায়ী অন্যেরা চলবে এমন আশা করাটাও বোকামী। কিন্তু এই বোকামীটাই আমরা অহরহ করি। অন্যদের মধ্যে নিজেদের চাওয়ার প্রতিচ্ছবি দেখতে চাই। তাদেরকে নিজের ইচ্ছে মতো, পছন্দ মতো পেতে চাই। আবার অন্যরাও ঠিক এমনটাই আশা করে আমাদের ক্ষেত্রে। পরস্পরের আশার মধ্যে তখন শুরু হয় মল্ল যুদ্ধ। অন্যেকে হারিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার যুদ্ধ। জোর করে, বাধ্য করে অন্যেকে নিজের মনের মতো করার যুদ্ধ। অন্যের ইচ্ছে, ভালো লাগা, স্বভাব ইত্যাদি বোঝার বিন্দুমাত্র চেষ্টা না করে, নিজের ইচ্ছে, ভালো লাগা চাপিয়ে দেবার যুদ্ধ। এই যুদ্ধে কেউ যদি অন্যেকে হারিয়ে নিজেকে বিজয়ী মনে করেও থাকে, মূলত হারটা উভয় পক্ষেরই হয়। তারচেয়েও কষ্টের হচ্ছে, মূল হারটা হয় সেই সম্পর্কের যার দ্বারা তারা আবদ্ধ থাকে।

নাভীন বলল, ভাইজান আমরা কখনোই চাই না আমাদের মনোমালিন্য প্রভাব আমাদের সম্পর্কের বন্ধনের উপর পড়ুক।

জাওয়াদ হেসে বলল, এমনটা আসলে কেউই চাইতে পারে না। তবে শুধু চাইলে হবে না। চাওয়াটাকে কাজে রুপান্তরিতও করতে হবে। আমি যেমন হেরে যেতে চাই না। হারতে দিতে চাই না জীবনকে ঘিরে আবর্তিত কোন বন্ধনকে। তাই আমার ভালোবাসায় কোন কন্ডিশন নেই। অকারণ কোন এক্সপেকটেশন নেই। তবে নিজেই নিজের সাথে করা ওয়াদা আছে। নিজের সবটুকুন দিয়ে আমার জীবনকে ঘিরে আবর্তিত মানুষগুলোকে সুখী করার আন্তরিক ইচ্ছে আছে। কারণ আমাদের সবার জীবন পরস্পরের সাথে সম্পর্কৃত। কাউকে অসুখী রেখে আমার একার পক্ষে সুখে থাকা সম্ভব হবে না। আবার সম্পর্কের বন্ধনে একে অন্যের সমস্যা বা ঘাতটিগুলো নীরবে মেনে নেয়াটাও বুদ্ধিমত্তার পরিচয় নয়। কেননা এতে একটা সময়ে গিয়ে ধৈর্য্যের বাঁধ যাবার সম্ভাবনা একশো পার্সেন্ট। বুদ্ধিমত্তা তাই সমস্যা ও ঘাটতির ক্ষেত্রে পরস্পরের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়া। কারো সমস্যাকে চুপচাপ মেনে না নিয়ে কিংবা অভিযোগ না করে বরং সেটা থেকে তাকে বেরিয়ে আসতে সহায়তা করা। অর্থাৎ, কো-অর্ডিনেশন। সম্পর্কের বন্ধনকে সুন্দর রাখার ব্যাপারে কম্প্রোমাইজ শব্দটার ব্যাপক প্রচলন আমাদের মধ্যে। যেমন, বিয়ের প্রসঙ্গ উঠলেই সবার আগে বলা হয় যে, বিয়ে মানেই কম্প্রোমাইজ। কিন্তু আমার সবসময় মনেহয়েছে, বিয়ে মানে কম্প্রোমাইজ নয়, বরং কো-অর্ডিনেশন। কো-অর্ডিনেশনের ডেফিনেশন নিশ্চয়ই জানো তোমরা?

নাভীন বলল, জ্বি ভাইজান। দ্য অর্গানাইজেশন অফ দ্য ডিফারেন্ট অ্যলিমেন্ট অব অ্য কমপ্লেক্স বডি অর অ্যাক্টিভিটি সো অ্যাজ টু অ্যনাবল দেম টু ওয়ার্ক টুগেদার অ্যাফেক্টিভলি।

ঠিক তেমনি দুটি মনের যথাযথ সমন্বয় দাম্পত্য সম্পর্ক কিংবা জীবনে বিদ্যমান যে কোন সম্পর্কের সফলতাকে নিশ্চিত করে দিতে পারে বলেই মনেহয়। সম্পর্কের বন্ধনে কোন অবস্থাতেই কো-অর্ডিনেশন বিঘ্নিত হওয়া চলবে না। সুন্দর সম্পর্ক নির্মাণের পথে ব্যক্তিগত সমস্যার কোন জায়গা নেই। দাম্পত্যের কথাই ধরো। দুজন মানুষ যেদিন থেকে একে অন্যের হয়ে যায়। সেদিন থেকে উভয়ের সমস্ত সমস্যাই পরস্পরের। তাই কোন সমস্যা এলে অবশ্যই দুজন মিলে ফাইট করতে হবে। তবে সেই ফাইট হতে হবে সমস্যার বিরুদ্ধে, একে অন্যের বিরুদ্ধে নয়। আর এমনটা সব সম্পর্কের ক্ষেত্রেই। কারণ দুজন মানুষ যখন একজোট হয়ে কোন সমস্যাকে ফেস করে। তখন সেই সমস্যার সাধ্য থাকে না তাদেরকে বেশিক্ষণ ফেস করার। তাই সবার আগে তোমাদের নিজ নিজ চিন্তার গতি প্রবাহ ও দৃষ্টিভঙ্গি সঠিক করার চেষ্টা করো। চারপাশের মানুষগুলোকে তাদের অবস্থান থেকে, তাদের মতো করেই আপন করে নাও, ভালোবাসার চেষ্টা করো। তোমার মনের মতো হলে কিংবা তোমার কন্ডিশন পূরণে সক্ষম হলেই তুমি কাউকে ভালোবাসবে। এটা খুবই সংকীর্ণ একটা চিন্তা। তারচেয়েও বড় কথা হচ্ছে, কেউ যখন তোমার কারণে বাধ্য হয়ে নিজেকে বদলাবে। তার ভালোবাসা নিজস্ব গতিশীলতা হারাবে। মানুষ তখনই তার বেষ্ট পারফর্মেন্স দিতে পারে। যখন সে নিজের মাঝে থাকে। তাই কাউকে বদলানোর চেষ্টা করো না কখনোই। তেমনি কারো জন্য নিজেকেও বদলাতে যেও না। বরং নিজ নিজ স্বকিয়তা ধরে রেখে সেতু বন্ধনের চেষ্টা করো।

ইফতি বলল, আমাদের মূল সমস্যাটা আসলে এখানটাতেই হয়েছে। আমরা সবাইকে নিজের মতো করে পেতে চাই। নয়তো ছাড় দেবার অপশন বেছে নেই। কিন্তু সেতু বন্ধনের চেষ্টা খুব কম সময়ই করি।

জাওয়াদ হেসে বলল, হুম! অন্যের প্রতি এক্সপেক্টেশন আছে, নিজের কম্প্রোমাইজ করার ইন্টেনশন আছে। কিন্তু কো-অর্ডিনশন নেই। ছোটবেলা থেকেই নূহার চরিত্রের যে কয়টা দিক আমাকে খুব আকর্ষিত করতো। তার মধ্যে একটা ছিল ওর কম্প্রোমাইজিং স্বভাব। এর অন্যতম কারণ হয়তো ছিল নূহা বেশ শান্তি প্রিয় মানুষ। অকারণ ঝামেলা, হৈচৈ পছন্দ করতো না। ওর কারণে কোন সমস্যা তৈরির সম্ভাবনা দেখলে, সেই কারণটাকেই দূরে সরিয়ে দিতো। তা সেটা ওর যতই প্রিয় বা পছন্দনীয় হোক না কেন। আমি খেয়াল করতাম যখনই নূহার মনেহতো কোন কিছু ছেড়ে দিলেই সমস্যাটা মিটে যাবে। এক মূহুর্ত দেরি না করে সাথে সাথে সেটা ছেড়ে দিতো। যেমন, মামণি হয়তো পাঁচটা ড্রেস কিনে এনেছে। ডিজাইন একই কিন্তু কালার ভিন্ন। দেখা যেত একটা ড্রেস নিয়েই হয়তো সমবয়সী বোনদের মধ্যে দুইজন টানাটানি করছে। নূহা কখনোই এই কাজে অংশগ্রহণ করতো না। বরং, সবাই নিজেদের পছন্দেরটা নিয়ে যাবার পর যেটা থেকে যেত সেটাই খুশি মনে তুলে নিতো। এই ছেড়ে দেয়ার ব্যাপারটা কিন্তু আমরা নূহাকে বুঝিয়ে বলিনি বা শেখায়ওনি। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার দেয়া স্বভাবগত বৈশিষ্টের কারণেই হয়তো নিজ থেকেই বুঝে নিয়েছিল, ছেড়ে দেয়া, মানিয়ে নেয়ার মাঝেই শান্তি নিহিত। আমাদের বিয়ের পরেও নূহার মধ্যে এই স্বভাবটা পুরোমাত্রায় বিদ্যমান ছিল। আমি আমি যখন দেখতাম প্রচন্ড অপছন্দ করা স্বর্ত্বেও নূহা কোন কিছু শুধুমাত্র আমার খুশির জন্য করছে। আমার খুব কষ্ট হতো। আমি ওকে তখন বলেছিলাম, যদি আমাকে ইম্প্রেসড করতে চাও, তাহলে আগে নিজেকে নিজে ইম্প্রেসড করার চেষ্টা করো। আইমিন, যেমন আছো ঠিক তেমনই থাকো। কারণ নিজেকে নিয়ে খুশি এবং তৃপ্ত মানুষই অন্যেকে সুখ ও প্রাপ্তি দিতে সক্ষম সত্যিকার অর্থে। তাই অন্যের অপছন্দ বা অপছন্দের মূল্যায়নে নিজেকে কখনোই বদলানো উচিত নয়।

অথচ আমরা সবার আগে অন্যকে বদলানোর চেষ্টাটাই করি। নয়তো অন্যের জন্য নিজেকেই বদলে ফেলি। বেশ গভীর নিঃশ্বাস ফেলে বললো ইমাদ।

কারণ আমাদের কাছে সুখে ও শান্তিতে থাকার ফর্মূলা হচ্ছে, স্যাক্রিফাইস এন্ড কম্পোমাইজ। অথচ সুখে ও শান্তিতে থাকার জন্য দরকার কো-অর্ডিনেশন। দুজন মানুষের মানসিক সমন্বয়ের জন্য সর্বপ্রথম প্রয়োজন নিজ নিজ দোষ-ত্রুটি সমূহকে মেনে নেয়া। যেহেতু এই জগতে কেউই নিখুঁত কিংবা ভুলের উর্দ্ধে নয়। তাই নিজের অপূর্ণতা সমূহকে মেনে নেবার সাথে সাথে, সেসবের দ্বারা সংঘটিত ভুলগুলোকেও ক্ষমা করে দিতে হবে। এতে একদিকে যেমন নিজের ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে সামনে এগিয়ে চলাটা সহজ হয়ে যাবে। তেমনি একই সাথে অন্যদের ভুল-ক্রুটি মেনে নেয়াটাও সহজ হবে। আমরা অন্যদের ভুলগুলোকে মেনে নিয়ে, ক্ষমা করে দিয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে ব্যর্থ হই, কারণ নিজেদের ভুলগুলোকে মনে রাখি না কিংবা ভুলে যাই আমরাও যে ভুলের উর্দ্ধে নই। অথচ একটি সম্পর্ক খুব সহজ ও সুন্দর হয়ে যায় যদি নিজ নিজ দোষত্রুটি মেনে নেয়া যায়। তাহলে আর জোর করা মানিয়ে নেয়ার দরকার পরে না। বরং খুশি মনেই একে অন্যের সবকিছু গ্রহণ করা সম্ভব হয় এবং যে যেমন তাকে সেভাবেই ভালোবাসা যায় নিজের সবটুকুন দিয়ে। আমি তাই সবকিছুর সাথে মানিয়ে নেয়ার, মানিয়ে চলার স্বভাবের তীব্র বিরোধীতা করি সবসময়ই। আসলে দাম্পত্য সমস্যার মূল সমস্যাগুলোর অন্যতম একটি হচ্ছে, একে অপরকে বদলানোর চেষ্টা করা। যে যেমন তাকে সেভাবে মেনে না নিয়ে, তাকে নিজের মনের মতো করার চেষ্টা করা। যারা এমন করেন তারা ভুলে যান কিংবা জানেনই না, মানুষ কোন রঙ নয় যে অন্য রঙয়ের সংস্পর্শে বদলে যাবে। যদি কোন ব্যাপারে কেউ নিজ থেকে পরিবর্তন হতে না চায়, অন্য কেউ যত ফমূলাই এপ্লাই করুক না কেন, শত চেষ্টা করেও তাকে বদলাতে পারে না। তবে হ্যা তাকে নিজ থেকে বদলানোর ব্যাপারে আগ্রহী করে তোলার চেষ্টা করা যায়। কিন্তু সেজন্য প্রথমে তাকে বোঝাতে হবে কেন তার বদলানো উচিত। এবং বদলানোর সেই সফরে তার সাথী হতে হবে। কারণ কোন স্বভাবের পরিবর্তন কতটা কঠিন সেটা নিজের কোন স্বভাব পরিবর্তনের চেষ্টা করলেই টের পাওয়া যায়।

ইফতি বলল, আমরা এভাবে চিন্তাই করতে পারি না। এটাই হচ্ছে মূল সমস্যা ভাইজান।

আগে চিন্তা করতে পারোনি। কিন্তু এখন থেকে এভাবে চিন্তা করার চেষ্টা করো। তাহলেই দেখবে অকারণ মনোমালিন্য কমতে শুরু করেছে ইনশাআল্লাহ।

ইফতি, ইমাদ আর নাভীন তিনজনই একসাথে বলল, জ্বি ভাইজান ইনশাআল্লাহ।


জাওয়াদ হেসে বলল, তাহলে চলো এখন উঠি আমরা। আমাকে আবার হসপিটালে যেতে হবে কিছুক্ষণের মধ্যেই।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন