রবিবার, ৩১ জানুয়ারী, ২০১৬

নিয়তি......১৪




ফজরের নামাজের পর ছেলের সাথে বাগানে বসে চা পান করাটা প্রতিদিনের অভ্যাস ছিল খাদিজা বেগমের।  চা-নাস্তা করতে করতে মা-ছেলে মিলে গুটুর গুটুর গল্প করতেন। পরিবারের কোথায় কি হচ্ছে ছেলেকে না বলে  যেমন খাদিজা বেগম শান্তি পেতেন না, তেমন সারাদিন কোথায় কি ঘটেছে, কি করেছে সেসব মানে বলতে খুব ভাল লাগতো জাওয়াদের। শান্তি মতো গল্প করার জন্য মা-ছেলে তাই ফজরের পরের এই  সময়টাকে বেছে নিয়েছিল। অন্য আর সব দিনের মতো সেদিনও চা-নাস্তা নিয়ে বাগানে বসেছিল দুজন। মাকে চুপচাপ দেখে জাওয়াদ বলল, তুমি  কি কোন কারণে চিন্তিত মা?

আমি তোর বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে ভাবছি। গত পাঁচ বছর ধরে পুরো পরিবার তোর পিছনে লেগে আছে বিয়ের জন্য। তোর একই জিকির এখন না এখন না। হঠাৎ এমন কি হলো যে দুই সপ্তাহের মধ্যে বিয়ের ব্যবস্থা করতে বললি।

জাওয়াদ হেসে বলল, মা বিয়ে নারী-পুরুষের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ একটি অধ্যায়। যে অধ্যায়ে বৃহত্তর  জীবনের সূচনা হয়। এবং সেই সাথে বিয়ে বিশাল বড় একটা দায়িত্ব। এখন আমি যা ইচ্ছা যেভাবে ইচ্ছা সময় ব্যয় করতে পারি, কিন্তু বিয়ের পর স্ত্রীকে সময় দেয়া আমার অত্যাবশ্যকীয় দায়িত্বের মধ্যে পড়বে। সে সময় এতদিন আমার ছিল না। এখন কাজের চাপ একটু কমেছে তাই আমি বলেছি বিয়ের ব্যবস্থা করতে।

কিন্তু নূহাকে বিয়ে করতে চাইবার পেছনে কারণ কি? তোর উপরে কেউ কোন কথা বলে না তাই তুই যখন বলেছিস কেউ আর আপত্তি করেনি কিন্তু পরিবারের সবাই খুব অবাক হয়েছে তোর এই সিদ্ধান্তে। সত্যি বলতে আমি নিজেও ঠিক বুঝতে পারছি না তোর এমন সিদ্ধান্তের কারণ।

আমি নূহাকে বিয়ে করতে চেয়েছি কারণ তোমার ওকে পছন্দ।

তোকে কে বলেছে একথা?

তুমি নিজেই বলেছো।

অবাক কণ্ঠে খাদিজা বেগম বললেন, আমি? কবে? কখন বলেছি?

মা তুমি আমার সাথে পরিবার বিষয়ে যত কথা বলো তার সেভেনটি ফাইভ পারসেন্ট কথা  নূহাকে নিয়ে বলো। নূহা এটা করেছে, নূহা  ওটা করেছে। নূহাকে ছাড়া বাড়ির কোন কাজ ঠিকমতো হয় না। ভাইবোনদের সব সমস্যা নূহা একাই সমাধান করে, ইত্যাদি ইত্যাদি।  

করে বলেই তো বলি। আমি তো আর বানিয়ে বানিয়ে কিছু বলিনা তোকে।

জাওয়াদ হেসে বলল, বানিয়ে বলেছো সেটা তো আমি বলিনি। আমি বরং তোমার বলা কথাগুলোকে নিলিয়ে দেখার চেষ্টা করতাম সময় সুযোগ হলেই। এবং যখনই তোমার কথা সাথে কিছু মিলিয়ে দেখতে চেয়েছি নূহাকে ঘিরে বলা তোমার সব কথাকেই সত্য হিসেবেই প্রমাণিত পেয়েছি। মা বিয়ের কথা ভাবতে শুরু করার পর থেকে আমি এমন কাউকেই সাথী হিসেবে পেতে চেয়েছি যে আমাদের পরিবারের সবার মনের মতো হতে পারবে। সবাইকে আপন করে নিতে পারবে। আর সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ আমার মার যাকে অবশ্যই পছন্দ হতে হবে। আর নূহা ছাড়া বাইরের তো দূরের কথা আমাদের বাড়ির অন্য কোন মেয়ের ব্যাপারে তোমার কণ্ঠে মুগ্ধতার ছোঁয়া অনুভব করিনি কখনোই।  

খাদিজা বেগম হেসে বললেন, আমার সত্যিই নূহাকে ভীষণ পছন্দ। কিন্তু তোদের বয়সের পার্থক্য  এতো বেশি যে মনের ইচ্ছেটাকে মনেই চেপে রেখেছিলাম। কারণ আমার ধারণা ছিল পরিবারের আর সবাই রাজী হলেও তুই কখনোই রাজী হবি না। শুনলেই বিরক্ত কণ্ঠে বলবি, মা তুমি পাগল হয়ে গেছো। দুনিয়াতে কি মেয়ের অভাব নাকি যে আমি ঐ বাচ্চা মেয়েকে বিয়ে করবো। এখন তুই নিজ থেকেই রাজী হয়েছিস এরচেয়ে বড় আনন্দের আমার কাছে আর কিছুই না।

আলহামদুলিল্লাহ্‌! আমি তোমাকে এই আনন্দটুকুই দিতে চেয়েছি মা।

শুধু আমার আনন্দের জন্য বিয়ে করছিস তুই? অন্যকোন কারণ নেই?

জাওয়াদ হেসে বলল, অবশ্যই আছে। মা আমি চাইলেই যে কাউকে আমার জীবনের সাথে জড়াতে পারিনা। কারণ আমার জীবনের সাথে অনেক কিছু রিলেটেড। আমার ব্যক্তিজীবন, পারিবারিক জীবন, কর্মজীবন, সংগ্রামী জীবন। শুধু সৌন্দর্য দেখে বা গুণের কথা শুনেই আমি কাউকে বিয়ে করতে পারিনা। আমার যাচাই করে দেখার প্রয়োজন ছিল নূহা সত্যিই আমার জীবনসাথী হবার যোগ্যতা রাখে কিনা।

তুই নূহাকে যাচাই করে দেখেছিস? কবে? কিভাবে? আমি তো কখনো তোদেরকে একসাথে কথা বলতে দেখিনি।

ভালো কথা মনে করেছো মা। আমি নূহার সাথে কথা বলতে চাইছি। সবকিছু মিলিয়ে ও নিশ্চয়ই খুব আপসেট। তুমি কি ব্যবস্থা করতে পারবে?

ব্যবস্থা করার কি আছে? বোস আমি নূহাকে পাঠাচ্ছি এখনই।

না আমি বাইরে কোথাও কথা বলতে চাচ্ছি। আজ আমি ফ্রী আছি চলো সবাই মিলে ছোট খালামনির বাড়ি থেকে ঘুরে আসি। সবাই মিলে বেড়ানোও হয়ে যাবে আর এক ফাঁকে আমি নূহার সাথে কথা বলে নেবো।

ঠিকআছে আমি জানিয়ে দিচ্ছি সবাইকে। কিন্তু তুই নূহাকে যাচাই করলি কিভাবে?

তুমি সারাক্ষণ যেসব প্রশংসার বাণী বলতে সেগুলোকেই আমি মিলিয়ে দেখছি। মানে নূহা সত্যিই পরিবারের সবার প্রতি এতোটা দায়িত্বশীল কিনা। এবং সবসময়ই দেখেছি তোমার কথাকে সঠিক হতে। যাচাই বলতে এটাকেই বুঝিয়েছি।

সেটাই বল আমি তো আরো ভাবছিলাম তোদের বুঝি কথাবার্তা হতো।

কি যে সব বলো না মা। ঐ গেদু বাচ্চার সাথে আমি কি কথাবার্তা বলবো?

গেদু বাচ্চাকে বিয়ে তো ঠিকই করতে যাচ্ছো। তবে তোকে আমি ভরসা দিচ্ছি আমার পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করে তোর মনের সব স্বপ্নই পূরণ হবে ইনশাআল্লাহ। হাসতে হাসতে বললেন খাদিজা বেগম।

জাওয়াদ হেসে বলল, ইনশাআল্লাহ তুমি যখন বলছো অবশ্যই পূরণ হবে। কারণ মা’র দোয়া যখন আকাশে যায়, আকাশ থেকে তখন রাহমাতের বারিধারা বর্ষিত হয় সন্তানদের উপর। এবং আমিও তোমাকে ভরসা দিচ্ছি তোমাদের সবার আদরের ছোট্ট রাজকন্যাকে গেদু বাচ্চা থেকে আরেকটু বড় হয়ে নেবার সময় দেয়া হবে। আমি আসলে চাইছি আমাদের বিয়েটা হয়ে যাক তড়িঘড়ি করেই। কিন্তু ম্যারেড লাইফ এখনই কন্টিনিউ করতে চাইছি না।    

সেটাই মনেহয় ভালো হবে। তোর আজাদ চাচ্চু আর সুরাইয়া খালামণি মুখে বলছে না কিন্তু অনেক টেনশন করছে সবকিছু মিলিয়ে।

জাওয়াদ হেসে বলল, ইনশাআল্লাহ চাচ্চু আর খালামণির সাথে কথা বলে আমি উনাদের মনের টেনশন দূর করার চেষ্টা করবো।  

তাহলে তো খুবই ভালো হবে। জানিস তুই যখন আমাকে বলতি মা আমি ফুলের মতো কোমল মনের কোন মেয়েকে জীবনসাথী হিসেবে চাই। যার মন সুন্দর সুন্দর স্বপ্ন দেখতে জানবে। যার হাসিতে থাকবে প্রশান্তি, অনাবিল প্রফুল্লতা। যে আমার হাত ধরে নিয়ে যাবে সুখের জগতে। জীবনের কঠিন বাস্তবতার মাঝে যে হবে আমার একটি অবলম্বন, একটি ভরসা। যে মেয়ে জানবে এই পৃথিবীতে কোন কিছু নিজ থেকে আসে না তাকে জয় করতে হয়। যার দিকে তাকালে আমার মনেহবে যে সে আমাকে সারাজীবন সুখী রাখতে পারবে। যার ভালোবাসার পবিত্র সুবাস ছড়িয়ে পড়বে আমার জীবনের সর্বত্র। যে আমাকে করে তুলবে আরো মজবুত আর শক্তিশালী। আমার চোখের সামনে তখন নূহার চেহারাই ভাসতো ।

আলহামদুলিল্লাহ্‌! আল্লাহ যেন তোমার ধারণাকে সত্যিতে রূপান্তরিত করেন, এটা আমার প্রার্থনা মা। এখন যাও ফ্যামেলিকে জানাও যে আজ আমরা সবাই ঘুরতে যাবো। ছোট খালামনিকে আমি ফোন দিচ্ছি।

কি হলো আদীব্বা তুমি থেমে গেলে কেন? এরপর কি হলো বলো? অস্থির কন্ঠে বললো নাবিহা। আদী হেসে বলল, বলছি রে মা। একটু নিঃশ্বাস তো নিতে দাও।

আমাদের নিঃশ্বাস বন্ধ করে তুমি নিঃশ্বাস নিতে পারো না আদীব্বা। দিস ইজ নট ফেয়ার।

জিশানের কান টেনে দিয়ে আদী হেসে বলল, এরপর তো পরিবারের সবাই মিলে ছোট খালামণির বাড়িতে রওনা দিলো। সবার ইচ্ছেতে জাওয়াদ আর নূহাকে এক গাড়িতে উঠিয়ে দেয়া হলো। গাড়ির পেছনের সীটে নূহার বড় বোন রাহা এবং ছোট ভাই মৃদুলও বসেছিল। যাতে জাওয়াদ আর নূহা একদমই একা না থাকে সারা পথ। রাহা আর মৃদুল কানে হেড ফোন লাগিয়ে এমন ভান করেছিল যে তারা দুইজন নূহা আর জাওয়াদের কথা কিছুই শুনছে না। কিন্তু আসলে দুইজন সবই শুনেছে হেড ফোনের আড়ালে। তবে একসাথে গাড়িতে উঠে বসলেও অর্ধেক পথ চলার পরও সালাম বিনিময় ছাড়া নূহা আর জাওয়াদের মধ্যে আর কোন কথাই হয়নি। মাথায় ঢুকছিল না কিছুই কিন্তু বইয়ের মধ্যে মুখ গুঁজে বসে ছিল নূহা। কয়েকবার কথা শুরু করতে গিয়েও পারছিল না জাওয়াদ নূহার  অপ্রস্তুত অবস্থা দেখে। আরো কিছুটা সময় পার হোক আরেকটু রিলাক্স হয়ে নিক হৃদিতা ভেবে সেও চুপ থেকেছে। কিন্তু অর্ধেক পথ চলার পরও কোন পরিবর্তন না দেখে জাওয়াদের বোঝা হয়ে গেলো, এই মেয়ে সারা পথই এমন শক্ত হয়ে বসে থাকবে। সুতরাং কথা বলা তাকেই শুরু করতে হবে। কিন্তু কি বলবে নিজেও ঠিক বুঝতে পারছিলো না। আরো কিছুক্ষণ সময় নিয়ে বলল, মা বলছিলেন তুমি নাকি মনিষীদের বলে যাওয়া বাণী পড়তে খুব পছন্দ করো?    নূহা সাথে সাথে জবাব দিলো, জ্বী।

কেন?

ভালো লাগে।

কেন ভালো লাগে সেটাই তো জানতে চাইছি।

যুগে যুগে যেসব জ্ঞানী গুণীরা পৃথিবীতে এসেছেন তাদের বলে যাওয়া মূল্যবান কথাগুলোকেই মূলত আমরা বাণী বলি। জ্ঞানী গুনীদের বলে যাওয়া এসব কথা আমাদেরকে নতুন করে ভাবতে, স্বপ্ন দেখতে উদ্বুদ্ধ করতে পারে।

তোমাকে নতুন করে ভাবতে বা স্বপ্ন দেখতে উৎসাহ যুগিয়েছে এমন একটা বা দুটা বাণী বলো।

একটু ক্ষণ চুপ থেকে নূহা বলল, আমার যখন বারো বছর বয়স তখন সুইফটের একটা বাণী পড়েছিলাম-“ আমি চলে গেলে কেউ যদি না কাঁদে তবে আমার অস্তিত্বের কোন মূল্য নেই।” এই কথাটা  ইসলামকে বোঝার আগ পর্যন্ত আমাকে ভালো হবার, ভালো থাকার, ভালো কিছু করার উৎসাহ যুগিয়েছে। ছোট ছিলাম রিয়া বা লোক দেখানো ব্যাপারটা তো বুঝতাম না। এটার ভয়াবহতা সম্পর্কেও কোন ধারণা ছিল না। তাই সারাক্ষণ চেষ্টা করতাম কিভাবে চললে সবার চোখে সবচেয়ে ভালো হওয়া যায়। ইসলামকে বোঝার পর মানুষের মূল্যায়নকে তুচ্ছ জ্ঞান করলেও ভালো থাকার, ভালো করার ইচ্ছা ততোদিনে আমার মধ্যে দৃঢ়ভাবে বসে গিয়েছিলো। ভালো মুসলিম হতে যা আমাকে এখনো সহায়তা করছে বলে আমি মনেকরি।

মাশাআল্লাহ! তোমার কথা শুনে সত্যি আমি মুগ্ধ হয়েছি। আরো শুনতে চাই তোমার জীবনে বাণীর প্রভাব।

সাইরাসের একটা বাণী পড়েছিলাম-“ অন্যের দুর্ভাগ্য দেখে নিজে সাবধান হওয়া উচিত।” আমি বানীটা মেনে চলতে চেষ্টা করতাম। যখনই দুষ্টুমি করে রাহা, শাফা, মাহা বা অন্য কাউকে শাস্তি পেতে দেখতাম সাথে   সাথে ঐ ব্যাপারে সাবধান হয়ে যেতাম। পরিবারে যখনই কাউকে কোন সমস্যায় পড়তে দেখতাম ব্যাপারটা নিয়ে খুব ভাবতাম। যা আমাকে সাবধানী হবার শিক্ষা দিয়েছে। আর এখন যখন আমি কোন বাণী পড়ি বা শুনি সাথে সাথে সেটাকে ইসলামে কনভার্ট করে চিন্তা করি শরীয়তের ভিত্তিতে। অনেক সময় উপলব্ধি করতে পারি নতুন একটা দিক যা হয়তো কুরআনের একটা বিষয়কে নতুনভাবে অনুধাবন করায় আমাকে।

আলহামদুলিল্লাহ্‌! এমন সম্ভব হয় কারণ আল্লাহ তোমার মধ্যে চিন্তা এবং উপলব্ধির অসাধারণ ক্ষমতা দিয়েছেন। এই ক্ষমতা কম বেশি সব মানুষের মধ্যেই থাকে কিন্তু সবাই এটাকে কাজে লাগাতে পারে না। তুমি পারো দেখে ভীষণ ভালো লাগছে। ইনশাআল্লাহ ইসলামের সৌন্দর্যকে তুমি আরো ভালভাবে উপলব্ধি করতে পারবে এই চিন্তাশীলতার কারণে। আমার অবশ্য বাণীর প্রতি তেমন আগ্রহ নেই। তবে চানক্যর বলে যাওয়া একটা বাণী আমাকে খুব নাড়া দেয়। কোন বানীটা জানতে চাও?

জ্বী।

“চন্দন তরুকে ছেদন করলেও সে সুগন্ধ ত্যাগ করে না, যন্ত্রে ইক্ষু নিষ্পিষ্ট হলেও মধুরতা ত্যাগ করে না, যে সদ্বংশজাত অবস্থা বিপর্যয়েও সে চরিত্রগুণ ত্যাগ করে না।” এই বানীটা পড়ার পর আমার মনে হয়েছিলো যে, একজন মুসলিমকেও ঠিক এমন হতে হবে। অর্থাৎ, কোন অবস্থাই তাকে শরীয়তের সীমা লঙ্ঘন করতে উদ্বুদ্ধ করতে পারবে না। আমি সারাজীবন চেষ্টা করেছি এমন একজন মুসলিম হতে। যখনই কোন প্রলোভন হাতখানি দিয়েছে আমি নিজেকে বলেছি তুমি একজন মুসলিম। আর একজন মুসলিমকে কোন অবস্থাই শরীয়তের সীমা লঙ্ঘনে উদ্বুদ্ধ করতে পারেনা।

আমি যতটুকু জানি তুমি অবশ্যই তেমন একজন মুসলিম যারা অবস্থা বিপর্যয়েও চরিত্রগুণ ত্যাগ করে না।

জাওয়াদ হেসে বলল, আলহামদুলিল্লাহ্‌! কিছুক্ষণ নীরবতার পর, আমি জানি নূহা তোমার মনে অনেক প্রশ্ন  ঘুরছে আমাদের বিয়েকে কেন্দ্র করে। তুমি হয়তো জানো আমার কাছে পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপুর্ণ হচ্ছে আমার পরিবার। তুমি যেহেতু আমার পরিবারেই একজন তাই পরিবার কেন আমার কাছে এতটা বেশি গুরুত্বপুর্ণ তা বুঝিয়ে বলার প্রয়োজন নেই। আমি আসলে সবসময় এমন কাউকে বিয়ে করতে চেয়েছি যে আমার পরিবারকে আমার মতো করে ভালোবাসবে, পরিবারের জন্য যে কোন ত্যাগ স্বীকার করার জন্য প্রস্তুত থাকবে, যে আমার ব্যস্ততাকে বুঝবে, ইত্যাদি ইত্যাদি আরো যেসব চাহিদা ছিল আমার তেমন কাউকেই আমি খুঁজে পাইনি। আমার কাছে তাই একটাই চয়েজ ছিল। পরিবারের ভেতর থেকেই কাউকে বিয়ে করা।

জ্বী আমি বুঝতে পেরেছি।

কষ্ট পাওনি তো আমার কথাতে?

জ্বী না অকারণে কষ্ট তৈরি করার স্বভাব আমার নেই। আমি সবাইকে বুঝতে চেষ্টা করি, বুঝতে না পারলে চেষ্টা জারি রাখি কিন্তু কখনোই ভুল বুঝিনা।

আড়চোখে নূহার থমথমে চেহারাটা দেখে ঠোঁটে ঠোঁট চেপে হাসি চাপলো জাওয়াদ। তার জানা মতে কোন মেয়েই গুণসমূহকে ইগনোর করা হচ্ছে এটা সহজভাবে মেনে নিতে পারে না। আর তার পাশে যে কন্যাটি বসে আছে সে বিরাট গুণবতীও। তাই শুধু মাত্র পরিবারের সদস্য বলে জাওয়াদ তাকে বিয়ে করছে এই কথাতে ব্যথিত হওয়াটা স্বাভাবিক। সুতরাং, আহত যে খানিকটা নূহাও হয়েছে জাওয়াদের কথাতে এতে কোন সন্দেহ নেই। তবে আপাতত নূহাকে আর কিছু না বলে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে গাড়ি ছোটাল জাওয়াদ।  

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন