রবিবার, ৩১ জানুয়ারী, ২০১৬

নিয়তি......৬




দুলাভাইয়ের কি অবস্থা এখন?

প্রশ্ন শুনে চোখ তুলে মামার দিকে তাকালো জাওয়াদ। এরপর ফাইল বন্ধ করে এক পাশে সরিয়ে রেখে বলল, ইনশাআল্লাহ ঠিক হয়ে যাবেন বাবা। দোয়া করো বেশি বেশি করে। কারণ যখন দাওয়া ব্যর্থ হয়ে যায়, তখনো দোয়া কাজ করে।

দোয়া তো আমরা সবাই করছি সারাক্ষণ। তোর অপারেশন নেই আজ?

হুম, আধ ঘন্টা পর যাব। আচ্ছা মামা বাবার একচুয়েলি কি হয়েছিল? আইমিন, আমি কনফারেন্সে যাবার দিন তো একদম ফিট দেখে গিয়েছিলাম।

মাথা ঘুরিয়ে কেবিনের দরজা বন্ধ নিশ্চিত হয়ে নিয়ে আরমান সাহেব বললেন, নূহা কোথায়?  

তা তো সঠিক বলতে পারবো না। হয়তো বাচ্চাদের সাথে আছে। কেন?

কন্ঠস্বর এক ধাপ নামিয়ে আরমান সাহেব বললেন, গত সপ্তাহে নূহা বাড়িতে এসেছিল। নূহা বাড়িতে এলে যা হয় আরকি সবসময়। বাচ্চাদের সাথে হৈ চৈ, দুষ্টুমি করে সারাদিন বাড়ি মাথায় তুলে রেখেছিল। বাড়ির সবাইও অনেক আনন্দে ছিল সারাদিন। দুলাভাইও সারাক্ষণ মেয়ে আর নাতি-নাত্নিদের পেছন পেছন ঘুরে বেড়িয়েছেন হাসি মুখে। সমস্যা বাঁধলো নূহা যখন চলে প্রস্তুতি নিচ্ছিলো তখন। নাবিহা আর জিশান কিছুতেই ছাড়তে রাজী হচ্ছিলো না নূহাকে। ওদেরকে বুঝিয়ে শুনিয়ে বের হতেই বড়পা, মেঝপা আর ছোটপা মিলে ঘিরে ধরলো নূহাকে। যেহেতু তুই বাড়িতে নেই নূহা কয়েকদিনের জন্য এসে বাচ্চাদের সাথে কাটাতে পারে, কাটানো উচিত ইত্যাদি বলে তিনজন মিলে কনভিন্স করার চেষ্টা করলো। ছোটপার ফট করে রেগে যাবার স্বভাবের কথা তো জানিসই তুই। অনেককিছু বুঝিয়ে বলার পরও যখন নূহা চলে যাবার সিদ্ধান্তে অটল রইলো। ছোটপা রাগ করে নূহাকে বলল, বাচ্চাদের জন্য আসলে তোর মনে কোন দরদই নেই। এই সময় এসে হাজির হলেন দুলাভাই। আপারা যে নূহার মেজাজ বিগড়ে দিয়েছেন সেটা তো দুলাভাইয়ের জানা ছিল না। তাই দুলাভাইও বললেন, জাওয়াদ তো আরো এক সপ্তাহ পর আসবে। তুই নাহয় দু’তিনটা দিন থেকে যা মা আমাদের সবার সাথে।

ব্যাস সাথে সাথে আগ্নেয়গিরি ফেটে লাভার উদ্গিরন শুরু করলো নূহা। হাসতে হাসতে বললো জাওয়াদ। মা, মামণি আর খালামণিকে কতবার করে বুঝিয়ে বলেছি নূহাকে না ঘাটতে। ওকে ওর মতো থাকতে দিতে। কিন্তু ছোট থেকে বৃদ্ধা আমাদের বাড়ির সব মেয়েরা ‘আমার মরজি যা ইচ্ছে তাই করবো’ গ্রুপের সদস্যা। আজকাল কোন ঘটনায় কাউকে ওভার রিঅ্যাক্ট করতে না দেখলে মনে সন্দেহ জাগে এই মেয়ে কি সত্যিই আমাদের বাড়ির কেউ? দে অল আর জাস্ট আনবিলিভেবল।     

হাসলেন আরমান সাহেবও। তারপর বললেন, তবে দুলাভাইয়ের সাথে নূহার রিঅ্যাকশনটা সত্যিই আনবিলিভেবল ছিল। এটা সত্যি যে মাঝে মাঝে একটুতেই রাগ করে নূহা, সামান্য কারণেই খুব মেজাজ দেখায়। কিন্তু কারো মনে কষ্ট হবে এমন কিছু কখনোই বলে না। দুলাভাইকে এমন সব কথা বলেছে নূহা সেদিন আমি যদি পুরো ঘটনাটা নিজ চোখে না দেখতাম। অন্য কারো মুখে শুনে হয়তো বিশ্বাসই করতে পারতাম না নূহা এভাবে কথা বলতে পারে ওর বাবার সাথে।   

মামা কি বলেছিলো নূহা বাবাকে?

বলেছিল, ‘একটা সময় আমারও ধারণা ছিলো সন্তানের জন্য বাবা-মার ভালোবাসা আনকন্ডিশনাল হয়। বাবা-মা সন্তানদেরকে ঘিরে তাদের ভালোবাসার কখনোই হিসাব করেন না। কখনোই সেই ভালোবাসার প্রতিদান চান না। তাদের ভালোবাসাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে সন্তানদের দুর্বল করার চেষ্টা করেন না। বাবা-মার ভালোবাসা কখনো ডুবিয়ে দেয় না সন্তানদেরকে চোরাবালি হয়ে। কিন্তু আমার নিজ জীবনের অভিজ্ঞতা হলো, বাবা-মাই সবচেয়ে বেশি হিসাব চান তাদের ভালোবাসার। তোমরা যেমন কড়ায় গন্ডায় আমাকে দেয়া অফুরন্ত ভালোবাসার মুল্যে পরিশোধ করে নিয়েছো। তাই আমি মনেকরি যে জিনিসের হিসাব নিতে হয়, সেটা কখনই কাউকে বেহিসাবী দেয়া উচিত না। কারণ ঋণ যত বড় হয়, সেটাকে শোধ করার জন্য তত বড় জিনিসের কুরবানীই দিতে হয়। আমাকে যেমন আমার সন্তানদের কুরবানী দিতে হচ্ছে প্রতি মূহুর্তে’।

বেশ কিছুক্ষণ নীরব থাকার পর জাওয়াদ বলল, সন্তানদের জন্য দরদ নেই এই কথাটা বলা ঠিক হয়নি ছোট খালামণির। কারো এতটা গভীর বেদনাক্ত দুর্বলতায় আঘাত করা অন্যায়। শুধু মনটা দেখা যায় না বলে, আবেগে আঘাতকারীর জেল-জরিমানার নিয়ম নেই বলেই হয়তো মানুষ এমন নিষ্ঠুর কথার পেরেক ঠুকে দেয় অন্যের স্পর্শকাতর স্থানে। মামা তোমরা কি অনুভব করতে পেরেছো কতটা অচিন্তনীয় কষ্ট পেয়েছে নূহা ঐ বাক্যেটি শুনে? 

এখন দেখছি তুইও রেগে যাচ্ছিস। আমি তো তোকে বললাম যাতে নূহাকে বুঝিয়ে বলতে পারিস। 

নূহাকে বুঝিয়ে বলার আগে তোমাদের ভাইবোনদেরকে নিয়ে পারিবারিক বৈঠকে বসতে হবে আমাকে। সবাইকে জানিয়ে দাও রাতে বাড়িতে ফিরে আমি তোমাদের সবার সাথে কথা বলবো। এখন যাও তুমি এখান থেকে।

তোদেরকে কিছু বললেই রাগে ফুটতে শুরু করিস এই হচ্ছে যন্ত্রণা। তোদের সব কয়টা ভাইবোনের মূল সমস্যা এই একটাই, রাগ। রাগটাকে যদি তোরা কন্ট্রোল করতে পারতি মহাপুরুষ আর মহানারী হয়ে যেতি একেকজন।

জাওয়াদ হেসে বলল, যাও তো মামা বিরক্ত করো না এখন আমাকে।

আচ্ছা বিরক্ত করবো না। তোকে যে আমার সমস্যার কথা বললাম সেটার সমাধান বলে দে চলে যাচ্ছি। 

হাসান আল বাসরীর চমৎকার একটা বাণী আছে। "দুনিয়া তিনদিনের। গতকাল, যা এর স্ববর্স্ব নিয়ে চলে গেছে। আগামীকাল, যার দেখা পাবো কিনা তারই ঠিক নেই। আর আছে আজ, এই দিনটা তোমার, কাজেই কাজ করে যাও।" 

তারমানে আগে পিছে কিছু না ভেবে শুধু কাজ করে যাবো?

হুমম...

আরমান সাহেব হেসে বললেন, আচ্ছা। আরেকটা কথা ছিল। আমার এক ফ্রেন্ডের ওয়াইফ নার্সিংয়ের কোর্স করেছে। ওকে হসপিটালে কোন জব দেয়া যায় কিনা একটু যদি দেখতি।

তুমি তো মামা হয়ে যাচ্ছো দেখছি।

মামা হয়ে যাচ্ছি মানে? আমি তো তোর মামাই। অবাক কন্ঠে বললেন আরমান সাহেব। 

মা প্লাস মা ইকুয়্যাল টু মামা নয়। ঘুষখোর মামা হয়ে যাচ্ছো। মাত্র খেয়াল করলাম তোমার চেহারাতে বেশ তৈলাক্ত ভাবও এসেছে। মানুষের তোষামোদি পাচ্ছো মনেহয় খুব আজকাল।

আরমান সাহেব হাসতে হাসতে বললেন, এত বড় হসপিটালের ওনারের মা প্লাস মা ইকুয়্যাল টু মামা  বলে কথা। মানুষ তো তেল ঢালবেই।

মানুষকে বলবে তোমার ভাগিনা কন্টিনেন্টাল ফুড ছাড়া অন্যকিছু খায় না। নাউ প্লিজ লীভ।

ব্যাটা তুই আসলেই একটা মানুষ। হাসতে হাসতে বললেন আরমান সাহেব।  

জাওয়াদ হেসে বলল, মানুষ হওয়াটা খুব বড় কিছু না মামা। মানুষের কোল থেকে জন্মালেই মানুষ হওয়া যায়। কিন্তু আশরাফুল মাখলুকাত হওয়া যায় না জন্ম নিলেই। সেজন্য অনেক চেষ্টা, সাধনা ও ত্যাগের প্রয়োজন হয়। এখন একটা প্রশ্নের জবাব দাও।

কি প্রশ্ন?

তুমি কি যাবে আমার রুম থেকে নাকি সিকুউরিটি ডাকবো?

আরমান সাহেব হাসতে হাসতে বললেন, আচ্ছা রে বাপ চলে যাচ্ছি। তুই কাজ কর।

দরজার কাছে গিয়েও আবার ফিরে এসে জাওয়াদের মাথায় হাত বুলিয়ে চুল এলোমেলো করে দিয়ে হাসতে হাসতে বেড়িয়ে গেলেন।       

@

নিজের কেবিন থেকে বেরিয়ে অপারেশন থিয়েটার এর দিকে পা বাড়াতেই পেছন থেকে আনন্দিত কন্ঠে পাপা, পাপা ডাক শুনে ঘুরে তাকালো জাওয়াদ।

অলিম্পিক রেসের গতিতে ছুটতে থাকা শিশুটি মূহুর্তেই জাওয়াদের কাছে পৌছে কোলে ঝাঁপিয়ে পড়লো। জাওয়াদ জড়িয়ে ধরে আদর দিয়ে বলল, কেমন আছে আমার জারিফ বাবা সোনাটা।

জারিফ বিশাল হাসি দিয়ে বলল, আলহামদুলিল্লাহ আমি ভালো আছি পাপা। তুমি কেমন আছো?

আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভালো আছি। কিন্তু তুমি কার সাথে এসেছো?

বাবার সাথে এসেছি আমি পাপা। বাবা ঐখানে আদীব্বার সাথে কথা বলছে।

জারিফের উঁচিয়ে ধরা হাত বরাবর সামনের দিকে তাকাতেই হাসিমুখে রাহাতকে তাদের দিকেই এগিয়ে আসতে দেখে জাওয়াদের মুখেও হাসি ফুটে উঠলো। চোখ ঘুরিয়ে আবার জারিফের দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে বলল, আজ তুমি স্কুলে যাওনি কেন বাবা?

জারিফের চেহারাতে দুষ্টু হাসি খেলে গেলো। মাথা দোলাতে দোলাতে বলল, জানো নাতো পাপা কি হয়েছে? আমি আর বাবা ঘুম থেকে উঠে দেখি নয়টা বিশ বাজে। স্কুলের গেট তো নয়টার সময় বন্ধ হয়ে যায়।

জাওয়াদ হেসে বলল, আচ্ছা এই কান্ড করেছেন তাহলে আপনারা পিতা-পুত্র মিলে।

জারিফ কিছুক্ষণ কুটকুট করে হাসলো। এরপর বলল, পাপা আমার লেগো আর পাজেল এনেছো তো?

জারিফ সোনা বলবে আর পাপা সেটা নিয়ে আসবে না এটা কি হতে পারে? 

ডানে বায়ে দ্রুত মাথা নাড়তে নাড়তে জারিফ বলল, কক্ষনো হতে পারে না।

জাওয়াদ হেসে বলল, আলহামদুলিল্লাহ তুমি যা যা বলেছিলে পাপা সব নিয়ে এসেছি তোমার জন্য। কিন্তু তুমি হসপিটালে আসবে সেটা তো পাপার জানা ছিল না। আচ্ছা পাপা বাড়িতে ফোন করে দিচ্ছি কেউ এসে যাতে তোমার খেলনা দিয়ে যায়।

খেলনা নাতো পাপা। পাজেল আর লেগো বলো। খেলনা শুনতে বেবী বেবী শোনাও। কিন্তু আমি তো বড় হয়ে গিয়েছি।

জাওয়াদ হেসে বলল, আরে হ্যা তাই তো। আমাদের জারিফ সোনা তো এখন অনেক বড় হয়ে গিয়েছে মাশাআল্লাহ। পাপার ভুল হয়ে গিয়েছে। আর এমন হবে না।

পাপা ইনশাআল্লাহ বলো।  

জারিফকে আদর করে জাওয়াদ হাসতে হাসতে বলল, ইনশাআল্লাহ আর এমন হবে না। 

আশেপাশে তাকিয়ে জারিফ বলল, আপ্পি, ভাইয়ারা কোথায় পাপা?

পাপা তো ঠিক বলতে পারছি না সোনা। এক কাজ করো দৌড়ে আদীব্বার কাছে চলে যাও। আদীব্বা জানে তোমার আপ্পি আর ভাইয়ারা কোথাও।

শুধু বলতে দেরী সাথে সাথেই কোল থেকে নেমে ভাইবোনদের সন্ধানে ছুটলো জারিফ।

জাওয়াদ আর জারিফের কথার মধ্যে বিরক্ত করতে চায়নি বলে এক পাশে এতক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিল রাহাত। জারিফ ছুট লাগানোর পর এগিয়ে এসে হাসিমুখে সালাম দিলো। সালাম ও কুশলাদী বিনিময়ের পর জাওয়াদ বলল, রাহাত এখন আমার অপারেশন আছে। ইনশাআল্লাহ তোমার সাথে পরে কথা হবে।

রাহাত হেসে বলল, জ্বি ভাইয়া অবশ্যই। আপনি ফ্রি হয়ে নিন এরপর নাহয় কথা বলা যাবে।

জাওয়াদ চলে যাবার পর চারপাশে চোখ বুলিয়ে যার সন্ধান করছিল তাকে কোথাও দেখতে না পেয়ে কিছুটা আশাহত হলো রাহাত। কোথায় গেলে তাকে পাওয়া যাবে এই প্রশ্নটা কাকে জিজ্ঞেস করা যায় ভাবতে শুরু করার মাত্রই সামনের দরজার দিয়ে তাকে বেরিয়ে আসতে দেখে হাসি মুখে তাকিয়ে রইলো রাহাত।

কাছে এসে নূহা বলল, এভাবে তাকিয়ে আছো কেন? কি দেখছো? 

মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি।

মানে কি?

রাহাত হেসে বলল, মানে ভাবছিলাম সবাইকে ধরে ধরে বলবো, আপনারা কেউ কি আমাকে সেই মেয়েটির সন্ধান দিতে পারবেন, যার কাছে এই অধমের ছোট্ট হৃদয় খানি গচ্ছিত রয়েছে? কিন্তু জিজ্ঞেস করার আগেই আমার হৃদয় হরণকারিনী নিজেই হাজির। তুমিই বলো হলো কিনা মেঘ না চাইতেই রিমিঝিমি বরষা?  

নূহা হেসে বলল, ক্লান্ত লাগে না কখনো ঘুরিয়ে ফিরিয়ে একই কথা বার বার বলতে? 

রাহাত হেসে বলল, যত দিন আমার কথা শুনে তুমি এমনি করে হাসবে, ততদিন কোন ক্লান্তি ছুঁতে পারবে না মনকে। কারণ আমি জানি তোমাকে মুগ্ধ করার ক্ষমতা আমার নেই। তবে তোমার মুখে হাসি ফোটানোর ক্ষমতা আলহামদুলিল্লাহ আমার আছে।

ব্যাস আবার শুরু! তোমাকে কতবার বলেছি এভাবে কথা না বলতে। আমার একটুও ভালো লাগে না শুনতে।

আচ্ছা সরি। আর বলবো না এভাবে। এখন বলো বাবা এখন কেমন আছেন? হাসি মুখে প্রশ্ন করলো রাহাত। 

আগের মতোই আছেন।

ভাইয়া কি বললেন রিপোর্ট দেখে?

নতুন কিছুই বলেননি। অন্যান্য ডক্টরদের সাথে সহমত পোষণ করেছেন। আচ্ছা জারিফ কোথায়? ওকে স্কুলে দিয়ে এসেছো?

রাহাত হেসে বলল, আজ স্কুলের সময় আমাদের ঘুমে কেটে গিয়েছে। সেজন্যই তো বলি যদি জানতে আমরা পিতা-পুত্র তোমাকে ছাড়া কতটা অসহায়, তাহলে আমাদেরকে একা ফেলে হসপিটালে থাকতে পারতে না।

নূহা হেসে বলল, ঘটনা কি? আজ একসাথে এত ইমোশনাল কথা কেন?

রাহাত নূহার একটা হাত নিজের হাতের মুঠোয় টেনে নিয়ে বলল, গত এক সপ্তাহে যতবার বাইরে থেকে ঘরে ফিরেছি অদ্ভুত এক ধরণের অনুভূতি হয়েছে। তোমাকে ছাড়া আমাদের ছোট্ট ফ্ল্যাটটিকে ঘর না, কেমন যেন বিরান ভূমি মনে হয়েছে। যেখানে তোমার কথা, তোমার হাসি গুঞ্জিত হয় না, চারপাশে শুধুই শূন্যতার হাহাকার। ইচ্ছেই হতো না কাজ শেষে ঘরে ফিরতে। 

আই এম সরি। আসলে গত কয়দিনে আমার অন্য কোন কিছুই খেয়াল ছিল না। মনেহতো আমি এক মূহুর্তের জন্য অন্য কোথাও গেলেই যদি বাবা উঠে যান! তখন যদি আমার সাথে কথা বলতে চান! আমার বাবার সাথে কথা বলা খুব জরুরি রাহাত। বাবার সাথে কথা বলার আগে, বাবার কাছে ক্ষমা চাইবার আগে আমি কিছুতেই শান্তি পাবো না। 

আমি তোমাকে বুঝি নূহা। তোমার মনের অবস্থা তাই কিছুটা হলেও আন্দাজ করতে পারছি। আচ্ছা এখন থাক এসব কথা। আগে বলো তুমি নাস্তা করেছো?

নূহা হেসে বলল, আলহামদুলিল্লাহ করেছি। তুমি আসছো জানার পর নাবিহা তোমারও জন্য নাস্তা আলাদা করে রেখেছে। 

কোথায় আমাদের মামণিটা? 

মনেহয় বাগানে। চলো দেখি।

রাহাত হেসে বলল, হ্যা চলো।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন