রবিবার, ৩১ জানুয়ারী, ২০১৬

আমাদের আনন্দবাড়ি...১৭ .



অদ্ভুত মায়াবী নীল আজি করছে খেলা আকাশের বুকে
শুভ্র মেঘের ভেলা উড়িয়েছে পাল স্বপ্নের পাখা এঁকে
ঢেউয়ের তালে আসছে ভেসে শুদ্ধ অনুভূতির সুর
কেটে যাবে সকল আঁধার সেই দিন নয়তো দূর.....

কখনো কখনো ভাবার আগেই ভাবনারা সেজে গুঁজে সামনে এসে দাঁড়িয়ে যায়। তখন ভাবের রাজ্যে বিচরণ করার আগেই রচিত হয়ে যায় ভাবনার কাব্যে। এই মূহুর্তটা মনেহয় ঠিক ওমন কোন সময় ভাবলো নূহা। তাই হয়তো ঘুম থেকে উঠে জানালা খুলে আকাশের দিকে ভালো করে তাকানোর আগেই মন শব্দ বুনতে শুরু করে দিয়েছে। আসলেই অদ্ভুত মায়াবী নীল আজি করছে খেলা আকাশের বুকে। যতদূর চোখ যাচ্ছে আকাশের কোথাও একবিন্দু মেঘও দৃষ্টিগোচর হচ্ছিলো না। ভাসমান মেঘকে আকাশের প্রসাধনী মনেহয় নূহার কাছে। আজ প্রসাধনী ছাড়াও আকাশটাকে ভীষণ সুন্দর লাগছিল। তাকিয়ে ছিল মুগ্ধ চোখে আকাশের দিকে। হয়তো আরো অনেকটা ক্ষন থাকতো কিন্তু পেছনে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে ঘুরে দাঁড়ালো নূহা। রাহাতকে দেখে মিষ্টি হেসে সালাম দিলো।

সালামের জবাব আর হাসি ফিরিয়ে দিতে দিতে রাহাত বলল, হাসপাতালে যাবে না আজ?

হ্যা যাবো।

জারিফকে কি ভাইয়ারা কেউ হাসপাতালে নিয়ে আসবেন নাকি আমি যেয়ে নিয়ে আসবো?

আজ আর আগামীকাল তো স্কুল নেই থাক ঐ বাড়িতেই দুদিন। কাজ শেষে তুমিও চলে যেও। দুদিন কাটিয়ে এসো সবার সাথে।

আর তুমি?

নূহা হেসে বলল, গতকাল আমার বোনদের জুনিয়র গ্রুপের সাথে কথা বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু হঠাৎ তো ফিরে আসতে হলো। কিন্তু ওদের সাথে কথা বলাটা খুব জরুরি। সৈকতের সাথে কথা বলে ভাইয়াদের ওকে পছন্দ হয়নি। তাই নায়লার সাথে কথা বলা আরো বেশি জরুরি। কিন্তু আবারো বাড়িতে যাবার সাহস করতে পারছি না। তাই ভেবেছি ওদেরকেই আসতে বলবো। আজ রাতে থাকবে, আগামীকালও সারাদিন থাকবে এরপর বিকেলে চলে যাবে। এরমধ্যে আমি সবার সাথে কথা বলে নেবো। ওরা এলে তো তোমাকে ঘরে এক কোণে বন্দী হয়ে থাকতে হবে। আমিও সময় দিতে পারবো না। তারচেয়ে তুমি বরং ঐ বাড়িতে চলে যাও। গতকাল তোমারও যে আসতে ইচ্ছে করছিল না বুঝতে পারছিলাম।

তুমি সবসময়ই সবকিছু বোঝো নূহা। আশেপাশের মানুষগুলো তোমার আচরণ দ্বারা কিভাবে প্রভাবিত হচ্ছে, কি অনুভব করছে সবকিছু তুমি অন্য আর যে কারো চাইতে ভালো বোঝো। কিন্তু তারপরও তুমি সেটাই করো যেটা তোমার মরজি থাকে। ধীরে ধীরে বললো রাহাত।

বেশ অনেকক্ষণ চুপ করে থাকার পর নূহা বলল, আমার সবসময়ই মনেহয় যে কোন সম্পর্কেরই একটা কমন দাবী এটাও যে, একে অপরকে এমন পরিস্থিতির স্বীকার থেকে রক্ষা করা যা শারীরিক ও মানসিকভাবে যাতনাকর। কিন্তু কাউকে যখন সম্পর্কের বন্ধন দ্বারাই যাতনাকর পরিস্থিতির স্বীকার হতে হয়। তখন সেই যাতনার মাত্রা অনেক গুণ বেশি বেড়ে যায়।

আমার কথাতে কি তুমি কষ্ট পেয়েছো? নূহা আমি তোমাকে কষ্ট দেবার জন্য কিছু বলিনি। গত রাতে পরিবারের প্রতিটি সদস্যের মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল তুমি ওভাবে চলে আসাতে। আমি তো শুধু উনাদের চেহারায় ফুটে ওঠা কষ্টগুলোকে দেখেছি। কিন্তু তুমি তো উনাদের মনের গহীনে লুকায়িত কষ্টগুলোকেও অনুভব করতে পারো। তাই ওভাবে বলেছি।

নূহা হেসে বলল, তোমার কথাতে আমি মোটেই কষ্ট পাইনি। বরং আমি সবসময় আনন্দিত হই তুমি যখন এমনি করে আমার পরিবারের সদস্যদের কষ্টকে এতটা গুরুত্বের সাথে মূল্যায়ন করো। জানো বেশ কয়েকদিন আগে একজন জানতে চেয়েছিল, স্বামী বা স্ত্রীকে যদি একে অপরকে তারা দাম্পত্য সম্পর্কের প্রতি কতটা আন্তরিক সেটার প্রমাণ দেবার প্রস্তাব দেয়া হয়। তাহলে কি করা উচিত?

রাহাত হেসে বলল, বিচিত্র সব মানুষ আর তাদের বিচিত্র সব প্রশ্ন শুনতে শুনতেই আমার বৌটা দিন দিন আরো বিচিত্র হয়ে যাবে। যাইহোক, কি জবাব দিয়েছিলে?

বলেছিলাম, আমি ব্যক্তিগত ভাবে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা ছাড়া আর কাউকেই আমাকে টেষ্ট নেয়ার অধিকার দিতে নারাজ। আর জীবনসাথী হচ্ছে তারা যারা একে অপরকে সাহায্য করবে টেষ্ট এ বিজয়ী হতে। তারা কেন একে অন্যেকে টেষ্ট করবে?! তাছাড়া সম্পর্কের প্রতি আন্তরিকতার যদি আমাকে তোমার পছন্দনীয় কাজ করে এবং অপছন্দনীয় কাজ বর্জন করার মাধ্যমে দিতে হয়। তাহলে সম্পর্কটা কি কন্ডিশনাল হয়ে যাবে না?! মানুষ একে অন্যেকে কন্ডিশন হতে বাধ্য কেন নিশ্চয়তার জন্য। কিন্তু বাধ্যতা যে কখনোই সম্পর্কে স্বতঃস্ফুর্ততা আনতে পারে না সেটা তারা বুঝেও বুঝতে চায় না। আমি কেন জানি এমন কাউকে পছন্দ করতে পারি না যারা সম্পর্কের মধ্যে সবকিছু নিশ্চিত রাখতে চায়। জীবনের যেখানে এক মুহুর্তের নিশ্চয়তা নেই। সেখানে জীবনের আনুসাঙ্গিকতার কিসের নিশ্চয়তা???

হুমম, কিন্তু তুমি ঠিক কি বোঝাতে চাইছো কিছুই বুঝিনি।

নূহা হেসে বলল, একসাথে বসবাস করা কিছু মানুষকে তখনই এক পরিবারের সদস্য বলা যায়, যখন তারা একে অন্যের কথা, কাজ ও আচরণ থেকে কষ্ট তুলে নেবার আগে একবার অন্তত এর পেছনের কারণটাকে অনুসন্ধান করে দেখে। যেটা তুমি গতকাল করোনি বলেই আমার উপর বিরক্ত হয়েছো।

আমি বিরক্ত হইনি নূহা।  

নূহা হেসে বলল, তুমি বিরক্ত হয়েছো রাহাত। ভুলে যাচ্ছো কেন, আমি চারপাশের সবাইকে আমার মতো করে না, তাদের নিজেদের মতো করে বুঝতে পারি আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু আমার চারপাশের মানুষগুলো খুব কম সময়েই আমাকে আমার মতো করে বোঝার চেষ্টা করে। তারা তাদের বুঝটাকে আমার উপর চাপিয়ে দিতে চায়, আমার বিবেচনার দিকে একবার চোখ না বুলিয়েই। অবশ্য তুমি খুব কম সময়ই এমনটা করো। তুমি যদি কখনো আমাকে বুঝতে না পারো, বোঝার চেষ্টা করেও যখন বার বার ব্যর্থ হও। তখনো নিশ্চুপে আমার পাশে দাঁড়িয়ে থাকো। সেজন্যই হয়তো আমার মন যে কয়জন মানুষের সাথে ভীষণ রকম অবুঝ, তুমি তাদের একজন। রাহাত আমারো ইচ্ছে হয় পরিবারের সবার সাথে গিয়ে থাকতে, তাদের সাথে গিয়ে সময় কাটাতে। কিন্তু ঐ বাড়িতে ঢোকার সাথে সাথে আমার সেলফ কন্ট্রোল পাওয়ায় দুর্বল হতে শুরু করে। আমি চেষ্টা করেও আমার ভাবনাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনা। আমার চেতনা আচ্ছন্ন হয়ে যায়। ভাসিয়ে নিয়ে যায় আমাকে এমন কোথাও যেখানে যাওয়া আমার জন্য ভুল। কিন্তু তবুও আমি চেষ্টা করছি নিজের এই দুর্বলতাকে জয় করার। গতকাল অনেকটা সফলও হয়েছিলাম। কিন্তু শেষপর্যন্ত নিজেকে ধরে রাখতে পারিনি। এর কারণ আমি দুনিয়াবী পরীক্ষায় ব্যর্থ হতে ভয় পাই।  

হাত বাড়িয়ে নূহাকে কাছে টেনে নিলো রাহাত। ব্যথিত স্বরে বলল, আমার কোন কথাতে যদি কষ্ট পেয়ে থাকো সেজন্য খুব দুঃখিত। তোমাকে কষ্ট দেবার কথা আমি চিন্তাও করতে পারি না। একথা তো তুমি জানো তাই না?

নূহা হেসে বলল, জ্বি জনাব আমি জানি। তাই চেহারার দুঃখী ভাব পরিত্যাগ করে এখন নিজে রেডি হতে যান এবং আমাকেও যেতে দিন।

আরেকটু পরে রেডি হলেও চলবে আমাদের। থাকি না আরো কিছুক্ষণ দুজন একসাথে। হাসি মুখে বললো রাহাত।

জ্বিনা কোন পরে টরে না। এক্ষুণি গিয়ে রেডি হন। বলে ঠেলে রাহাতকে সরিয়ে দিয়ে হাসতে হাসতে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো নূহা।

রেডি হয়ে নাস্তার টেবিলে এসে বসে রাহাত বলল, তোমার সেলফোনে কি বন্ধ?

নূহা হেসে বলল, কেন আমার স্টুডেন্টদের ম্যাসেজ আসছে তোমার কাছে?

হ্যা গতকাল থেকেই আসছে ম্যাসেজ। বলতে খেয়াল ছিল না তোমাকে। ঘটনা কি ওরা আমাকে ম্যাসেজ পাঠাচ্ছে কেন দলে দলে?

নূহা হেসে বলল, মাঝে মাঝে যখন নিজের জীবনের দিকে তাকাই শুভাকাঙ্ক্ষীদের মেলা দেখে মনের অজান্তেই আলহামদুলিল্লাহ বেড়িয়ে আসে মুখ দিয়ে। জীবনে শুভাকাঙ্ক্ষীদের অবস্থান, গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা কতখানিক সেটা খুব ভালো করেই জানি আমি। তাই আল্লাহর ইচ্ছাতে নিজেকে যখন কারো শুভাকাঙ্ক্ষীর স্থানে দেখি চেষ্টা করি নিষ্ঠা ও ভালোবাসার সাথে দায়িত্বটি পালন করতে। প্রতিটি ক্ষেত্রে ধৈর্য্যর পরিচয় দিয়ে। কখনোই রাগ না করতে। তাদের ভুলগুলোকে ফুল হতে সহায়তা করতে। মাঝে মাঝে বকে যে দেই না তা অবশ্য নয়। কিন্তু মমতার ছায়ায় রেখে শাসন করতে আপ্রাণ চেষ্টা করি। কিন্তু গত পরশু আমার যে কি হলো যখন শুনলাম স্টুডেন্টদের একজন ফজরের সালাতে উঠতে পারেনি প্রচণ্ড রাগ হলো। আরেকজনকে একটা কাজ দিয়েছিলাম। জানতে চাইলাম করেছে কিনা! জবাবে বলল, ইন্না লিল্লাহ! আমি তো ভুলেই গিয়েছি ম্যাম। এত রাগ হয়েছিল যা কিনা বলার বাইরে। গতকাল সারাদিন তাই কারো সাথে যোগাযোগ করতে ইচ্ছে হয়নি। কারো ফোন ধরিনি, ম্যাসেজের রিপ্লাই দেইনি। একজন কোন রেসপন্স না পেয়ে আরেকজনের কাছে জানতে চেয়েছে। এভাবে অনেকের মধ্যে ছড়িয়ে গিয়েছিল আমার নিখোঁজ সংবাদ। চারিদিকে বাজতে শুরু করলো আপ্পা কই গেলো, ম্যাম কই গেলো ধ্বনি। সবার ফোন আর ম্যাসেজের ভারে আমার মোবাইলের ওজন বেড়ে গিয়েছিল কয়েকগুণ। এতগুলো মানুষকে চিন্তা ও অস্থিরতার মাঝে রাখার জন্য খুব খারাপ লাগছিল। কিন্তু তারপরও গতকাল থেকে কারো ফোন ধরিনি, ম্যাসেজের জবাবও দেইনি। তাই হয়তো তোমাকে ম্যাসেজ পাঠিয়েছে।  

রাহাত হেসে বলল, ওরা সবাই আসলে তোমাকে অনেক বেশি ভালোবাসে।  

আলহামদুলিল্লাহ। আমিও ওদের সবাইকে অনেক ভালোবাসি। তবে গতকাল যখন ওদের ম্যাসেজ গুলো দেখছিলাম। তুমি কোথায়? সুস্থ্য আছো তো? কোন সমস্যা হয়নি তো তোমার? মনখারাপ কোন কারণে? প্লিজ শুধু এইটুকু জানাও যে তুমি ভালো আছো! খুব চিন্তা হচ্ছে তোমার জন্য। হার্টবিট বেড়ে গিয়েছে আমার। ইত্যাদি ইত্যাদি এমন অসংখ্য ম্যাসেজ দেখে এক সময় মনে হলো যে, একজন মানুষ যে শুধুই শুভাকাঙ্ক্ষী তাকে কিছুক্ষণের জন্য খুঁজে না পেয়ে কি অস্থিরতা কাজ করছে সবার মনে! চারিদিকে তার সন্ধান পাওয়ার জন্য ছুটোছুটি করা শুরু করেছে! কিন্তু কেন? শুধু কি এইজন্যই নয় যে, সেই মানুষটিকে কষ্টের সময় আশ্রয় হিসেবে কাছে পায়? তাদেকে খুব ভালোবাসে সেই মানুষটি? অথচ আমরা কি কখনো ভেবে দেখেছি যে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের সৃষ্টি করেছেন। সেই আল্লাহর থেকে দুরুত্ব কি আমাদেরকে এভাবে অস্থির করে কখনো? আমাদের মাথা থেকে পা পর্যন্ত যেই আল্লাহর নেয়ামতে ভরপুর, তিনি যদি আমাদের জীবন থেকে দূরে সরে যান তাহলে কি হবে? এই বোধ থেকে কি তাকে কাছে পাওয়ার জন্য এমন ছুটোছুটি করি আমরা কখনো? হয়তো করি না বলেই আমাদের নামাজ মিস হয়! আমরা সেইসব কাজ করতে ভুলে যাই যা আমাদেরকে আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জনে সহায়তা করতে পারে। মহান আল্লাহ কুরআনে বলেন,“হে নবী! লোকদেরকে বলে দাও, তোমরা কোন বিষয় মনে গোপন রাখো কিংবা প্রকাশ করো, তা সবই আল্লাহ জানেন।” হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত।তিনি বলেন,রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ তা’আলা তোমাদের চেহারা ও দেহের প্রতি দৃষ্টিপাত করেন না; বরং তোমাদের অন্তর ও কর্মের প্রতি লক্ষ্য আরোপ করেন।” তাই মুখে সারাক্ষণ আল্লাহর কথা বলার সাথে সাথে সংগোপনে এটাও ভেবে দেখা উচিত যে, কতটা ভালো আমরা মানুষকে বাসি আর কতটা আমাদের স্রষ্টাকে। এই বিষয়টা আমি ওদেরকে প্রাক্টিক্যালি বোঝাতে চাই। তাই কিছু সময়ের জন্য ওদের জীবনে আমার শূন্যতা তৈরি করাটা জরুরি।

রাহাত হেসে বলল, আমি বুঝতে পেরেছি। কিন্তু তোমাকে ছেড়ে দু’দিন থাকতে আমার কতটা কষ্ট হবে। সেটা তুমি বুঝতে পারছো না বলেই কিছুক্ষণ আগে ওভাবে দূরে সরিয়ে দিতে পেরেছিলে। আর এখন আবার নাস্তা নিয়ে টেবিলের আরেক পাশে গিয়ে বসতে পেরেছো।

নূহা হেসে ফেললো। এরপর হাসতে হাসতে উঠে গিয়ে রাহাতের পাশে বসে বলল, আমি আসলে বেশ টেনশনে আছি নায়লাকে নিয়ে। পরিবার থেকে দূরে থাকার কারণে আমাদের ভাইবোনদের জুনিয়র গ্রুপের সাথে আমার বন্ডিংটা ঠিক সেভাবে গড়ে ওঠেনি। খুব বেশি আদর-ভালোবাসা তো আমি ওদেরকে দিতে পারিনি। তাই ওদের উপর আমার প্রভাব অনেক কম বলেই মনেহয় আমার। তাই বুঝতে পারছি নায়লা ঠিক কতটুকু বুঝতে সক্ষম হবে আমাকে।

রাহাত হেসে বলল, আমার কিন্তু কখনোই মনে হয়নি ছোটদের উপর তোমার প্রভাব কম। তুমি শুধু শুধুই টেনশন করছো।

হুম, হয়তো। জানো আমার ভীষণ ভালো লাগার একটা লাইন হচ্ছে, “পুঁজি করে মনের জমানো দয়া-মায়া, হতে চাই আমি আশা জাগানিয়া।” খুব বেশি প্রিয় এই শব্দগুলো আমার। সত্যিই আশা জাগানিয়া হতে চাই আমি একটি মনের তরে হলেও। সেই উপলব্ধি থেকেই লিখেছিলাম এই শব্দগুলো। সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম কারো মনের অবগুণ্ঠিত স্বপ্নে ডানা লাগিয়ে দেবো। যাতে স্বপ্নরা উড়ে বেড়াতে পারে আকাশের সীমানা ছাড়িয়ে মেঘের রাজ্যে। কঠিন বাস্তবতা যদি কারো মনের মাঝে জন্ম দেয় যে ধূধূ বালুর চর, তাতে লাগিয়ে দেবো নানান রঙয়ের ফুল মনোহর। হতাশার মেঘ সর্বদা যে মনে করে তর্জন গর্জন, আশার বৃষ্টি হয়ে ভালোবাসার করে যাব বর্ষণ! কিন্তু সত্যি কথা হচ্ছে সবসময় পারি না এমন। অনেক সময়ই অনেককে করি আশাহত, আমার কথা ও আচরণে যারা হয় মর্মাহত। তখন ভাবনা জাগে যে, ‘আল্লাহতে সর্বদা এই মন সমর্পিত, তবুও কেন এর দ্বারা মানুষ হয় ব্যথিত’??

রাহাত মুখে কিছু বললো না। হাসি মুখে নিজের একটা হাত নূহার হাতের উপর রাখলো।

একটু ক্ষণ নীরব থেকে নূহা বলল, ইচ্ছে করে কাউকেই ব্যথা দিতে চাই না সাধারণত কখনোই। তারপরও কথা, কাজ, আচরণে অনেক সময়ই কষ্টের কারণ হয়ে যাই কারো কারো। আসলে মাঝে মাঝে উৎসাহ দিতে বা বোঝাতে বোঝাতে ক্লান্তি বোধ ঘিরে ধরে মনকে। একই ভুল বার বার করতে দেখে তিক্ততা ঘিরে ধরে মনকে। কোমলতার বদলে তখন কঠোরতা এসে যায়। বাড়িয়ে ধরা হাত গুটিয়ে নিতে ইচ্ছে করে। কানা হাত চাপা দিতে ইচ্ছে করে যেন কারো অজুহাতের শব্দরা প্রবেশ করতে না পারে। আমার ভাইবোনেরা এবং স্টুডেন্টরা মাঝে মাঝে এমন সব অন্যায় বা ভুল করে যে অনিচ্ছা স্বর্ত্বেও অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলি কথার দ্বারা। কিন্তু তাই বলে কারো প্রতি  ভালোবাসা কমে যায় না এতটুকুও। যত যাই করুক ওদের কারো মনে এক বিন্দু মেঘের ছায়াও সহ্য করতে পারি না। জীবনে দুঃখের প্রয়োজনীয়তা অনেক জানি। কিন্তু কেন যেন মন বলে ওরা সবাই সর্বদা থাক সকল দুঃখ-কষ্টের স্পর্শের বাইরে। তাই ওদের মনের যে আকাশে মেঘ ডাকে গুরগুর, ভালোবাসার ছন্দে তুলে যেতে চাই মায়ার সুর। ব্যর্থতা মনেতে হতাশার রূপে দেয় যখন হানা, তুলির ছোঁয়ায় এঁকে দিতে চাই সূর্যোদয়ের আল্পনা। বিষন্নতা মেলে পেখম মনকে করে দিলে মেঘলা, মমতার কিরণে অন্তঃরাত্মাকে করতে চাই রোদেলা...ইনশাআল্লাহ। আচ্ছা এখন ওদের কথা বাদ। তোমার কথা বলো।

রাহাত হেসে বলল, আমার সব কথা তোমার কথার গভীরতার গহীনে হারিয়ে যায়। তাই বলার চেয়ে তোমার কথা শুনতেই বেশি ভালো লাগে। কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথাটিই তো তোমাকে বলা হয়নি এখনো।

কি কথা?

রাহাত হেসে বলল, তুমি যখন ওয়াশরুমে ছিলে নাবিহা ফোন দিয়েছিল। তুমি ফোন দিয়ে কথা বলে নিয়ো ওর সাথে।

নূহা হেসে বলল, ওকে ইনশাআল্লাহ।

এরপর গল্প করতে করতে নাস্তা শেষ করে দুজনই ছুটলো নিজ নিজ কর্মযজ্ঞে।  

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন