রবিবার, ৩১ জানুয়ারী, ২০১৬

নিয়তি... ১৫



ছোট খালামনির বাসায় যাবার পর নূহার সাথে কথা যে বলবে সেই সুযোগই জাওয়াদ পাচ্ছিলো না। একসাথে হলেই এই পরিবারের মানুষগুলো কাজকর্ম ভুলে গল্পগুজব নিয়ে মেতে ওঠে। কি রান্না হবে, কে কি খেতে চায় দুপুরে, নাস্তায় কি খাবে এইসব নিয়ে চিন্তা গবেষণায় মশগুল হয়ে এখানে আসার মূল উদ্দেশ্যই বেমালুম ভুলে গেলো সবাই। জাওয়াদের খুব ভালো করেই জানা ছিল সে নিজ থেকে উদ্যোগ না নিলে নূহার সাথে কথা না বলেই ফিরে যেতে হবে। মাকে খুঁজতে রান্নাঘরের সামনে গিয়ে দরজা নক করলে ভেতর থেকে ছোট খালামনি বললেন, ভেতরে আয় জাওয়াদ। জাওয়াদ ঢুকতেই মিসেস নুসরাত চোখ পাকিয়ে বললেন, তোকেই খুঁজছি আমি। এই বুড়ো বয়সে তুই আমাদের ছোট্ট পরীটার দিকে চোখ কেন দিয়েছিস সেই কৈফিয়ত দে আমাকে।  
জাওয়াদ হেসে বলল,কামঅন খালামনি।

রাখ তোর কামঅন টামঅন। কৈফিয়ত দে আমাকে কৈফিয়ত।

তোমাদের ছোট্ট পরী খুব জ্ঞানী ও বুদ্ধিমতী। এটাই হচ্ছে কৈফিয়ত।

সারাংশ না ভাব-সম্প্রসারণ শুনতে চাই আমি। কিভাবে কি হয়েছে, কেন হয়েছে এমন কিছু যা হওয়াটা মোটেই স্বাভাবিক ছিল না। ডিটেইল শুনতে চাই আমি। চুপ করে আছিস কেন?

জাওয়াদ খালামণির পাশে গিয়ে বসে বলল, তুমি চাইছো না এই বিয়েটা হোক তাই না?

এক মূহুর্তের জন্য থমকে গেলেন মিসেস নুসরাত। তারপর বললেন, আমার মাঝে মাঝে মনেহয় আমি বুঝি আদী, অভি আর মাহার চাইতেও তোকে আর নূহাকে বেশি ভালোবাসি। তোরা দুইজন আমার দুই চোখের তারার মতো। কিন্তু আমি সত্যিই মেনে নিতে পারছি না তোদের এমন অসম বিয়েতে। আর শুধু তো বয়সের পার্থক্য নয়, আরো অনেক কারণ আছে আমার আপত্তির।

কি কি কারণ খালামণি? আমাকে কি বলা যাবে?

তুই তোকে দেখ আর নূহাকে দেখ। কোন দিক দিয়েই কি মিল আছে তোদের? তুই বাড়ির মুখ ভোঁতা কর্তা সেজে বসেছিস। আর নূহা হচ্ছে আমাদের দুষ্টু প্রজাপতি। চঞ্চল, ছটফটে, এক মূহুর্ত কোথাও স্থির থাকে না। ননস্টপ বকবক করা স্বভাব নূহার আর তুই কথা বলিস মেপে মেপে।

জাওয়াদ হেসে বলল, সেজন্যই তো আমি নূহাকে বিয়ে করতে চাইছি। যাতে আমাদের দুজনের মধ্যেই কিছুটা ব্যাল্যান্স আসে। আইমিন, নূহার কিছুটা চঞ্চলতা আমার মধ্যে এলো আর আমার কিছুটা গাম্ভীর্য নূহার মধ্যে গেলো। তুমি দেখো খালামণি ইনশাআল্লাহ অসাধারণ কিছু হবে আমরা দুজন এক হলে।

মোট কথা হচ্ছে বিয়ে তুই নূহাকে করবিই। এই তো?

জাওয়াদ হেসে বলল, হ্যা বিয়ে করলে তো আমি নূহাকেই করবো ইনশাআল্লাহ। নয়তো বিয়ের প্রজেক্ট বাদ।

নূহাকে বিয়ের ব্যাপারে তোর এমন জীবন মরণ পণের কারণই তো জানতে চাইছি আমি।

আমি অনেক চিন্তা গবেষণা করে দেখলাম যে তোমরা সবাই, মানে আমার মাদার’স গ্রুপের সবাই আমার ব্যাপারে ভয়াবহ খুঁতখুঁতে এবং পজেসিভ। আমার দূরদৃষ্টি সাবধান করে বলে দিচ্ছিলো বাইরের কোন মেয়ে আমার বৌ হয়ে বাড়িতে এলে আনন্দবাড়ি পরিণত হবে রণক্ষেত্রে। খালামণি আমাদের সতেরো বছরের সাধনায় গড়া এই আনন্দবাড়ি। এই বাড়ির আনন্দে প্রভাব পড়তে পারে এমন সবকিছু থেকে আমি দূরে থাকতে চাই।   

এটাই যে শেষ কথা না সেটা আমি জানি। শোন আমি তোর মা, অন্য খালামনি কিংবা ফুপীদের মতো সহজ  সরল না যে যা বোঝাবি তাই বুঝবো। রান্নাটা শেষ হোক তারপর বড়শির মাথায় বুদ্ধি লাগিয়ে আমি তোর পেটের ভেতর ফেলবো। হিড়হিড় করে টেনে বের করে নিয়ে আসবো সব কথা। তোকে বোঝাবো বুদ্ধিমতি মেয়ে কি জিনিস। এখন বল দুপুরে কি খাবি?

হাসতে হাসতে জাওয়াদ বলল, পেট ভরার জন্য তোমার কথাই যথেষ্ট।

মাশাআল্লাহ! তোর হাসি তো আরো সুন্দর হয়েছে। এদিকে আয় তো বাবা তোকে একটু দোয়া করে দেই।

জাওয়াদ খালামনিকে জড়িয়ে ধরে হেসে, তোমার হাতের আনারস ইলিশ খেতে ইচ্ছে করছে খালামনি। আচ্ছা চাচ্চু কোথায়?

বিরক্ত কণ্ঠে মিসেস নুসরাত বললেন, আছে নিশ্চয়ই বাগানে গাছ গাছরা নিয়ে। তোর চাচ্চুকে আমাজনে নিয়ে ছেড়ে দিয়ে আয়। থাকুক গিয়ে গাছপালার সাথে।

ঠিকআছে তুমি রান্না করো আমি চাচ্চুর কাছে যাই। অবশ্য আমি অন্য একটা কারণে এসেছিলাম।

তুই বাগানে যা আমি নূহাকে পাঠিয়ে দিচ্ছি।

খালামনিকে ধন্যবাদ জানিয়ে চাচ্চুর খোঁজে রওনা হলো তখন জাওয়াদ। জাওয়াদকে দেখেই আরশাদ সাহেব  বিশাল হাসি দিয়ে বললেন, জাওয়াদ কেমন আছো বাবা? আমি তোমাকেই খুঁজছিলাম। নতুন আরো চারটি ঔষধি গাছের চারা লাগিয়েছি বাগানে। এসো তোমাকে দেখাই। চাচ্চু ঔষধি গাছের চারা দেখানো আর  সাথে গুনাগুণ বর্ণনা করার পর বললেন, আরো একটা কারণে তোমাকে খুঁজছি। আচ্ছা তুমি এতো সব তথ্য মনে রাখো কিভাবে? আমি তো একদিক দিয়ে পড়ি আর আরেকদিক দিয়ে ভুলে যাই। আজকাল তাই পড়ার আগ্রহ কমে যাচ্ছে।

আলহামদুলিল্লাহ্‌! আমি যা পড়ি তার সব তথ্যই মনে রাখতে চাই না চাচ্চু। আমি শুধু আল্লাহর উপর ভরসা রেখে পড়ে যাই। পড়ার সময় দৃঢ়কণ্ঠে অবচেতন মনকে বলি যখন প্রয়োজন পড়বে এসব তথ্য তোমার আমাকে মনে করিয়ে দিতে হবে। মনে রাখবে এটা তোমার দায়িত্ব।

তুমি সত্যি এমন করো?

জাওয়াদ হেসে বলল, আমার কি ধারণা জানো চাচ্চু? আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আমার মধ্যে সবচেয়ে ভালো গুন যেটা দিয়েছেন সেটা হচ্ছে ‘পজেটিভ সেন্স’। আমি কোন কিছুকেই নেগেটিভ সেন্সে নেইনা। পড়ার সময় মুখস্ত করা বা মনে রাখার চিন্তা করে পড়িনা। আমি জাস্ট পড়ে যাই রিলাক্স ভাবে। আমার মনেহয় কোনরকম স্ট্রেস না নেয়াই আমার মনে থাকার কারণ। আলহামদুলিল্লাহ!

আলহামদুলিল্লাহ! এটা আল্লাহর রহমত তোমার প্রতি। আমার ব্যক্তিগত ধারণা হচ্ছে জ্ঞানার্জন মানে শুধু গাদা গাদা তথ্য জানা নয়। বরং কতোটা জানলাম বা মনে রাখলাম সেটার চেয়ে কতোটুকু নিজের মাঝে ধারণ ও স্থাপন করলাম সেটা বেশি গুরুত্বপুর্ন।  

আমার ধারণাও এমনটিই চাচ্চু। পাপা সবসময় বলেন , সংকল্প না থাকলে জীবনে কখনো দৃঢ়তা আসেনা। আর দৃঢ়তা না থাকলে জীবনে কোন উন্নতি হয়না। পরিবারের দায়িত্ব নেবার পর থেকে আমারো ধারণা হয়েছে ভিতরে সংকল্প যত দৃঢ় হয়, তার তীব্রতা যত বেশি হয় জীবনে উন্নতিও তত দ্রুত।  

হ্যা। ভাইয়ার কথাগুলো সবসময়ই খুব গাঁথুনির হয়। তোমাদের বিয়ের কথা শুনলাম। আলহামদুলিল্লাহ্‌! তোমার পছন্দকে স্যালুট। বাড়ির বড় বউ হিসেবে আমরা এমন কোন মায়াবী মেয়েই খুঁজছিলাম। আমাদের ঘরের মধ্যেই রাজকুমারী বসে ছিল অথচ আমরা আমাদের রাজকুমারের জন্য দুনিয়া ভরে তাকে খুঁজে বেড়িয়েছি। রবী ঠাকুরের গানের মতো অবস্থা। ‘আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে দেখতে আমি পাইনি। বাহির পানে চোখ মেলেছি হৃদয় পানে চায়নি।’

জাওয়াদ হেসে বলল, আলহামদুলিল্লাহ। তবে তোমরা না চাইলেও আমি কিন্তু সবসময়ই আমার হৃদয় পানেই চেয়েছিলাম। চাচ্চু নূহা আসছে। তুমি কি আমাদেরকে কিছুক্ষণের জন্য একা ছেড়ে দিবে?

আরশাদ সাহেব হেসে বলল, হ্যা অবশ্যই বাবা। তোমরা দুজন কথা বলো আমি যাচ্ছি।   

ট্রে হাতে গুটিগুটি পায়ে তার দিকে এগিয়ে আসা মেয়েটির উপর থেকে চোখ সরাতে ইচ্ছে করছিলো না জাওয়াদের। অপলক তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করছিলো কিন্তু জোর করে চোখ নামিয়ে নিলো সে। মনকে শাসন করে বলল, ভুলে যেও না একজন মুমিন আরেকজন মুমিনকে তার চিন্তার কলুষতা থেকেও মুক্ত রাখে।

ঐদিকে চা নিয়ে বাগানে দিকে আসতেই চাচ্চু আর জাওয়াদকে বসে গল্প করছে সেখতে পেলো নূহা। কিছুক্ষণ পর চাচ্চুকে উঠে চলে যেতেও দেখলো। চাচ্চুর এই ঔষধি গাছের বাগানটা নূহার ভীষণ অপছন্দ। কেমন একটা ঘ্রাণ যেন পুরো বাগানটা জুড়ে, মাথা ঝিমঝিম করে তার। তাই না পারতে সে কখনো এই বাগানে আসে না। কিন্তু জানে যে এই জায়গাটা জাওয়াদের খুব পছন্দ। গাছপালার প্রতি বিশেষ দুর্বলতা আছে জাওয়াদের। তাই খালামনি যখন এখানে আসার কথা বললো চুপচাপ চলে এসেছে সে। মামণিকে দেখেছে বাবার পছন্দের জন্য নিজের অপছন্দগুলোতে কত হাসিমুখে মেনে নিতে। মামণি বলেন, এইটুকু ত্যাগ তো সম্পর্কের বন্ধন দাবী করে। না এসব আহামরি ধরণের কোন ত্যাগ, না এসব করার জন্য অনেক কিছু করার দরকার হয়। শুধু প্রিয় মানুষটিকে এতে খুশি হবে এই ভাবনাটা মনে থাকলেই হয়।

নূহা পাশে এসে দাঁড়ালে সালাম বিনিময়ের পর ট্রের দিকে তাকিয়ে জাওয়াদ বলল, চা তিন কাপ কেন?   

চাচ্চুর জন্যও দিয়েছেন খালামণি।

আচ্ছা আমাকে দাও আমি দিয়ে আসছি চাচ্চুকে। জাওয়াদ ট্রে থেকে চায়ের কাপ নিয়ে চাচ্চুকে দিয়ে আসার পর নূহা বলল, চাচ্চু কি বিশাল বিশাল গাছ লাগিয়েছেন বাগানে তাই না?

গাছ নিশ্চয়ই ছোট ছোটই লাগিয়েছিলেন, সময়ের সাথে সাথে বড় হয়ে গিয়েছে। ছোট থাকার বা ছোট হবার নিয়ম যেহেতু নেই প্রকৃতিতে। নূহা তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করলো জাওয়াদ ফান করছে না সিরিয়ালি বলছে কথা। নূহাকে তাকাতে দেখে জাওয়াদ হেসে বলল, তোমার জায়গাটা পছন্দ না বুঝতে পারছি। ঠিক আছে চলো আমরা অন্য কোথাও গিয়ে বসি। চাচ্চুর আর্টিফিশিয়াল পুকুর পাড়ে যাবে?  

আর্টিফিশিয়াল পুকুর পাড়ে বসে সবাই রিয়েল মাছ ধরছে। সমস্যা নেই এখানেই বসি।

তুমি নাকি কখনোই মাছ ধরতে চাও না?

না আমার ভীষণ কষ্ট লাগে এভাবে তাজা একটা মাছকে মেরে সেটাকে খেতে।

এখানে কষ্ট লাগার কিছু নেই নূহা। প্রকৃতির নিয়ম হচ্ছে এখানে কেউ খাদ্য আর কেউ খাদক। সারভাইভাল ফর দ্যা ফিটেস্ট-ই হচ্ছে প্রাকৃতিক নিয়ম। আর এই নিয়ম মানতে আমরা সবাই বাধ্য। কোন দয়া-মায়া বা নিষ্ঠুরতার ব্যাপার নেই এখানে। যাইহোক থাক এসব কথা। এখানে আসার পথে আমার বলা কথাগুলো তোমাকে কষ্ট দিয়েছে আমি বুঝতে পারছি। আমি আসলে ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কথা বলতে পারি না।

আমি তো বলেছি আমি কষ্ট পাইনি। প্লীজ আমরা এই ব্যাপারটা নিয়ে কথা না বলি। বিয়েতে যেহেতু আমাদের কারোই আপত্তি নেই, তাই এই বিষয়ে কথা বলার তেমন কোন প্রয়োজনও তো আসলে নেই।

ঠিকআছে চলো আমরা অন্যকোন বিষয়ে কথা বলি। ঐ গাছটির নাম কি বলতে পারবে?

না আমি গাছ চিনি না। তবে খালুজান বলছিলেন তুমি অনেক রকমের গাছের গুণাগুণ জানো। কত রকমের?

তা তো বলবো না।

কেন?

কারণ আমি তোমাকে আমার যোগ্যতা দেখিয়ে মুগ্ধ করতে চাই না। আমার যোগ্যতা দেখবে বাইরের মানুষ আর আপনজনরা দেখবে শুধু আমার ভালোবাসা।

কথাটা ঠিক না। আমরা তোমার রাগও দেখি সারাক্ষণ।

জাওয়াদ হেসে বলল, ভালোবাসি বলেই তো রাগ করি। ভাইবোনদেরকে ভালো না বাসলে তো ছেড়ে দিতাম যার যার পথে। নূহা আমি নিজেকে গড়তে অনেক কষ্ট করেছি। আল্লাহর সাহায্য, বাবা-মার দেয়া শিক্ষা আর নিজের ইচ্ছে ও চেষ্টার জোরে নিজেকে উত্তম মানুষ হিসেবে গড়ার সংগ্রাম আমার মধ্যে সর্বক্ষন বিদ্যমান। নিজের করনীয় নিয়ে আমার মধ্যে কোন হেজিটেশন নেই, বর্জনীয় নিয়ে কনফিউশন নেই। আমি আমার বিবেকের চোখে চোখ রেখে চলতে পারি। আমি আমার প্রতিটা ভাইবোনকেও এমন বানাতে চাই। যাতে তারা নিজের কাছে স্বচ্ছ থাকতে পারে। সেজন্য হয়তো সবার সাথে আমি প্রয়োজনের চাইতে একটু বেশি কঠোর। কিন্তু এই কঠোরতা আমার স্বভাব নয় বরং সময়ের দাবী।  

আই এম সরি। আমি এত সব ভেবে বলিনি আসলে।

তোমাকে দুঃখিত হতে হবে না। আমি এখন যে কথাগুলো বললাম এগুলো যদি জানা থাকতো তাহলে নিশ্চয়ই তুমি এমন বলতে না।

আমি জানি তুমি পরিবারের সবাইকে ভীষণ ভালোবাসো। কিন্তু এখন মনেহচ্ছে সেই ভালোবাসার মাত্রা বোঝা আমার পক্ষে সম্ভব না।

আমাদের বাবা-মায়েরা একটা স্বপ্ন দেখেছিলেন নূহা। অন্যরকম একটা পরিবার গঠনের স্বপ্ন। যে পরিবারের ভীত হবে অপ্রতিরোধ্য ভালোবাসা। যার সদস্যরা একে অন্যকে বুঝবে, কখনোই ভুল বুঝবে না। আমি যখন স্বপ্ন দেখতে শিখেছিলাম বাবা-মাদের এই স্বপ্নটাই আমার জীবনে স্বপ্ন হিসেবে আঁকড়ে ধরেছিলাম। কারণ আমি মনেকরি আমরা এই পৃথিবীতে আসার আগে থেকেই বাবা-মায়ের ভালোবাসা নিতে থাকি। আর জন্ম নেবার পর থেকে কত কিছুই না করেন বাবা-মা আমাদের জন্য। সন্তানদেরকে বড় করতে গিয়ে কত শত ত্যাগ স্বীকার করতে হয় বাবা-মাদেরকে। কিন্তু বাবা-মার জন্য কোন কিছু ত্যাগ করার সুযোগ খুব কম আসে সন্তানদের কাছে। তাই যখন এমন সুযোগ আসে সেটাকে কাজে লাগানো উচিত প্রতিটা সন্তানের।  

আমাদের বাবা-মাদের স্বপ্ন পূরণের জন্য তুমি তোমার জীবনের সব স্বপ্নকে ত্যাগ করে দিয়েছিলে?

জাওয়াদ হেসে বলল, না আমি শুধু বাবা-মাদের স্বপ্নটাকেই নিজের করে নিয়েছিলাম। এবং আমার যা যা দায়িত্ব ছিল আন্তরিকতা, নিষ্ঠা ও পুর্ণ মনোযোগের সাথে পালন করতে চেষ্টা করেছি। এবং সারাজীবন করে যেতে চাই ইনশাআল্লাহ। আর এজন্যই আমার এমন একজন সাথীর প্রয়োজন ছিল যে আমার এই স্বপ্ন পূরণের পথে কখনোই বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে না। বরং আমাকে সর্বাবস্থায় সাহায্য করবে।

নূহা বলল, আমার কাছে সবসময় মনেহয় যে জীবনের চেয়ে আনপ্রেডিক্টটেবল আর আনসারটেন জিনিস পৃথিবীতে আর কিছুই নেই। অথচ আমরা আমাদের সারা সময় এই জীবনের জন্য পরিকল্পনা করতে করতেই শেষ করে দেই। এটা হলে কি হবে, ওটা না হলে কি হবে ভাবতে ভাবতে আমরা মনের শান্তির বারোটা বাজিয়ে দেই। এটা ঠিক যে এই ভাবনাগুলোও জীবনের অংশ। কিন্তু যে সময় এখনো আমার জীবনে আসেনি, আসবেই এমন কোনও নিশ্চয়তাও নেই। তেমন সময়ের ভাবনাকে আমি আমার জীবনের অংশ করতে নারাজ। আমি কোন কিছুর জন্য ওয়াদা করতে নারাজ। তবে হ্যা নিজের দায়িত্ব পালনে আমার কোন অনীহা নেই। বরং যা করণীয় তা করতে আমি ভালোবাসি।

করণীয় প্রতি ভালোবাসা থাকলে জীবনটা অনেক সহজ ও সুন্দর হয়ে যায় তা কি জানো? কারণ ভালোবাসাই মানুষকে ধৈর্য্য ধারণ করতে, ত্যাগ স্বীকার করতে, উত্থান-পতনকে মেনে নিয়ে চেষ্টা জারি রাখতে অনুপ্রেরণা যোগায়। তোমাকে আর কিছু বলার নেই আমার। তোমার কিছু জানার থাকলে জিজ্ঞেস করতে পারো।

জানার ক্ষেত্রে আমি তাড়াহুড়া করতে চাই না। তাছাড়া সারা জীবনের সফর ধীরে ধীরে আমরা একে অন্যকে জেনে নিবো ইনশাআল্লাহ।

জাওয়াদ হেসে বলল, ইনশাআল্লাহ। ঠিকআছে তুমি যাও সময় কাটাও সবার সাথে।

মুখে হাসি টেনে নূহাও উঠে দাঁড়ালো। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন