রবিবার, ৩১ জানুয়ারী, ২০১৬

আমাদের আনন্দবাড়ি...৮



গাড়ি থেমে নেমেই জিহাদ, জিশান আর নাবিহা নুহাকে চেপে ধরে টানতে টানতে ওদের কটেজের দিকে রওনা দিলো। নূহা একবার ভেবেছিল বাচ্চাদের বাঁধা দেবে কিন্তু পরমুহূর্তেই যখন মনেহলো এমনটা করলে ওদের মন খারাপ হয়ে যাবে। তাই বাঁধা না দিয়ে চুপচাপ ওদের সাথে হাঁটতে শুরু করলো। তবে মনে আবার প্রশ্নও জাগলো বাচ্চারা তো জানে সে ওদের কটেজে যাওয়াটা এড়িয়ে চলে। প্রায় পাঁচ বছর হয়ে গিয়েছে মূল বাড়ি থেকে খানিকটা দূরে নিজের এবং বাচ্চাদের জন্য আলাদা কটেজ বানিয়ে নিয়েছে জাওয়াদ। হাতে গোনা দু'চার বারই নূহা ঐ কটেজে ঢুকেছে। তাও বাচ্চাদের আবদারে ওদের রুম দেখার জন্য। অনেক ছোটবেলা থেকেই খুব সমঝদার স্বভাবের  জিহাদ, জিশান এবং নাবিহা তিনজনই। তাই কখনোই জোড় করে না নূহাকে ওদের কটেজে যাবার  জন্য। আজ তাহলে এমন করছে কেন? সাথে সাথেই মনে পড়লো স্কুল থেকে বেরিয়ে গাড়িতে ওঠার আগে ওদের তিনজনকে এক পাশে ডেকে নিয়ে কি যেন বলেছিলেন সুবহা ভাবী। নিশ্চয়ই এই দুর্বুদ্ধিই ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন বাচ্চাদের মাথায়। মনে মনে দীর্ঘশ্বাস গোপন করলো নূহা। ভালোবাসা কিছু কিছু মানুষকে কতই না অবুঝ করে দেয়। সব সম্ভাবনার দ্বার বন্ধ হয়ে যাবার পরও তাদের ভালোবাসা মনের কোনে দিয়া জ্বালিয়ে রাখে, হঠাৎ যদি কোন গুপ্ত দরজার সন্ধান পেয়ে যায় সেই আশায়।

কটেজে ঢুকেই জিশান নূহাকে টেনে ধরে বলল, মা চলো সবার আগে আমার রুমে যাবে।

নাবিহা বলল, তোমার ঐটা রুম না গারবেজ ড্রাম। মামণি নির্ঘাৎ বমি করে ফেলবে। তাই তুমি আগে গিয়ে রুম পরিস্কার করো ততক্ষণে মামণি আমার রুমে বসে রেষ্ট নিবে।

জিহাদ স্বভাব সুলভ দুই ভাইবোনের ঝগড়া শুনে হেসে কুটিকুটি হতে লাগলো। নূহাও হেসে বলল, কারো রুমেই যাব না এখন। সবার আগে তোমাদের স্টাডি রুম দেখতে চাই। এখনো কি আগের মতোই আছে কিনা দেখতে চাই।

জিহাদ হেসে বলল, তুমি তো দুই বছর আগে শেষবার দেখেছো মা। এখন সবকিছু বদলে গিয়েছে। আমরা এখন আগের মতো একসাথে বসে পড়ি না। যার যার রুমে বসেই পড়ি। আমাদের ছোটবেলার সেই স্টাডি রুমকে পাপা এখন হলরুম বানিয়েছে। মাঝে মাঝে যখন বাড়িতে বসে মিটিং করে তখন ঐ রুমে মিটিং করেন পাপা। মা চলো তোমাকে সবার আগে আমাদের বাগান দেখাই।    

নূহা হেসে বলল, তোমাদের আলাদা বাগানও আছে?

জিশান হেসে বলল, হ্যা মা। সেতো প্রায় এক বছর হয়ে গিয়েছে। রান্নাঘরের পাশে যে খালি জায়গাটা ছিল ওখানে পাপা আমাদের জন্য বাগান বানিয়ে দিয়েছে। চলো তুমি দেখবে।

তিনজন মিলে টানতে টানতে নূহাকে বাগানে নিয়ে এলো। বাগানে ফুটে থাকা হরেক রকমের কিন্তু সব একই রঙের ফুল দেখে বিস্ময় আর মুগ্ধতার মিশ্র স্রোতে প্লাবিত হলো নূহার অন্তর। মামণির চেহারায় ফুটে ওঠা বিস্ময়কর মুগ্ধতা দৃষ্টি এড়ালো না নাবিহার। হেসে বলল, আমাদের বাগানে বিভিন্ন ধরণের ফুল গাছ থাকবে। কিন্তু সব ফুল শুধু তোমার পছন্দের রঙের হবে এই আইডিয়া ভাইয়ার ছিল মামণি। পাপাকে আমাদের ইচ্ছের কথা জানানোর পর পাপা আমাদেরকে সব তোমার প্রিয় রঙের ফুল এনে দিয়েছিল।  

জিহাদ নূহার গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে বলল, এই বাগানটা আমরা শুধু তোমার জন্য করেছি। তোমার পছন্দ হয়েছে তো মা?

অপ্রতিরোধ্য কান্না ভেতর থেকে টেনে ধরেছিল নূহার কন্ঠস্বর। মুখে কিছুই বলতে না পেরে তিন সন্তানকে বুকে জড়িয়ে ধরলো। তাকে কান্না করলে বাচ্চারাও কান্না করবে তাই নিজেকে সামলে নিয়ে হাসি মুখে বলল, ভীষণ পছন্দ হয়েছে আমার তোমাদের বাগানটি। কিন্তু এতদিন তোমরা কেন আমাকে বলোনি বাগানের কথা?

জিশান হেসে বলল, আগে বলে দিলে কি এমন সারপ্রাইড হতে তুমি? তোমাকে সারপ্রাইজ দেবো সেজন্যই বলিনি আমরা।

দুষ্টুমিতে ঝিলমিল করে ওঠা তিন সন্তানকে জড়িয়ে ধরে আদর করে নূহা বলল, এখন বলো কি খাবে তোমরা? মামণি আজ তোমাদের কিচেনেই তোমরা যা খেতে চাইবে রান্না করবো ইনশাআল্লাহ।  

উচ্ছ্বাসিত কন্ঠে তিনজন বলল, সত্যি মামণি?

নূহা হেসে বলল, অবশ্যই সত্যি। কি খাবে বলো?

জিশান বিশাল হাসি দিয়ে বলল, পিজা খাবো।

নূহা হেসে বলল, ঠিকআছে। আর তোমরা দুজন?

নাবিহা বলল, আমরাও। পিজা আমরা তিনজনই অনেক পছন্দ করি মামণি। কিন্তু পাপা খেতেই চায় না চীজের কারণে। কোনদিন যদি জোর করে আমরা খাওয়াই পাপা চেহারা করুন করে বলে, নটি কিডস তোমাদের কারণে আজ এক্সট্রা একঘন্টা জীমে থাকতে হবে আমাকে। দাদী, নানুমণি আর চাদীমণি এজন্য পাপাকে কত বকা দেয়, ধরে মারেও কিন্তু তবুও পাপা কোন মজার খাবার খেতে চায় না।

নূহা হেসে বলল, তোমাদের পাপা আগেও এমনই ছিলেন। উনি আসলে ফীট থাকতে পছন্দ করেন। তোমরা ড্রেস চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে নাও। তারআগে আমাকে দেখিয়ে দাও কিচেনের কোথায় কি আছে।

জিহাদ হেসে বলল, কিচেনের কোথায় কি আছে সেটা তুমি জানো মা। তুমি মনেহয় খেয়াল করোনি আমাদের এই কটেজটা হুবহু অরেগানোর সেই কটেজটার মতোই, যেখানে তুমি আর পাপা চার মাস ছিলে। অরেগানোর সেই বাসাটা তুমি যেভাবে সাজিয়েছিলে এখানের সবকিছু পাপা আর আমরা তিনজন মিলে ঠিক সেভাবেই সাজিয়েছি। ওখান থেকে সবকিছু আনিয়ে নিয়েছিল পাপা।

নূহা হেসে বলল, হুম, এজন্যই সবকিছু এত চেনা চেনা লাগছিল। ঠিকআছে তোমরা তাহলে যাও ফ্রেশ হয়ে যাও।

ওকে মামণি আমরা ফ্রেশ হয়ে আসছি তোমাকে সাহায্য করবো। বলতে বলতে তিনজন ছুট লাগালো। নূহাও ধীর পায়ে কিচেনে এসে দাঁড়ালো। একদম সাজানো গোছানো ছবির মতো কিচেন। বিয়ের পর জাওয়াদের যে জিনিসগুলো সবচেয়ে বেশি অবাক করেছিল তারমধ্যে একটি এই গোছানো স্বভাবটা ছিল। আবার নিজের অগোছালো স্বভাবের কারণেই জাওয়াদের কাছে সবচেয়ে বেশি ধমক খেয়েছে। যখনই কোন কারণে জাওয়াদের উপর রাগ হতো সারা রুম এলোমেলো করে বসে থাকতো। এই একটা জিনিস সবচেয়ে বেশি বিরক্ত করতো জাওয়াদকে। রুমে ঢুকে তাই রুমের অবস্থা দেখে জাওয়াদের মাথা এলোমেলো হয়ে যেত। কতদিন কান ধরে নূহাকে রুম থেকে বের করে দিয়েছে। দরজা বন্ধ করার সময় বলল, আবার যদি কোনদিন আমার রুমের ত্রিসীমানায় তোমাকে আমি দেখি, পিটিয়ে হাত পা ভেঙে গুড়া গুড়া করে দেবো তোমার। নূহা উল্টো জবাব  দিতো, আমি নীচে যাচ্ছি বাবা-মামণির সাথে গল্প করার জন্য। ফিরে এসে যেন দেখি আমার রুম একদম সাজানো গোছানো। নয়তো কিন্তু তোমার চাকরি নট। সাথে আমার ভাইয়াদের দিয়ে এমন ধোলাই খাওয়াবো যে অন্য সব খাবারের স্বাদ ভুলে যাবে। শ্যাটাপ এন্ড গেটলস্ট বলে তখন রুমের দরজা বন্ধ করে দিতো জাওয়াদ। এরপর দুইজনের চেহারাতেই ফুটে উঠতো দুষ্টুমি মাখা হাসি। দরজার এপাশে দাঁড়িয়ে নূহা আর ওপাশে দাঁড়িয়ে জাওয়াদ হাসতো একে অন্যের দুষ্টুমির কথা ভেবে।

সেইসব দুষ্টুমিরা এই মূহুর্তেও অব্যর্থ নিপুণতায় নূহার ঠোঁটের কোণে মাখিয়ে দিয়ে গেলো হাসির প্রলেপ। জাওয়াদ প্রায়ই বলতো, তোমার কর্মকাণ্ড দেখে তো মনেহয় না ঘর সংসার করার প্রতি বিন্দুমাত্র কোন আগ্রহ আছে। তোমার সমস্ত আকর্ষণ নিত্যনতুন দুষ্টমির জাল বুনে আমাকে অস্থির আর বিরক্ত করার মাঝে। আসলেই তো এত বেশি দুষ্টুমি কেন করতো তখন? ঘুম থেকে উঠেই সবার আগে প্ল্যান নিতো আজ কি কি যন্ত্রণা দেবে জাওয়াদকে। জাওয়াদ ধমক দেবে, কান ধরে রুম থেকে বের করে দিয়ে ভেতর থেকে দরজা লক করে দেবে, প্রচন্ড রাগের ভাণ করবে কিন্তু কখনোই এক মুহূর্তের জন্যও তাকে ভালোবাসতে ভুলে যাবে না। সেজন্যই হয়তো এতটা বাঁধনহারা হয়েছিল ঐ সময় মনের দুষ্টু সত্ত্বাটা। আসলে মনের দুষ্টু সত্ত্বাটা দুষ্টু হলেও অনেক বুদ্ধিমান। সেখানেই বাঁধনহারা পেখম মেলে যেখানে তাকে ঢিল ছুড়ে আহত করার মতো কিংবা আঘাত দেবার কেউ থাকে না। বরং তার পেখমের সৌন্দর্য মুগ্ধ চোখে অবলোকন করার মত কেউ হয় সে। যে মুগ্ধতার সাগরের হাবুডুবু তো খাবেই সাথে চেহারায় বিরক্তির মাক্স লাগিয়ে বলবে, এই বালিকা এত দুষ্টু কেন? পাগল হলে নাহয় পাগলদের ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া যেত। কিন্তু দুষ্টুদের জন্য তো ডাক্তারও নেই। এই অতি দুষ্টু বালিকাকে নিয়েই কি তাহলে আমাকে সারাটা জীবন কাটাতে হবে?

জিশানকে কিচেনে ঢুকতে দেখে ভাবনাতে সমাপ্তি টেনে দিয়ে হাসি মুখে নূহা বলল, এত জলদি কিভাবে চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে গেলেন আপনি? আচ্ছা তো শুধু টিশার্ট বদলেই ছুটে এসেছেন আপনি?

জিশান হাসতে হাসতে বলল, আমি তোমার কাছে থাকাকে একটুও মিস করতে চাই না। মা তোমাকে জটপট পিজ্জা বানানো শিখিয়ে দেই?

জটপট পিজ্জা বানানো? অবশ্যই শিখতে চাই আমি। কিভাবে বানায়? হাসি মুখে জানতে চাইলো নূহা।

জিশান হেসে জবাব দিলো, কয়েক মাস আগে একদিন আমরা পিজ্জা খেতে চাইলাম। কিন্তু পিজ্জার ডো রেডি হতে তো বেশ সময় লাগে। পাপার এক ঘন্টা পরেই মিটিং ছিল। তখন পাপা কি করলো শুনবে?

কি করলো?

ইস্ট, ময়দা ইত্যাদি সবকিছু দিয়ে পিজ্জার ডো তৈরি করলো। এরপর একটা পাত্রে গরম পানি দিয়ে সেটার উপরে পিজ্জার ডো’র বোলটা রেখে প্রিহিটেড ওভেনের ভেতর রেখে দিয়েছিল। পনেরো মিনিট পর বের করে দেখা গেলো ডো ফুলে একদম রেডি পিজ্জা বানানোর জন্য। তখন আমাদেরকে জটপট পিজ্জা বানিয়ে দিয়ে পাপা মিটিংয়ে চলে যেতে পেরেছিল। পাপা ফাটাফাটি জিনিয়াস তাই না মা?

নূহা হেসে বলল, আলহামদুলিল্লাহ। ঠিকআছে আমরাও তাহলে আজ পাপার জটপট ফর্মূলাতেই পিজ্জা বানাই চলো। ডান দিকের ঐ কাবাডে ময়দা তাই না?

জিশান বিশাল হাসি দিয়ে বলল, হ্যা। এই তো তোমার সব মনে আছে। মা তুমিও ফাটাফাটি জিনিয়াস।

নূহা আর জিশান হাসছিল এরই মধ্যে জিহাদ আর নাবিহাও হাজির হয়ে গেলো। সবাই মিলে তখন পিজ্জা বানানোর আয়োজনে ব্যস্ত হলো। কিছুক্ষণ পর জিহাদ বলল, মা তুমি আমাদের আইকিউ, ইকিউ টেস্ট করবে না? আমরা যখন একসাথে রান্না করি পাপা মজার মজার সব ধাঁধা ধরে আমাদের তিনজনকে। কখনো আমাদের জেনারেল নলেজ টেস্ট করে। আবার কোন কোন দিন আমরা তিনজন মিলে পাপার টেস্ট নেই।

কিন্তু পাপা সব প্রশ্নের জবাব বলে দেয়। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো জিশান।

নূহা হেসে বলল, আমি আর তোমাদের পাপা যেদিন একসাথে রান্না করতাম তখনো উনি এমন করতেন। নানান ধরণের ধাঁধা জিজ্ঞেস করতেন, জেনারেল নলেজ টেস্ট করতেন। আমার তো খুবই রাগ হতো। কিন্তু তোমরা যে ভীষণ আনন্দ পাও তোমাদের কথা শুনেই বোঝা যাচ্ছে। তোমরা আসলেই অনেক গুডি গুডি একেকটা বেবী। আচ্ছা তোমরা প্রশ্ন করো মামণিকে।

জিহাদ হেসে বলল, প্রথম প্রশ্ন আমি করি মাকে। বলো তো, এমন কোন জিনিস আছে যা আমরা করি কিন্তু কখনোই স্পর্শ করতে পারি না।

নূহা হেসে ফেলে বলল, এটা আমি পারবো। কারণ আমাকে এটা সারাক্ষণই করতে হয়। জবাব হচ্ছে, চিন্তা।

নাবিহা হেসে বলল, রাইট। তোমাকে আমাদের তিনজনের পক্ষ থেকে একটা করে আদর। বলা মাত্রই তিনজন ঝাপিয়ে পড়ে আদর দিলো নূহাকে। নূহা হাসতে হাসতে বলল, পাপা কি এমন সঠিক জবাবের জন্য তোমাদেরকে আদর দেন?

নাবিহা হেসে বলল, হ্যা। প্রতিটা সঠিক জবাবের পুরষ্কার কি হবে সেটা নিয়ে অনেক চিন্তা গবেষণা করার পর আমরা আবিষ্কার করেছি এই পৃথিবীতে সব অমূল্য উপহার হচ্ছে প্রিয়জনদের আদর ও ভালোবাসা। তাই প্রতি সঠিক জবাবের জন্য পাপা আমাদেরকে একটা করে আদর দেন। আর ভুল জবাবের জন্য দেন দুটা করে আদর।

ভুল জবাবের জন্য দুটা করে আদর কেন? অবাক কন্ঠে প্রশ্ন করলো নূহা।

জিশান হেসে বলল, একটা আদর হচ্ছে ভুলের জন্য সান্ত্বনা আর অন্যটা হচ্ছে উৎসাহ দেয়ার জন্য। জানো মা মাঝে মাঝে আমরা তিনজনই ইচ্ছে করে ভুল উত্তর দেই পাপার কাছ থেকে বেশি আদর নেবার জন্য।

জিহাদ হাসতে হাসতে বলল, পাপা তখন বলেন, আজ যে এইখানে চিটারদের মেলা বসেছে সেটা আমি খুব ভালো মতোই বুঝতে পারছি।

মনের আনন্দে হাসলো কিছুক্ষণ সবাই মিলে। এরপর জিশান বলল, এবারের প্রশ্ন আমি করবো। মা বলো, কালো ক্যানভাসে আঁকা ঝিকমিক লাইট, কনট্রাস্ট চেঞ্জ হয় মাঝে মাঝে হাইড। এটা কি?

জবাব 'আকাশের তারা' জানা থাকলেও চিন্তার গভীর সমুদ্রে পড়েছে এমন ভাণ করলো নূহা। বেশ কিছুক্ষণ চিন্তা ভাবনা করে দুঃখী দুঃখী চেহারা করে বলল, আচ্ছা হার মেনে নিলাম। এখন আমাকে সান্ত্বনা আর উৎসাহ দাও তোমরা তিনজন মিলে।

তিনজন তখন আবারো ঝাঁপিয়ে পড়ে মামণিকে আদরে ভাসিয়ে দিলো। বাচ্চাদের সাথে হাসি আনন্দ করতে করতে পিজ্জা বানিয়ে ওভেনে ঢুকিয়ে দিয়ে নূহা বলল, পিজ্জা হতে তো বিশ মিনিট লাগবে। এতক্ষণ আমরা কি করবো সেটা বলো?

নাবিহা বলল, মামণি চলো তোমাকে মজার একটা জিনিস দেখাবো। কিন্তু সেজন্য তোমাকে আমাদের সাথে পাপার রুমে যেতে হবে।

এক মূহুর্তের জন্য থমকে গেলেও মুখের হাসি ধরে রেখেই নূহা বলল, পাপা বাসায় না থাকলে পাপার রুমে যাবার পারমিশন আছে তোমাদের?

জিহাদ হেসে বলল, হ্যা আছে।

নূহা হেসে বলল, তাহলে আমারো পারমিশন আছে। চলো যাই দেখে আসি কি সেই মজার জিনিস।

গত প্রায় চৌদ্দ বছরে কখনোই জাওয়াদের রুমে ঢোকা হয়নি নূহার। রুমের দিকে বাড়ানো প্রতিটা কদমেই তাই একটু করে বেড়ে যাচ্ছিলো হৃদকম্পন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন