রবিবার, ৩১ জানুয়ারী, ২০১৬

আমাদের আনন্দবাড়ি...৬




একরাশ কৌতুক ভরা চোখে সামনে বসে অবিরাম কান্নারত ছোট বোনের দিকে তাকিয়ে ছিল নূহা। পারিবারিক বৈঠক শেষ করে নিজের বেডরুমে যেয়েই বাপী ঘোষণা দিয়েছেন আজ থেকে আত্মজার পড়াশোনা বন্ধ এবং বিয়ের জন্য পাত্র খোঁজা শুরু। আগে বিয়ে হবে এরপর যদি সংসার সামলে পড়াশোনা করতে পারে করবে, নয়তো শুধুই সংসারই করবে। করার মতো সংসার করতে পারলে আর কোন কিছু করার দরকারও নেই মেয়েদের। আম্মির সামনে যখন এই ঘোষণা দিচ্ছিলেন তখন বাপীর বারান্দায় বসেছিল আত্মজা। তাই বাপীর সব কথাই শুনতে পেয়েছে। এরপর বাপীর রুম থেকে বেড়িয়ে ছুটে এসে নূহাকে ধরে হাউমাউ করে কান্না জুড়ে দিয়েছে আত্মজা। প্রথমে কিছুই বুঝতে না পেরে নূহা নিজেও বেশ ঘাবড়ে গিয়েছিল। কান্নার ফাঁকে ফাঁকে আত্মজার মুখে কেন কান্না করছে সেই কথা শোনার পর বহু কষ্টে বাঁধনহারা হাসিতে লাগাম পড়িয়ে চুপ করে বসে আছে নূহা। জীবনে ঘোর বিপদের আগমনী বার্তা শুনতে পেয়ে পরম আশ্রয় ভেবে নূহার কাছে ছুটে এসেছে আত্নজা। ওর মনের শঙ্কা যতই মজার কিংবা অমূলক হোক না কেন। বুঝিয়ে বলে ওর মনের ভয় কাটানোর আগেই হেসে ওর কথাগুলো উড়িয়ে দিয়ে ওকে আশাহত করতে চাইনি। আবার বাপীর স্বভাব খুব ভালো করেই জানা আছে নূহার। জীবনের প্রতিটি মূহুর্তকে সমান গুরুত্বের সাথে নেন। সবকিছুতেই তাই খুব বেশি সিরিয়াস। প্রতিটি ঘটনা থেকেই সবার আগে নিজের করণীয় কি হবে সেই শিক্ষা খুঁজে বের করেন বাপী। জীবনে অর্জিত সব শিক্ষাই যে নিজের কাজে লাগে না। অতি জ্ঞানী ও গুণী মানুষ হবার পরেও বাপী এটা বোঝেন না। যারফলে নিজ জীবনে প্রযোজ্য নয় এমন শিক্ষা প্রয়োগ করতে গিয়ে নিজের সাথে সাথে অন্যান্যদের জন্যও সমস্যা তৈরি করে ফেলেন। এই যেমন, নায়লার ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়েছেন এই ধরণের কান্ড নিজের মেয়েকে কিছুতেই ঘটাতে দেয়া যাবে না। সুতরাং, এখনই বিয়ে দিয়ে দিতে হবে।    

আরো কিছুক্ষণ চুপ থেকে আত্মজার মাথায় হাত বুলিয়ে নূহা বলল, তুই অকারণে এমন হাপুস হুপুস করে কান্না কেন করছিস বলতো?

কান্না অব্যহত রেখে আত্মজা বলল, কারণ বাপী সবসময় বলার সাথে সাথে সেই কাজ করে। তুমি দেখ সত্যি সত্যিই আমার জন্য পাত্র ঠিক করে ফেলবে। তখন আমি কি করবো?

নূহা হেসে বলল, পাত্র ঠিক করে ফেললে বিয়ে করবি। এমন তো নয় যে তোর বিয়ের বয়স হয়নি। উনিশ বছর বয়স তোর। তোর বয়সে আমি তিন বাচ্চার আম্মা হয়ে গিয়েছিলাম।

আপ্পা প্লিজ ফান করো না এখন। আমি সত্যিই খুব ভয় পাচ্ছি। এমনিতেই আমার মন খুব খারাপ গত কয়েকদিন ধরে। আমি ফ্যাশন ডিজাইনিং নিয়ে পড়তে চাইছি কিন্তু বাপী কিছুতেই রাজী হচ্ছে না, বাপী কি বলে শুনবে? বলে, ফ্যাশন ডিজাইনিং নাকি দর্জিগিরি।

নূহা হাসতে হাসতে বলল, হ্যা আমি শুনেছি। বাপী তো সবসময় এমন একটুতেই হাঙ্গামা বাঁধিয়ে দেন। তুই অকারণে কান্না বন্ধ কর।

তুমি যাবার আগে বাপীকে বলে যাবে যদি ফ্যাশন ডিজাইনিং পড়তে দিতে না চায় আমি পড়বো না। আমি বাপীর কথা মতো মেডিকেলেই ভর্তি হবো। কিন্তু এখন কিছুতেই বিয়ে করবো না আমি। ছোটবেলা থেকে সবসময় সবকিছু চাপিয়ে দেয়া হয়েছে আমাদের উপর। কখনোই আমাদের ইচ্ছে, পছন্দকে গুরুত্ব দেয়া হয়নি। এসব আর ভালো লাগে না।

সেক্ষেত্রে তো বিয়ে বিশাল বড় একটা সুযোগ এসব চাপাচাপি থেকে মুক্তি পাবার। তুই বোকার মত আপত্তি করছিস কেন? বিয়ে করে নিজের সংসারে চলে যা। তখন যা ইচ্ছে, যা পছন্দ করতে পারবি।

সব মেয়েদের ভাগ্য তোমার মত এত বেশি সুইট হয় বুঝি? বিয়ের পর হয়তো দেখা যাবে বাপীর কারাগার থেকে বেরিয়ে, আরেকজনের অন্ধ কুঠুরিতে গিয়ে বন্দী হয়েছি।

নূহা হাসি মুখে বলল, দোয়া করি আমার মতো ভাগ্য যেন এই পৃথিবীর কোন মেয়ের নাহয়। স্পেশালি তোর তো অবশ্যই না।  

নূহার মুখে হাসি থাকলেও কথাগুলো শুনে এক মূহুর্তের জন্য থমকে গেলো আত্মজা। তারপর নূহার হাত নিজের হাতের মধ্যে টেনে নিয়ে বলল, আই এম সরি আপ্পা। আমি তোমাকে কষ্ট দেবার জন্য বলিনি। রাহাত ভাইয়া কত খেয়াল রাখেন তোমার, তোমার খুশির জন্য যে কোন কিছু করতে পারেন। তাই ওভাবে বলেছি।

নূহা হেসে বলল, আরে তুই তো দেখছি কৈফিয়ত দিতে বসে গিয়েছিস। আমি খুব ভালো করেই জানি তুই কোন অর্থে বলেছিস। আসলে কি জানিস? কোন ব্যাপারে দুটি ভিন্ন মতের মধ্যে সবসময়ই একটি সঠিক আর অন্যটি বেঠিকই হবে এমন কোন নিয়ম নেই। অনেক সময় ভিন্ন দুটি মতও সঠিক হতে পারে অবস্থান ভেদে। যাইহোক, এসব কথা থাক। আলহামদুলিল্লাহ এসব বলার ফাঁকে তোর কান্না অন্তত বন্ধ হয়েছে।

কিন্তু তুমি প্রমিস করো যাবার আগে বাপীকে বলে যাবে আমি যখন বিয়ে করবো না।

আমি প্রমিস করছি যাবার আগে তোর পড়াশোনার ব্যাপারে অবশ্যই বাপীর সাথে আমি কথা বলে যাব।

আর বিয়ে?

বিয়ের কথা আন্দাজে কিভাবে বলবো? বাপী যদি তোর বিয়ের ঘোষণা দিতেন তখন নাহয় বলা যেত।

ঘোষণা তো দিয়েছেনই বাপী। আমি নিজ কানে শুনে এসেছি। বিশ্বাস না হলে তুমি আম্মিকে জিজ্ঞেস করো।

বিশ্বাস করেছি তোর কথা। কিন্তু তুই বাপী আর আম্মির বেডরুমে বলা একান্ত ব্যক্তিগত কথা আড়ি পেতে শুনে এসেছিস। এটা তো অন্যায় হয়েছে তাই না? সন্তানদের কোন রাইট নেই বাবা-মাদের ব্যক্তিগত কথোপকথন কিংবা কর্মকান্ডে ইন্টার ফেয়ার করা। আড়ালে, চুপিচুপি তাদের কথা শোনা, তাদের দিকে নজর রাখা।

আমি ইচ্ছে করে লুকিয়ে কথা শুনিনি আপ্পা। আমি বারান্দায় বসে ডিজাইন করছিলাম।

এটা কোন যুক্তি হতে পারে না আত্মজা। ঠিকআছে মানছি তুই বারান্দায় বসে ডিজাইন করছিলি। কিন্তু বাপী যখন রুমে ঢুকেছিলেন তখন তোর চলে আসা উচিত ছিল। অন্তত পক্ষে তোর উপস্থিতি জানান দেয়া উচিত ছিল উনাদের দুজনকে। হলরুম বা কমন রুম হলে কিছু বলার ছিল না। কিন্তু কারো বেডরুমে অবস্থান করতে হলে নিজের উপস্থিতি জানান দেয়া উচিত। আর ক্যাপলদের রুমে তো বিনা অনুমতি নিয়ে ঢোকাটাই অন্যায়।

আই এম সরি আপ্পা আর কখনোই এমনটা হবে না ইনশাআল্লাহ।

নূহা হেসে বলল, হয়েছে এখন এমন অপরাধী চেহারা বানাতে হবে না। তারচেয়ে আমার কিছু কথা মন দিয়ে শোনো।

আত্মজা হেসে বলল, তোমার সব কথাই আমি সবচেয়ে বেশি মন দিয়ে শুনি। কারণ তুমি ছাড়া এই বাড়িতে আর কেউ মন লাগানোর মতো কথা বলতেই পারে না।

হেসে বোনকে কাছে টেনে নিয়ে নূহা বলল, জীবনের প্রতি প্রচন্ড বিরক্ত, বিতৃষ্ণা নিয়ে কিছু কিছু মানুষ আসে আমার কাছে। এমন মানুষদের জন্য আমার বিশেষ একটা থেরাপি আছে। থেরাপিটি হচ্ছে “একটু পিছনে ফিরে তাকানো”। অবশ্য শুধু সমস্যাগ্রস্ত মানুষদের জন্যই নয়। আমাদের সবারই জীবন পথে চলতে চলতে মাঝে মাঝে উচিত একটু থমকে দাঁড়ানো। এরপর এক ঝলক পিছনে ফিরে তাকানো। জীবনের প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তির খাতাটা নেড়ে চেড়ে দেখা। এমনটা করলে বেশিরভাগ সময়ই অপ্রাপ্তি গুলোকে বিশেষ রহমত মনেহয় নিজের জন্য। যেমন ধর আমাদের ছোটবেলার কথাই যদি বলি। আমাদের ছোটবেলা কেটেছে ভাইয়াদের কঠোর অনুশাসনের মধ্যে দিয়ে! স্বাধীন জীবন কাকে বলে কোনদিন বুঝিনি আমরা সমবয়সী ভাইবোনেরা। ঘরে হোক আর বাইরে কঠিন নিয়মানুবর্তিতা মেনে চলতে হয়েছে জীবনে প্রতিটি ক্ষেত্রে। শরীয়তের ব্যাপারে একটু এদিক সেদিক হলেই থেকে শাস্তি পেতে হয়েছে। এমনকি কোন দিন যদি কোন কারণে আযানের সাথে সাথে নামাজ আদায় করতে সামান্য অলসতা করেছি সেজন্যও জবাবদিহী করতে হতো।

আত্মজা ভীত কন্ঠে বলল, তাহলে তো তোমাদের অবস্থা আমাদের চেয়েও শোচনীয় ছিল।    

নূহা হেসে বলল, হুম, তা বলতে পারিস। তবে কোন নিয়ম কেন মেনে চলতে হবে, মেনে চললে কি কল্ল্যাণ আর না মেনে চললে কি অকল্ল্যাণ সাধিত হবে তা সবসময়ই খুব সুন্দর করে বুঝিয়ে বলতেন আমাদেরকে ভাইয়ারা। আবার শাস্তি দেবার সময়ও পেছনে কি কারণ কাজ করছে বুঝিয়ে বলতেন। কিন্তু বয়সেরও তো দাবী আছে। সব বয়সে কি আর সবকিছু বুঝলেও মানতে চায় মন? তাই ভাইয়াদের সেই কল্ল্যাণ কামনাকে জীবনের সবচেয়ে বড় বেদনা মনেহত আমাদের কাছে। নিজেদেরকে সোনার খাঁচায় বন্দিনী মনেহত। কিন্তু একটা সময় আমরা উপলব্ধি করেছি কতই না সঠিক ছিলেন আমাদের ভাইয়ারা। এখনো যখন আশেপাশে দেখি অনেকেই ইচ্ছে থাকার পরও শরীয়তের মৌলিক বিষয়গুলো মেনে চলতেই হিমশিম খাচ্ছে। সঙ্গ দোষে ভুল পথে পা বাড়াচ্ছে। দুনিয়াবী বিষয় নিয়ে মত্ত হয়ে আছে। অতি ক্ষুদ্র কারণে আল্লাহর নাফরমানি করছে। অকৃতজ্ঞ আচরণ করছে। সম্পর্কের বন্ধন সমূহকে অবমূল্যায়ন করছে। তখন বুঝি কতটা কল্যাণকর ছিল ভাইয়াদের সেই অতি সাবধানতা। তাই আমি নিশ্চিত হয়ে তোকে একথা বলতে পারি যে, বর্তমান সময়ে যে জিনিসগুলোকে তোদের কাছে পরিবারের বড়দের বাড়াবাড়ি মনেহচ্ছে। একটা সময়ে গিয়ে তোদের কাছেও এসব কল্ল্যাণকামীতার রুপেই উদ্ভাসিত হবে ইনশাআল্লাহ।

উফ, আপ্পা এজন্যই তোমার সাথে কথা বলতে চাই না। তুমি উল্টো নিজের চোখেই অপরাধী সাজিয়ে দাও আমাদেরকে।

নূহা হেসে বলল, উহু, তোরা যে অপরাধকে অপরাধ মনেই করিস না। আমি শুধু সেটার উপলব্ধিটা জাগিয়ে দেবার চেষ্টা করি। সন্তানদের সুন্দর জীবনের চিন্তায় বাবা-মাদেরকে বাধ্য হয়েই সন্তানদের মনোবেদনার কারণ হয়ে দাঁড়াতে হয়। আর এমনটা করতে গিয়ে সন্তানদের চেয়ে অনেকগুণ বেশি কষ্ট বাবা-মাদেরকে ভোগ করতে হতে হয়। আলহামদুলিল্লাহ এখন যেমন আমি বুঝি। একদিন তুইও বুঝবি ইনশাআল্লাহ। তখন মনেহবে ইশশ যদি ঐ মূহুর্তটিতে আবার ফিরে যেতে পারতাম তাহলে বাপীর খুশির জন্য আমি অবশ্যই সেই কাজটিই করতাম, যেটা বাপী করতে বলেছিলেন আর আমি না করার জেদ আঁকড়ে ছিলাম।

মুখে কিছু না বলে দুহাতে নূহাকে জড়িয়ে ধরে চুপ করে বসে রইলো আত্মজা। নূহা হেসে বলল, আমরা আসলে খুব বেশি সৌভাগ্যবান মানুষ। বর্তমানের এই স্বার্থপর যুগে আমরা এমন ভালোবাসাত টইটুম্বুর পরিবার পেয়েছি। এটা ঠিক যে আমাদের পরিবারের কারো কারো ভালোবাসা প্রকাশের ধরণটা খুবই অদ্ভুত। যেমন বাপী। রাগটাই বাপীর ভালোবাসা। আবার কড়া কড়া কথাই আম্মির ভালোবাসার স্টাইল। কিন্তু উনারা সবাই অসাধারণ। আমি যখন চুপ করে মাঝে মাঝে আমাদের বাবা-মায়েদের নিয়ে ভাবতে বসি। অনুভব করি, পাপাকে দেখেই শিখে নিয়েছিলাম প্রকৃতি ও ঘটমান সবকিছু থেকে তুলে নিতে শিক্ষা। মামণি দিয়েছেন ভালোবাসার পরশে ইট-পাথরের দেয়ালকে ঘর বানানোর দীক্ষা। বাপীর সাথে বিচরণ করেছি জ্ঞানরাজ্যে মেলে দিয়ে আত্নউন্নয়নের ডানা। আম্মির তিক্ত শব্দের আড়ালে লুকায়িত জীবনকে উপলব্ধিময় শত ভাবনা। সহনশীলতা আর ধৈর্য্যের অপরূপ সংমিশ্রণে বাবা সর্বদা পরম নির্ভরতার আশ্রয়। টক-ঝাল-মিষ্টি কথার ফুলঝুরি ছড়িয়ে মা আমাদের ভুবনকে করে তোলেন স্বিগ্ধ, আনন্দময়। আলাদা হয়েও নিজ নিজ অবস্থানে বাবারা সবাই রাহবার সুন্দর স্বপ্নের। মায়েরা মোদের মমতার ছোঁয়া মেখে সাহস যোগান শেষ হবেই কণ্টকাকীর্ণ পথের। আসলে কি জানিস? বাবা-মা সন্তানের তরে বাতিঘর জগতের চোরাবালি ও গোলকধাঁধাময় পথে। ঝঞ্ঝা-বিক্ষুব্ধতা সয়েও এগিয়ে চলা যায় অবিচল যদি তাদের দেয়া সত্য ও সুন্দরের শিক্ষা থাকে সাথে।

আবেগ আপ্লুত কন্ঠে আত্মজা বলল, আলহামদুলিল্লাহ আমরা সত্যিই অনেক বেশি সৌভাগ্যশালী আপ্পা। কিন্তু রাগ হলে আসলে এসব কথা মনে থাকে না। আবার যখন আমার ফ্রেন্ডদেরকে স্বাধীন ভাবে ওদের সব সিদ্ধান্ত নিতে দেখি। তখন মনেহয় আমাদের নিজেদের ইচ্ছে-অনিচ্ছার কোন মুল্যই নেই। কিন্তু যখন তোমার সাথে কথা তখন নিজের ভুল বুঝতে পারি। আপ্পা তুমি কেন দূরে থাকো আমাদের কাছ থেকে? প্লিজ চলে এসো না বাড়িতে। তুমি বাড়িতে থাকলে আমরা অন্তত মন খুলে কথা বলার একজন মানুষ পাবো। যে কখনোই বিরক্ত হবে না আমাদের কোন কথা শুনে। বরং মনের প্রকাশ করতে না পারা ভাবনাগুলোও বুঝে নিয়ে আমাদেরকে সুন্দর করে বুঝিয়ে বলবে।

নূহা হেসে বলল, সেকি এমন কেউ নেই বাড়িতে? সুবহা ভাবী আমার চেয়েও মনোযোগী শ্রোতা। আমি যখন তোদের বয়সী ছিলাম মনের সব কথা সুবহা ভাবীকে বলতাম। আর ভাবী সুন্দর সুন্দর কথা বলে আমার মন মূহুর্তেই ভালো করে দিতেন।

হ্যা সুবহা ভাবীও অনেক ভালো। কিন্তু আমার তোমার সাথে কথা বলতে বেশি ভালো লাগে। তুমি চলে এসো না আপ্পা। জাওয়াদ ভাইজান তো বাড়িতে থাকেনই না। আর থাকলেও নিজের জগতেই থাকেন। জানো আমি লাস্ট ভাইজানকে গত মাসের ফার্স্ট উইকে একবার দেখেছিলাম। সেটাও বাপী হঠাৎ অসুস্থ ফিল করছিলেন বলে ভাইজান দেখতে এসেছিলেন।

নূহা হেসে বলল, আচ্ছা ঠিকআছে আজকে আমি থাকবো ইনশাআল্লাহ। তোর যত কথা আছে সব জমা কর সারাদিন বসে। এরপর সারারাত বসে তোর কথা শুনবো। কিন্তু এখন উঠছি আমি। নাহিবা, জিশান আর জিহাদকে স্কুল থেকে আনতে যাবো।

আত্মজা হেসে বলল, সারপ্রাইজ দেবে ওদেরকে? অনেক খুশি হবে। ঠিকআছে আপ্পা তুমি যাও।

ছোটবোনের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে সুবহা ভাবীর সন্ধানে ছুটলো নূহা। ভাবীকে সাথে নিয়ে বাচ্চাদেরকে স্কুল থেকে আনতে যাবে। একান্ত কিছু কথাও ছিল ভাবীর সাথে। একসাথে পথ চলতে চলতে সেগুলোও শেয়ার করে নেয়া যাবে।  

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন