রবিবার, ৩১ জানুয়ারী, ২০১৬

আমাদের আনন্দবাড়ি...২৩



নায়লাকে নিয়ে বাসায় ঢোকার পর পরই আবার ডোর বেল বেজে উঠলো। দরজা খুলে উপরের ফ্ল্যাটের সুমাইয়াকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কিছুটা অবাক হলেও হেসে সালাম দিলো নূহা।

সালামের জবাব দিয়ে সুমাইয়া বলল, উপর থেকে আপনাকে বাসায় ঢুকতে দেখেই চলে এসেছি আপু। আপনি ব্যস্ত না থাকলে খুব জরুরি কিছু কথা বলতাম আপনার সাথে।

নূহা হেসে বলল, আলহামদুলিল্লাহ আমি ফ্রি আছি। এসো ভেতরে এসো। সুমাইয়াকে সাথে নিয়ে ড্রয়িং রুমে এসে বসলো নূহা। খেয়াল করলো বেশ চিন্তিত দেখাচ্ছে ওকে। এক বছর আগে উপরের ফ্ল্যাটে ভাড়া এসেছিল সুমাইয়াদের পরিবার। তখন থেকেই নূহার সাথে পরিচয়। নূহা বাসায় থাকলে মাঝে মাঝে চলে আসে গল্প করার জন্য। দুই ভাই আর দুই বোনের মধ্যে সুমাইয়া সবার বড়। খুবই শান্ত ও অমায়িক স্বভাবের মেয়ে। প্রথমদিন দেখেই ভালো লেগে গিয়েছিল নূহার। পরিবার খুব একটা প্রাক্টিসিং না কিন্তু শরীয়তের বিধি-নিষেধ মেনে চলার ব্যাপারে সুমাইয়া যথেষ্ট আন্তরিক। সেজন্য নূহাও চেষ্টা করে ওকে সময় দিতে।

সুমাইয়া বলল, আমাদের পারিবারিক একটা ব্যাপারে আপনার পরামর্শ চাই আপু। সমস্যাটা আমার ছোট বোনকে নিয়ে। এবার কলেজে উঠেছে তানিয়া। হয়তো খেয়াল করেছেন তানিয়া একদমই আমার মতো না। কিন্তু ওকে আমি অনেক ভালোবাসি। খুব বেশি আদরের বোন আমার তানিয়া। যখন ছোট ছিল আম্মু তো জব করতেন। তানিয়া আমার কাছেই বেশি থেকেছে। ছোটবেলায় অনেক সুইট ছিল। কিন্তু যতই দিন যাচ্ছে তানিয়া যেন কেমন হয়ে যাচ্ছে। ওর কথা, কাজ, আচরণ ভীষণ কষ্ট দেয় আমাকে। ভালো কথা বললেও খুব রুড বিহেব করে। আমাদের কথা একদমই কেয়ার করে না। যা মন চায় চাই করে। ওর ফ্রেন্ড সার্কালটাও ভালো না খুব একটা। সবকিছু মিলিয়ে আমি ঠিক বুঝতে পারছি না কিভাবে ওকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনবো। কারণ আমার কথা তো পাত্তাই দেয় না এক অর্থে।

যখন তানিয়ার মন মেজাজ খুব ভালো থাকে তখন এই বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করে দেখেছো কখনো?

হ্যা আপু দেখেছি। কিন্তু মন মেজাজ যতই ভালো থাকুক বোঝাতে গেলেই নিজের সাপোর্টে তর্ক করতে শুরু করে। খুব অসম্মান করে কথা বলে তখনো।

পরিবারে বা পরিবারের বাইরে এমন কেউ কি আছে যার কথা তানিয়া মনোযোগ দিয়ে শুনবে বা সামান্য কিছু হলেও মেনে নেবে?

আব্বুর কথা শোনে চুপচাপ। কিন্তু করার সময় আবার সেটাই করে সেটা ওর নিজের ইচ্ছে।

কিছুক্ষণ চুপ থেকে নূহা বলল, এমন স্বভাব সাধারণত কেউ সাথে করে নিয়ে জন্মায় না। পরিবেশ-পরিস্থিতি, সঙ্গ ইত্যাদি সবকিছু মিলিয়ে ধীরে ধীরে একজন মানুষ এমন বাজে ভাবে নিজেকে উপস্থাপন এবং জাহির করতে শুরু করে। তানিয়াও নিশ্চয়ই একদিনেই এমন স্বেচ্ছাচারী স্বভাবের হয়ে যায়নি। আসলে একজন মানুষের আবেগের প্রকাশ, ধরণ, মোটকথা আবেগীয় শিক্ষার জন্য তার জীবনের প্রথম ছয় বছর সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণা দ্বারাও প্রমাণিত, চার থেকে ছয় বছর বয়সে একটি শিশু নিজের আবেগীয় আত্মনিয়ন্ত্রণে যে দক্ষতা অর্জন করে সেটার উপর নির্ভর করেই তার জীবনের গতিপথ পরিচালিত হয়। তুমি নিজের একটি আচরণের দিকে ভালোভাবে খেয়াল করলেও এই কানেকশনটা বুঝতে পারবে। আরেকটা খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা হচ্ছে জীবনের প্রথম যখন একটা শিশু জেনে, বুঝে সজ্ঞানে কোন ভালো কাজ কিংবা মন্দ কাজ করে। অভিভাভকগণ সেটাকে কিভাবে নিচ্ছেন এটা খুব প্রভাবিত করে শিশুটির পরবর্তী কর্মকান্ড ও আচার-আচরণকে। যেমন ধরো, তানিয়া যেদিন প্রথম তোমাকে অসম্মান করেছিল। সেদিন নিশ্চয়ই এতটা কষ্ট পাওনি তুমি?    

জ্বিনা আপু। ছোট মানুষ না বুঝে এমনটা করেছে ফেলেছে ভেবে নিজেও অতটা কেয়ার করেনি।

কিন্তু তুমি যদি সেদিন কেয়ার করতে তাহলে হয়তো আজ এমন পরিস্থিতির মুখোমুখী হতে হতো না তোমাকে। সেদিন যদি কিছুটা সময় পর আদর করে তানিয়াকে বুঝিয়ে দিতে তুমি ওকে কতটা ভালোবাসো বলে ওর অন্যায় আচরণকে ক্ষমা করে দিয়েছো। যদি বুঝিয়ে বলতে বড়দের সাথে কখনোই অসম্মান করে কথা বলতে হয় না। তাহলে নিশ্চয়ই তানিয়া বুঝতো। কারণ বাচ্চারা বোঝালেই বোঝে এবং মেনে চলারও চেষ্টা করে। বড়রাই বোঝানোটাকে ঝামেলা মনে করে, এখন ছোট বুঝতে শিখলেই ঠিক হয়ে যাবে এমন চিন্তা করে ধীরে ধীরে আত্মিক আঁধারে ঠেলে দেয় শিশুদেরকে। এবং একটা সময় এই আঁধারে তাদেরকেই নিমজ্জিত হতে হয়।

নিজেদের ভুল বুঝতে পারছি আপু। কিন্তু এখন করণীয় কি?

করণীয় একটিই ওকে আত্মিক আঁধারের রুদ্ধ কুঠুরি থেকে আলোকিত বাতায়নের সম্মুখে এনে দাঁড় করানো। কিন্তু সেজন্য ধৈর্য্য ধরে ওর পেছনে লেগে থাকতে হবে। আবার এটাও ঠিক যে, অশুদ্ধ পরিবেশে নিজে শুদ্ধ থাকতে চাইবার সবচেয়ে বড় যাতনা হচ্ছে, চারপাশের বেশির ভাগ মানুষের অপছন্দের তালিকায় নিজের নাম লিখিয়ে নেয়া। ভালো পরামর্শ দিয়ে তখন বদলে কষ্টই পেতে হয়। তবে এরচেয়েও ভয়াবহ কষ্টের হচ্ছে যখন দেখতে পাবে তোমার দেখানো পথ সঠিক হবার পরও কেউ কেউ বেঠিক পথ ছেড়ে না দিয়ে শুধু তোমার সামনে সঠিক পথে চলার অভিনয় করছে। অর্থাৎ, তারা নিজেকে সংশোধন করে না। শুধু যে তাকে সংশোধন করতে চায় তার সামনে নিজের অশুদ্ধ কাজগুলোকে আড়াল করে রাখে। যাতে কেউ তাদের কাজে ইন্টারফেয়ার করার সুযোগ না পায়। এমন কাউকে দেখলে খুব ইচ্ছে জাগে বুঝিয়ে বলতে যে এই ধোঁকা মূলত সেই ব্যক্তিকে নয় বরং নিজেকেই দিচ্ছে। নিজেই নিজেকে ধোঁকা দেবার অর্থ নিজের তৈরি গোলোকধাঁধার চোরাবালির মাঝে ধীরে ধীরে নিজেকে তলিয়ে যেতে দেয়া। কিন্তু একথাটা বোঝানোটাও খুব সহজ কিছু নয়। আসলে কি জানো? জীবনে প্রিয়জনদের মূল্য বুঝি না বলেই আমরা তাদের সাথে নিষ্ঠুর হতে পারি, তাদেরকে আঘাত, অসম্মান করতে পারি। তাদের কল্যাণ কামনা করা আমাদেরকে বিরক্ত করে, রাগানিত্ব করে। এজন্য মূলত ছোটবেলা থেকেই জীবনে পরিবার ও প্রিয়জনদের মূল্য বোঝানোর চেষ্টা করা উচিত। কেননা শুধুমাত্র জীবনে কারো মুল্য কতখানিক এই বোধটাই তাকে যথাযথ মূল্যায়নে উদ্বুদ্ধ করতে পারে।

কিভাবে তানিয়াকে ওর জীবনে আমার মূল্য বোঝাবো আপু?

একমাত্র ভালোবাসার দ্বারাই কারো জীবনে কারো মূল্য উপলব্ধি এবং শূন্যতা তৈরি করা সম্ভব। তবে সেই ভালোবাসার ধরণ ভিন্ন ভিন্ন হতে হবে। কখনো শাসন, কখনো মেনে নেয়া, কখনো এড়িয়ে চলে, কখনো জোড় করে চাপিয়ে দিয়ে, কখনো সম্পূর্ণ ইচ্ছার উপর ছেড়ে দিয়ে, কখনো বা বাধ্য করে, শুধু ভালোবাসা দিয়ে যাও উড়ার করে।

সুমাইয়া হেসে বলল, অনেক কঠিন কাজ আপু এটা। তারপরও আমি চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।

নূহা হেসে বলল, আলহামদুলিল্লাহ ঐ চেষ্টাটাই সবচেয়ে বেশি দরকার জীবনে। একজন মনিষী বলেছিলেন, “ইচ্ছা ও চেষ্টার মাঝে লুকিয়ে থাকা আশা, এক বিন্দু আলো হয়ে দূর করে দেয় হতাশা।”

অনেক সুন্দর তো কথাটা। কে বলেছে আপু?

নূহা হাসি চেপে বলল, তুমি চিনবে না। উনি আননোন। যাইহোক, কি খাবে বলো? দেশ থেকে আসা খাঁটি খেজুরের গুঁড় আর বিন্নি চাল দিয়ে পায়েশ রান্না করেছিলাম। ফ্রিজে রাখা আছে। একটু কষ্ট করে নিয়ে নাও। আর যাবার সময় তোমাদের বাসার সবার জন্যও নিয়ে যেও। আমি তোমাদের বাসায় পাঠানোর নিয়্যাত করেই বেশি রান্না করেছিলাম। কিন্তু নানান ব্যস্ততায় পাঠাতে ভুলে গিয়েছি।

নায়লা উঁকি দিয়ে হাসি মুখে বলল, আপ্পা আমিও খেজুরের গুঁড় আর বিন্নি চাল পায়েশ খাচ্ছি। সুমাইয়া আপু তুমি বোস আমি নিয়ে আসছি তোমার জন্য। কিছুক্ষণের মধ্যেই পায়েশ নিয়ে এসে সুমাইয়া দিয়ে পাশে বসে নায়লা বলল, জীবনে প্রিয়জনের মূল্য বুঝে নেবার কোন শর্টকার্ট ওয়ে আছে আপ্পা?

নূহা হেসে বলল, মনেহয় আছে। মনের মাঝে প্রিয়জনদেরকে ঘিরে স্মৃতিগুলোকে নাড়িয়ে চাড়িয়ে দেখা। তোর মনেআছে নায়লা বছর তিনেক আগে ফিজিক্যল কিছু সমস্যার কারণে প্রায় ছয় মাসেরও বেশি একদম বেড রেস্টে থাকতে হয়েছিল আমাকে?

হ্যা আপ্পা মনেআছে। আমি, আত্মজা, জুরাইরিয়া প্রায়ই চলে আসতাম তখন তোমার সাথে সময় কাটাতে।

নূহা হেসে বলল, হ্যা। কিন্তু বেশির ভাগ দিনই আমাকে একদম একা থাকতে হতো বাসায়। জারিফ স্কুলে আর রাহাত কাজে চলে যাবার পর দীর্ঘ পাঁচ ঘণ্টা একদম একাকী কাটতো আমার। অবশ্য বই পড়ার তীব্র নেশা থাকার কারণে সময় কাটানো নিয়ে কখনোই তেমন সমস্যায় পরতে হয়নি আমাকে। উল্টো বরং সময়কে ধরার জন্য ছুটতে হয়। কিন্তু মাঝে মাঝে দু’একটা দিন এমন আসতো যে বই পড়তে ইচ্ছে করতো না। সংসারের কাজগুলো পড়ে আছে দেখেও হাত লাগানোর তাগিদা অনুভব করতাম না। বিছানার চাদরে সামান্য ভাঁজ দেখলে বিরক্তিতে ভ্রু কুঁচকে ফেলা এই আমিই, পুরো এলোমেলো বিছানার দেখেও নির্বিকার বসে থাকতাম। সময়টা তখন কেমন যেন থমকে দাঁড়িয়ে থাকতো। ঘড়ির দিকে তাকালে মনেহতো সেই কখন দেখেছি দশটা বাজে, এতক্ষণে মাত্র দশ মিনিট পেরিয়েছে? এমন যতগুলো দিন এসেছে, কিছুক্ষণের জন্য হলেও এলোমেলো করে দিয়ে গিয়েছে আমার ছোট্ট ভুবনটাকে। খুব খেয়ালি আমাকে করে দিয়েছে ভীষণ রকম বেখেয়ালি। তাই হিসেব কষতে বসেছিলাম কেন হয় এমন? কেন মন হঠাৎ শরতের আকাশ হয়ে যায়? এই মেঘ তো এই রোদ্দুর? বাঁধ ভাঙ্গা জোছনা ভরা আকাশে কেন হঠাৎ ই আঘাত হানে কালবৈশাখীর ঝড়? বার বার জিজ্ঞেস করার পর মন একটাই জবাব দিতো, তোমার প্রিয়জনরা যে তোমার থেকে দূরে বহুদূরে, সেজন্য তোমার মনটা হয়ে যায় বাউন্ডুলে, ভবঘুরে।

নায়লা আর সুমাইয়ার সাথে সাথে নূহাও হেসে ফেললো। এক মূহুর্ত পরেই আবার বলল, সবার জীবনেই প্রিয় মানুষেরা সবসময় আলাদা স্থান দখল করে থাকে। জীবনে চলার পথে আমরা যত এগোতে থাকি, বাড়তে থাকে প্রিয় মানুষদের সংখ্যা। মনের পাতায় ছাপ ফেলতে থাকে কারো কথা, কারো লেখা, কারো হাসি, কারো সঙ্গ! ধীরে ধীরে আপন অস্তিত্বের সাথে একাকার হয়ে যেতে থাকে প্রিয় মানুষগুলো। সময়ের স্রোতে ভেসে কিছু প্রিয় মানুষ দূরে চলে যায়, মনে নোঙ্গর গাড়ে নতুন প্রিয়রা। তাদেরকে সাথে নিয়ে এগিয়ে চলে জীবন ভেলা। কিন্তু যারা দূরে চলে যায় নানা কারণে তারা কি সত্যিই হারিয়ে যায় কালের গহ্বরে? আমার উপলব্ধি বলে নিষ্ঠুর নিয়তি মন থেকে কাউকেই একেবারে মুছে যেতে দেয় না। আর ভুলে যে যাবো তারও উপায় নেই, কারণ তারা যে আমাদের  প্রিয়জন। প্রি-য়-জ-ন.....! চাইলেই কি তাদেরকে ভুলে যাওয়া যায়? লাইব্রেরীতে গেলেই সবার আগে বাপীর চেহারাটা ভেসে আসে মনের পর্দায়। প্রকৃতি সান্নিধ্যে গেলে মনেহয় বাবার কোলেই বুঝি মুখ গুঁজে বসে আছি। যখনই কোন বাঁধা সম্মুখে এসে দাঁড়ায় পাপার প্রশান্ত চেহারাটা মনে করিয়ে দেয়, পরীক্ষা আসে উন্মোচিত করতে যোগ্যতা, দেখিয়ে যায় চুপিচুপি লুকায়িত ক্ষমতা। জারিফকে জড়িয়ে ধরে ঘুম পাড়াতে গেলেই মামণির স্মরণে অন্তত সিক্ত হয়ে ওঠে। মজাদার কোন রান্না করার সময় মনেপড়ে কত যত্ন করেই না মা আমাকে রান্না করতে শিখিয়েছিলেন। সাংসারিক কোন বিষয়ে নিজের যুক্তিগুলোকে যখনই যাচাই করে নেবার প্রয়োজনীয়তা ফিল করি। আম্মির ভ্রূ কুঁচকে থাকা মিষ্টি চেহারাটাই সবার আগে মনে এসে দোলা দিয়ে যায়। শিশুদেরকে যখন দেখি মনের আনন্দে খেয়াল মগ্ন, আমার ছোটবেলার খেলার সাথী ভাইবোনগুলোর কথা খুব মনে পড়ে। এমনি করেই নানুমণি-নানাভাই,মামা-মামী,চাচ্চু-ফুপ্পি কত শত প্রিয়জনদেরকে ঘিরে রঙ-বেরঙের স্মৃতির সমাহার মনের মাঝে।  

নায়লা বলল, এমন স্মৃতি তো আমাদেরও আছে। কিন্তু তোমার মতো করে নোটিশ করা হয় না আসলে। তাই হয়তো উপলব্ধি করতে পারিনা।

হুম, উপলব্ধি করতে পারিনা বলেই তো এত সমস্যা তৈরি করতে পারি প্রিয়জনদের সাথে। অবশ্য প্রিয়জনরা আনন্দের বারিধারা হয়ে যেমন ঝরে, প্রচণ্ড খরা হয়ে চৌচিরও করে দেয় মনের বনভূমিকে। কিন্তু কেন এমন হয়? কেন প্রিয়জনরা কষ্ট দেয়? যাদের কারণে সুখ-শান্তিকে উপলব্ধি করতে শেখে মন, তারাই আবার দুঃখ-ব্যথাকে বোঝানোর দায়িত্ব পালন করে অতি পারদর্শিতার সাথে। তারপরও তারা যে কতোটা প্রিয় সেটা দূরে না এলে অনুভব করা যায় না সঠিকভাবে। কাছে থাকতে নির্বোধ মন মানতেই চায় না ভালোবাসা দেবার সাথে সাথে কষ্ট দেবার অধিকারও যে প্রিয়জনদের আছে। প্রিয়জনদের কারণেই যেহেতু আমাদের মনে সুখ-শান্তির অনুভূতি আসে, সেহেতু দুঃখ-বেদনা তো তারা দিতেই পারেন কারণে-অকারণে। কিন্তু আমাদের স্বার্থপর মন শুধু ভালোটাই পেতে চায় সবার কাছ থেকে। একবারও ভেবে দেখে না যে আমি কি সর্বক্ষেত্রে সবার সাথে ভালো? আমার দ্বারা কখনোই প্রিয়জনরা কষ্ট-ব্যথা পাননি বা পান না তা কি আমি জোরের সাথে বলতে পারবো? আমি অন্তত পারবো না এমনটা বলতে। তবে এটাও আবার ঠিক যে, মতের অমিল, ঝগড়া-বিবাদ, কথা কাটাকাটি সন্তর্পনে প্রিয়জনদের সাথে সম্পর্কের ভিতকে নড়বড়ে করে দিতে থাকে। ঘুণপোকার মতো ধীরে ধীরে ক্ষয় করতে থাকে ভালোবাসার বন্ধনের খুঁটিটিকে। আর এই ক্ষয় হতে থাকা খুঁটির উপর ভরসা করেই চলতে থাকে জীবনের পথচলা।

এই ক্ষয়কে ব্যহত করার কোন উপায় নেই আপু? প্রশ্ন করলো সুমাইয়া।

নূহা হেসে বলল, উপায় তো আগেই বলেছি, ভালোবাসা। নিঃস্বার্থ ভালোবাসা। আমাদের মন একবার যাদেরকে আপন করে নেয় তাদেরকে কখনোই ভুলে থাকা যায় না। ভুলে থাকতে চাইলেও সম্ভব হয় না। তবে জীবনের প্রয়োজনে কখনো কখনো ভুলে থাকতে হয়। স্মৃতিরা ঝাঁকে ঝাঁকে হানা দিয়ে মাঝে মাঝে মনকে ঘিরে ফেললেও, বেশির ভাগ সময়ই আমরা স্মৃতিদের এড়িয়ে চলা রপ্ত করে ফেলি। কারণ স্মৃতির ভাণ্ডারে অসংখ্য মণি-মুক্তা-জহরতের সাথে ধারালো-সূচালো কাঁচের টুকরোও যে আছে। যার সামান্য আঘাত মনকে করে ক্ষত-বিক্ষত, রক্তাক্ত...! আর কেই বা চায় হৃদয় চিড়ে বেদনা কুড়াতে? তারচেয়ে দূরে সরে থাকা কিংবা ভুলে থাকাটাই উত্তম মনেহয়। কি জানি এটাই হয়তো জীবনের নিয়ম। তবে ভালোবাসা কখনোই ছেড়ে দেয়া উচিত নয়। মূল কথা হচ্ছে, আমরা সবাই সবসময় আলোকোজ্বল এক জীবন পেতে চাই। কিন্তু এমন জীবন গড়ে তুলতে সম্পর্কের মাঝে প্রয়োজন ভালোবাসা-ত্যাগ আর শ্রদ্ধাবোধের সংমিশ্রণ। কিন্তু সুখের মাঝে যেমন অসুখ থাকে, তেমন ভালোবাসা-ত্যাগ আর শ্রদ্ধাবোধের সংমিশ্রণ থাকার পরও সম্পর্কের মাঝে ঘটে ছন্দপতন। এই ছন্দপতনের দ্বন্দ্বে পড়ে যাতে আমরা বিভ্রান্ত হয়ে না যাই। প্রিয়জনদের প্রতি আমাদের আচরণ যেন অসাবধানী হয়ে না যায়। একে-অন্যেকে যাতে দোষারোপ না করি, ঝাঁপিয়ে যেন না পড়ি কারো উপর জিভের তরবারি নিয়ে। ভুলে যাতে না যাই তারা যে আমাদের প্রি...য়...জ...ন। এটা হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বুঝতে পেরেছো?

সুমাইয়া আর নায়লা দুজনই জ্বি আপ্পা বললো।

নূহা হেসে বলল, আলহামদুলিল্লাহ। তাহলে এখন চুপচাপ বসে পায়েশ খাও। খাওয়া শেষ করে একজন পরিবারের জন্য পায়েশ নিয়ে বিদায় হও আর অন্যজন আমাকে প্যাকিংয়ে সাহায্য করতে এসো।

সুমাইয়া আর নায়লা হেসে ফেললো। নূহাও হেসে নিজের রুমে রওনা দিলো।

@

বিমানের গেট দিয়ে জাওয়াদকে ঢুকতে দেখে স্বস্থির নিশ্বাস ফেলে সীটে হেলান দিয়ে বসলেন সুহাইব আহসান সাহেব। জাওয়াদ এসে পাশে দাঁড়িয়ে সালাম দিয়ে বলল, উইন্ডো সীট আমার।

সুহাইব সাহেব সালামের জবাব দিয়ে জাওয়াদকে বসতে দিয়ে বললেন, শুধু উইন্ডো সীট কেন তুমি যদি বলো, মামা সারা পথ তোমার কোলে বসে যাবে তাতেও আমি রাজী আছি।

জাওয়াদ হেসে বলল, দেখে তো মনেহচ্ছে টেনশনের নদীতে ঝাঁপ দিয়ে এসেছো!

ঝাঁপ? তোমার এত দেরি দেখে এতক্ষণ ডুব সাঁতার কেটে এসেছি। ধরেই নিয়েছিলাম আজও তুমি ফ্লাইট মিস করবে। তারউপর কম করে হলেও বিশ বার ফোন দিয়েছি তোমাকে। ফোনও রিসিব করলে না। কোন সমস্যা হয়েছিল পথে?

জাওয়াদ হেসে বলল, না মামা তেমন কোন সমস্যা হয়নি আলহামদুলিল্লাহ। মূলত বাচ্চাদের কাছ থেকে বিদায় নিতে গিয়েই দেরি হয়ে গিয়েছিল। এরপর পথে যখন সেলফোন থেকে যোহরের আযান ভেসে আসছিল তখন একদম মসজিদের সামনে ছিল আমার গাড়ি। তাই গাড়ি পার্ক করে মসজিদেই যোহরের নামাজ আদায় করছি। তুমি হয়তো নামাজের সময় ফোন দিয়েছিলে। সাইলেন্ট ছিল এবং পরে আর চেক করা হয়নি। তুমি যোহরের নামাজ আদায় করেছো?

হ্যা আলহামদুলিল্লাহ। তোমাদের বাড়িতে সবাই ভালো আছে? বাচ্চারা? আমার নাবিহা পরীটা?

আলহামদুলিল্লাহ সবাই ভালো আছে। নাবিহা তোমার জন্য গিফট পাঠিয়েছে। পৌঁছে দিচ্ছি ইনশাআল্লাহ। তুমি অনেকদিন বাড়িতে যাও না সেজন্য তোমার তিন বোন ক্ষেপে আছে অনেক। আমার কাছে তোমার জন্য তিনজন তিনটা থাপ্পড় পাঠিয়েছে।

হেসে ফেললেন সুহাইব মামা। বললেন, নাবিহা মণির গিফটের সাথে রেখে দাও। সব একবারে নেব ইনশাআল্লাহ। এখন আগে আমার প্রস্তাবের ব্যাপারে কি স্বিদ্ধান্ত নিয়েছো সেটা বলো।

কিসের প্রস্তাব? প্রশ্ন করতে গিয়েও থেমে গেলো জাওয়াদ। মনে পড়লো সপ্তাহ দু'য়েক আগে সুহাইব মামা নানান ধরণের কন্যাদের ছবি ভর্তি অ্যালবাম নিয়ে হাজির হয়েছিলেন। তার বিয়ে নিয়ে পরিবারের মানুষদের আকাঙ্ক্ষা আর অস্থিরতা দেখে জাওয়াদের বার বার শুধু এটাই মনেহয়, চাওয়ার সাথে সাথেই যে মানুষের ইচ্ছে পূরণ হয়ে যায় না। এটাই জীবনের সবচেয়ে বড় ম্যাজিক। নয়তো মানুষ তার দূরদৃষ্টিহীন স্বভাবের কারণে ক্ষণিক চাওয়ায় ভেসে গিয়ে নিজের এবং অন্যদের জীবনের চরম ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়াতো। কেননা মানুষ বেশির ভাগ সময়ই চিন্তা-ভাবনা ছাড়া শুধু আবেগের স্রোতে ভেসে যায়। এই যেমন তার পরিবারের সদস্যরা ভাবছে সে বিয়ে করলেই মনেহয় সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু যদি সে বিয়ে করে তারপরের অবস্থা-পরিস্থিতি কেমন দাঁড়াবে সেটা কেউ ভেবে দেখছে না। নিজের ইচ্ছের কারাগারে বন্দী মানুষ ভুলে যায় যে, ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না। ঠিক তেমনি ভাবছে না বলেই পরিবারের সদস্যরা ভুলে গিয়েছে, যেসব ক্ষেত্রে ভুল সিদ্ধান্ত পুরো জীবনটাকেই তিক্ত, অতিষ্ট, বিষাক্ত করে দিতে পারে বিয়ে তাদের মধ্যে অন্যতম। জাওয়াদ খুব ভালো করেই জানে পরিবারের মানুষ গুলোর স্বাভাবিক চিন্তা করার ক্ষমতা লোপ পেয়েছে বলেই তার বিয়ের জন্য এমন অস্থির হয়ে উঠেছে। যদি শান্ত মনে চিন্তা করতো তাহলে জাওয়াদ বিয়ের ব্যাপারে আগ্রহ দেখালে উনারা বরং নিরুৎসাহিত করতো।

কিছু বলছো না যে? প্রশ্ন করলেন সুহাইব মামা।

জাওয়াদ বলল, তুমি অ্যালবাম ভর্তি ছবি দিয়ে এসেছো। ছবি দেখে তো আর বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়া যায় না। তোমার অ্যালবাম ওভাবেই প্যাকেট করা আছে। ইনশাআল্লাহ আমরা ফিরে আসার পর একসময় গিয়ে নিয়ে এসো।

ছবি দেখে মেয়ে পছন্দ করবে নাতো কি দেখে করবে?

দুষ্টুমি মাখা হাসি ছড়িয়ে পড়লো জাওয়াদের চেহারাতে। হাসি মুখে বলল, কত ভালো মেইল লিখতে পারে সেটা দেখে করা যেতে পারে। এছাড়া কথার পিঠে কথা বলতে পারে কিনা এটা তো অবশ্যই দেখতে হবে। যেমন ধরো, কোন কারণে প্রচণ্ড বিরক্ত হয়ে আমি বললাম, কথা শুনে তো মনেহয় না তোমার মুখে কোনদিন মধুর একটা ফোঁটাও পড়েছে। এক মুহূর্ত দেরি না করে সে জবাব দেবে, হ্যা আর আপনার মুখে তো মৌমাছিরা চাক বসিয়েছে। মধু তাই শুধু ঝরতেই থাকে সারাক্ষণ।    

সুহাইব মামা হেসে বললেন, আরেকটা নূহা আমি কোত্থেকে খুঁজে আনবো বাবা তোমার জন্য?

জাওয়াদ হেসে বলল, এই প্রশ্নের উত্তর তো আমার জানা নেই মামা। তোমারো যেহেতু জানা নেই তাই ছেড়ে দাও এই প্রসঙ্গ। কিছু প্রশ্নের জবাব খুঁজে না পাওয়াটাই ভালো। সেসব প্রশ্নের জবাব তাই খুঁজতে না যাওয়াটাই উত্তম। তারচেয়েও বড় কথা হচ্ছে, এক জীবনে মানুষ সব সুখ পায় না মামা। এক জীবনে তাই সব সুখ নিজের জন্য চাওয়াটা যেমন ভুল, তেমনি অন্যেকে সম্পূর্ণ রুপে সুখী দেখার ইচ্ছে পোষণ করাটাও ভুল। মানুষ স্বভাবতই বড় অকৃতজ্ঞ প্রাণী বুঝলে মামা। গলা পর্যন্ত সুখে ডুবে থাকলেও সুখের জন্য লালায়িত হয়। নাক-মুখও কেন সুখের সাগরে ডুবে গিয়ে তার শ্বাসরোধ হয়ে যাচ্ছে না সেজন্য আহাজারি করতে থাকে। এই যেমন আমি আমার সন্তানদের নিয়ে যতটা হাসি-আনন্দে থাকি, এক জীবনের জন্য এরচেয়ে বেশি সুখের কোন প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না।

আমাদের চিন্তাটাই কি তাহলে ভুল?

আমি সেটা বলছি না মামা। আমি নিজেও তো একজন পিতা। তাই বুঝি সন্তানদের সুখী দেখার জন্য বাবা-মায়েদের মনের আকুলতাকে। সেই একই আকুলতার কারণেই আমি আমার এবং আমার সন্তানদের মাঝে থার্ড পারসন কাউকে কখনোই ঢুকতে দেবো না ইনশাআল্লাহ। আমি ব্যক্তি জীবনের সবকিছুর সাথে কম্প্রোমাইজ করতে পারি মামা। কিন্তু আমার সন্তানদের মনের ছোট্ট কোন খুশির ব্যাপারেও কোন ধরণের কম্প্রোমাইজ করতে আমি অপারগ। এমনিতেই মাকে ছাড়া থাকে ওরা। ওদের যাতে খুব বেশি কষ্ট না হয়। মাকে যাতে খুব বেশি মিস না করে সেজন্য ওদেকে আমি আমাকে ঘিরে আবর্তিত হতে শিখিয়েছি। আমি যতটা না বাবা তারচেয়েও বেশি ওদের মা হতে চেষ্টা করেছি। যখনই ওরা নতুন কিছু করেছে আমি আগে চিন্তা করেছি এখানে নূহা থাকলে এখন কি করতো। আমাদের এই ছোট্ট ভুবনে অন্যকারো প্রবেশের কথা আমি নিজেই চিন্তা করতে পারিনা। সেখানে ঐ ছোট্ট প্রাণগুলো কিভাবে করবে এমন চিন্তা? আমি ভেবে পাই না তোমরা এমন স্বার্থপর চিন্তা কিভাবে করতে পারো মামা?

সুহাইব মামা মুখে কিছু না বলে জাওয়াদের হাতের উপর হাত  রাখলো। জাওয়াদ বলল, জিহাদের চুপচাপ স্বভাব দেখে বাড়ির সবাই মনে করে ও বুঝি সবচেয়ে বেশি স্ট্রং। কিন্তু এখনো মাঝে মাঝে গভীর রাতে জিহাদ বালিশ হাতে হাজির হয়ে বলে, পাপা খুব একা একা লাগছে আমি কি একটুক্ষণ তোমার সাথে ঘুমোতে পারি? একথা আমি দুঃস্বপ্নের ঘোরেও ভাবতে পারিনা মামা জিহাদ কোনদিন গভীর রাতে একাকীত্ব দূর করার জন্য ছুটে আসবে ওর পাপার কাছে। আর এসে আমার রুমের দরজা বন্ধ পেয়ে চুপচাপ নিজের আবার নিজের রুমে ফিরে যাবে। আমার বুকে মুখ গুঁজার বদলে বালিশ বুকে চেপে ধরে নিজের একাকীত্ব দূর করার চেষ্টা করবে। বলতে বলতে শেষের দিকে আবেগাপ্লুত হয়ে উঠলো জাওয়াদের কন্ঠ।

কিছুক্ষণ চুপ থেকে সুহাইব মামা বলল, মাঝে মাঝে নিজেদের বোকামীর দ্বারা আমরা তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলি তাই না জাওয়াদ? আই এম রিয়েলি ভেরি সরি বাবা। প্রমিস করছি আর কোনদিন আমি তোমাকে বিয়ের কথা বললো না।

হাত বাড়িয়ে চোখের কোন থেকে অশ্রু মুছে নিয়ে হাসি মুখে জাওয়াদ বলল, ছয় বছর বয়স থেকেই আমার ড্রেসিংরুমে নাবিহার রাজত্ব চলে। নাবিহা যেদিন যে ড্রেস বের করে দেয় আমি সেটাই পড়ি। কোনদিন যদি আমার শিডিউলের সাথে নাবিহার পছন্দ করা ড্রেস বেমানানও হয় তবুও আমি সেটাই গায়ে দেই। কারণ পছন্দ করা ড্রেস পড়ে যখন সামনে আসি তখন নাবিহার দুচোখ ভর্তি আনন্দে চিকচিক হাসিটা দেখার জন্য শুধু একটু বেমানান কেন, দরকার হলে আমি জোকারের কস্টিউম পড়ে বিসনেস মিটিং অ্যাটেন্ড করতে যেতে পারি।

স্বশব্দে হেসে ফেললেন সুহাইব মামা। জাওয়াদও হেসে বলল, সারাদিনে জারিফ আমাকে যতবার ফোন আর ম্যাসেজ করে আর কেউই মনেহয় করে না। শুধুমাত্র অপারেশন থিয়েটারই একমাত্র জায়গা যেখানে আমি জারিফের কল বা ম্যাসেজ সাথে সাথে অ্যাটেন্ড করিনা। কারণ আমি কখনোই চাই না জারিফের মনে এমন চিন্তা প্রবেশ করুক আমি ওকে কম অ্যাটেনশন দেই জিহাদ, জিশান, নাবিহার তুলনায়। আর জিশান? ওর কথা কি বলবো। একটা মূহুর্ত থাকতে পারে না দুষ্টুমি করা ছাড়া। জিশানের দুষ্টুমির যন্ত্রণায় আমি হাসতে না চাইলেও হাসতে বাধ্য হই। তোমরা তো এসব কিছুই দেখো, জানো। তাহলে আমার দ্বিতীয় বিয়েই সুখের জীয়ন কাঠি এমন অদ্ভুত মাইন্ড সেট করে রেখেছো কেন? মামা মন দিয়ে একটা কথা শুনে রাখো আজ। আসমান আর জমিন এক হয়ে যাবে কিন্তু জাওয়াদ কোনদিন জিহাদ, জিশান, জারিফ আর নাবিহার জন্য বিমাতা আনবে না ইনশাআল্লাহ। নেভার এভার।  

সুহাইব মামা হাসতে হাসতে সীটে এলিয়ে পড়লেন একদম। জাওয়াদও হাসি মুখে জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো। কথা বলতে বলতে কখন যে টেকঅফ হয়ে গিয়েছে টেরই পাইনি।    

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন