শুক্রবার, ১ এপ্রিল, ২০১৬

খুঁজে ফিরি সত্যের আঙিনা...২৭



দূর থেকে তাকে দেখা মাত্রই সাফিনকে মুখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে ফিরে বসতে দেখে হাসি ফুটে উঠলো নূহার মুখে। মনে পড়লো সপ্তাহ দুয়েক আগে পরাপর দুইদিন সাফিন কথা বলতে এসেছিল। একদিন ব্যস্ততার কারণে এবং অন্যদিন ক্লান্তির কারণে সময় দিতে পারেনি নূহা। এরপর থেকে গত দুই  সপ্তাহে মনে মনে সাফিনকে অনেক খুঁজেছে কিন্তু দেখা পায়নি বলে কথাও বলা হয়ে ওঠেনি। বেশ কয়েকবার অবশ্য ফোন দেবার কথা ভেবেছিল, ম্যাসেজ পাঠাতে চেয়েছিল কিন্তু শেষপর্যন্ত হয়ে ওঠেনি নানান ব্যস্ততার কারণে। যদিও নূহা জানে এগুলো মোটেই এক্সকিউজ হতে পারে না। চাইলে শত ব্যস্ততার মধ্যেও যোগাযোগ করা যায়। আর সমস্যা এখানটাতেই। নিজ থেকে কারো সাথে যোগাযোগ করাটা কেমন চেন হয়েই ওঠে না তার। এমনটা নয় যে কারো কথা মনে পড়ে না। বরঞ্চ এর উল্টো। সারাক্ষণই তার মনের রাজ্যে জুড়ে কাছের দূরের পছন্দের মানুষগুলো আনাগোনা করে। কিন্তু বাস্তবে কেউ যোগাযোগ না করলে কেমন যেন হয়ে ওঠে না যোগাযোগ করাটা। নূহা নিজেও অনুভব করে এই স্বভাবটা চেঞ্জ করা জরুরি। কিন্তু অনুভবটা ভাবতেই সীমাবদ্ধ থেকে যায়। এরফলে কাছের দূরের সবার অভিমানেই স্নাত হতে হয় তাকে। তার উপর অভিমান করার পেছনে তাই যথার্থ কারণ আছে সাফিনেরও। সাফিনের পাশে দিয়ে দাঁড়িয়ে নূহা হাসি মুখে বলল, আমি কি তোর পাশে বসতে পারি?

মুক্ত জায়গা যেখানে ইচ্ছে সেখানেই বসতে পারিস। অনুমতি নিষ্প্রয়োজন।

সাফিনের পাশে বসতে বসতে নূহা বলল, ঘটনা কি বলতো আজ এই বাড়ির মানুষজন সব এমন দলে দলে আমার উপর অভিমান করে বসে আছে কেন? যার কাছেই যাচ্ছি মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে আমার উপর থেকে। বাবা অভিমান করে আছেন গত মাসে একটিও চিঠি লিখিনি বলে। মামণি গাল ফুলিয়ে বসে আছেন গত সপ্তাহে পাঠানো নতুন ড্রেসটা পড়ে আসিনি কেন সেজন্য। আম্মির রেগে আগুন হয়ে আছেন উনার বান্ধবীর মেয়ের কাউন্সিলিং করার কথা বলেও কেন গত তিন সপ্তাহের মধ্যে সময় বের করতে পারলাম না। বাপী ভীষণ বিরক্ত বার বার বলার পরেও কেন শিশুদের জন্য কুরআন ও হাদীসের গল্প লেখা শুরু করছি না। স্টুডেন্টরা দল বেঁধে ম্যাসেজ পাঠানো বন্ধ করে বসে আছে। কারণ ওদের ম্যাসেজের জবাব দিতে পারিনা বেশির ভাগ সময়ই। বোনেরা এবং ভাবীদের কাছেও আমার উপর রেগে থাকার নিজ নিজ কারণ আছে। তোর কাছেও আছে জানি। আমার কাছেই আসলে কোন কারণ নেই সবাইকে খুশি রাখতে ব্যর্থ হবার।  

চোরের মায়ের বড় গলা প্রবাদটা তোর জন্যই লিখে রেখে গিয়েছেন কোন বিচক্ষণ ব্যক্তি। বুঝেছিস?

হুমম... দুনিয়ার সবার সবকিছু বোঝার জিম্মা নিয়েছি। না বুঝে যাবো কোথায়?

সাফিন হেসে বলল, তোর এই দুঃখী মানুষের অ্যাক্টিং গিয়ে অন্য কারো সাথে কর। হাড়ে হাড়ে চিনি তোকে আমি।
হেসে ফেললো নূহাও। এরপর বলল, আজ আমার সত্যিই মন খারাপ হয়েছে সবার আচরণে। সবাই মিলে একসাথে এত এক্সপেক্টটেশনের বোঝা চাপালে আমি কোথায় যাব বল? আমি তো আপ্রাণ চেষ্টা করি সবাইকে খুশি রাখতে, কাউকে ব্যথা না দিতে। কিন্তু মাঝে মাঝে আমারো তো ইচ্ছে করে নির্বিঘ্নে কিছুটা সময় নিজের মতো করে কাটাতে। আমি কাজ করতে ভালোবাসি, ব্যস্ত থাকতে পছন্দ করি। এর অর্থ তো এটা নয় আমার অবসরের কোন প্রয়োজন নেই। সবাই নিজ নিজ আবদার নিয়ে হাজির হয়। কারো আবদার রাখতে না পারলেই অভিমান করে বসে থাকে। ভেবে নেয় সবার কাজ করতে পারে শুধু আমি কিছু বললেই অবহেলা করে নূহা। প্রত্যেকেই এমন নিজের কথা ভাবে। কেউ ভাবে না নূহা তো একা একজন। আর একজনের পক্ষে সবার আবদার একসাথে পূরণ করা সম্ভব হবে না এটাই স্বাভাবিক। অথচ এই স্বাভাবিক ব্যাপারটা কেউই বুঝতে চায় না। এমন কেন বলতো? মানুষ ধরে নেয় সবাই তাকে বুঝবে কিন্তু তাকেও যে অন্যদেরকে বোঝার প্রয়োজন আছে এই উপলব্ধিটা কেমন যেন এড়িয়ে চলে সবাই।

সাফিন হেসে বলল, আজ তো মনেহচ্ছে তুইও সবার উপর অভিমান করেছিস। আচ্ছা যা অভিমানে অভিমানে কাটাকাটি। চল দুই ভাইবোন মিলে গল্প করি। কথা বলছিস না কেন?বাড়িতে ঢোকার পর থেকে একের পর এক সবার অভিমান ভাঙাতে ভাঙাতে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিস বুঝি?

মুখে হাসি টেনে নূহা বলল, অনেক বছর আগে একজন জ্ঞানী ব্যক্তি বলেছিলেন, জগতে ভালোবাসার কথা সবাই বলতে পারে কিন্তু ভালোবাসতে পারে খুব অল্প সংখ্যক মানুষ। তাই ভালোবাসার কথা কাউকে মুখে বলার চেয়ে, ভালোবেসে কিভাবে ভালোবাসতে তা শিখিয়ে দিও। আমি জ্ঞানী ব্যক্তির এই কথাটিকে গাইড লাইন বানিয়ে নিয়েছিলাম নিজের জন্য। মুখে না বলে সবাইকে ভালোবেসে ভালোবাসা বুঝিয়ে দেবার চেষ্টা করতে শুরু করেছিলাম। এই চেষ্টাটাই বিরাট এক গর্তে পরিণত হয়েছে আমার জন্য।

সাফিন হেসে বলল, সেটা কিভাবে?

এই যে এখন আর কাউকে ভালোবাসার কথা বলতে পারি না। চুপচাপ ভালোবেসে যেতেই ভালো লাগে। মনেহয় ভালো তো বাসিই, দোয়া তো করিই। শুধু শুধু বলার কি আছে? কিন্তু না বলারও সাইট অ্যাফেক্ট আছে। খুব কাছের মানুষেরাই যেখানে ভুল বোঝে। সেখানে দূরের মানুষদের ভুল না বোঝাটাই অস্বাভাবিক। যাইহোক, তোর কথা বল। কি বলতে চেয়েছিলে সেদিন?

তেমন সিরিয়াস কিছু না। এমনিতেই গল্প করতে ইচ্ছে করছিল তোর সাথে। মনে যখন বিষণ্ণতা্র মেঘ জমে, তোর কথা দমকা হাওয়ার কাজ করে। আমার বোঝা উচিত ছিল সবসময় চাইলেই দমকা হাওয়া হাজির হয়না। কখনো কখনো কালোর মেঘের ভারমুক্তির জন্য আকাশকে অঝর কাঁদতে হয়।  

আকাশ বুঝি অঝর কেঁদেছে?

সাফিন হেসে বলল, হুমম... ভীষণ। তবে এখন আকাশ রোদজ্জল আলহামদুলিল্লাহ। সাথে সাথে ঘন নীলের বুকে চলছে ধবধবে সাদা মেঘের রূপ বদলের খেলা।

নূহা চোখ বড় বড় করে বলল, হায় আল্লাহ! তাই তো দেখছি। ডান পাশের ঐ দিকটাকে তো থোকা থোকা সাদা মেঘের ফুলারন্য মনেহচ্ছে। আচ্ছা বাম দিকে লম্বা মতো ঐটা কি?

মেঘের লাঠি। তোকে ধোলাই দেবার জন্য রেডি হচ্ছে। হাসতে হাসতে বললো সাফিন। হাসিতে যোগ দিলো নূহাও। সম্মিলিত হাসির পরশে অভিমানের মেঘ সরে গিয়ে আনন্দের সূর্যালো ছড়িয়ে পড়লো আবারো সর্বত্র। কিছুক্ষণ দুই ভাইবোন নীরবেই আনন্দ স্নান সেরে নিলো। এরপর সাফিন বলল, ভাইজান সেদিন বলছিলেন নিজেকে আবারো উন্মুক্ত করার ব্যাপারে। আমি নিজেও আজকাল অনুভব করছি কেমন যেন আবদ্ধ হয়ে গিয়েছে চিন্তাভাবনারা। আগে ইচ্ছে হলেই মনের অনুভূতিগুলোকে ফুলের মতো ফোঁটাতে পারতাম, পাখীর রূপে উড়াতে পারতাম, প্রজাপতির মতো বর্ণিল ডানা লাগিয়ে দিতাম। কিন্তু এখন চেষ্টা করলেও নিজেকে ব্যক্ত করতে পারিনা। আজকাল আরেকটা সমস্যাও খুব হচ্ছে। বলতে যাই একটা কিন্তু বলে ফেলি আরেকটা। আইমিন, আমি ঠিক ভাবেই বলছি মনেহয় কিন্তু যাকে উদ্দেশ্যে করে বলি উনি কেন জানি না বুঝেই কষ্ট পান। বিশেষ করে আম্মুর সাথে এটা সবচেয়ে বেশি হয়। সবকিছু মিলিয়ে মাঝে মাঝে খুব দমবন্ধকর অনুভূতি হয়। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে চাই আমি। তুই কি আমাকে সাহায্য করবি নিজেকে আবারো ব্যক্ত করতে?

নূহা বলল, ইনশাআল্লাহ অবশ্যই আমি তোকে সাহায্য করবো। নিজেকে ব্যক্ত করতে পারাটা আসলে  খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপার। অর্থাৎ, মনে চিন্তার যে স্রোত প্রবাহিত হচ্ছে, তাকেই বাইরে বের করে নিয়ে আসা। যা ভাবছি সেটাই বলতে পারা বা শব্দে রুপ দিতে পারা। নিজেকে ব্যক্ত করার পথে আমাদের সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা নিজের সম্পর্কে অজ্ঞতা। আমরা আসলে ঠিকমতো জানিই না জীবনে কোন জিনিসটা না হলেই না, কোন জিনিসগুলো ছাড়াও দিব্যি কেটে যেতে পারে সময়। আবার কোন জিনিসটাকে আঁকড়ে ধরে রাখতে হয়, কোনগুলোকে চলে যেতে দেবার মধ্যেই কল্ল্যাণ। আমরা যোগ্যতা, দক্ষতা অর্জন করতে যেয়ে নিজেকে জানার, বোঝার ব্যাপারে উদাসীনই থেকে যাই। অথচ নিজের সম্পর্কে দক্ষ না হলে নিজেকে যথাযথ প্রকাশ ও উপস্থাপন করা যেমন সম্ভব হয় না। তেমনি নিজ জীবনের প্রায়োরিটি গুলোকেও বেছে নেয়া যায় না। তারউপর আবার আছে ভুল প্রকাশ ও উপস্থাপনের ঝক্কি। কথা, কাজ বা আচরণে উনিশ থেকে বিশ হলেই মানুষের মনে ভুল ধারণা তৈরি হয়ে যায়। তাই নিজেকে সঠিক ভাবে ব্যক্ত করার জন্য ছোট ছোট কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে তোকে। যেমন ধর  প্রচুর পড়া। অনেক সময় শব্দ ভান্ডারের সল্পতা কিংবা সঠিক শব্দ বাছাই করতে না পারার কারণেও মনের ভাব সম্পূর্ণ রুপে প্রকাশ করা সম্ভব হয় না। মনের ভাবনা গুলোকে যথাযথ প্রকাশের জন্য সঠিক শব্দ নির্বাচন ও প্রয়োগ করতে পারাটা খুবই জরুরি। তাই এক্ষেত্রে পড়ার কোন বিকল্প নেই।

হুমম, আফরা চলে যাবার পর আমার জ্ঞানার্জনের আগ্রহটাও কোথায় যেন বিলীন হয়ে গিয়েছে। বই খুলে বসলেও শুধুমাত্র তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কিছুই করা হয়না।

সেজন্যই তো তোর জন্য বই নিয়ে এসেছি। আমি মূলত তোকে এই বইগুলো দিতেই এসেছিলাম। হাতে ধরে থাকা বইগুলো সাফিনের দিকে বাড়িয়ে ধরে হাসি মুখে নূহা বলল, তোর মনেআছে  ছোটবেলায় পরিবারের সবাই মিলে সমুদ্র ভ্রমণে গিয়েছিলাম আমরা? একদিন বিকেলে বাবার হাত ধরে বীচে খালি পায়ে হাঁটছিলাম। হঠাৎ পায়ের নীচে একটা ছোট্ট নুড়ি পাথর এসে পড়াতে চিৎকার করে উঠেছিলাম ব্যথায়। বাবা বসে আমার পায়ে হাত বুলিয়ে আদর করে দিয়ে হাসি মুখে বলেছিলেন, হঠাৎ একটা স্বপ্ন মনে উঁকি দিয়ে গেলো বুঝলি মা। প্রশ্ন করেছিলাম, কি স্বপ্ন বাবা? বাবা হেসে জবাব দিয়েছিলেন, তুই আর আমি এমন হাত ধরে জ্ঞানোসমুদ্রের বীচে হাঁটছি। আমাদের চলার পথে একটু পর পরই ছোট বড় মাঝারি নানান সাইজের জ্ঞানের নুড়ি পাথর এসে হাজির হচ্ছে। আর তুই উচ্ছ্বাসিত হয়ে সেই নুড়িটা তুলে নিয়ে সমৃদ্ধ করছিস জীবনের জ্ঞানো ভান্ডার।

সাফিন হেসে বলল, আমাদের ফুপাজান মাশাআল্লাহ বিরাট একজন স্বপ্নবাজ মানুষ।

আলহামদুলিল্লাহ! একই সাথে বাবা স্বপ্নের মালীও। শুধু নিজে স্বপ্ন দেখেই ক্ষান্ত হন না। অন্যের মনেও স্বপ্ন বুনে দিয়ে পরিচর্যায় দ্বারা বেড়ে উঠতেও সাহায্য করতেন। আমার মনে জ্ঞানানন্দে ডানা মেলার স্বপ্নটাও বাবারই দেয়া ছিল। যদিও বাবা ছাড়াও আরো একাধিক মালীর পরিচর্যার ছোঁয়া লেগেছে আমার সেই স্বপ্নে। তবে বাবা তাদের সবার চেয়ে সবসময়ই স্পেশাল ছিলেন। বাবার সাথে ঘুরতে বের হলে এক জিনিস সবসময়ই কমন ছিল। ঘুরতে বেরোলে অবশ্যই অবশ্যই বই কেনা। মূলত বই কেনার উদ্দেশ্যেই আমি আর বাবা একা একা ঘুরতে বের হতাম। আমাদের এই ভ্রমণ আবার মামণির অতি মাত্রায় অপছন্দ ছিল। বই কেনা নিয়ে অবশ্য মামণির আপত্তি ছিল না। মামণির বিরক্তির কারণ ছিল বাড়িতে ফিরেই আমি আর বাবা সদ্য কেনা বইয়ের ভেতরে ঢুকে যেতাম। জানিস আমার আর বাবার মধ্যে বই পড়ার ব্যাপারে গোপন একটা চুক্তি ছিল। চুক্তিটি হচ্ছে, বই থেকে নতুন কি শিখলাম, জানলাম। অর্থাৎ, জ্ঞানো ভান্ডারে নতুন কি রত্ম যোগ হলো সেটা  একে অন্যেকে জানানো। আমাদের পিতা-কন্যার কত রাত যে পাড় হয়ে গিয়েছে নতুন অর্জিত রত্নটির চমক মূল্যায়নের গবেষণাতে। মামণি মুখে মুখে যতই রাগ করুক না কেন। সারাক্ষণই ছায়ায় মতো লেগে থাকতেন বাবা আর আমার পেছনে। এবং একটু পরপরই হুমকি দিতেন বাড়ির লাইব্রেরী আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেবার।

সাফিন হেসে ফেলে বলল, তোর সাথে ফুপ্পির চিৎকার চেঁচামেচি গুলো সত্যিই মিস করি।

নূহা হেসে বলল, আমিও মিস করি। বাবার সাথে জ্ঞানার্জনের সফরটাকেও খুব মিস করি। অনেক বছর হয়ে গিয়েছে বাবার সাথে একাকী ঘুরতে বের হওয়া হয়ে ওঠেনি। চলার পথের মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা জ্ঞানের নুড়ি পাথর তুলে নেয়া হয়নি। জ্ঞানানন্দে ডুবে থেকে রাত গড়িয়ে ভোরের পথে যাত্রা শুরু করেনি। যাইহোক, তোর উপর দিয়ে যে ঝড়টা গিয়েছে তাতে মন বাগিচার সমস্ত ফুল পাখী প্রজাপতি ঝরে যাওয়াটাই স্বাভাবিক ছিল। আলহামদুলিল্লাহ এখন যেহেতু শূন্যতার হাহাকার থেকে বেরিয়ে আসার ইচ্ছে জাগ্রত হয়েছে তোর মনে। আবারো নতুন করে ফুল পাখীর গুঞ্জরন তুলে যাবে তোর মনে ইনশাআল্লাহ। এজন্য নিজেকে জানার জন্য, বোঝার জন্য তোকে নিজেকে নিয়ে ভাবতে হবে, চিন্তা ও গবেষণা করতে হবে। এইক্ষেত্রে সবচেয়ে একটা পদ্ধতি হচ্ছে, নিজের চিন্তা-ভাবনা গুলোকে লেখা। হতে পারে ডায়েরী লেখা, গল্প-কবিতা লেখা। কখনো প্রকৃতির কোলে বসে মনের মাধুরি মিশিয়ে তার সৌন্দর্য বর্ণনের চেষ্টা করা। এভাবে ধীরে ধীরে মনের চিন্তা- ভাবনাকে আয়ত্ত্বে আনা সম্ভব হয়। চল এখনই দুজন মিলে ট্রাই করি।

কি ট্রাই করবো?

নূহা হেসে বলল, প্রকৃতিকে নিজের মাঝে করে ধারণ, ভাবনার রসে সিক্ত করে করো বর্ণন। নীলাকাশের বুকে ভাসছে যেমন সাদা মেঘের ভেলা, শব্দে শব্দে হয়ে যাক তাদের নিয়ে চড়ুইভাতি খেলা।

সাফিন হেসে বলল, ইনশাআল্লাহ আবারো খেলবো তোর সাথে শব্দে শব্দে ভাবনার চড়ুইভাতি। তবে তারআগে নিজেকে আরেকটু গুছিয়ে নেই। আরেকটু সময় দে আমাকে।

নূহা হেসে বলল, ওকে সময় দেয়া হলো। তুই প্রকৃতির মাঝ থেকে নিজের ভাবনাদের তুলে নেবার চেষ্টা করতে থাক। আমি ততক্ষণে আমার কন্যার সাথে দেখা করে আসি। উনিও অভিমান করে বসে আছেন।

নূহাকে বিদায় জানিয়ে কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থাকার পর পাশ থেকে একটি বই তুলে নিয়ে ধীরে ধীরে মেলে ধরলো সাফিন চোখের সম্মুখে। শুধু বই না সাথে ছোট্ট একটা কবিতাও উপহার দিয়ে গিয়েছিল নূহা...

বই যার নিত্যদিনের সাথী
অন্তরে তার ফুল, পাখী, প্রজাপতি
বচন যার প্রশান্ত ছায়াবীথি,
আশার আলোতে জ্বালায় সে জ্যোতি
পুষ্পিত চিন্তারা তার মন বাগিচায় দোলে
আঁধার আকাশে জোছনার দ্বার সে খোলে
হৃদমাজারে জ্বলে যার জ্ঞানের দিয়া,
সত্য ও সুন্দরের আবাসভূমি তার হিয়া
পথে পথে বুনে চলে সে নতুন সম্ভাবনা,
তুলির স্পর্শে আঁকে সুন্দর পৃথিবীর আল্পনা......

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন