শুক্রবার, ১ এপ্রিল, ২০১৬

খুঁজে ফিরি সত্যের আঙিনা...৩০



গাছের নীচে গোল হয়ে বসে অভিমানে গাল ফুলিয়ে রাখা ছোট বোনদের দিকে দৃষ্টি পড়তেই হাসি ফুটে উঠলো নূহার চেহারাতে। ট্রেতে থাকা শেষ কফির মগটি নিজের জন্য তুলে নিয়ে বোনদের  কাছে রওনা হলো। সকালে যখন হঠাৎ করেই পরিবারের সবাই মিলে বনভোজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল নায়লা, জুয়াইরিয়া, জুম্মি, জুনি ওরাই সবচেয়ে বেশি খুশি ছিল। সবাই মিলে কোন পিকনিক স্পটে যাওয়া হবে সেটা নিয়ে প্ল্যান প্রোগ্রাম করতে বসে গিয়েছিল। কিছুক্ষণের মধ্যেই নিজেদের পছন্দের স্থান নির্বাচন করে জানিয়েও দিয়েছিল। কিন্তু যেহেতু সময়ের সল্পতা ছিল এবং ওদের পছন্দের স্পটটি বেশ দূরে ছিল, যাওয়া আসা মিলিয়ে অনেক সময় লেগে যাতো। তাই সময়, দুরুত্ব অন্যান্য সবকিছু বিবেচনা করে বাড়ি কাছাকাছি একটি জায়গাতেই আসা হয়েছে সবাই মিলে। পরিবারের বড়দের এই সিদ্ধান্তে মোটেই খুশি হতে পারেনি জুম্মি আর তার গ্রুপ। সবাই মিলে নূহাকে এসে ধরেছিল যেন তাদের পছন্দের ব্যাপারে সুপারিশ করে। কিন্তু নিজেও সময়ের সল্পতার স্বীকার থাকার কারণে উল্টো ওদেরকেই বোঝানোর চেষ্টা করেছিল নূহা। বলেছিল, কোথায় যাওয়া হচ্ছে এটা তো কোন ম্যাটার না। ম্যাটার হচ্ছে পরিবারের সবাই মিলে কোথাও বেড়াতে যাওয়াটা। যখন আপনজনেরা কাছে থাকেন, পাশে থাকেন তখন তো যে কোন স্থানই আনন্দভূমি। ব্যাস তাতেই হয়েছে এই হাল, অভিমানে বোনেদের ফুলেছে গাল। ওদের ইচ্ছে, চাওয়া, খুশির কোন মূল্য নেই পরিবারের বড়দের কাছে, সারাটা জীবন শুধু উনাদের মরজিই চাপিয়ে দেয়া হয়েছে ইত্যাদি নানান কথা বললো কিছুক্ষণ সবাই মিলে। এরপর থেকে ছয়জন এক জোট হয়ে ঘুরছে ফিরছে। বনভোজনের স্থানে আসার পর থেকেও যে ছয়জন সবার থেকে দূরে দূরে ঘুরছে সেটা খেয়াল করেছে নূহা। কিন্তু এতক্ষণ বাচ্চাদের সাথে ব্যস্ত থাকার কারণে বোনদের কাছে আসতে পারেনি।  একদম বোনদের মাঝখানে যেয়ে বসতে বসতে নূহা বলল, তোদের কেউ কি কফি পানে আগ্রহী?

জুয়াইরিয়া বলল, আগ্রহী হলেই বা কি? আমাদের ইচ্ছে, আগ্রহের কি কোন মূল্য আছে?

নূহা হেসে বলল, মানুষের সবচেয়ে বড় সমস্যা কি জানিস?

নায়লা বলল, আমরা জানতে চাই না।

হ্যা হ্যা একদম জানতে চাই না। তা না হলে মানুষের সবচেয়ে বড় সমস্যা জানানোর সুযোগে তুমি আমাদের পটিয়ে ফেলবে। আজ আমরা কিছুতেই তোমার কথার ফাঁদে পড়ছি না। উহু, কিছুতেই না। দৃঢ় কন্ঠে বলল জুনি।

নূহা হাসতে হাসতে বলল, ঠিকআছে তাহলে মানুষের কথা বাদ। চল আমরা সবাই মিলে গল্প করি। অনেকদিন তোদের হালচাল জানা হয়নি। তোদেরকে বলার মতো কত কথা ফুটেছে বন বাগিচায়। চল আজ এই সুযোগটাকে কাজে লাগাই। আমাদের লাস্ট বৈঠক তিনমাস আগে হয়েছিল। তিনমাস আগের একটা মজার ঘটনা শেয়ার করবো?

ফোলানো গালের সাথে সাথে ভ্রূও খানিকটা কুঁচকে বোনেরা সবাই মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি দেবার পর  নূহা হেসে বলল, তিনমাস আগে আমার পুরোনো বাসা ছেড়ে বড়মামার বাড়িতে উঠেছি সেটা তো তোরা জানিসই। যেদিন বাসা বদলানো নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল সেদিন কি অনুভব করেছিলাম জানিস?

কি অনুভব করেছিলে? মুখ ভার করেই প্রশ্ন করলো নায়লা।

অনুভব করেছিলাম ঐ সময় যে বাসাটায় ছিলাম সেটা আমার কতটা পছন্দের। পছন্দ করার  অবশ্য অনেকগুলো কারণও ছিল। তোরা তো দেখেছিসই গেট দিয়ে ঢুকতেই ফুল আর পাতাবাহারের কি সুন্দর বাগান ছিল। এছাড়া খোলা ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে দেখা যেতো সূর্যাস্ত, সূর্যোদয়, তারাভরা আকাশ, জোছনার আলোতে ভেসে যাওয়া প্রকৃতি। আবার সামনেই ছিল বিশাল পার্ক তাই সবুজের সমারোহ, আর ছিল ভীষণ সুন্দর ছাদ। এদিককার বাড়িগুলো তৈরিই হয় এমনভাবে যে ছাদে উঠার  সুযোগ বেশ কম থাকে। তাই ছাদ আছে এমন বাড়ি পাওয়া সত্যিই অনেক আনন্দের। এই আনন্দ ও ভালোলাগা গুলো সবসময় অনুভব করলেও যখন জানলাম বাসাটা ছেড়ে দিতে হবে অনুভবের মাত্রা বেড়ে গেলো। অবশ্য মানুষের স্বভাবটাই মনেহয় এমন। যখন কোনকিছু হারিয়ে ফেলে বা ফেলতে যায় কিংবা নিজের না জানে তখন সেটার প্রতি টান বেড়ে যায়। বেশ মন খারাপ নিয়েই গোছগাছ করলাম সবকিছু। কিন্তু জারিফকে দেখলাম ঘুরে ঘুরে সব রুমকে বিদায় জানাচ্ছে। এমনকি রান্নাঘর ও বাথরুমের কাছ থেকেও বিদায় নিলো। ওর কান্ড দেখে মজা পেয়েছিলাম খুব। সাথে সাথে অনুভবও করেছিলাম শিশুরা মনের ভেতরের অবস্থা কত সহজে প্রকাশ করে ফেলতে পারে। রাখ ঢাক করতে জানে না বলেই শিশুদের মধ্যে কোন ভাণ নেই। আমারো কষ্ট হচ্ছিলো, মনখারাপ লাগছিল কিন্তু পারিনি পুত্রের মত করে সেটা প্রকাশ করতে। আবার নতুন বাসায় যেদিন উঠলাম জারিফের সেকি খুশি। আগের বাসায় চেয়ে অনেক বড় রুম পেয়েছে নিজের জন্য। দু’হাত বাড়িয়ে মহা আনন্দে আলিঙ্গন করে নিলো নতুন বাসাকে। নিজের রুম নিজেই গোছাতে লেগে গেলো।

জুনি হাসতে হাসতে বলল, নতুন বাসায় ঢুকেই জারিফ সব রুমে রুমে ঘুরে যখন ফেরেশতাদের সালাম দিচ্ছিলো তখন আমিও ছিলাম সাথে। ওর সাথে সাথে আমিও সালাম দিয়েছি।

সবাই হেসে ফেললে নূহাও হেসে বলল, আমি কিন্তু প্রথমে কিছুতেই জারিফের মত আপন করে নিতে  পারছিলাম না নতুন বাসাটাকে। রান্নাঘরে ঢুকেই মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল। মনের পর্দায় ভেসে উঠলো আগের বাসায় সেই রান্নাঘরের ছবি। বেশ মনখারাপ নিয়েই নতুন বাসা সাজানো গোছানোর কাজ শুরু করলাম। একবার মনেহলো বাসাটা না বদলালেই ভালো হতো। মেঘাচ্ছন্ন মন নিয়েই ঘুমোতে গেলাম। পরদিন ভোরে চোখ খুলেই দেখি দূরে কি যেন একটা মিটমিট করছে। প্রথমে ভেবেছিলাম প্রভাতের তারা, পরে বুঝলাম যে আকাশের বুকে চলমান বিমানের আলো। বিছানায় শুয়ে জানালা দিয়ে আকাশ দেখছিলাম বহুদিন পরে। আগের বাসায় সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত দেখা যেত কিন্তু বিছানায় শুয়ে এমন আকাশ দেখা যেত না। তখন হঠাৎ মনেহলো প্রতিটি জায়গা, জিনিস কিংবা মানুষের সৌন্দর্য আসলে আলাদা আলাদা। আমরা বেশির ভাগ সময়ই সৌন্দর্যের সেই বৈচিত্র্যতা খুঁজে নিতে পারিনা বা চেষ্টা করি না। কখনো ইচ্ছে তো কখনো খেয়ালের অভাবে। কিন্তু বেশির ভাগ সময়ই হারিয়ে ফেলা কিছুর শোকে বর্তমান পাওয়াটাকে মূল্যায়ন করতে পারিনা। আর দৃষ্টি পেছনে থাকলে সামনের কিছু দেখা যাবে না এটাই তো স্বাভাবিক। সামনের প্রাপ্তি যেমন দেখা যাবে না, খাদা-খন্দও দেখা যাবে না। দৃষ্টি পেছনে রেখে পথ চলার কারণে সামনে থাকা পাথরের সাথে পা বেঁধে হুমড়ি খেয়ে পরে আমরা আহাজারি করতে থাকি "আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম"! অর্থাৎ, নিজের ভুল বা অসতর্কতার দোষ দেই ভাগ্যকে। আমরা মানুষেরা আসলেই বড় অকৃতজ্ঞ আর বেখেয়ালি। আবারো অনুভব করলাম প্রতিটা জিনিসের মাঝেই আছে কল্যান। শুধু তার রকম ও ধরণ আলাদা আলাদা। তাই মানুষ হোক আর জিনিস সবসময় খেয়াল রাখা উচিত কখনই তুলনা করা চলবে বা একটার সাথে আরেকটার। শুধুমাত্র তাহলেই হয়তো উপভোগ করা সম্ভব হয় জীবনের রঙ বদলের খেলা ও বৈচিত্র্যতাকে।

জুম্মি বলল, আমরা জানতাম তো তুমি এমন কিছুই বলবে আমাদেরকে। এজন্যই তো তোমার কথা শুনতে রাজী হইনি। এখন যেমন অপরাধী মনেহচ্ছে নিজেদেরকে।

নূহা হেসে বলল, আমি কিন্তু মোটেই তোদেরকে অপরাধীর কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে চাইনি। আমি শুধু এটা বোঝাতে চেয়েছি জীবন যখন যেভাবে আমাদের সামনে আসে সেভাবেই তাকে আপন করে নেয়া উচিত। চাওয়া পাওয়ার দ্বন্দ্ব আমাদের মনের শান্তি কখনোই বিনষ্ট করতে পারতো না, যদি আমরা যা পাচ্ছি সেটাকে মূল্যায়ন করতে পারতাম। মনের অভিমান একপাশে রেখে চিন্তা করে দেখ আজকের এই বনভোজন কি আমাদের জন্য অপ্রত্যাশিত একটি প্রাপ্তি নয়? প্রচন্ড ব্যস্ততা স্বর্ত্বেও ভাইয়ারা আমাদের সাথে বনভোজনে আসার জন্য রাজী হয়েছেন। কারণ উনাদের কাছে নিজেদের শত ব্যস্ততার চেয়েও আমাদের ইচ্ছে, খুশির প্রায়োরিটি বেশি। তাই আমাদেরও তো উচিত উনাদের সুবিধার দিকে খেয়াল রাখা। তাই না? এভাবেই তো পরিবারের সদস্যদের একে অন্যের প্রতি সহমর্মিতা, ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়। বন্ধন দৃঢ় হয়।

জুয়াইরিয়া বলল, আমরা বুঝতে পেরেছি আপ্পা। ভালো মতো না বুঝেই এমন বোকামী সুলভ অভিমানের জন্য আমরা খুবই লজ্জিত।

নূহা হেসে বলল, শুধু লজ্জিতই না আপনারা অনেক আনন্দ থেকেও নিজেদেরকে করেছেন বঞ্চিত। বাবা, বাপী, ভাইয়াদের কত অসাধারণ সব জ্ঞানগর্ভ কথা, দিকনির্দেশনা মিস করেছেন সেই হিসাব দিয়ে আপনাদেরকে এখন আর কাঁদাতে চাই না। তারচেয়ে পরামর্শ দিচ্ছি আর সময় নষ্ট না করে ছুট লাগান। এখনো আলোচনা চলছে নদীর পাড়ে।

নূহা কথা শেষ করার আগেই ছয়জন উঠে ছুট লাগালো। নিজ নিজ জীবন ভান্ডারের জন্য অমূল্য মণিমুক্তো সংগ্রহের লক্ষ্যে ছুটন্ত বোনদের দেখে প্রশান্তিকর হাসি ফুটে উঠলো নূহার মুখে। কিছুক্ষণ ওদের দিকে তাকিয়ে থাকার পর চারপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের উদ্দেশ্যে গাছে হেলান দিয়ে বসলো। তার থেকে বেশ খানিকটা দূরে নানান ধরণের পাতাবাহারের ঝোপের একপাশে বইয়ের খুলে ইয়াসকে বসে থাকতে দেখে বেশ অবাক হলো নূহা। যে ছেলেকে না বকে বই নিয়ে বসানো যায় না। সে কেন ঘুরতে এসে বই নিয়ে বসে আছে এই রহস্য উদঘাটনের জন্য জরুরি ভিত্তিতে উঠে দাঁড়ালো নূহা। ইয়াসের কাছে পৌঁছে বলল, আমার ছোট্ট ভাইটি যে এত বড় পড়াকু সেটা তো এতদিন আমার জানাই ছিল না।  

নূহার কথা শুনে বই থেকে মুখ তুলে হেসে ফেললো ইয়াস। বই বন্ধ করে বলল, আগামীকাল আমার  ক্লাসটেস্ট আছে আপ্পা। আজ যে পিকনিকে আসা হবে সেটা তো আগে জানা ছিল না। পরীক্ষার আগেরদিন পড়া রেডি করবো ভেবে এতদিন কিছুই পড়িনি। এখন তাই অনিচ্ছা স্বর্ত্বেও আনন্দ থেকে নিজেকে বঞ্চিত করে পড়তে হচ্ছে।

ছোট ভাইয়ের পাশে বসে হাসি মুখে নূহা বলল, এমনই হয় আসলে আমরা আজকের কাজ আগামীকালের ভয়সায় ফেলে রাখি। অথচ আগামীকাল আমাদের জন্য কি অপেক্ষা করছে সেই সম্পর্কে বিন্দুমাত্র ধারণাও আমাদের নেই। আগামীকাল তো অনেক পরের কথা একটু পর কি ঘটতে যাচ্ছে সেটাও তো আমাদের অজানা। ভেবে দেখ সকালে নাস্তার সময়ও কি আমাদের কারো জানা ছিল আজ পরিবারের সবাই মিলে বনভোজনে আসবো?

আই এম সরি আপ্পা।

নূহা হেসে বলল, আমি কিন্তু মোটেই তোকে দুঃখিত করতে চাইনি। শুধু এইটুকু বোঝাতে চাইছি যে আমাদের আপ্রাণ চেষ্টা থাকা উচিত প্রতিদিনের সমস্ত কাজ প্রতিদিন সেরে ফেলার। আগামী দিনের জন্য আলসেমি করে, গাফলতি করে কাজ জমিয়ে না রাখা। কারণ আগামীকাল আমাদের জীবনে আসবে কিনা সেটাও তো অনিশ্চিত তাই না?

জ্বি আপ্পা।

একটুক্ষণ চুপ থেকে নূহা হেসে বলল, চল তোকে মজার একটা ঘটনা বলি।  দেখছিস ই তো গত কয়েকদিন থেকে আমাদের ওদিকটায় কেমন রোদ ঝলমলে আলোকোজ্জ্বল দিন। বেশ গরমও পড়ে  গিয়েছে। তাই সামারের কাপড়-চোপড় নামিয়ে ধুয়ে ছাদে নেড়ে দিয়ে এসেছিলাম গতপরশু সকালে।  বিকেল বেলা ছাদে গিয়ে কাপড় আনার কথা মনে হতেই একরাশ আলসেমি এসে মনে জড়ো হলো। ছাদে যাওয়া, ভাঁজ করে কাপড় তোলা, বাসায় আসা, আবার সবকিছু জায়গামত গুছিয়ে রাখা! নাহ! অনেক অনেক কাজ মনেহলো। ভাবলাম থাক আগামীকাল নামাবো ছাদ থেকে কাপড়-চোপড়। কিন্তু   রাতের বেলা রাহাতকে দেখলাম ছাতা হাতে বাসায় ঢুকছে। জানতে চাইলাম, বাইরে কি বৃষ্টি হচ্ছে? রাহাত  জবাবে বললো, হ্যা বেশ বৃষ্টি বাইরে। জারিফ তখন উচ্ছ্বাসিত কণ্ঠে জানালো, মা   আগামীকাল সারাদিন বৃষ্টি। শুধু বৃষ্টি না বিজলি চমকে চমকে বৃষ্টি।

ইয়াস হেসে বলল, তুমিও তাহলে এমন কান্ড করো।

নূহা হেসে বলল, ভুল করি বলেই তো আমার অভিজ্ঞতার ভান্ডায় সংশোধনের খাজানাতে পরিণত হয়েছে। দেখিস না তোদের প্রায় সব ভুলের ব্যাপারেই লেকচার রেডি থাকে আমার কাছে। এইসবই আমার ভুলের সাধনা আলহামদুলিল্লাহ। তবে আমি কিন্তু কখনোই ভুলের জন্য আফসোস করিনা। চেষ্টা করি ভুলটাকে যতটা সম্ভব শুধরে নেবার। অবশ্য কেন ভুলটা হলো সেই বিষয়ে আবার অনেক চিন্তাভাবনা করি। যেমন পরশুরাতে মনের মধ্যে শুধু খচখচ মধ্যে করছে। কেন একটু  জোর করে গেলাম না ছাদে? তাহলেই তো শুকনো কাপড় গুলো ভিজতো না! কেন মনের অলস  ইচ্ছের কাছে নিজেকে সপে দিলাম? কেন আগামীকালের চিন্তা করে নিশ্চিন্তে বসে রইলাম? আগামীকাল কি হবে বা কি অপেক্ষা করছে সেটা তো অজানা! তাহলে কেন আগামীকালের ভরসায় আজকের করণীয়তে অবহেলা করলাম? তারপর মনেহলো আজকাল খুব করছি এই কাজটা আমি। এখন ইচ্ছে করছে না, থাক পরে করবো, আগামীকাল করবো ভেবে কাজ ফেলে রাখছি ভবিষ্যতের জন্য। কিন্তু ভবিষ্যতে যে কাজটি আমি করতে পারবো, যেভাবে ভেবে রাখছি সবকিছুই সেভাবে হবে সেই নিশ্চয়তা কোথায় পেলাম আমি??? একথা তো আমার অজানা নয় যে জীবনের কিছুই স্থায়ী নয়। যে কোন মুহুর্তে বদলে যেতে পারে জীবনের রুপ। তাহলে কেন এই অস্থায়ী এবং পর্যায়ক্রমে আবর্তিত ও পরিবর্তিত জীবনে আগামী কালকের জন্য তুলে রাখি নিজের কাজ? কেন ভুলে যাই যে আগামী কাল তো আমার জীবনে নাও আসতে পারে! কিংবা আগামী হয়তো নতুন কাজ ও দায়িত্বের বোঝা নিয়ে হাজির হবে আমার কাছে। তখন আমি নতুন কাজ করবো নাকি জমিয়ে রাখা পুরনো কাজ?! এই সম্পর্কিত রাসূল (সঃ) এর একটি হাদীস আছে। “রাসূল(সাঃ) বলেছেন, পাঁচটি বিষয়ের পূর্বে পাঁচটি বিষয়কে গুরুত্ব দেবে। এক. বার্ধক্য আসার আগে যৌবনকে। দুই. অসুস্থতার আগে সুস্থতাকে। তিন. দারিদ্র আসার আগে সচ্ছলতাকে। চার. ব্যস্ত হয়ে পড়ার আগে অবসর সময়কে। এবং পাঁচ. মৃত্যু আসার আগে জীবনকে”। ভেবে আমরা মুসলিমরা কতটা সৌভাগ্যবান। আমাদের করণীয়-বর্জনীয় সব সবকিছুই বলে দেয়া আছে কুরআন ও হাদিসে। কিন্তু তবুও আমরা ভেসে চলছি নফসের স্রোতে। অবহেলা করছি নিজের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে।

হ্যা আপ্পা। ইনশাআল্লাহ আজ থেকেই আমি এই ব্যাপারে সতর্ক থাকার সর্বাত্মক চেষ্টা করবো।

নূহা হেসে বলল, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তোর ইচ্ছে দৃঢ় করে দিন এই দোয়া করি। আচ্ছা আর বিরক্ত না করি তোকে। মন নিয়ে পরীক্ষার প্রস্তুতি নে। আমি দেখি ফ্যামিলি কি করছে। ইয়াসের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নদীর পাড়ের দিকে হাঁটতে শুরু করলো নূহা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন