সোমবার, ৩ অক্টোবর, ২০১৬

ভালোবাসার সুতোয় গাঁথি সম্পর্কের মোতি...৩




আমাদের সমাজে এত অন্যায়, অবিচার, স্বার্থপরতা, নিষ্ঠুরতা, দানবিকতা, বিশৃংখলা ইত্যাদি কিছুই থাকতো না যদি মানুষের মধ্যে সঠিক শিক্ষা থাকতো। এমন শিক্ষা যা মনুষ্যত্ব, বিবেককে জাগ্রত করে। মানুষের সামনে করণীয় ও বর্জনীয়রও তালিকা উপস্থাপন করে। দিক নির্দেশনা দেয় আত্নসংশোধন ও আত্মপর্যালোচনার মাধ্যমে আত্মশুদ্ধির পথে চলার। উদ্ভাসিত করে জীবনের মূল লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও গন্তব্যকে। এবং এঁকে দেয় সেই গন্তব্যে পৌঁছার নকশা। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এমন শিক্ষা ব্যবস্থা কি নেই? যেখান থেকে আমরা জেনে নিতে পারি, শিখে নিতে পারি কল্যাণ ও অকল্যাণের পার্থক্য নির্ণয়? যেখানে আমাদের ভুলগুলো হতাশা চোরাবালিতে আঁটকে ফেলবে না আমাদেরকে। বরং ভুলগুলো নতুন রূপে বিকশিত হয়ে সুবাসিত করবে জীবনকে ফুলের মতো। পৃথিবীকে সুন্দর, সুশোভিত, নিরাপদ একটি সুখের আবাস হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন মানবিকতা, নিয়মানুবর্তিতা, শৃঙ্খলাবোধ। কারন মানুষের নিজেদের মধ্যে যদি মানবিকতা, নীতিবোধ, মূল্যবোধ না থাকে তাহলে তাদের দ্বারা পৃথিবীতে অশান্তি, বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য নেমে আসবে এটাই স্বাভাবিক। এমন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কি নেই যেখানে হাতে কলমে আমাদেরকে শেখানো হবে, বোঝানো হবে মানবতাবোধ, মনুষ্যত্বের সংজ্ঞা, আকার, প্রকার, বিভেদ? অবশ্যই আছে। এমন শিক্ষা ব্যবস্থাও আছে, এমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও আছে। মূলত সকল শিক্ষার প্রাথমিক সূতিকাগার হচ্ছে পরিবার। পারিবারিক সুশৃঙ্খল, আদর্শিক, নিয়মনীতি, মূল্যবোধ, আন্তরিকতা পরিপূর্ণ পরিবেশে যখন শিশুরা বেড়ে ওঠে। তখন তাদের ব্যক্তিত্বে নিষ্ঠুরতা, অমানবিকতা, মূল্যবোধ পরিপন্থী আচরণ ঢোকার প্রবেশের পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। আমাদের সমাজে এতসব অশান্তির নেপথ্যে আমাদের পারিবারিক বন্ধনগুলো বহুলাংশে দায়ী। যদি পরিবার থেকে জীবনকে বিকশিত করার যথাযথ উদ্যোগ নেয়া হয়, যদি পরিবারের সদস্যদের পারস্পরিক সম্পর্কর বন্ধুত্বপূর্ণ, আন্তরিকতা ও ভালোবাসা পরিপূর্ণ রাখার ব্যাপারে সদস্যদের সবাই সজাগ ও সচেতন হয়, তাহলে বাইরের নেতিবাচক প্রভাব থেকে বেঁচে থাকাটা অনেক সহজ হয়ে যায়। উল্টো তাদের মধ্যের ইতিবাচকতা ও কল্ল্যাণময়তা প্রভাবে প্রভাবিত হয় মানুষ, সমাজ। কিন্তু তিক্ত বাস্তবতা হচ্ছে বর্তমানে আমাদের খুব কম পরিবারের মধ্যেই সুদৃঢ় আত্মিক বন্ধন বিদ্যমান। বাইরে থেকে অনেক পরিবারকেই সুখী ও সুশৃংখল মনেহলেও ভেতরের অবস্থা একদমই তার বিপরীত। সুন্দর একটা পৃথিবী, সুন্দর একটা জীবন গড়ার স্বপ্ন যারা দেখে তাদের সেজন্য সবার আগে নিজ নিজ পরিবারকে সুন্দর, সুশৃঙ্খল, আদর্শিক করে গড়ে তুলতে হবে। আমাদের পারিবারিক বন্ধনগুলো যখন মজবুত হবে, ভালোবাসা পূর্ণ হবে তখন জগতের সমস্ত নেতিবাচক প্রভাবের মোকাবেলায় আমাদের পরিবার হবে শক্তিশালী এক দূর্গ। তাই সমাজের বিশৃঙ্খলা দেখে, পরিবারে স্বার্থের উপস্থিতি দেখে মন খারাপ করে ভেঙে পড়লে হবে না, হতাশ হলে হবে না। বরং শক্তিশালী এক দূর্গ হিসেবে নিজ নিজ পরিবারকে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখতে হবে। এবং সেই স্বপ্নকে লক্ষ্য নির্ধারণ করে শত প্রতিকূলতা পেরিয়ে অবিচল সম্মুখ পানে ধাবিত হতে হবে। যখন মনে স্বপ্ন থাকে, স্বপ্নকে ছুঁয়ে দেবার স্পৃহা থাকে তখন কোন বাঁধাবিপত্তি আমাদের পথ রোধ করে দাঁড়াতে পারে না। তাই শুধু স্বপ্ন দেখা আর সংগোপনে লালন করার মাঝে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না। স্বপ্নটাকে আকাশ ছোঁয়া মনেহয়? তোমাদের উড়ায় ডানা নেই ভেবে থমকে যেও না। বরং স্বপ্নকেই ডানা বানিয়ে উড়তে শুরু করো।
এতক্ষণ একদম পিনপতন নীবরতা ছেয়ে ছিল ঘরের ভেতর। সবাই নিঃশব্দে শুনছিল আত্মজার কথাগুলো। কিন্তু শেষ বাক্যটা হাসির প্রলেপ মাখিয়ে দিয়ে গেলো সবার মুখেই। আত্মজাও মুখের হাসি একান ওকান সম্প্রসারিত করে বলল, স্বপ্নকেই ডানা বানিয়ে উড়তে শুরু করো। কথাটা কি ভীষণ রকম সুন্দর তাই না আপ্পা? অবশ্য জাওয়াদ ভাইজানের সব কথাই সুন্দর।
নূহা হাসি মুখে বলল, হুম, আলহামদুলিল্লাহ। যারা সত্য ও সুন্দরের পথে চলাটাকে নিজের জন্য অত্যাবশ্যকীয় করে নেন। তারা অন্যদের জন্য এমন ফুল ছড়িয়েই সামনের দিকে ধাবিত হন।
জুম্মি দৃঢ় কন্ঠে বলল, ইনশাআল্লাহ আমরাও আজ থেকে এই মূহুর্ত থেকে সত্য ও সুন্দরের পথে চলাটাকে নিজেদের জন্য অত্যাবশ্যকীয় করে নিলাম।
নূহা হেসে বলল, আলহামদুলিল্লাহ তোমাদের স্বপ্নে যে সত্যিই ইচ্ছা ও চেষ্টার ডানা লেগে গিয়েছে সেটা এসেই এমন জ্ঞানান্বেষণে বসে যাওয়া দেখেই বুঝতে পেরেছি। অন্যসময় ধমক দিয়ে গল্পের আসর ভেঙে সবাইকে জ্ঞানার্জনে বসাতে হয়। আর আজ তো উল্টো আমার গল্প করার ইচ্ছে উড়িয়ে দিয়ে বইখাতা খুলে বসে পড়েছো সবাই। যাইহোক, তারপর বল।
আত্মজা বলল, তারপর তো আর নেই আপ্পা। আর নোট করতে পারিনি। ভাইজান যখন কথা বলেন তখন শুধু শুনতেই ইচ্ছে করে। মনেহয় নোট করতে গেলেই সুন্দর কোন কথা মিস করে ফেললো। ভাইজান আরো অনেক কিছু বলেছিলেন গত প্রোগ্রামে আমাদেরকে। আমাদের সবার নোট মিলিয়ে মোটামুটি এইটুকুন ধরে রাখতে পেরেছি।
জুয়াইরিয়া বলল, সেজন্যই তোমার কাছে এসেছি আমরা। যাতে বাকি নোট আদায় করে নেবার পাশাপাশি তুমি আমাদেরকে শিখিয়ে দিতে পারো নিজেকে কিভাবে ভালোবাসতে হয়। তারপর সেই ভালোবাসা কিভাবে ছড়িয়ে দিতে হয় চারপাশে।
সুমাইয়া বলল, হ্যা আপ্পা। কারণ ভাইজান আরো বলেছিলেন, ‘আমাদের মধ্যে আসলে ভালোবাসার খুব অভাব। ভালোবাসা শূন্যতায়, ভালোবাসার ঘাটতিতে অপুষ্টিতে ভুগছে আমাদের সম্পর্কের বন্ধনগুলো। ভালোবাসার অভাবে ঝরে যাচ্ছে স্বপ্নবৃক্ষের কলিগুলো প্রস্ফুটিত হওয়ার আগেই। আমরা কাউকে ভালোবাসার দাবী করে প্রতিনিয়ত তার সাথে ভালোবাসাহীন কথা, কাজ ও আচরণ করে চলি। কারণ আমরা আসলে জানিই না ভালোবাসার স্বরূপ। আমরা জানিই না কিভাবে ভালোবাসতে হয় মানুষকে। মানুষের কথা তো পরে আমরা নিজেকে নিজে ভালোবাসতেও জানি না। এই না জানাটাই যত সমস্যার মূলে। কেননা তখনই আমরা অন্যকে সঠিকভাবে ভালোবাসাতে পারবো যখন নিজেকে নিজে ভালোবাসবো। নিজেকে ভালোবাসার অর্থ কিন্তু আত্মপ্রেম বা স্বার্থপরতা নয় মোটেও। নিজেকে ভালোবাসার অর্থ স্বার্থের গন্ডি পেরিয়ে আত্মার বিকাশ সাধন। উদারতায় আকাশ ছুঁয়ে দেয়া, গভীরতায় সমুদ্রকে বুকের মাঝে ধারণ আর সকল নেতিবাচকতার বিরুদ্ধে পাহাড়সম দৃঢ়তা, অনড়টা অর্জন। তাই সবার আগে তোমাদেরকে নিজেকে ভালোবাসতে হবে। তারপর সেই ভালোবাসা ছড়িয়ে দিতে হবে জগতময়। ভালোবাসার সুতোয় গাঁথতে হবে সম্পর্কের বন্ধনগুলোকে। অতঃপর ভালোবাসার রঙে রাঙিয়ে দিতে হবে পরিবার, সমাজ, দেশ ও জাতিকে’।
নায়লা বলল, আমরা নিজেরা একটা জিনিস রিয়ালাইজড করেছি আপ্পা। আমরা অনেক সুন্দর সুন্দর পরিকল্পনা নেই নিজেকে গড়ার জন্য। কিন্তু কিছুদিন পরেই সবকিছু ভুলে আবার যে যেমন ছিলাম তেমনি হয়ে যাই। কোন কোন ক্ষেত্রে আগের চেয়েও খারাপ অবস্থানে অবনতি হয়। গত প্রোগ্রামে ভাইজানের আলোচনা শোনার পর আমাদের মনেহয়েছে, আমাদের মূল সমস্যা আসলে এটাই। আমরা নিজেরাই নিজেদেরকে প্রকৃত অর্থে ভালোবাসতে পারিনি এখনো। নিজেকে যথাযথ ভালোবাসতে শিখিনি বলেই আমাদের স্বপ্নগুলো বারবার ডানা ভেঙে জমিনে আছড়ে পরে। আমরা তাই সবার আগে নিজেদেরকে সঠিক ভাবে ও পরিমিত মাত্রায় ভালোবাসতে চাই। ভালোবাসার সুতোয় গাঁথতে চাই আমাদের জীবনকে ঘিরে আবর্তিত নানান সম্পর্কের বন্ধনগুলোকে। এরপর সুন্দর ও পবিত্র জীবনের আহ্বান পৌঁছে দিতে চাই আলোকিত পথ থেকে অনেক দূরে অবস্থানরত মানুষদের কাছে।
আমাদেরকে শিখিয়ে দাও না আপ্পা নিজেকে ভালোবাসা এবং নিজ স্বার্থের গন্ডি ছাড়িয়ে অন্যকে ভালোবাসা। নিজের উত্তম গুনাবলীগুলোকে পরশ পাথর বানিয়ে তার ছোঁয়ায় বদলে দেয়া চারপাশের নেতিবাচক পরিবেশ-পরিস্থিতি ও মানুষকে। বেশ আবেগঘন কন্ঠে বললো জুনি।
হাদিয়া বলল, আমরা সবাই কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে আলোকিত মানুষ হতে চাই। আল্লাহর সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সন্তুষ্টির পথে চলে দুনিয়া ও আখিরাতের জীবনে কল্ল্যাণ প্রতিষ্ঠা করতে চাই। ভুলের স্রোতে আর ভাসতে চাই না। আকাশের বুকে নক্ষত্র হয়েও জ্বলজ্বল করতে চাইনা। আমরা জমিনের বুকে একবিন্দু আলোকধারী জোনাকি হতে চাই।
নূহা হেসে বলল, আলহামদুলিল্লাহ আমিও তো এমনটাই চাই। আজকে তোমাদের মধ্যেও চাওয়াটা অনেক বেশি জোড়ালো দেখতে পাচ্ছি অতীতের চেয়ে। আমরা সবাই যখন এমন সম্মিলিত ভাবে নিজেদেরকে ভালোবাসতে শিখবো এবং অন্যদেরকে ভালোবাসার বাঁধনে জড়িয়ে নিতে শিখবো। ইনশাআল্লাহ ধীরে ধীরে আমাদের চারপাশ ভালোবাসাময় হয়ে উঠবেই। মানুষ একদিন উপলব্ধি করবেই নিজের শান্তি স্বস্থির আশায় তারা যে ঘৃণা, অরাজকতা, হানাহানির পথ বেছে নিয়েছে সেটা তাদের জন্যও ধ্বংসাত্মক। প্রশান্তি চাইলে সত্য ও সুন্দরের পথেই চলতে হবে। সুখ, সম্মান ও সমৃদ্ধি চাইলে ভালোবাসা দিয়েই সেটা আদায় করে নিতে হবে। এইকথা গুলো তোমাদেরকে এজন্যই বলছি যাতে চারপাশের নেতিবাচক, পরিবেশ-পরিবেশ ও মানুষ দেখে, তাদের কর্মকান্ড দেখে তোমরা হতাশ না হও, তোমাদের মন দুর্বল না হয়ে পরে। নিজেকে সত্যিকার অর্থে ভালোবাসার পথে সবচেয়ে বড় বাঁধা সমূহের একটি আমাদের চারপাশের পরিবেশ-পরিস্থিতি ও মানুষ।
হাদিয়া বলল, একদম ঠিক বলেছো আপ্পা। আমি আমার পরিবারের কারণেই শত চেষ্টার পরেও সামনে এগুতেই পারিনা। উনাদের নেতিবাচক কথা ও কাজের প্রভাব থেকে বেশির ভাগ সময়ই দূরে থাকতে পারিনা। তাই প্রায়ই দেখা যায় পরিকল্পনা তো করি সুন্দর কিছুর কিন্তু পরিস্থিতির কারণে করে ফেলি অসুন্দর কিছুই।
নূহা বলল, আসলে যে কোন সমস্যা সমাধানের প্রথম শর্ত হচ্ছে, সমস্যাটিকে মেনে নেয়া। প্রায় সময়ই দেখা যায় আমাদের উপর আপতিত সমস্যাটিকে আমরা মেনে নিতেই প্রস্তুত থাকি না। যারফলে সমস্যাটা যতটা প্রভাব সৃষ্টিকারী থাকে, তারচেয়ে অনেক বেশি প্রভাব ফেলে আমাদের জীবনে। জীবন মানেই যেহেতু সমস্যামুখরতা, তাই সমস্যাসমূহকে মেনে নেয়াতেই বুদ্ধিমত্তা। যখন আমরা কোনকিছুকে মেনে নেই তখন সেটা থেকে বেরিয়ে আসাটা সহজ হয়ে যায়। দ্বিতীয়ত, সমস্যাটা যদি কোন মানুষ হন। এবং জীবনের সাথে জড়িয়ে থাকা গুরুত্বপূর্ণ কোন মানুষ হন সেক্ষেত্রে প্রথমেই যা করতে হবে সেটা হচ্ছে, সেই মানুষটার পজেটিভ দিক সমূহ চিন্তা করা। ব্যক্তির পজেটিভ দিক সমূহ আমাদেরকে শক্তি যোগায় তার নেগেটিভ দিক সমূহকে জয় করার ব্যাপারে। যেহেতু আমাকে সেই মানুষটির সাথেই থাকতে হবে তাই নিজের কল্ল্যাণের লক্ষ্যেই তার দিকে ক্ষমার হাত প্রসারিত করতে হবে। আসলে জীবন সফরে যাদেরকে সাথে নিয়েই চলতে হবে তাদের সাথে সম্পর্কটা সুন্দর করে তোলার ইচ্ছে, চেষ্টা, অধ্যবসায় ও সাধনা থাকা উচিত আমাদের। তাই সম্পর্কের বন্ধনে আবদ্ধিত কারো সাথে অতীতে যা হয়েছে সেসব ভুলে তার সাথে মানসিক দুরুত্ব কমিয়ে সম্পর্ক সুন্দর করার চেষ্টা করতে হবে। কাজটা যদি সহজ কিছু নয় মোটেও। কেননা সম্পর্ক সুন্দর করার উদ্যোগ যারা নেন তাদেরকেই কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকার করতে হয় বেশি। কারণ কাউকে ভালোবাসা অনেক সহজ কিন্তু কারো ভালোবাসার পাত্র হওয়া যথেষ্ট কঠিন। তারচেয়েও বেশি কঠিন সম্পর্কের বন্ধনে ভালোবাসাকে সজীব ও সুবাসিত রাখতে পারাটা। তাই তোমাদেরকে সর্বাগ্রে যা করতে হবে তা হচ্ছে, নিজ নিজ চলার পথের প্রতিবন্ধকতা সমূহকে খুঁজে বের করতে হবে এবং মেনে নিতে হবে সেটিকে। অতঃপর সেটাকে কিভাবে সুন্দর থেকে সুন্দর পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে সংশোধন করা যায় তা খুঁজে বের করতে হবে।
সুমাইয়া বলল, হ্যা আপ্পা। কিন্তু আমাদের পারিবারিক বন্ধনগুলো মোটেই তোমাদের আনন্দবাড়ির মতো নয়। তাই বড় বেশি ছড়ানো ছিটানো সম্পর্কের মোতিগুলো।
নূহা হেসে বলল, আমাদের আনন্দবাড়িও কিন্তু সবসময় এমন ছিল না। আমাদের সম্পর্কের বন্ধনগুলোও অনেক ছড়ানো ছিটানো ছিল। সম্পর্কগুলোকে একসাথে গাঁথার জন্য ভালোবাসার সুতোও ছিল না প্রতিটি মনে। কিন্তু ইচ্ছে, চেষ্টা, সাধনা, অধ্যবসায়ের মাধ্যমে ধীরে ধীরে গড়ে উঠেছিল আমাদের আনন্দবাড়ি।
আমাদেরকে তাহলে আনন্দবাড়ি গড়ে তোলার গল্পও শোনাতে হবে আপ্পা। অনেক সময়ই ক্লাসের কাউকে যখন ভালো কিছু বলতে যাই ওরা উল্টো বলে, তোমাদের জন্য এমনটা বলা অনেক সহজ কারণ তোমাদের পারিবারিক বন্ধন অনেক সুন্দর। কিন্তু আমাদের জন্য এতটা সহজ না। তখন চুপ হয়ে যাওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। আমরা জন্মের পর থেকেই আমাদের পরিবারের সবাইকে এমন দেখে আসছি। চারিদিকে ভালোবাসার ছড়াছড়ি দেখে আসছি। আমরা জানিই না আমাদের আনন্দবাড়ি গড়ে তোলার জন্য আমাদের বাবা-মায়েরা, ভাইয়ারা কতটা ত্যাগ স্বীকার করেছেন, কি কি বাঁধার সম্মুখীন হয়েছে। কিন্তু এসব জানাটাও তো জরুরী তাই না আপ্পা?
জুম্মির প্রশ্নের জবাবে নূহা হেসে বলল, অবশ্যই তাই। তবে তোমাদের মতো আমিও বুঝতে শেখার পর থেকেই খুব সুন্দর ও ইতিবাচক পরিবেশেই নিজেকে খুঁজে পেয়েছি। তবে বিভিন্ন সময় বাবা, পাপা, বাপী, ভাইয়াদের মুখে শুনেছি উনাদের নিজেদেরকে গড়ে তোলার গল্প। তারপর ধীরে ধীরে আনন্দবাড়ি গড়ে তোলার গল্প। ইনশাআল্লাহ আমি যতটুকু জানি অবশ্যই শেয়ার করবো তোমাদের সবার সাথে। কিন্তু এখন যোহরের ওয়াক্ত হয়ে গিয়েছে। সবাই যাও নামাজের জন্য প্রস্তুতি নাও।
বোনেরা সবাই নামাজের প্রস্তুতি নেবার উদ্দেশ্য উঠে যাবার পর নূহা আবারো বারান্দায় এসে দাঁড়ালো। ছোট বোনদের সবার ভেতর নিজেকে ভালোবাসা এবং সেই ভালোবাসার বাঁধনে চারপাশের সবাইকে বেঁধে নেয়ার আগ্রহ সবসময়ই খুঁজে পায় নূহা। কিন্তু আজ ওদের সবার চোখে অদ্ভুত রকম আকুলতা দেখতে পেয়েছে। অনেক বেশি দৃঢ়তা ছিল ওদের প্রতিটি শব্দে। ওদের মনের এই আগ্রহ, এই দৃঢ়তা সর্বদা অটুট এবং দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর করে দিন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা এটাই প্রার্থনা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন